প্রতিদিন রাতের আকাশে
আমরা ছোট-বড় উজ্জ্বল অথবা ক্ষীণ অসংখ্য নক্ষত্র দেখতে পাই। এই নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে
হাজার হাজার বছর ধরেই মানুষের কৌতুহল এর শেষ নেই। আগে একসময় জ্যেতিষীরা ভবিষ্যৎ বাণী
করত যার নেপথ্যে ছিল নক্ষত্রের প্রভাব । তাঁরা তারা বা নক্ষত্র দেখে নানান বিষয় বলে
দিতে পারতো। বিভিন্ন শাস্ত্র্য জন্ম লাভ করেছিল এই রহস্যময় আকাশকে কেন্দ্র করে। আর
মানুষের যে কত কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে রাতের আকাশ তার কোন ইয়ত্তা নেই।
যে আকাশ দিনের বেলায়
থাকে প্রচন্ড ক্ষিপ্র্য আর সেই আকাশই রাতের বেলায় কত কোমল আর স্নিগ্ধ। কোমল আলোর পরশে
কত কবি লিখে গেছেন কত শত কবিতা। আর কত প্রেমিক হৃদয় প্রিয় মানূষটির জন্য প্রকাশ করেছেন
ভালবাসা সিক্ত অনুভূতি। তাই রাতের আকাশ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী নয় এমন মানুষ পাওয়া দুঃষ্কর।
কারণ এই আকাশ মানুষের মনে জন্ম দেয় নানান কৌতুহলী প্রশ্ন। তেমনি একটি প্রশ্ন রাতের
আকাশে কতগুলো তারা আমরা গুনতে পারি?
আকাশের নক্ষত্রের/
তারার দিকে তাকিয়ে আমরা স্বাভাবিকভাবেই আমরা ধরে নেই যে নক্ষত্রগুলোকে গণনা করা যাবেনা।
আকাশের নক্ষত্র যে অসংখ্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু শুনলে আশ্চর্য হবেন যে এই অসংখ্য তারা গুলির মধ্যে
প্রায় ছয় হাজার তারা দূরবীন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া খালি চোখেই দেখা যায়। তার মানে
এই নয় যে আমরা আকাশের দিকে তাকিয়েই ৬০০০ তারকা গুনে ফেলতে পারব।
পৃথিবীর যেকোনো স্থান
থেকে একটা নির্দিষ্ট সময়ে আকাশের অর্ধেকটা দেখা যায় আর বাকি অর্ধেক থাকে অদেখা। রাত
আর দিনের কারণেই যে এমনটি ঘটে তা আমাদের সকলেরই জানা। অন্যদিকে দিগন্তের কাছাকাছি অনেক তারা কুয়াশার জন্য
দেখা যায় না। যদি কেউ তারাগুলি গুনতে শুরু করে তাহলে সম্ভবত সে এক হাজারেরও বেশি তারা
গুনতে পারবে না।
আবার যদি আমরা টেলিস্কোপ
এর সঙ্গে ক্যামেরা যুক্ত করি এবং একি জায়গা থেকে তারাদের চিত্রগ্রহণ করি, তাহলে সেই
ছবি থেকে আমরা খালি চোখে যে পরিমাণ তারা দেখতে পারি তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যক তারা
গণনা করা যায়। অত্যন্ত শক্তিশালী দূরবীক্ষণ
যন্ত্রের সাহায্যে আমরা বহুদূরের মৃদু, দীপ্তময় তারাগুলিও দেখতে পাই। আর এইভাবে প্রায়
১০০০০০০০০০ এরও বেশি তারার ছবি তোলা সম্ভব।
এখন অব্দি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা
প্রায় ৪ লাখ ৫৭ হাজার এরও বেশী সংখ্যক নক্ষত্র কে চিহ্নিত করতে সফল হয়েছেন। এখন সঙ্গত
কারণেই প্রশ্ন আসে আমরা কেন বেশিসংখ্যক তারা খালি চোখে দেখতে ও
গুনতে পারি না?
আসলে তারা বা নক্ষত্রের
আকৃতি, রং, উজ্জ্বলতা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সব তারার আকৃতি, রং, উজ্জ্বলতা একই রকম
নয়। আবার পৃথিবী থেকে দূরত্বের দিক দিয়েও একের সঙ্গে অন্যের পার্থক্য রয়েছে। কোনটা
পৃথিবীর নিকটে আর কোনটা বহু দূরে অবস্থিত। আমরা কেবল আকারে বড় এবং পৃথিবী থেকে স্বল্প
দূরত্বে অবস্থিত অধিক উজ্জ্বল তারা গুলোকে দেখি এবং গুনতে পারি।
পড়ুনঃ মানুষের ক্ষমতা কতটুকু?
কম উজ্জ্বল, ক্ষুদ্রাকৃতি
এবং পৃথিবী থেকে অধিক দূরবর্তী তারাগুলি আমরা দূরবীক্ষণ এর সাহায্য ছাড়া দেখতে পাই
না। আর যে তারা গুলো দূরে অবস্থিত সেগুলোর উজ্জ্বলতাও কম হয়ে থাকে। তাই গবেষকদের মতে
সর্বোচ্চ ৬০০০ তারা খালি চোখে দেখা যায়। কিন্তু যে কেউ চাইলেই ৬০০০ গুনে ফেরতে পারবে
না কারণ তারা গুনার সাথে জড়িত থাকে আকাশে মেঘের অবস্থা, তারাদের অবস্থান, পৃথিবীর কোন
অবস্থান থেকে দেখা হচ্ছে ইত্যাদি নানা বিষয়। তাই ১ থেকে ৬০০০ হাজার খালি চোখে দেখা
সম্ভব হলেও তা নির্র্ভর করে পারিপ্বার্শিক অবস্থার উপর।
৬০০০ গুনা, সেতো বিরাট বিষয়