JANA BUJHA

নারী অধিকার কিভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে? / Best 2024

অধিকার শব্দটা দিয়ে আমরা মূলত দাবি বা ন্যায্য পাওনাকে বুঝে থাকি। অধিকার বিষয়টা মানুষের সহজাত পাওনার সাথে জড়িত। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা মানে তাদের যথাযথ মূল্যকে প্রতিষ্ঠা। নারীরা নারীকে এবং বিশেষ করে পুরুষরা নারীকে মূল্য দিবে আর তবেই গড়ে উঠবে নারী-পুরুষের যৌথ সমাজ। 

নারী অধিকার কিভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে?

 

 

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা:

 

মরা এককভাবে বসবাস করতে পারি না।  নারী-পুরুষের সহজাত সহঅবস্থানের ভিত্তিতে আমরা সমাজিক জীবন যাপন করে থাকি।

 

 

দেশ ও জনপদের প্রচলিত প্রথাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থা। যেমন উপজাতি অনেক সম্প্রদায় নারীতান্ত্রীক পরিবার হিসাবে গঠিত হয়, তেমনি আমাদের সভ্য সমাজ ব্যবস্থার ধারক ও বাহক হচ্ছে পুরুষেরা। (নারী অধিকার)

 

 

 

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সরকার নারীকে সমঅধিকারের ঘোষণা দিলেও বাস্তবেনারী অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ।শিক্ষিত সুশীল সমাজে প্রায়ই একটি বিষয় আমাদের নজরে পড়ে আর সেটা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে নারীকে কোনঠাসা করার প্রবণতা।

 

 

যেমন : কোন নারী পুরুষের দ্বারা নিগ্রীহিত হলে বা স্বামী বা তার পরিবার দ্বারা অত্যাচারিত হলে সেটা সোশাল মিডিয়াতে আসলে কমেন্ট বক্সে এক শ্রেণির নারী বিদ্বেষী পুরুষ তাদের উপর অযৌক্তিক অপবাদের বাক্যবাণ শুরু করে। সে সব তর্ক এক সময় অশ্রাব্য ভাষায় রুপ নেয়।

 

 

যা কিছু বাস্তব তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন জনের বেলায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার জন্ম দেয়। সবাইকে ঢালাও ভাবে দোষারোপ করা, গালমন্দ করা এসব নিচু মানুষিকতার পরিচয় দেয়। তবুও কিছু মানুষ তাদের সময় নষ্ট করে সোশাল মিডিয়ার পরিবেশকে কলুষিত করে তোলে।

 

 

একটা বিষয়ে প্রশ্ন দানা বাঁধে যে পুরুষেরা একজন অপরিচিত নারীকে যে কিনা ধরা ছোঁয়ার বাইরে তাকে কুৎসিত ও নোংরা মন্তব্য করে যাচ্ছেন অবলিলায়।  তার ঘরে যে নারী বসবাস করেন তার সাথে কি ভয়াবহতা
ঘটে প্রতিনিয়ত আল্লাহ ভালো জানেন।

 

 

নারীকে আমরা সাংবিধানিক অধিকার দিলে কি হবে – আজও আমরা সেটা নিশ্চিত করতে পারছি কিনা এটা অমিমাংসিত থেকেই যাচ্ছে। (নারী অধিকার)

 

 

আরো পড়ুনঃ

 

 

আমাদের সমাজের বর্তমান নারীরা একদিকে চাকরী অন্য দিকে পরিবার সামলে যাচ্ছে। এতে করে তাদের কি পরিমাণ কাজ করতে হচ্ছে তা কি ভেবে দেখা হয়েছে? (নারী অধিকার)

 

 

একবার একজন ভাইয়ার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার বন্ধু অমির সাথে আমার প্রায়ই ঘুরাফেরা হয়ে থাকে। আজ সে তার কাজিন এর বাসায় নিয়ে গিয়েছিল। (নারী অধিকার)

 

 

বাসাটা যেমন সুন্দর তেমনই পরিপাটি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভাবী কতটা রুচিসম্পন্ন্ মহিলা। আমরা একসাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বলতে জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়া কিসে জব করেন?

 

 

তিনি একটা প্রাইভেট কোম্পানীর নাম বললো। কোম্পানীটি পশু খাদ্য প্রস্তুতকারক। তারপর জিজ্ঞস করলাম ভাবী কি করেন?

 

 

ভাইয়া উত্তর দিল – না তোমাদের ভাবী কিছু করে না। ভাবী চা নিয়ে এলো সবাই চা খাচ্ছি। কেন জানি কি মনে হল বলেই ফেললাম। ভাইয়া ভাবী কিছু করে না তাহলে রান্না-বান্না বা ছেলেদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া এইগুলো কে করে?

 

 

ভাবী আমার দিকে তাকালো- আর হেসে বলে এইগুলো তোমার ভাইয়ের কাছে কোন কাজই না। ভাইয়া বলে উঠলো আরে এইগুলো আর এমন কি কাজ? (নারী অধিকার)

 

 

কথাটা শুনেই কেমন মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। বললাম তাহলে জাস্ট দুই দিনের জন্য
ভাবী কিছু না করে বসে থাক। আপনি একবার সব কাজ করেন বাসার। দেখেন এইগুলো কোন কাজ নাকি
খালি আপনারটাই কাজ। দেখলাম ভাবী খুব মজা পেল এবং সাহস নিয়ে বললো হ্যা-রাতুল ঠিক বলেছে।

 

 

আমি জানতাম না যে ভাই এতটা বদমেজাজ এর, আমাদের সামনে ভাবীকে এমন বাজে ভাবে দুইটা কথা বললো তা মুখে আসার মত না। (নারী অধিকার)

 

 

ভাবী লজ্জায় রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল। আর আমাকে বললো ছোট মানুষ ছোট মানুষ এর মত কথা বলায় ভাল। এই বলে সেও রুম থেকে বের হয়ে গেল। অমি আমার দিকে রাগ করে বলে বেশী পাকনামি করিস তুই।

 

 

তারপর খাবার খেয়ে আমরা চলে এসেছিলাম। এর দুই দিন পর ভাবী আমাকে ফোন দিল। প্রথমে চিনতে পারি নি, চেনার পর বললো তোমার সাথে কথা আছে। আমি বললাম কি কথা ভাবী? উনি বললেন বাসায় আস আজকে।

 

 

অমিকে ছাড়ায় ভাবীর বাসায় গেলাম। তখন দুপুর ২ টা বাজে। বাসায় ভাইয়া ছিল না। গিয়ে দেখি উনি অনেক কিছু রান্না করেছেন। খেতে খেতে কথা হচ্ছে। শোন রাতুল তুমি আমার চোখ খুলে দিয়েছ।

 

 

আমি পড়াশোনা শেষ করে বাসায় বসে আছি। তোমাদের ভাই আমাকে সবসময় বলে আমি না কি বলদ। কোন কাজের না। কথাটা শুনে এতটাই খারাপ লাগে তা বোঝানোর মত নয়। (নারী অধিকার)

 

 

কিন্তু ছোট থেকেই আমার স্বপ্ন আমি একজন সাংসারিক মেয়ে হব। কিন্তু দেখ ভাই, যে সংসারে আমার মূল্য শুধু কাজের লোকের মত সেখানে এটা আমার সংসার হয় কি করে? (নারী অধিকার)

 

 

তুমি আমার জন্য একটা জবের ব্যবস্থা কর। এই উপকার টুকু কর। আমিও কিছু করতে চাই। দেখি এরপর তোমার ভাই কি বলে? সবসময় মানুষের সামনেই আমাকে ছোট করে কথা বলে। আমি কিছু করি না। আমি কোন কাজের না ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

 

 

এরপর ৩/৪ টা ভাইভা দেয়ার পর ভাবীর একটা জব হল। আমি আর অমি উনাকে নিয়ে ভাইবার জন্য যেতাম। ভবী প্রথম বেতন এর টাকা দিয়ে আমাকে আর অমিকে শার্ট-প্যান্ট কিনে দিয়েছিল।

 

 

কিছু দিন পর ভাবী নতুন বাসা নিতে চাইলো। অমিকে বললো অফিসের সুবিধার জন্য আমার বাসা লাগবে। কিন্তু ঘটনা ছিল অন্যরকম।  এইকথা শুনেতো আমি হতবাক। এটা কি হলো? আমি কি তাদের সংসার ভেঙে দিলাম। ভাই আমাকে আর অমিকে বাসায় যেতে বললো।

 

 

ওরে আল্লাহ- অমি আমাকে ঝারিও দিল খুব। তোর জন্য আজ ভাই ভাবীর মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। আমি অমিকে বললাম তাদের সম্পর্ক ভাল ছিল কবে? বেশী কথা না বলে এখন চল। (নারী অধিকার)

 

 

নারী অধিকার কিভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে?

 

 

ভয়ে ভয়ে বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি, ভাই ভাবীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছেই। ভাবী আমাদের ড্রইং রুমে বসতে বললো। ভাই আসলো, এইবার বেচারা অনেক নরম হয়ে গেছে।

 

 

আচ্ছা , তোর ভাবীকে বলতো, এইসব কি করছে সে? নতুন বাসা নিতে  হবে কেন? আর সে নাকি একা থাকবে ছেলে মেয়ে কে নিয়ে। কি বলে এইসব। এইকথা বলা আর সাথে সাথে ভাবী এসে যা বললো আমি হতবাক।

 

 

শোন আমি তোমার সাথে সংসার করছি আজ ১০ বছর হতে চললো। তুমি নিজে বল কোন দিন আমাকে ধমক ছাড়া কথা বলেছ? তুমি যা বলবে তাই ঠিক্। তাই তাই আমাকে পালন করতে হবে।

 

 

তুমিতো আমাকে মানুষই মনে কর না। আমিও মানুষ। আজ ৩ মাস হলো চাকুরিতে আছি। বেতনের টাকাটা পুরোটা তোমার হাতে দিতে হবে। রাতের খাবারটাও গরম গরম দিতে হবে। বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে আসতে হবে।

 

 

এ দিক সেদিক কিছু হলেই আবার অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করবে। মানুষ কি বলবে এই জন্য আমি ১০ বছর সহ্য করেছি। আর না, আমি এখন নিজেকে মূল্য দিতে শিখেছি। ভাই চুপ করে বসে আছে কোন কথা নেই।

 

 

আমি এই সুযোগে দুটো কথা বললাম- ভাই- ভাবী দুজনেই শুনুন। আমার আব্বা-আম্মা দুজনেই চাকরি করতেন। আমি দেখতাম আম্মার সাংসারিক কাজে আব্বা সবসময় হেল্প করতেন। ঘরবাড়ি পরিষ্কার,আমাদের পড়তে নিয়ে বসা এই কাজগুলো আব্বা করতেন।  আর বাকী কাজ আম্মার।

 

 

আসলে সংসারতো দুইজন এর, ভাই একা যদি সংসার করেন তাহলে শুধু সংসারের নাম দিয়ে জীবন কাটানো হবে সংসার হবে না। ভাই আপনি অনেক পড়াশোনা জানা মানুষ আপনাকে আমি বোঝানোর মত ক্ষমতা নেই আমার।

 

 

কিন্তু আমাদের মা-বোনরা যে কাজ করে তার কাজে সহায়তা না করলেও অন্তত প্রশংসাতো করা যায়। তাও যদি না করেন তাহলে তারা কি জন্য কার জন্য কষ্ট করছে? (নারী অধিকার)

 

 

সবাই চুটচাপ বসে আছে। ভাই ভাবীর দিকে তাকিয়ে বললো তোমার বাসা ছাড়ার দরকার
নেই। আমাকে আর একটা মাস সময় দাও। এই বলে ভাই উঠে চলে গেল। ভাবী আমাদের সাথে হেসে হেসে
বললো ফ্রেশ হয়ে আস খাবার দিব।

 

 

এরপর ভাবী বাসায়ই ছিল নতুন বাসায় উঠে নি। ভাবী আমাকে সবসময় ধন্যবাদ দেয় তোর একটা কথায় আমাদের সংসারটা বদলে গেছেরে ভাই। এটা এখন আমার সংসার মনে হয়। এখন আমি এই সংসারের গৃহিণী।

 

 

পড়ুনঃ

 

 

 

এই ঘটনাতে যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে তা হলো ভাই এর মেন্টালিটি ধারী মানুষ আমাদের সমাজের অনেক পুরুষ। আসলে নারীরাও কাজ করে কিন্তু তার কাজের মূল্যায়নটা যদি সে না পায় তাহলে সে কার জন্য কি করছে? কোন অর্থই থাকে না কাজের। তারাতো আমাদের জন্যই করে।

 

 

এইরকম অবস্থা আমাদের আশেপাশে অহঃরহ। তাই নারী অধিকার মানে তাদের কথায় সব হবে এমন না। নারী অধিকার মানে তাদের যথাযথ মূল্যায়নটা করা, তাদের পাশে থাকা, তাদের সহযোগিতা করা, শুধু তাদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়া নয়।

 

 

আরে যা এ কি বুঝে, এতো কোন কাজেরই না, আমি ইনকাম করি আমি যা বলি তাই ঠিক, ওর কাজইতো সংসার দেখা, আমার কথার বাইরে গিয়ে এটা করেছিস, তোর এত সাহস কে দিল, সব সিদ্ধান্ত আমার ইত্যাদি মনোভাব গুলো বদলে ফেললেই হয়ত নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সব নারীকে চাকুরীজীবী বা স্বাবলম্বী হতে হবে এমন নয় কিন্তু।

 

 

আমরা শুধু পুরুষদের বিষয় গুলো নিয়ে কথা বললাম কিন্তু নারীদের কি কোন দায়িত্ব নেই নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায়? হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। এখনকার অনেক নারীকেই দেখা যায় ডোন্টকেয়ার মেন্টালিটি পোষন করে। আমি নিজে স্বাবলম্বী তাহলে আমার অন্যের কথামত চলতে হবে কেন?

 

 

আসলে অন্যের কথামত চললেই যে কেউ ব্যক্তি স্বাধীনতা হারাবে এমনটি নয় কিন্তু। তাই পারস্পারিক সহযোগিতার মনোভাব হচ্ছে এর একমাত্র সমাধান। আজকে নারীদের বিষয় নিয়ে আর কথা বলবো না।

 

 

অন্য আর একটা লিখায় বলার চেষ্টা করবো নারীদের কি করণীয় নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায়। নারী অধিকার কি সেটা আগে বোঝতে হবে। আমার মন যা চাচ্ছে তা করতে পারলাম তার নাম নারী অধিকার না।

 

 

আমার এক পরিচিত আপু। বিয়ের খুব অল্প দিনের মাথায় দুলাভাই এর সাথে মারাত্মক দ্বন্দ্ব। সমস্যা হলো ভাই চায় আপু পর্দা করুক আর আপু হচ্ছে নিজেকে প্রগতিশীল হিসেবে দাবী করে। তিনি স্কার্ট আর টি-শার্ট পড়ে কমফোর্ট।

 

 

এখন বোঝেন অবস্থা। দুইজন দুই মেরুর বাসীন্দা। এই নিয়ে নানান সমস্যা। যাই হোক কেউ কাওকে মেনে নিতে পারে নি শেষে ছাড়াছাড়ি। আমার প্রশ্ন হলো এই সম্পর্কের মধ্যে আপুর অভিযোগ ছিল ভাইয়া তার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। আপনার কি মনে হয়? ভাইয়া ঠিক নাকি আপুর অভিযোগ?

 

 

যদি একজন স্বামী তার স্ত্রী কিভাবে চলবে বা কি করবে সে ব্যাপারে কথা বললে ব্যক্তি স্বাধীনতা বিনষ্ট হয়,তাহলে এটা কেমন ধরনের স্বাধীনতা আমার বোধে আসে না। যাক,এইভাবেই নারী ও পুরুষ মিলেই নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। (নারী অধিকার)

 

 

তাই নারীদের মূল্যায়ন করার সুন্দর মানসিকতা ও তাদের ডোমিনেট করার মনোভাব বাদ দিয়ে, সহযোগি বন্ধু হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজের নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা পাক সেটাই জানাবোঝা পরিবারের চাওয়া। ভাল থাকুক আমাদের প্রতিটি নারী।  

 

 

Leave a Comment