JANA BUJHA

একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট Best 2024

শত বছর শত যুগ পেরিয়ে ক্রমে বাঙালি জাতি আজ একুশ শতকে দন্ডায়মান। একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট কেমন  তা নিয়েই আজকে অল্প কিছু আলোচনা। 

একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিস্তারিত

এই শতকের আপাদমস্তক বিজ্ঞানের জয়ে জয়োকার। ‘বিশ শতক বিজ্ঞানের জন্মলগ্ন হলেও একুশ শতকের সবর্ত্র ভাবে এর বিচরণ। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগ সমগ্র বিশ্বকে যেন একটি পরিবারে পরিণত করেছে। মানুষের চিন্তা ও বিস্তৃতির প্রসারতায়

 

দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে এই শতকের প্রজন্মও। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই পরিবর্তন আমাদের জীবনে কিরুপ প্রভাব ফেলছে? কেননা শতক আসবে আর যাবে, কিন্তু এই আসা যাওয়ার মধ্যে যদি কোন গুনগত পরিবর্তন না হয় তবে তা সামগ্রিক পর্যায় অর্থহীনই বটে।

 

একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একুশ শতকে মানব জীবনযাত্রায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। যার জন্যে মানুষ ঘরে বসে দেশ থেকে দেশান্তরের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে সহজেই ফেসবুক, ইন্টারনেটের মধ্যে

 

দিয়ে। ঘরে বসে গুগলে সার্চ দিয়েই জেনে নিতে পারছে জানা অজানা নানা বিষয়। যা মানুষের জ্ঞানের প্রসারতাকে বহুগুনে বাড়িয়ে দিচ্ছে। (একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট)

একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট| বাঙালি জাতি

বাঙালি জাতি মাত্রই পরিবর্তনশীল। একুশ শতকে সময়ের প্রেক্ষিতে পুরাতনকে পেরিয়ে নতুনকে আকরে ধরে টিকে থাকার সেই পরিবর্তনশীল প্রবণতা বাঙালি জাতিতেও তাই প্রত্যক্ষ। কিন্তু তা কখনও স্বাতন্ত্র্যকে উপেক্ষা করে নয়। হয়ত তাই শত সংগ্রামের ভেতরেও এই জাতি তার ঐতিহ্যের সাথে বর্তমানের যোগসূত্রতায় ভবিষ্যতের দিকে পদাপর্ণ করছে এখনও।

একুশ-শতকের-আর্থ-সামাজিক-প্রেক্ষাপট
একুশ-শতকের-আর্থ-সামাজিক-প্রেক্ষাপট

 

তবে একুশ শতকের এই ভূখন্ডের জনজীবনে বাঙালির অবস্থান গত জায়গায় একটি পরিবর্তন বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়, তা হলো সাম্যের দূরত্ব। এই দেশের অতীত ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে যে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে এই সাম্যের

ঐক্য বিপ্লবী চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল। ফলে একজন নেতার আহ্বানে ভাষা ও সংস্কৃতির প্রশ্নে সকলে এক অবস্থানে হয়ে উঠেছিল অনড়।

 

কিন্তু ২১ শতকের প্রেক্ষাপটে বাঙালি জাতি কিংবা যদি বিশ্বায়নের কথা বলি, তবে দেখা যাবে মানুষের মনোভাবগত জায়গায় পরিবর্তন ঘটেছে। ইন্টারনেট কিংবা গনযোগাযোগ মাধ্যম গুলো মানুষকে একত্রিত করলেও এক্ষেত্রে মানুষ অনেকাংশেই

 

আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। এই আত্মকেন্দ্রিকতা মানুষের জীবনে দিনে দিনে একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতাকে বাড়িয়ে তুলেছে। যান্ত্রিক যোগাযোগ পরস্পর পরস্পরে আন্তঃযোগাযোগের জায়গা গুলো যেমন- পরিবার, আত্মীয়-

স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে সুসম্পর্ক কিংবা সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণেও অনেক ক্ষেত্রে থাকছে বিচ্ছিন্ন। যা মানুষের
চিন্তাচেতনাকে আরও বেশি এককেন্দ্রিকতায় আবদ্ধ করেছে বলেই ধারণা করা যেতে পারে।

 

তবে উন্নয়নের ধারায় বাহিত সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ তথা বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজ অবস্থানকে টিকিয়ে রাখতে ও ব্যক্তিক উন্নয়নের এ পর্যায়ে মানব জাতি ক্রমেই সচেতন হয়ে উঠছে। পৃথিবীতে জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ স্বাধীনতা প্রিয়। ফলে এই

স্বাধীনতাকে ঘিরে দেশ থেকে দেশে, জাতি থেকে জাতিতে, অঞ্চল থেকে অঞ্চলে এমনকি ক্ষুদ্রগোষ্ঠীর মধ্যেও দেখা গেছে যুদ্ধ, রাজনীতি পক্ষপাতিত্ব কিংবা অধিকার আদায়ে বাক্বিতন্ডা।

 

 

তবে এক্ষেত্রে এখন মানুষ ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বলে ধরা যেতে পারে। মানব জাতির শুরু থেকে বিশেষ করে নারীরা এক্ষেত্রে সমাজ বাস্তবতায় থেকেছে পরাধীন। কিন্তু একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সমাজ বাস্তবতার এই ধারায় আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেখানে নারী জাতিকে বলা চলে বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। (একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট)

 

মূলত একটি জাতির অর্ধাংশ হলো নারী সমাজ। এক্ষেত্রে যদি নারীরা পিছিয়ে থাকে তাহলে কোন জাতি তথা বিশ্ব কখনও উন্নয়নের ধারায় অবগাহন করে টিকে থাকতে পারে না বলেই ধারণা করা যেতে পারে। কিন্তু তারপরেও অর্থনৈতিক

অবস্থান থেকে বাংলাদেশ ততটা সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারেনি। এর পেছনের কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে সমাাজে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর অসমবন্টন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও যুব সমাজের বেকারত্ব। (একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট)

একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট| যুব সমাজ

মূলত একটি দেশের মূল চালিকাশক্তি হল সেই দেশের যুব সমাজ। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমান যুব সমাজই অধিক হারে বেকারত্বের সম্মুখীন। জানা যায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি।  এই বাড়তি বেকারত্বের হার বর্তমান যুব সমাজের জীবনকে হতাশায় পর্যভূষিত করছে। (একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট)

 

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রমকে কিছু ক্ষেত্রে দায়ী করা যেতে পারে। বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে বিষয়ভিত্তিক লেখাপড়ায় যেসব শিক্ষার্থীরা স্নাতক ও স্নাতকত্তর পর্যায় শিক্ষা লাভ করছে, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে সেই বিষয়ভিত্তিক লেখাপড়ায়

 

ও এর প্রয়োগ প্রক্রিয়ায় কার্যকারী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে না। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান শাখা গুলোর তুলনায় মানবিক ও সাহিত্য বিষয়ক শাখা গুলোর শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে আরও অধিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। (একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট)

 

কেননা বাংলাদেশে এই শাখা গুলোর বিষয় ভিত্তিক কর্মসংস্থান খুবই মুষ্টিমেয় বললেই চলে। ফলে সৃজনশীল সাহিত্য বিষয়ক শাখা গুলোর শিক্ষার্থীরা উক্ত বিষয়ে লেখাপড়ায় অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে এবং সর্বোপরি এই বিষয়ভিত্তিক

 

বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক গবেষণাধর্মী সাহিত্য বিষয়ক শিক্ষাক্রম যুব সমাজের ক্ষেত্রে এত কার্যকারী হওয়া সত্ত্বেও, এর উদ্দেশ্যগত জায়গায় ও প্রয়োগ প্রক্রিয়ায় অনেকাংশেই গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে বলে ধারণা করা যেতে পারে।

 

অপরদিকে সমাজে যারা উচ্চসীন ক্ষমতার অধিকারী সেই ক্ষমতাবানরা আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং তুলনা মূলক ক্ষমতাহীন ও নিম্নবর্গের জনমানব আরো দারিদ্র্যে রূপান্তরিত হচ্ছে। যেই ধারণার কথা মার্ক্স তার দ্বাদ্বিক বস্তুবাদ
তত্ত্বে অনেক আগেই উল্লেখ করেছেন। (একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট)

 

রাজনৈতিক অরাজকতায় কোন অপরাধ কিংবা অন্যায় দেখার পরও সাধারণ মানুষের মনে এক ধরণের নীরবতার সংস্কৃতির প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। যার চর্চা একটি জাতির জন্যে সুফল বয়ে আনতে পারে না। ফলে একুশ শতকের

ক্রমবর্ধমান মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদার সাথে প্রাপ্তির অপূর্ণতায় এক প্রকার ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে।
যা প্রকৃতির উপর অসমীচীন প্রভাব ফেলছে। (এ(একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট)কুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট)

 

যদিও এক্ষেত্রে একুশ শতকের উন্নয়নের ধারায় বাঙালি সংস্কৃতি কোন অংশে পিছিয়ে নেই। বাংলা সাহিত্য কিংবা শিল্পচর্চা যাই বলিনা কেন সব ক্ষেত্রেই মানুষ উরঢ়ষড়সধঃরপ চিন্তায় বিশ্বাসী। ফলে নিজ সংস্কৃতির ধারাকেই ধরে বসে থাকার

 

মানুষিকতা বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় নেই বললেই চলে। বরং প্রাচ্য দেশীয় সংস্কৃতির সাথে চলে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি চর্চা ও অনুশীলন। যা বিশ্ব সংস্কৃতির ধারাকে এক আন্তঃসংস্কৃতিতে পরিণত করেছে।

 

মূলত সময় কিংবা কাল কখনওই থেমে থাকে না। তা সর্বদাই পরিবর্তনের ধারায় বাহিত হয়। আগে মানুষ যা চিন্তা করতে পারত না এখন মানুষের কর্ম তারও উর্ধ্বে। যা সমাজ, রাষ্ট্র, সংস্কৃতি সকল ক্ষেত্রেই বিচিত্র। পুরাতনকে ঠেলে

নতুনকে গ্রহণ করার প্রবণতা মানুষের স্বভাবজাত। আর সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বরং পরিবর্তকে মেনে নিয়ে তার সঙ্গে সংঙ্গতিপূর্ণ জীবনযাপনই সংস্কৃতির ধর্ম। (একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট)

1 thought on “একুশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট Best 2024”

Leave a Comment