কাতার বিশ্বকাপ-২০২২ নিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী যে আশা–ভরসার জোয়ার বয়ে চলছে তাতে কিছুটা নিশ্চিত করেই বলা যায় কাতার বিশ্ববাসীকে হতাশ করবে না। তাদের আয়োজন সমগ্র বিশ্ববাসীকে যে অবাক করেছে তাতে সন্দেহ রাখার কোন অবকাশই নেই।
(ভয়াবহ ও নৃশংস দিক)
কিন্তু এই আয়োজন এর পেছনে যে ভয়াবহ ও নৃশংস দিক রয়েছে তা কি বিশ্ববাসীর ভাবনায় জায়গা পেয়েছে? না, মোটেই তা পায় নি। তাই ২০২২ বিশ্বকাপ এর আয়োজন এর পেছনে যে ভয়াবহ কিছু দিক রয়েছে তাই তুলে ধরার প্রয়াস আমাদের।
![কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এর ভয়াবহ ও নৃশংস দিক।[Worldcup-2022-Brutal] কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এর ভয়াবহ ও নৃশংস দিক।[Worldcup-2022-Brutal]](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj4UoavF4djJjJq4FAdoQ2nxNFDomyuMYv7k9bBG5KPbFcIboTmuIw4tuRLlkwo2T038z24SIcmfzIyZlAmsdgaT_BA-G6mMfitOx9IocnySpIO6wpX80iwlo4NVzZGxzYo9qCBXpHQXjJB-3Buvgm54ndKUZljEHhpuFp08RxYDhTtsfXYCHpvzfha/s16000/%E0%A6%AD%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B9%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AA-%E0%A7%A8%E0%A7%A6%E0%A7%A8%E0%A7%A8.jpg) |
কাতার বিশ্বকাপ ২০২২:
২ ডিসেম্বর ২০১০। ফিফা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষনা করল ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করবে কাতার।
পুরো বিশ্ব তখন শুধু অবাক নয় সাথে চরম বিস্মিতও হয়েছিল। অবাক হওয়ার পিছনে কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে , যেগুলো এক এক করে বলার চেষ্টা করছি।
বিশ্বকাপ সাধানত জুন জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু অপর দিকে এই সময় কাতারের তাপমাত্রা ১০৮ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তো ১০৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় খেলা তো দূরের কথা বসবাস করাই সাধারন মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। (তখনকার দ্বান্দ্বিকতা)
- ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজন করতে বিড করা অন্য দেশ যেমন– জাপান, আমেরিকা, মেক্সিকো, অষ্ট্রেলিয়া,সাউথ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া– এই সবকটি দেশই কাতারের তুলনায় পরিবেশগত দিক থেকে বিশ্বকাপ আয়োজক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় দৌড়ে লজিক্যালি এগিয়ে ছিল।
- ১৯৩০ থেকে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপের একটিতেও কাতার অংশগ্রহন করতে পারেনি।
- বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য কাতারের কোন মানসম্মত মাঠও নেই।
মোটকথা হচ্ছে কাতারকে বিশ্বকাপ এর আয়োজক হিসেবে সিলেক্ট করা সবার কাছে একটি কাল্পনিক বিষয় বলে মনে হচ্ছিল।
ভয়াবহ ও নৃশংস দিক:
যাই হোক এই সিলেকশন যে ঘুষ ও দুর্নীতির মধ্য দিয়ে হয়েছে সেটা নানা ঘটনার মাধ্যমে উঠে এসেছে। যেমন, ফিফা প্রেসিডেন্ট সেফ ব্রাটারস সহ ফিফা কমিটির ২২ জনের মধ্য যে ১৫ জনের ভোটে কাতার নির্বাচিত হয় তাদের প্রত্যেককে ফিফা থেকে দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়।
কিন্তু যা হবার তা তো হয়েই গেছে। ফিফা কমিটির শর্তানুসারে ২০২২ বিশ্বকাপের জন্য কাতারকে আয়োজক দেশ হিসেবে দুই বছর আগেই সকল শর্ত পূরন করতে বলা হয়।
মাত্র ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটারের ছোট শহর হলেও কাতারের তেলের খনির কারনে পুরো বিশ্বের সবোর্চ্চ মাথাপিছু আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত। (ভয়াবহ ও নৃশংস দিক)
২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য কাতার সর্বমোট ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে যা পূর্ববর্তী বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ রাশিয়া থেকে ২০ গুণ এরও বেশি। (ভয়াবহ ও নৃশংস দিক)
কাতার বিশ্বকাপের সিইও নাছের আল খাতের আল জাজিরার এক ইন্টারভিউতে বলেন– বিশ্বকাপের জন্য আয়োজক দেশ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহে তাদের ব্যয় হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার!!
কিন্তু কাতার বিশ্বকাপ এমন একটি বিশ্বকাপ যেখানে ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে কাতার যেমনিভাবে আলোচনায় ভাসছেন ঠিক তেমনি এত বড় মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে তারা যে অমানবিক শ্রমিক পদ্ধতি গঠন করেছে তা দ্বারা সমালোচিতও কম হয়নি।
কাতার সরকার তাদের সকল প্রকার ফিফার শর্ত পূরণ এবং কাতার ২০৩০ মিশনের জন্য দক্ষিন এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ থেকে প্রবাসী শ্রমিক জোগাড় করে। (ভয়াবহ ও নৃশংস দিক)
আর ঠিক এই কারনে ২০১০ সাল থেকে কাতারের বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন প্রকার কাজ এবং উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে লোকজনকে তাদেও দেশে প্রবেশ করায়।
তারপর কোম্পানির লোক কর্তৃক এয়ারর্পোটে সবার পাসর্পোট বাজেয়াপ্ত করে নেয়া হয় যাতে প্রবাসী শ্রমিকগণ চাইলেও কাতার থেকে না বেরুতে পারে। (ভয়াবহ ও নৃশংস দিক)
অতঃপর তাদেরকে দিয়ে জোড়পূর্বক নির্মাণ সেক্টরে কাজ করানো হয়। আর কাতারের নির্মমভাবে কাজ করানোর শ্রমিক পদ্ধতিকে আধুনিক যুগের দাসত্ব বলেও অনেকে অভিহীত করেছেন। আর এই আধুনিক যুগের দাসত্বের নাম দেয়া হয়েছে “কাফালা সিস্টেম”।
|
আরো পড়ুনঃ
গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপের জন্য তৈরিকৃত ইনফ্রাসট্রাকচার নির্মাণে ৬৫০০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকের সংখ্যা ১০১৮ জন।
একবার কি ভেবে দেখেছেন যে বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদেও এত মাতামাতি সেই বিশ্বকাপকে সফল করতে আমার বা আপনার ভাইদের জীবনও দিতে হয়েছে। (ভয়াবহ ও নৃশংস দিক)
তাও একজন বা দুইজন নয়, গুনে গুনে ১০১৮ জন বাঙালীকে জীবন দিতে হয়েছে। তাই আমাদের কাছে এই আয়োজন যতটা আনন্দের ঠিক ততটা বেদনার নয় কি?
অন্যদিকে স্কাই নিউজের একটি তথ্যমতে, ২০১৯ সালে পুরো কাতারে ৩,৩৩৪ জনের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে ইনফ্রাসট্রাকচার কাজের জন্য মৃত্যু হয় ৬৭৩ জনের। এছাড়াও ১২০ জন আত্মহত্যা, ৯৭ জন নির্মানাধীন উচু স্থান থেকে পড়ে গিয়ে এবং ৭৬ জন মেশিনারী ব্লাস্টের কারণে মারা যায়।
পড়ুন:
চলুন এবার লাস্ট আরেকটা হিসেবের মধ্য দিয়ে আজকের আলোচনা শেষ করি– কাতার বিশ্বকাপে ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচের কথাতো আমরা ইতিমধ্যে সবাই জানি। (ভয়াবহ ও নৃশংস দিক)
কিন্তু মুদ্রার অপর পাশের আরেকটি হিসাব যদি করতে বসি তাহলে– বিগত ১০ বছরে নির্মান কাজের জন্য শ্রমিক মারা গিয়েছে ৬৫০০ জন। তার মানে প্রতি সপ্তাহে মারা গিয়েছে ১২ জনেরও বেশি।
সুতরাং কাতার বিশ্বকাপের সিইও যখন আল জাজিরাতে ইন্টারভিউ দিচ্ছিল তখন তার বলা উচিৎ ছিল কাতার বিশ্বকাপের জন্য আমরা প্রতি সপ্তাহে খরচ করেছি ৫০০ মিলিয়ন ডলার এবং বলিদান দিয়েছি ১২টি জীবন।
তারপরও আমরা বিশ^কাপ নিয়ে মেতে উঠবো সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটু কি উপলব্ধি করেছেন, আপনার আমার মত মানুষদের ফুটবলের সেরা আনন্দটুকু দিতে প্রাণ চলে গেল ৬৫০০ মানুষের!!
(ভয়াবহ ও নৃশংস দিক)
আপনার লেখা অনেক ভালো লাগে বস