টাইফয়েড একটি সংক্রামক রোগ। টাইফয়েড এর লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার, কিবাবে ছড়ায়,চিকিৎসা নিয়ে আমাদের জেনে রাখা দরকার নিজেদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে।
টা্ইফয়েড বাংলাদেশের সব এলাকাতেই বিদ্যমান। সালমোনিলা টাইফি নামক জীবাণু দ্বারা এই রোগ সৃষ্টি হয়। এই রোগের জীবাণু খাবারের সাথে শরীরে প্রবেশ করে । রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশের ৭-১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণগুলি দেখা দেয়
টাইফয়েড এর লক্ষণসমূহঃ
১. রোগের প্রথম সপ্তাহ ৪/৫ দিন ধরে জ্বর বাড়তে থাকে, গা ম্যাজম্যাজে ভাব হয় ও অত্যন্ত মাথা ব্যথা করে;
সমস্ত শরীরে ব্যথা অনুভূত হতে দেখা যায় ।
২. কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, তবে শিশুদের বেলায় প্রধানত ডায়েরিয়া কিংবা বমির ভাবই বেশি থাকে।
৩. নাড়ীর স্পন্দন জ্বরের অনুপাতে কম হবে। কাশি হয় এবং কখনও কখনও নাক দিয়ে রক্তও পড়ে ।
৪. সপ্তাহের শেষের দিকে পেটে অথবা পিঠে গোলাপী দানা (রেড রোজ স্পট) দেখা দিতে পারে ।
৫. দ্বিতীয় সপ্তাহে
: চিকিৎসা না করা হলে রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়ে, জ্বর বৃদ্ধি পায়, ভুল বকে ।
৬. এ সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের পরিবর্তে ডায়েরিয়া দেখা দেয় এবং প্লীহা বড় হয়ে যায় । পেট ফুলে ওঠে ও ব্যথা অনুভূত
হয় ।
৭. তৃতীয় সপ্তাহেঃ
রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। পায়খানা বা বমির সাথে রক্ত
দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
৮. এ সময়ে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয়; এর ফলে রোগী মারা যেতে পারে। যেমন : ক্ষুদ্ৰান্ত ফুটো হয়ে যায় এবং রক্তক্ষরণ হতে থাকে। নিউমোনিয়া, সেপটিসেমিয়া, মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস, অস্থির প্রদাহ অথবা মায়োকার্ডাইটিস সময়ে দেখা দেয় ।
টাইফয়েড কিভাবে ছড়ায়ঃ
১. খাবার পানি মানুষের মলমূত্র দ্বারা দূষিত হয়।
২.ফলমূল বা খাবার জীবাণু দ্বারা দূষিত হয় ।
৩. অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে, স্কুলে বা ব্যারাকে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ।
টাইফয়েড এর চিকিৎসাঃ
১. রোগীকে আলাদা রাখা ভালো, সেই সাথে পূর্ণ বিশ্রাম নিশ্চিত কর প্রয়োজন ।
২. প্রথমাবস্থায় নরম বা তরল খাবার ও পর্যাপ্ত পানি দরকার এবং এভাবে উপযুক্ত পুষ্টির ব্যবস্থা নিতে হবে।
(ক) কো-ট্রাইমোক্লাজল
ট্যাবলেট বা সিরাপ দৈনিক ১০ মিলিগ্রাম (ট্রাইমেথোপ্রিম) প্রতি কেজি ওজনের জন্য দিনে দু’বার ১৪ দিন দিতে হবে । বড়দের বেলায় ২টি বড়ি ১২ ঘন্টা পর পর ১৪ দিন।
(খ) ক্লোরামফেনিকল ক্যাপসুল (২৫০ মিলিগ্রাম প্রতিটি) ১০০ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি ওজনের জন্য দিনে ৪ বার ৬ ঘন্টা পর পর মোট ১৪ দিন ।
শিশুদের বেলায়ঃ
ক্লোরামফেনিকল সিরাপ (১২৫ মিলিগ্রাম প্রতি চামচ) ১ চামচ অথবা আধা চামচ ৬ ঘন্টা পর পর ১৪ দিন।
ক্লোরামফেনিকল অন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক একটি ঔষধ, কাজেই এটা ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ।
টাইফয়েড নিয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা
টাইফয়েড জ্বর কি ছোঁয়াচে?
হ্যাঁ, এটি একটি ছেঁয়াচে রোগ । তবে সচরাচর রোগীকে ধরলে, পানি খেলে বা একসাথে খাবার খেলে এই রোগ ছড়ায় না। এই রোগের ব্যাকটেরিয়া রোগীর মল,মুত্র এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই রোগীর যারা সেবা করবে বা আশেপাশে থাকবে তাদের সতর্ক থাকতে হবে।
টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকেে
এখন ডাক্তাররা এন্টিবায়োটিক এর মাধ্যমে চিকিৎসা করে থাকেন। তাই মুটামুটি সপ্তাহখানিক এর ভেতরেই টাইফয়েড ভাল হয়ে যাওয়ার কথা । তবে সবার জন্য এই টাইম লাইন এক নয়।
টাইফয়েড জ্বর হলে কি গোসল করা যায়
অবশ্যই টাইফয়েড জ্বর হলে গোসল করা যায়। বরং জ্বরে গোসল করলে শরীরে তাপমাত্রা কমে। একটা কোমলতা অনুভব হয়। তাই চিন্তা-ভাবনা না করে ধুম করে গোসল করে নিন।
টাইফয়েড জ্বর কিভাবে ছড়ায়
সাধারণত দূষিত পানি বা খাবার এর মাধ্যমে এর জীবাণু ছড়িয়ে থাকে। আর যার ফলেই অবশেষে জ্বর হয়ে থাকে।