JANA BUJHA

কানাডার বেগমপাড়া কি দেশের জন্য হুমকী!!!

কানাডার বেগমপাড়া কি দেশের জন্য হুমকী!!!

বেগম শব্দটি একটি
তুর্কি শব্দ। এই শব্দটি মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় সম্ভ্রান্ত মহিলা দের পরিচয় প্রকাশক
পদবী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্থ-বিত্ত আর ক্ষমতার যারা সমাজের প্রথম কাতারে অবস্থান
করেন তারাই সম্ভ্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হন। বছর ১০০ আগেও বেগমদের দাস-দাসী ছিল নিজেদের
প্রয়োজন অনুসারে। 


সেই যুগের বেগমদের কিছু করতে হতো না, দাস-দাসীরা তাদের সমস্ত কাজ
করতেন। সেই বেগমদের যেমন ছিল দাম্ভিকতা, অর্থ তেমনি ছিল প্রভাব।  বর্তমান সময়ে কি সেই আগেকার মতো বেগম নেই আমাদের
সমাজে? হ্যাঁ, আছে বলেই বর্তমানে বেগমরা থাকেন পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত নগরীতে। 


দেশের
সমাজে জীবনের নিরাপত্তা নেই, জীবনযাত্রা মান নিম্নমানের, পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ ও
প্রতিষ্ঠান কোনটাই নেই, এই সমাজের মৌলিক চাহিদার সবগুলোতেই নানা সমস্যা ইত্যাদি নানা
অজুহাতে আমাদের সমাজের বেগমরা পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত শহর গুলোতে আবাসস্থল গড়েছে। এই
বেগমদের সংখ্যা একজন, দুইজন আর পাঁচজন নয়। দেশের শত শত বেগমরা এখন ভিড় করেছেন বিদেশের
মাটিতে।


আর এই বেগমরা এক জায়গায় মিলিত হওয়াই তৈরি হয়েছে পাড়া বা মহল্লার। আর যে
কারণেই পাড়ার নাম হয়েছে বেগমপাড়া। এই বেগম পাড়াগুলো কেন, কিভাবে, কোথায় আর দেশের
অর্থনীতির জন্য এখন কত বড় হুমকি তা নিয়ে আলোচনার চেষ্টা চলবে এই অনুচ্ছেদে।

বেগমপাড়া পরিচিতি

বেগম পাড়া অবস্থিত
কানাডার টরেন্টো (630.20km2 area) শহরে। অনেকের ধারণা বাংলাদেশী অভিবাসীরা বেগমপাড়া
তৈরি করেছেন কানাডায়। কিন্তু কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। মূলত ভারত, 


পাকিস্তানের কিছু
মানুষ দুবাইয়ে বসবাস করতেন কিন্তু সেখানে থাকাটা ছিল একটু কষ্টের। তাই তারা কানাডার
টরেন্টোতে গিয়ে বাড়ি কিনে স্ত্রী-সন্তানদের রেখে আসলো। এরপর বেগমদের সাহেবরা মাঝে
মাঝে কানাডায় পরিবারের কাছে গিয়ে সময় কাটাতেন তারপর আবার ফিরে যেতেন দুবাইয়ে। ঠিক 


এইভাবে ভারতীয়, পাকিস্তানী নানান ব্যবসায়ী ও চাকুরিজীবীরা আস্তে আস্তে টরন্টোতে স্থায়ীভাবে
বসবাস শুরু করলেন আর কানাডায় নাগরিকত্ব পেয়ে স্থায়ী আবাস গড়লেন। কানাডায় তখন নাগরিকত্ব
পাওয়া ছিল সহজ। কেউ যদি কানাডায় ব্যবসা শুরু করতেন বা ব্যবসায় কিছু পরিমাণ টাকা
বিনিয়োগ 


করতেন তবেই নাগরিকত্ব দিয়ে দেয়া হতো কানাডার। বাড়ির ক্রেতা দুর্নীতি করে
নাকি চুরি-ডাকাতি করে অর্থ উপার্জন করেছে তা দেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করতেন না কানাডার
সরকার। আর 


এইভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে যাদের ইনকাম ভালো ছিল বা কালো টাকা সাদা করার প্রয়োজন
ছিল তারা অধিকাংশই টরন্টোতে বসবাস শুরু করলো। প্রশ্ন আসতেই পারে সবাই কানাডার টরেন্টোতে
কেন জড়ো হয়েছিল? আসলে আপনি ভাবুন তো, আপনি যার সাথে ব্যবসা করেন বা চাকরি অথবা 


যে আপনার কাছের মানুষ তাকে বাদ দিয়ে কি সৌদি আরব অথবা ইরানের একজন অপরিচিত মানুষের সাথে
মিশতে যাবেন?  নাকি আপনার পরিচিত কাউকে প্রতিবেশী
করতে চাইবেন? নিশ্চয়ই অপরিচিত বাদ দিয়ে পরিচিত কাউকে প্রতিবেশী হিসেবে চাইবেন। যে
আপনার পরিচিত বিশ্বস্ত ও 


আপনার কালচারের মানুষ তার সাথেইতো আপনার বোঝাপড়া ভাল হবে।
ঠিক টরন্টোতে এমনটিই হয়েছে বলে ধারণা করা যায়।

 

ধরুন, ভারতীয় ব্যবসায়ী
টরন্টোতে বসবাসের জন্য বাড়ি কিনেছে। তারা হয়ত বাংলাদেশী ও পাকিস্তানি অন্য দশজনের
সাথে ব্যবসা করে। তখন ভারতীয় ব্যবসায়ী বাংলাদেশী একজনকে পরামর্শ দিল 
টরন্টোতে বাড়ি
কেনার জন্য। যেহেতু ব্যবসা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীও বাড়ি কিনবে ভাবছে তাই সে 


তার সাথেই
কিনতে রাজি হল যে তার ব্যবসায়িক পার্টনার। আর এভাবেই আস্তে আস্তে তৈরি হতে থাকলো বেগম
পাড়া। যখন আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর অনেক দুর্নীতিবাজ, ব্যবসায়ী বা ভালো ইনকাম
করা চাকরিজীবীরা বাড়ি কিনে বসবাস শুরু করলো তখন টরন্টোতে বাড়ি কেনাটা অনেকটাই 


সামাজিক
মর্যাদার দিক থেকে হাইক্লাস সোসাইটির মানদণ্ডে পরিণত হল। যেহেতু কানাডা সরকারের এতে
কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না, তাই সহজেই সেখানে বসবাস শুরু করল ভারতীয়, বাংলাদেশি, পাকিস্তানী
স্থায়ী নাগরীকরা। আর এভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠলো বেগমপাড়া। আর তখন একজন 


,দুজন করে
বাড়ি কিনে বসবাস করতে করতে একটা এরিয়াতে আমাদের এই উপমহাদেশের বহু মানুষ জড়ো হয়ে গেল।
এরপর যাদেরই ভাল টাকা-পয়সা ছিল তারাই সেইসব এলাকায় বাড়ি কিনতে থাকলো। আর এভাবেই ধীরে
ধীরে গড়ে উঠলো বেগমপাড়া। এই বেগমপাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি। 


এটি মূলত একটি পাড়া নয়,
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিশেষকরে এই উপমহাদেশের লোকেরা যেখানে বসবাস করে সেই এলাকার নাম
হয়ে গেল বেগমপাড়া। বেশ কিছু বেগম পাড়া থাকলেও এর মধ্যে  উল্লেখযোগ্য হচ্ছে টরন্টোর ডাউনটাউনের রিচমন্ড হিল
এর বেগম পাড়াগুলো।

 

 

বেগম পাড়ায় কারা বসবাস করে


দুই উপায়ে কানাডায়
বাড়ি কেনা যায়।

    ·        সরাসরি নগদ টাকা দিয়ে বাড়ি কেনা যায়।

  •  নির্দিষ্ট পরিমাণ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ২০ থেকে ২৫ বছর মেয়াদী
    কিস্তির মাধ্যমে ব্যাংক         থেকে লোন নিয়ে বাড়ি কেনা যায়।

 

টরেন্টোতে যে পুরাতন বাড়ি গুলো আছে
সেগুলো দুই লক্ষ ডলার থেকে দুই মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দাম হতে পারে। আর যে নতুন বাড়িগুলো
আছে তা দুই মিলিয়ন ডলার থেকে বিশ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দাম হতে পারে। যখন ভারতীয়,
বাংলাদেশী বা অন্যকোন দেশের নাগরিক কানাডায় গিয়ে পাঁচ 


মিলিয়ন বা দশ/পনের মিলিয়ন
ডলার দিয়ে একটি বাড়ি কিনবে, তখন সঙ্গত কারণেই কানাডার নাগরিকদের মাঝে এই প্রশ্নটি
উদয় হবে যে, এরা কিভাবে এত অর্থ খরচ করে বাড়ি কিনতে পারে? যেহেতু কানাডায় অর্থ উপার্জন
করা এতটা সহজ নয়। তাছাড়া কানাডায় ভ্যাট-ট্যাক্স, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস 


বিলসহ অন্যান্য
সরকারী ট্যাক্স যথাসময়ে পরিশোধ করতে হয় এবং কানাডিয়ান নাগরিকরা কখনোই এইসব হেলাফেলা
করেন না বা না দেয়ার চিন্তাও করেন না।

আবার একজন কানাডিয়ান সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম
করে হয়তো ২০০ ডলার ইনকাম করেছে, সেখানে তার পক্ষে বিশ মিলিয়ন ডলার দিয়ে বাড়ি কেনা
দুঃস্বপ্নই বটে। তাই কানাডিয়ানরা অভিযোগ করতে শুরু করল বাহির থেকে এসে অভিবাসীরা কিভাবে
এত বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে পারে? 

কানাডার বেগমপাড়া কি দেশের জন্য হুমকী!!!


যে কারণে কানাডা সরকার একরকম বাধ্য হয়েই নাগরিকত্ব
দেয়ার ব্যাপারে একটু কঠোর হয়ে গেল। আর আমাদের অঞ্চলের বাসিন্দারা যখন নগদ টাকায়
বাড়ি কিনতে শুরু করল তখন টরন্টোর বাড়ির দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হতে থাকলো। যে কারণে
সেখানে অবস্থানরত কানাডিয়ান ও অন্যান্য সাধারণ 


অভিবাসীরাও বেগম পাড়ার বাসিন্দাদেরকে
নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শুরু করে। আর এই কারনেই বেগম পাড়া কানাডায় আলোচনা ও
সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে গেল। অন্যদিকে কানাডায় যারা সাধারণ অভিবাসী তাদেরও
নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বেগম পাড়ার বাসিন্দাদের জন্য।

 


বেগমপাড়ায় বসবাসকারীরা নগদ অর্থ দিয়ে
বাড়ি কিনছেন। আর তাদের জন্য টরন্টোর বাড়ির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে পাঁচ পারসেন্ট
ডাউনপেমেন্ট দিয়ে এক মিলিয়ন ডলার এর বাড়ি ২০ থেকে 25 বছরের কিস্তি সুবিধায় কেনা
যেত সেখানে বাড়ির দাম বেড়ে হয়েছে ১.৫(আনুমানিক) মিলিয়ন ডলার 


বা তারও বেশী। সে কারণে
সাধারণ খেটে খাওয়া অভিবাসীরাও ক্ষিপ্ত বেগমপাড়া বাসিন্দাদের প্রতি। তাছাড়া সাধারণ
অভিবাসীদের সাথে বেগম পাড়ার বাসীন্দাদের তেমন কোনো সম্পর্কও গড়ে ওঠে নি। কারণ তারা
তাদেরকে সমাজের অন্যান্য সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা করে রাখার মানসিকতাই পোষণ করে। শুধুমাত্র
যারা তাদের একই ক্লাসের তাদের সাথেই মেশার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

 

বেগম পাড়ায় যারা থাকেন তাদের আয়ের
উৎস কি? এই প্রশ্নটা যে কারো মনেই আসবে। জানা গেছে আমাদের দেশের ব্যবসায়ী, সরকারি
কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা সেখানে বাড়ি কিনেছেন। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন
জানতাম কানাডায় রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই বাড়ি কিনেছে কিন্তু এখন দেখা 


যায় সরকারি কর্মকর্তাদেরও
বাড়ি আছে বেগমপাড়ায়। প্রশ্ন হল একজন সরকারি কর্মকর্তার মাসিক বেতন কি ৫ লক্ষ টাকারও
বেশি হবে? উত্তর নিশ্চই কখনোই না। তাই কি করে একজন সরকারি অফিসার এই সম্পদ করতে পারেন
মাথায় ধরে না।


আবার যদি ব্যবসায়ীও হয়, তবে বাংলাদেশে এমন
কয়জন ব্যবসায়ী রয়েছে যে কিনা শত কোটি টাকা দিয়ে কানাডায় বাড়ি কিনবে? কানাডার সরকার
এর তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় এপর্যন্ত ২০০ অর্থ পাচারকারী বাংলাদেশীর খোঁজ পেয়েছেন
কানাডীয়ান সরকার কিন্তু প্রবাসীদের হিসেবে এই সংখ্যা 


হাজারেরও বেশি হবে। অন্য আর এক
তথ্য থেকে জানা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের অধিকাংশেরই
স্ত্রী-সন্তান বসবাস করেন বেগম পাড়ায়। তাই পরিসংখ্যান ও বাস্তবতার নিরিক্ষে এটা বলাই
যায় যে, হাতে গোনা কয়জনবাদে যারা বেগম পাড়ায় বাড়ি কিনেছেন তারা হয় কালো টাকার মালিক
অথবা দুর্নীতিবাজ।

 


বেগম পাড়া নিয়ে নানান মন্তব্য

·   হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ ২০১৪ সালে বাজেটের উপর সংসদে বক্তৃতায়
অর্থপাচার,ব্যাংক শেয়ার বাজারের  টাকা লুটের ব্যাপারে বলতে গিয়ে তিনি বলেন- “মালয়েশীয়ায়
ও কানাডায় টাকা পাচার হচ্ছে। অনেকেই বাড়ি কিনে বেগমপাড়া নামে কানাডায় আলাদা পাড়া
গড়ে তুলেছে। এত টাকা কোথায় পেল?

 

·    লেখক ও সাংবাদিক ফারুক
ওয়াসিফ – “সেকেন্ড হোমঃ বেগম পাড়ার সাহেব ও দেশ বিক্রির কচ্ছপেরা” এই শিরোনামে একটি
লেখা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি সরাসরি বেগম পাড়ায় বাড়ি ক্রয় করা বাসিন্দাদের দেশ বিক্রির
কচ্ছপ বলে ধিক্কার দিয়েছেন।

 

·     সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম বৃটেনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট
পত্রিকায় বলেন
কানাডার টরন্টোর একটি জায়গা কে স্থানীয়
বাংলাদেশীরা বেগমপাড়া বলে। এই বেগম পাড়ার বেগমদের সাহেবরা বেগমদের সাথে থাকেন না।
তারা থাকেন বাংলাদেশে, আর কষ্ট করে টাকা বানান। আর যখন ক্লান্তি আসে টাকা 


বানাতে বানাতে
তখন বেগম পাড়ায় এসে পরিবারের সঙ্গে আরামের সময় কাটান। এই বাংলাদেশি বেগমদের আরাম-আয়েশ
দেখলে হিংসায় জ্বলে মরতেন মোগল বেগমরাও। তাদের অ্যাপার্টমেন্ট বিলাসী 


সামগ্রীতে ভরা।
তাদের ছেলেমেয়েরা সেই দেশের ভালো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। বেগম দের
কাজ হল ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করা, আর আরাম করা। এছাড়া কানাডায় এরকম অনেকগুলো বেগম
পাড়া আছে।

 

·       
 মির্জা ফখরুল ইসলাম
২০২০ এর জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যাপারে অভিযোগ করতে গিয়ে বলেন- বর্তমান
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই টরন্টোর বেগম পাড়ায় বাড়িঘর কিনেছেন।

 

 

 

কি কি কারণে বেগমপাড়া গড়ে উঠলো

বাংলাদেশী যারা কানাডায়
বাড়ি ক্রয় করেছেন তাদের অন্যতম সুবিধা হচ্ছে কানাডার সরকারের কাছে অর্থ কিভাবে উপার্জন
হয়েছে তার কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না। তাই এদেশ থেকে কালো টাকা 


সাদা করতে কানাডায়
নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে বিনিয়োগ করা শুরু করল। আর এতে কানাডিয়ান সরকারেরও লাভ,
আর যারা বিনিয়োগ করল তাদেরও কালো টাকা সাদা হয়ে সম্পদে পরিণত হল। আর এই সুবিধার জন্যই
তারা কানাডায় বেগমপাড়া গড়ে তুলতে পেরেছে।

 

নিজের ইচ্ছা স্বাধীন চলার সুবিধা

আমাদের দেশে যেমন
একে অন্যকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করে, উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে তেমন নয়। ধনকুবেররা ইচ্ছাঅনুযায়ী
যা ইচ্ছা করতে পারেন। আমাদের দেশে যা সামাজিকভাবে অতি জঘন্য কাজ, 


সেটা হয়তো কানাডিয়ান
কালচারে খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কি বুঝাতে চেষ্টা করা হচ্ছে আশা করি পাঠকরা বুঝতে পেরেছেন।
আর নিজের মত করে যা ইচ্ছা ( বৈধ বা অবৈধ) তা করার একটা বিকৃত মানসিকতা যেন ধনকুবেরদের
অন্যতম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

 

 

 উন্নত জীবন

আমাদের প্রত্যেকের
মধ্যে মোটামুটি একটা কমন চিন্তা হচ্ছে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর জীবনব্যবস্থাই হচ্ছে উন্নত
ও সফল জীবন। জীবন মানে এই রকম হওয়া উচিত- থাকা-খাওয়া, বাজার,রাস্তাঘাট, অফিস-আদালতে
থাকবে পর্যাপ্ত সুবিধা আর স্বাধীনতা সেই সাথে থাকবে কাড়ি কাড়ি টাকা আর সম্পদ। উন্নত 


জীবনের প্রত্যাশায় বেগম পাড়ায় ভিড় করছেন টাকাওলারা। তাছাড়া সন্তানের পড়াশোনার
জন্য উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায় কানাডায়। তাই ভালো মানের স্কুলে ছেলেমেয়েদের
ভর্তি করার জন্যও বেগম পাড়ায় বসবাস তাদের। যত বেশি টাকা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
পড়া যাবে ততো বেশি ভালো প্রতিষ্ঠান সেটি এমন চিন্তা ভাবনাও অনেক অভিভাবক করে থাকেন।
যাদের প্রচুর টাকা আছে তারা এই চিন্তা-ভাবনার ফলেই হয়তো কানাডাযর বেগম পাড়ায় বাড়িঘর
কিনেছেন।

 

রাজনৈতিক অস্থিরতা

আমাদের দেশে প্রায়
সব সময়ই রাজনৈতিক অস্থিরতা লেগেই রয়েছে। তাই যারা আজকে অবৈধ টাকা তৈরি করেছেন তাদের
জন্য নিরাপদ একটা আবাসের প্রয়োজন আছে। এই দেশে থাকতে সমস্যা হলে ঐ দেশে গিয়ে বসবাস
করা যাবে। এমন চিন্তা-ভাবনা থেকেই অনেক রাজনৈতিক নেতারা বেগম 


পাড়ায় বাড়ি কিনেছেন। আমাদের
দেশে এক দল ক্ষমতায় এলে অন্য দল তাদের  উৎপাত
করে। আর যখন এমন সমস্যাগুলো তৈরি হয় তখন কানাডায় গিয়ে বসবাস শুরু করবে স্থায়ীভাবে
তাও নিজের বাড়িতে। আর এই চিন্তা থেকেই সেখানে বাড়ি কেনা। আবার যেসব সরকারি অফিসাররা
এদেশে যে রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপেষকতায় আছেন তারাও দল বদলানোর সাথে সাথে নিরাপদ আবাস
গড়বেন 


কানাডায়। সেই চিন্তা থেকেও অনেক অফিসার বাড়ি কিনতে পারেন। তাই দুই দেশে যখন স্থায়ী
বসবাসের জন্য উপযুক্ত জায়গা থাকবে তখন এইসব রাজনৈতিক সংকটের সময় বা যখন জীবনের ঝুঁকি
তৈরি হতে পারে, এই ধরনের সময়গুলোতে তারা প্রয়োজন অনুসারে কানাডায় বসবাস করে। আর
প্রয়োজন অনুসারে বাংলাদেশের বসবাস করে। তাই রাজনৈতিক নেতাদের জন্য এইটা একটা ভালো
উপায়।

 

 

কিভাবে বেগম পাড়া আলোচনায় আসল

বেগমপাড়া নিয়ে
প্রথম হিন্দিতে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি হয়েছিল ২০১০ সালে। ঐ সময় থেকেই বেগম পাড়া ব্যাপকভাবে
আলোচনায় আসে। অনেকে মনে করেন এই ডকুমেন্টারি তৈরীর কারণে 


বেগম পাড়া নামটির জন্ম। আবার
অনেকের মতে আগেই বেগমপাড়া নামটির প্রচলন হয় তখন ডিরেক্টার সেই নামকে কেন্দ্র করে তৈরী
করেন তার ডকুমেন্টারী। যার নাম ছিল “বেগমপুড়াঃ দ্যা ওয়াইভস কলোনি” । বেগমপাড়ার নাম
কখন কিভাবে জন্ম নিল তার সঠিক দিন তারিখ কেউ বলতে 


নো পারলেও  অধিকাংশ মানুষের মত হল কোন ডিরেক্টর বা কবি-সাহিত্যিক
এর নামকরণ করেন নি। মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়েই সৃষ্টি হয়েছে বেগম পাড়া। এই ডকুমেন্টারিটি
প্রকাশ পাওয়ার পর বেগম পাড়ার নাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে গেল। সেই সাথে সবাই জানতে পারল
যে এখানে যাদের বসবাস তারা কেমন আছেন।

 

সুখের মুখোশ পরে
কতটুকু সুখে আছেন বেগমপাড়া বাসী তা বোঝা যায় এই ডকুমেন্টারিটি দেখে। এই ডকুমেন্টারিটি
পরিচালনা করেছিলেন রাসমী লাম্বার। যিনি এতে তুলে ধরেছেন  একাকী জীবন, বিচ্ছিন্ন পরিবার, সন্তানদের উজ্জ্বল
ভবিষ্যতের জন্য বাবা-মায়ের ত্যাগ, হতাশা, বিষন্নতাসহ ইত্যাদি নানা বিষয়। 


কিন্তু সেখানে
যেসব পরিবার এর বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তাদের স্বামীরা মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি বা ব্যবসার
প্রয়োজনে বসবাস করেন আর স্ত্রী-সন্তান কানাডায় থাকেন। কিন্তু সেখানে নির্দিষ্ট করে
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীদের দেখানো হয়নি।


এছাড়াও বিভিন্ন টেলিভিশন
চ্যানেল, ম্যাগাজিন, পত্রিকায় বেগমপাড়া নিয়ে অসংখ্য লিখালিখি হয়েছে। প্রচার মিডিয়ার
অনেক প্রতিষ্ঠান বেগমপাড়াবাসীদের জীবন ব্যবস্থা কে তুলে ধরতে চেয়েছেন, আর অনেকে বোঝাতে
চেয়েছেন দামি বাড়ি গাড়ি টাকাপয়সা মানুষকে প্রকৃত সুখ দিতে পারেনা। মোটকথা 


বিলাসবহুল
জীবন ব্যবস্থার জন্যই মূলত বেগমপাড়া নিয়ে এত আলোচনা আর-সমালোচনা। আমাদের দেশের টিভি
চ্যানেলগুলোতে একাধিকবার নিউজ প্রচারিত হয়েছে বেগম পারা নিয়ে। সেসব নিউজে 


উঠে এসেছে
বেগম পাড়ায় বসবাসকারীরা দেশের অর্থ পাচার করছে, দুদক তাদের তালিকা চেয়েও ব্যর্থ
হচ্ছেন, সরকারের মাথাব্যথা নেই তাদের ব্যাপারে, দশটি বেগম পাড়া গড়েছে বাংলাদেশীরা
ইত্যাদি নানা খবর। আর সব মিলিয়ে বেগমপাড়া হয়ে উঠেছে আলোচনার বিষয়।

 

 

বেগম পাড়া কি দেশের জন্যে হুমকি!!

দেশের হাজার হাজার
কোটি টাকা পাচার করছে বেগম পাড়ার বাংলাদেশীরা। যেখানে প্রবাসীরা দিনরাত খেটে দেশের
জন্য বিদেশ থেকে অর্থ পাঠাচ্ছে এবং রেমিটেন্স বৃদ্ধি করছে দেশের, সেখানে 


বেগম পাড়ার
বাসিন্দারা সাধারণ মানুষ আর শ্রমিকদের পরিশ্রমের টাকা দেশের বাইরে পাচার করছে। তাও
এর কারণ যদি হয় বিলাসিতা, তাহলে কি করে বলা যায় যে এটা দেশের জন্যে হুমকি নয়?!!!!


বর্তমানে বাংলাদেশ
হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণের চাপে আছে। সেখানে বেগমপাড়াবাসীরা বাংলাদেশের অর্থ কানাডায়
নিয়ে যাচ্ছে। তাই ফিউচারে যে এটি দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে আরও সংকট তৈরি করবে তাতে
সন্দেহ থাকার কোনো অবকাশই নেই। আবার অন্য ভাবেও কেউ কেউ 


ভাবতে পারেন । যেমন, একজন বাংলাদেশী
নাগরিক কানাডার মতো উন্নত রাষ্ট্রে অন্য ধনকুবেরদের সাথে তাল মিলিয়ে চলছেন আর এর জন্য
বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাইনা? কিন্তু এই চিন্তা যদি কারো মাঝে থাকে তবে তাকে
একটাই প্রশ্ন করা দরকার। 


যে সুনাম দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে, যে সুনাম সাধারণ খেটে
খাওয়া মানুষদের দুর্বলতার সুযোগে তাদের পরিশ্রমের অপব্যবহার করছে, সেই সুনাম কি খুবই
জরুরী?

 


সব শেষ কথা হল, যে
অর্থ পাচার হয়েছে তা হয়তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবেনা। কিন্তু ভবিষ্যতে যেন বাংলাদেশী
অন্য দুর্নীতিবাজেরা দেশের টাকা বিদেশে পাচার না করতে পারে সেজন্য সরকার ও 


বাংলাদেশের
প্রত্যেক নাগরিককে সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে সরকারের কঠোর আইন ও সজাগ থাকার মাধ্যমেই
এই সমস্যা ঠেকানো সম্ভব হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে যারা এটা ঠেকানোর
কথা বা যারা এটা রোধ করার দায়িত্বে আছেন, তারাই অর্থপাচার কেলেঙ্কারির সাথে 


প্রত্যক্ষ
না হলেও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন। তাই বেগমপাড়া বাসীদের মত আর যেন কেউ দেশ থেকে অর্থ
পাচার না করতে পারে সেই প্রত্যাশা এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ এর প্রত্যাশায় আজ এ
পর্যন্তই।

  

0 thoughts on “কানাডার বেগমপাড়া কি দেশের জন্য হুমকী!!!”

  1. আমব মনে করি বাংলাদেশের সকল মানুষের এই বেগমপাড়া সম্পর্কে অন্তত প্রাথমিক ধারনা থাকা দরকার।

    Reply

Leave a Comment