JANA BUJHA

জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর?/ Best 2024

জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর?!!!! মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য অপরিহার্য।  খাদ্য আমাদের দেহের শক্তি ও পুষ্টি  যোগায়।  খাদ্য মানুষের শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি যেমন ভিটামিন, প্রোটিন, আমিষ ইত্যাদি পূরণ করে। কিন্তু এইসব পুষ্টিগুণ যদি আপনি জাঙ্কফুড তেকে আশা করেন তাহলে কেমন হবে? হ্যা, তাই এই বিষয়েই আজ কথা হবে,জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর?

 

জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর?

 

Table of Contents

জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর:

আমাদের প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় দেখা যায় নানা প্রকার শস্য, ফলমূল-শাকসবজি, মাছ-মাংস ইত্যাদি থাকে। এসব খাদ্য তালিকায় থাকা খাদ্যসমূহ থেকে শরীর ভিটামিন ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শোষণ করে।
 
 
আমরা যদি পিছন ফিরে তাকাই তবে দেখব যে আমাদের পূর্বপুরুষরা যেসব খাদ্য গ্রহণ করতেন তাঁর অধিকাংশ ঘরে তৈরি হতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় দেখা দিয়েছেভিন্নতা। আধুনিকায়নের ফলে খাদ্য হয়েছে সহজলভ্য। যান্ত্রিক জীবনে মানুষ তাই সহজলভ্য খাদ্যের পেছনে ছুটছে।
 


অত্যন্ত সুস্বাদু এসব খাদ্য কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করেই শুধু মুখরোচক করে তৈরি করা হচ্ছে। ফলে এর পুষ্টি উপাদানের দেখা দিচ্ছে ঘাটতি। আগেকার সময়ে যে খাদ্য গ্রহণ করা হত তা ছিল প্রাকৃতিক যার মধ্যে পুষ্টি উপাদান ছিল  অটুট।

 

 

ঢেঁকিছাঁটা চাল, বিলের মাছ, উৎপাদিত শাকসবজি, মাংস ইত্যাদি ঘরে প্রক্রিয়াজাত করে রান্না হতো। ফলে এর পুষ্টি উপাদান অটুট থাকতো।  কিন্তু কালের পরিক্রমায় পুঁজিবাদ সমাজের করালগ্রাসে তা এখন বিলুপ্ত। মানুষের ভরসা এখন বাজার। 
জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর
 
বাজারজাত করণের ফলে খাদ্য আর টাটকা থাকছে না। উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য ফ্রিজে হিমায়িত করার ফলে দেখা যায় তা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পরে গিয়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছে।

 

এগুলোর টাটকা রাখার জন্য নানা প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। ফলে এর পুষ্টিমান যেমন তলানিতে যাচ্ছে তেমনি বিষাক্তও হয়ে পড়ছে, যা মানব শরীরের জন্য অন্তত্য ক্ষতিকর।
এই বিষাক্ত রাসায়নিক আমাদের দেহে প্রবেশ করছে ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানান জটিলতার।

 

এখন আসা যাক মূল আলোচনায়। আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে জাঙ্কফুড। এই লিখার মধ্য দিয়ে আমরা জানার চেষ্টা করব জাঙ্কফুড কি? এটি কেন ক্ষতিকর?

জাঙ্কফুড কি:

 

যেসব খাবার উচ্চ মাত্রায় চর্বি, কার্বন, চিনি, রাসায়নিক পদার্থ, কৃত্রিম রং এবং লবণ ইত্যাদি ক্ষতিকারক দ্রব্য  সংযোগে  তৈরি হয় তাকে জাঙ্কফুড বলে। কথাটা নেতিবাচক লাগলেও কথাটা কিন্তু সত্য।

 

 

কেননা এখন অব্দি জাঙ্কফুড এর ক্ষতি ছাড়া উপকার তেমন একটা পাওয়া যায় না। এর এই বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরুতে জাঙ্ক ফুডে এর কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগে আলোচনা করা যাক।

জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর

জাঙ্ক ফুড উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার। এই খাবারগুলো খুব বেশি আকর্ষণীয় করে তৈরি করা হয়। খেতেও সুস্বাদু হওয়ায় মানুষ এগুলো বেশি করে গ্রহণ করেন। যেমন কোমল পানীয়, মচমচে চিপ্স,বার্গার, পিৎজা, হট ডগসহ আরও কতশত মনকারা নাম।

 


ফাস্টফুডে ক্ষতিকর কি কি থাকে:


এতে প্রচুর চিনি বিদ্যমান যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অনেক জাঙ্ক ফুডে প্রস্তুতকৃত চিনি ব্যবহার করা হয় তা সত্ত্বেও এসব উপাদান সাধারণত চিনি হিসেবে উপস্থাপন করা হয় না।

 


যেমন কোমল পানীয় এর মধ্যে থাকে কার্বনেট ওয়াটার, চিনি, ক্ষতিকারক এসিড, ফসফরিক এসিড ও কৃত্রিম রং। এগুলো আমাদের শরীরকে ঠান্ডা করার পরিবর্তে আমাদের পেটের এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সুগার লেভেল বৃদ্ধি করে।

 

জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর

কোলড্রিংস পান করার সাথে সাথেই এতে বিদ্যমান এসিড আমাদের দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে।  দন্তক্ষয় বৃদ্ধি করে। কোমল পানীয় খাওয়া চিনি খাওয়ারই সমান।

 


একটি ৩০০ মিলিগ্রাম কোমল পানীয়ের বোতলে ৩৫ থেকে ৪০ গ্রাম চিনি থাকে। এত চিনি থাকা সত্ত্বেও আমরা এর মিষ্টতা অনুভব করিনা। এর কারণ কি? এর কারণ হচ্ছে ফসফরিক এসিড। এটি  মিষ্টতা হ্রাস  করে।

 

জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর
এটি পান করার ২০ মিনিট পর আমাদের সুগার লেভেল বৃদ্ধি পেতে থাকে। এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের দেহের ইনসুলিন  প্রবাহ বেড়ে যায়।

 

 

এর ফলে একসাথে  চলতে থাকা  সুগারও ইনসুলিনের চলমান প্রক্রিয়া কে আমাদের লিভার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই এইসব সুগার আমাদের দেহে চর্বি তে রূপান্তরিত হয়।


কোমল পানীয়তে চা-কফির মত ক্যাফেইন থাকে যা আমাদের চোখের আই পিপল বড় করে দেয়।


এটি পানের ফলে আমাদের ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এটি পানের ফলে মস্তিষ্কের ডোপামিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে আমাদের দেহে খুশি খুশি ভাব আসে। এটি মূলত ধুমপান বা নেশা করার পর যে অনুভূতি হয় তার মতোই।

 

 

আরো পড়ুনঃ



 

আমরা বিকেলের নাস্তায় প্রায়সই বার্গার পছন্দ  করি। এটি অত্যন্ত সহজলভ্য এবং মুখরোচক হওয়ায় পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি এটি স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর? চলুন জেনে নিই এর ক্ষতিকর দিক।

 


বার্গারে ২৫ গ্রাম চর্বি, ৫০০ ক্যালোরি, ৪০ গ্রাম চিনি, আর ১০০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে। এই উপাদানগুলো একজন মানুষকে অসুস্থ করার জন্য যথেষ্ট।

 

 

এই একইভাবে আপনি অন্য যেকোন জাঙ্কফুডই খান না কেন তাতে থাকে ক্ষতিকর নানা উপাদান। পোড়া তেলে ভাজা, ডুবানো তেলে মচমচে করে ভেজে আপনাকে আমাকে খাওয়ানো হচ্ছে।

 

 

যেহেতু খেতে খুবই সুস্বাদু তাই আমরা হর-হামেশাই খেয়ে নিচ্ছি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে রোগটি দেখা দিতে যাচ্ছে তা হলো মোটা হয়ে যাওয়া বা স্থুলকায় সমস্যা। আর এই সমস্যার অন্যতম কারণ হলো জাঙ্কফুড।

 

জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর

তৈলাক্ত যেকোন খাবার আমাদের গ্যাসট্রিক, আলসারএর সমস্যার জন্য দায়ী হয়ে থাকে। আর জাঙ্ক ফুড এর অধিকাংশ খাবারই হচ্ছে হয় তৈলাক্ত না হয় অতীব মিষ্টি। আর চিনি আর অতিরিক্ত তেল যে আমাদের কেমন ক্ষতি করে আমাদেরশরীরের তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

 

আমরা অন্য আর একটা লিখার মাধ্যমে তেল আরচিনির উপকারী আর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

 

এবার চলুন জেনে নেই এইসব জাঙ্কফুড খেলে যে পাঁচটি মারাত্মক রোগ হতে পারেঃ

এসব ফাস্টফুড খাবার আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। আমেরিকান হার্ট  অ্যাসোসিয়েসন এর মতে, একজন মানুষের দিনে ১৩ গ্রামের বেশি ফ্যাট গ্রহণ করা অনুচিত। কিন্তু একটি বার্গারে প্রায় ২৫ গ্রামের মতো ফ্যাট বা চর্বি থাকে। যা আপনার হার্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

 

বিপাকীয় সিনড্রোম ঃ

নিয়মিত ফাস্টফুড গ্রহণের ফলে আপনার মেটাবলিজম হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায়
দেখা গেছে এসব খাবার উচ্চরক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ ও কোমরের পরিধি বাড়িয়ে দিতে পারে।


পড়ুনঃ

জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর

টাইপ টু ডায়াবেটিস : 

এসব খাবার গ্রহণের ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিস হতে পারে। ১৫ বছরের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে,
সপ্তাহে দুইবারের বেশি ফাস্টফুড খেলে তা ইনসুলিন বিকাশে ঝুঁকি দ্বিগুণ করে দেয়। এসব খাবারে প্রচুর শর্করা থাকে যা শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে এর ফলে দেখা দেয়  টাইপ টু ডায়াবেটিস।

 

জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর

উচ্চরক্তচাপ:


এসব ফাস্টফুডে থাকা চর্বি সোডিয়াম ও ক্যালসিয়াম আপনার উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেয়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর

ক্যান্সার:

গবেষণায় দেখা গেছে ফাস্টফুডে থাকা অতিরিক্ত শর্করা ও প্রক্রিয়াজাত মাংস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে বেশি পরিমাণ জাঙ্কফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করবে তার ক্যান্সারের ঝুঁকি ১২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

 

পরিশেষে এটাই বলা যায়, জাঙ্কফুড যে আমাদের জন্য ক্ষতিকর এ বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই। জাঙ্ক ফুডের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ ঝুঁকে পড়ছে এসব খাবারের প্রতি। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। প্রতিনিয়ত ছুটে চলা মানুষের কাছে খাবার তৈরীর সময়টুকুও হয়ে ওঠেনা। 

 

 

 

তাই তারা ঝুঁকে পড়ছে এই ফাস্টফুডের দিকে। এসব খাবার খেয়ে আপনি যতই ডায়েটিং বা ব্যায়াম করুন না কেন আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবেনা। তাই নিজের জন্যই এসব খাবার পরিহার করুন। আর ভাল ও
সুস্বাস্থ্য নিয়ে সুখী জীবনযাপন করতে আজই এইসব জাঙ্কফুড ত্যাগ করা উচিৎ।  

 

জাঙ্কফুড কি আসলেই ক্ষতিকর 

 

Leave a Comment