JANA BUJHA

যৌনজীবন কেমন ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের

যৌনজীবন কেমন ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের

যৌনতা শব্দটি শুনলেই আমাদের
ভেতর কেমন একটা নেতিবাচক চিন্তার উদয় হয়। কিন্তু আসলে কি এটি কোন
 নেতিবাচক বিষয়? বহুকাল আগে থেকেই মানব সমাজে
যৌনজীবন নিয়ে নানাভাবে চিন্তা করা হয়েছে। মনে প্রশন্ আসে না তাহলে কেমন ছিল আমাদের
পূর্বপুরুষদের যৌনজীবন? সেই প্রশ্ন থেকেই আজকের এই লিখার প্রয়াস। মানব সৃষ্টির
শুরু থেকেই এর চর্চা হয়ে আসছে। কেননা পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখতে হবে। যদি মানুষের মাঝে
যৌনক্রিয়া না থাকতো তাহলে কি এই সমাজ টিকে থাকতে পারতো? তাই শুধু মানুষ নয় সমস্ত
প্রাণীকুলের এক স্বাভাবিক চাওয়া হচ্ছে যৌনতা।

কিন্তু বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী
মানুষ কেন জানি যৌনতাকে আড়চোখে দেখে। সৃষ্টির প্রথম ধাপ এই যৌনতা। এর ফলেই সৃষ্টি
হয়েছে তাবত প্রাণীকুল। অবশ্য এই নেতিবাচক ধারণার প্রধান কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা এবং
সামাজিক রীতি। যৌনতা মানবজীবনের আদি প্রবৃত্তি।

মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মতই যৌনতাও অপরিহার্য। ভাত,
রুটির মতো এটিও একটি চাহিদা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা।

বায়োলজিক্যাল দিক থেকে যৌন চাহিদা নির্ভর করে
যৌনতা নিয়ন্ত্রক হরমোন( এন্ড্রোজেন ভেসোপ্রেসিন অক্সিটোসিন)
  এবং নিউরোট্রান্সমিটার নামে মন-মানসিকতা
নিয়ন্ত্রক হরমোন এর উপর। তবে সামাজিক আচার, মানসিক চাপ, হতাশা, বিষন্নতা, প্রভৃতি
যৌন আকাঙ্ক্ষার ওপর প্রভাব ফেলে।

যৌনতার প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে  কামসূত্রের কথা বলতেই হয়। কামসূত্রের উৎপত্তি ও
বিকাশ কৃষ্ণের জন্মের শত শত বছর পূর্বে। ভারতের কামসূত্রের আবির্ভাব (পুরাণ মতে)
মহাদেবের মন্দির হতে। ভারতীয় ঋষিগণ একেকজন একেকভাবে কামশাস্ত্র রচনা করেন।

কিন্তু এসব শাস্ত্র প্রত্যেকটি
  উৎকৃষ্ট হলেও তা ছিল পরস্পর বিচ্ছিন্ন। তাই
লোকের মনকে আকর্ষণ করতে পারে নি। পরবর্তীতে ঋষি বাৎসায়ন এই শাস্ত্র একত্রিত করে
তার কামসূত্রম নামক গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি এখানে সব রকম কাম উদ্বৃত্ত বিষয়ে
সুন্দর ভাষায় সুস্পষ্ট করে আলোচনা করেন।
  বাৎসায়নের মতে কামের পথে প্রকৃত অগ্রসর হতে হলে
নারী বা পুরুষ উভয়ের কতকগুলি কলাবিদ্যা শিক্ষা করা উচিত।

সর্বমোট চৌষট্টি কলা বাৎসায়ন দেখিয়ে গেছেন।
এর সবকটি কলায় হয়তো একজন লোকের পক্ষে শ্রেষ্ঠত্ব
অর্জন
  করা সম্ভব নয়।

কাম মানে ইচ্ছা বা আকাঙ্খা। সমসাময়িক ভারতীয়
সাহিত্যে কাম সাধারণত কামুক আনন্দ এবং যৌন আকাঙ্খাকে বোঝায়। তবে শব্দটি যেকোনো
সংবেদনশীল উপভোগ্য মানুষের আকর্ষণ এবং নান্দনিক আনন্দ যেমন শিল্পের বিভিন্ন শাখা (
নৃত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, ভাস্কর্য) এবং প্রকৃতিকে বোঝায়।




ভারত এর পূর্বপুরুষদের যৌনতা


যৌনতার ইতিহাস সমৃদ্ধকরণে ভারতের অবদান
অনস্বীকার্য। যৌনতা যে এক প্রকার বিজ্ঞান বিবেচনা করা হয়েছিল, তার লিখিত থেকে
শুরু করে আধুনিক পর্যায় পর্যন্ত পথচলার যে দার্শনিক প্রয়াস তার সূচনা ভারতেই
হয়েছিল।

এটি জোর দিয়ে বলা যায় যে ভারত শিল্প এবং
সাহিত্যের মাধ্যমে যৌন শিক্ষার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল।

যৌনতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির প্রথম প্রমাণ মেলে  সনাতন ধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, জৈন ধর্মের প্রাচীন
গ্রন্থ গুলো থেকে। আর সনাতন ধর্মমতে যৌনশিক্ষা সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন
সাহিত্যের মধ্যে বেঁচে থাকা একটি সাহিত্য।

ভারতীয় যৌনতার সংস্কৃতির প্রভাব এতই বিস্তৃত ছিল,
যা পরবর্তীতে সংস্কৃত, চীন, জাপান, তিব্বত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংস্কৃতিকে ব্যাপক
প্রভাবিত করেছিল।

প্রাচীন ভারতে বিবাহিত দম্পতির মধ্যে পারস্পরিক
কর্তব্য হিসেবে যৌনতা বিবেচিত হতো, যা স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সমানভাবে আনন্দিত
করত।

ভারতের সর্বাধিক প্রকাশিত সাহিত্য হল কামসূত্র।
ভারতে প্রেম, আবেগ, আনন্দের চৌষট্টি কলার শিল্প শুরু হয়েছিল বাৎসায়নের
  কামসুত্র সংস্করণ থেকে। আর এটিই সবথেকে সুপরিচিত
এবং বেঁচে থাকা সংস্করণ। যা প্রথম ইংরেজিতে অনূদিতও হয়েছিলো।

স্যার রিচার্ড বার্টন এবং এফ এফ আর্বুথাট কতৃক
কামসুত্র সম্ভবত সর্বাধিক পঠিত এবং ধর্মনিরপেক্ষ পাঠ্য। এখানে বৈবাহিক সম্পর্কের
মধ্যে যৌন সঙ্গীকে আনন্দিত করার উপায় গুলি বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

মিশর এর
যৌনতা



প্রাচীন মিশরের ফারাওরা
  নিজেদের পৃথিবীর বুকে এক একজন ঈশ্বরের সমতুল্য
মনে করত।

তাই তারা তাদের বংশধরদের সাথে জনসাধারণ এর রক্ত যেন
মিশে না যায়, এজন্য তারা আপন ভাই বোনের মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হত।

একেবারে কাছের মানুষদের মাঝে সম্পর্কের বিষয়টি কে
বলা হত ইন্সেন্ট বা অজাচর।  এটি অত্যন্ত
ঘৃনীত একটি প্রথা। কিন্তু প্রাচীন মিশরে এটি ছিল সাধারণ ঘটনা।

এই প্রথা তাদের দেবদেবীর মাঝেও প্রচলন ছিল। এর
মাঝে দিয়াসো ও দেবী আইসিস এর বিবাহ হয়েছিল এবং তারা ছিল আপন ভাই বোন।

উল্লেখ্য যে ওসিরিসেস আপন ভাই সেট তাকে খুন করে
এবং তার দেহকে খণ্ড-খণ্ড করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়।

কিন্তু দেবী আইসিস তার দেহ খন্ডগুলোকে একত্রে করে
জুড়ে দেয়, কিন্তু ওসিরিসের পুরুষাঙ্গটি নীলনদের কুমির
  খেয়ে ফেলে।
কিন্তু দেবী আইসিস পুরুষাঙ্গ হীন স্বামীকে
  মানতে অস্বীকৃতি জানান।

পরবর্তীতে দেবী মাটির সাহায্যে একটি পুরুষাঙ্গ  তৈরি করেন এবং তাতে প্রাণের সঞ্চার করেন। তার পর
থেকেই দেবতা ওসিরিস এর পুরুষাঙ্গের প্রভাবেই নীলনদ অনেক সমৃদ্ধ হতে থাকে।

প্রাচীন মিসরীয়রা মনে করত নীল নদের জল ভালোভাবে
যাওয়ার একমাত্র কারণ হল মাস্টারবেশন বা স্বমেহন।

আর তাই খোলা মাঠে তারা নীলনদে বীর্য দান করতেন।

সেসময় ফারাও রাজারাও এতে যোগ দিতেন। মিসরীয়রা
মনে করতেন দেবতা অটাম স্বমেহনের মাধ্যমে বিশ্বের সৃষ্টি করেছিলেন এবং নীলনদেরও
সৃষ্টি এর মাধ্যমে।

তারা মনে করতেন এতে চাষ আবাদ খুব ভালো হয়। মিশরের
বিভিন্ন শিলালিপিতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়।

এমনকি পিরামিডের  গায়ে আঁকা ছবিতেও এসব দেখতে পাওয়া যায়।

    
প্রাচীন মিসরীয়রা একটি বিকৃত কালচারে লিপ্ত ছিল।
তাহলো মৃত নারীর সাথে যৌন সঙ্গম। পাপাচারী, পুরোহিত বা রাজবংশের কেউ
কিংবা সাধারণ মানুষও এর ব্যতিক্রম ছিল না।

তাই নারীদের মৃত্যুর পর দুই-তিনদিন যৌনসঙ্গম করে
যখন যৌন সঙ্গমের অনুপযোগী হতো তখন মমি করে রাখা হতো।

প্রাচীন
গ্রিসে যৌনতা

প্রাচীন গ্রিসে যৌনতা ছিল অনেকটা খোলামেলা।
গ্রীক মিথলজির দিকে তাকালে দেখা যায় স্বয়ং দেবতা
জিউস পর্যন্ত একাধিক যৌন সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন।

এমনকি ধর্ষণের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এটোলিয়াসের রাজা থেস্টিয়াসের
  মেয়ে লেডাকে ধর্ষণ করেছিলেন দেবতা জিউস। আরগাসের
রানী ডানাকে হাসের ছদ্মবেশে  ধর্ষণ করেন
দেবতা জিউস।

প্রাচীন গ্রিসে (pederasty)  টার্মের কথা বলা হয়।
এর অর্থ হচ্ছে একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের সাথে কোন
বালকের যৌন সম্পর্ক।

যৌনতাকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্য অভিজাত মেয়েরাও
অভিনব পন্থা ব্যবহার করত।

তারা ক্রীতদাস কিনে নিয়ে মেয়েলি পোশাক পরিধান
করতে বাধ্য করত এবং তাদের উপভোগ করত।

গ্রীকের পুরুষরা বেশিরভাগ ছিল বাইসেক্সুয়াল অর্থাৎ
তারা নারীর সাথে যৌন সঙ্গম করতো তদ্রূপ পুরুষের সাথে মিলিত হতো।

সে সময় মেয়েদের ১৬ বছরের মধ্যে বিয়ে হতো।
তখনকার মেয়েরা তাদের স্বামীর সমকামিতা মানতে বাধ্য ছিল।

শুধু পুরুষ নয়, নারী সমকামী তারও প্রমাণ পাওয়া
যায় ইতিহাসে। তাদের কাছে এইসব সাধারণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতো।

বলা হয়ে থাকে যে সমকামিতা বলতে কি বুঝায় সেই
ধারণায় নাকি গ্রিসে ছিল না। তারা এটাকে স্বাভাবিক বিষয় মনে করতো। এটা যে খারাপ
চোখে দেখা হতে পারে সেই বিবেচনায় তাদের মাঝে অনুপস্থিত ছিল।



প্রাচীন
রোমে যৌনতা



প্রাচীন রোমের যৌনতা নিয়ে বিশ্বাস ছিল গ্রিকদের
মতই। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ তার ক্রীতদাস বা দেহ ব্যবসায় জড়িত পুরুষ বা কিশোরের
সাথে মিলিত হতো। এটা ছিল সাধারণ ঘটনা।

নারীর ভূমিকা পালনকারী পুরুষটিকে শারীরিকভাবে
অসুস্থ বলে মনে করা হতো। পুরুষদের সমকামিতাকে সহজভাবে মেনে নিলেও
  তারা লেসবিয়ান সম্পর্ক কখনোই স্বীকার করতো না।

কবি  ওভিড বলেছেন প্রাণিজগতের কোন
নারী অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হতে পারেনা। রোমান লেখকগণ এটিকে প্রকৃতি বিরুদ্ধ
  এবং যৌন ক্ষমতার অপব্যবহার বলে আখ্যা দেন। এমনকি
লেসবিয়ানিজম কে মৃত প্রাণীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মতো ঘৃণ্য মনে করা
হতো।


প্রাচীন
চীন



প্রাচীন চীনের সমকামিতার হার ছিল উল্লেখযোগ্য।
নারী থেকে পুরুষ দের প্রাধান্য ছিল অনেক বেশি। পুরুষদের মূল্য নির্ধারণ করা হতো
তাদের সৌন্দর্যের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু
  চীনে বালকদের যৌনাচার করা হতো
না, তারা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সাথে
  যৌন ক্রিয়াকরতো। সে যাই হোক
পুরুষেরা পুরুষ সঙ্গী বেছে নিলেও বিয়ে কিন্তু নারীকেই করত। কারন বংশতো রক্ষা করতে
হবে।

চীনের ইউনান প্রদেশের পাহাড়ের কোলে মাসুও সমাজের
বসবাস। তাদের সমাজব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক। এখানে পুরুষের ব্যবহার শুধু ভবিষ্যৎ
বংশধরদের জন্য।

এটি একটি ছোট প্রাচীন সম্প্রদায়। সংখ্যায় তারা
৪০ হাজারের মত। এরা মূলত স্বনির্ভর জাতিগোষ্ঠী।মা সুও নারীরা একাধিক
  পুরুষ  সঙ্গী নিতে পারতো।

আরেকটি প্রথার কথাও শোনা যায়, যেখানে
ভ্রমণকারীদের জন্য একটি স্ত্রী
 প্রদান করা হতো।


বিখ্যাত পরিব্রাজক মার্কোপোলো একবার একটি বিখ্যাত
ভ্রমণকারী চিনা হোটেলে থামলেন।
  যার মালিক মার্কোপোলোর সাথে যৌনতার
জন্য তার নিজের স্ত্রীকে অফার করেছিলেন ।

মার্ক বিস্ময়ের সাথে উল্লেখ করেছেন যে মহিলাটি
অত্যন্ত উৎসাহের সাথে এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছিলেন।

তারা মনে করতেন উচ্চবংশীয় কারো সাথে যৌনক্রিয়া
করলে সন্তান হবে উচ্চবর্গীয়।

এতো গেলো  ভ্রমণের কথা কিন্তু ১১ শতকে
চীনের সম্রাট এর দেড় শতাধিক মহিলার একটি বিশাল সরকারি হারেম ছিল।

এখানে সাম্রাজ্ঞীদের অগ্রাধিকার দেয়া হতো। তারা  পূর্নিমায় মিলিত হতেন এবং পরবর্তী সময় অন্যান
উপপত্নীদের
  সাথে যৌনক্রিয়া করতেন।

বাংলাদেশের
যৌনতা নিয়ে কিছু কথা।



স্বাধীনতার পূর্বের ইতিহাসই এখানে মূল উপজীব্য।
কারণ বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালে। তাই ভারতীয় ইতিহাসই আমাদের ইতিহাস বলে
বিবেচনা রাখে।

মোগলদের থেকে শুরু করা যাক। মোগলদের শাসনআমলে
বাংলার ভূখন্ড নানা কারণে বিশেষভাবে প্রধান্য পায়। আর এর আগের ইতিহাসকে ভারতীয়
আতিহাসের সাথেই ধরে নেয়া যেতে পারে।


তাই আমরা মুঘল সাম্রাজ্যের দিকে মনোনিবেশ করবো।
কেননা এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার কারণে এক নতুন সংস্কৃতি উদ্ভব ঘটে। হিন্দুস্তানে
তাদের আগমনের ফলে সমগ্র ভারতবর্ষে সংস্কৃতিতেই অজস্র উপাদান যোগ হয়।

সুদীর্ঘ শাসনামলে মোঘলরা শুধু সমগ্র ভারতবর্ষের
রাজনৈতিক ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেন নি সেখানকার সামাজিক-সাংস্কৃতিক শৈল্পিক সকল
ক্ষেত্রেই গভীরভাবে প্রভাববিস্তার করেন।

মোঘল রাজাদের হারেম ছিল। এখানে কেবল মাহরামের
(যাদের বিবাহ করা হারাম) প্রবেশ অধিকার আছে। হারেমে সম্রাটের একাধিক স্ত্রীও
থাকতেন। থাকতেন উপপত্নী অপ্রাপ্তবয়স্ক পুত্র,
  অবিবাহিত কন্যা, আত্মীয় এবং  দাসী। তখনকার সময়ে রাজাদের একাধিক
পত্নী থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
সম্রাট তাদের
নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যবহার করতেন।

হারেমে সর্বাধিক গুরুত্ব পেত আমোদ-প্রমোদের
ব্যবস্থা। সেখানে আরো ছিল সঙ্গীতশিল্পী আর নৃত্যশিল্পীরা। মাঝে মাঝেই বসতো
নৃত্যগীতের আসর।

প্রথমদিকে প্রাসাদের অভ্যন্তরে নারীদের থাকার
ব্যবস্থা ছিল কিন্তু পরবর্তীতে নারীদের জন্য আলাদা বাসস্থান নির্মাণ করা হয়েছিল।
হেরেমের বিষয়টি বর্তমান সময়ে হয়তো নেতিবাচক কিন্তু সেসময় এটা ছিল স্বাভাবিক।

সে সময় শুধু রাজার পত্নী, উপপত্নীদের সাথে
রাজা-বাদশারা যৌনকর্মে লিপ্ত হতেন। সেখানে পর্দার ব্যাপারে ছিল প্রচণ্ড কঠোরতা।
রক্ষীরা কখনোই ভেতরে প্রবেশ করতে পারত না।

মোঘল হারেমে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার নারীর
অবস্থান ছিল।

সুলতানি আমলেও এর সংখ্যা কম ছিলনা। কথিত আছে বাংলা
সুলতান সিকান্দার শাহের হারেমে একহাজার নারী ছিল।


মোঘলদের বিলুপ্তির পর সুলতানী আমল আসে। তবে সুলতানি
আমলের সুলতানরাও একই পথে হাঁটেন।

সুলতানি আমলের সুলতানদের প্রায় তিনশতাধিক এর উপর
স্ত্রী
  থাকতো। তাদের রসবোধ ছিল আকাশচুম্বী। তারা যৌন
মিলনের সময় নানা প্রকার আতর, গোলাপ ব্যবহার করত এবং মশালের আলোয় পরিবেশকে আরো
উপভোগ্য করে তুলত।

অনেক সুলতান চারজন স্ত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
তারা মূলত নবী( সাঃ)এর অনুসরণ করতেন।

তবে কখনও কখনও ছয় থেকে আটজন স্ত্রীও ছিল অনেক
সুলতানদের।

সাধারণভাবে  উপপত্নী ২০ /৩০ জন থেকে শুরু
করে ২০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত ছিল।

এবার সুলতানের  আমল থেকে আধুনিক সভ্যতায় আসা যাক।  যৌনতা নিয়ে আধুনিক সমাজের কি অবস্থা?

ধর্ষন এখন আর সামলে রাখার কোন বিষয় নয়, গ্যাংরেপ
থেকে শুরু করে উপমহাদেশে সর্বত্রই চলছে অবাধ যৌনতা বা প্রতারণার যৌন সম্পর্ক।

ধর্ষণ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা যৌনতাকে উস্কে দিচ্ছে বারবার।

পশ্চিমা কৃষ্টিতে জর্জরিত আমাদের সমাজ এখন পশ্চিমা
স্রোতে গা ভিজাচ্ছে।

বর্তমান বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যায় এর
অবস্থা ভিন্ন নয়। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ধর্ষণ ।

এর কারণ মিডিয়া বা ইন্টারনেট এর অপব্যবহার,
সুশিক্ষার অভাব, পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা।

মোবাইলের মাধ্যমে পর্ণোগ্রাফি  ছড়িয়ে পরেছে কোমলমতি থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত।  উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী
সমকামিতা ছিল নিষিদ্ধ।

কিন্তু বর্তমান ভারতে  এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে এবং সমকামিতাকে বৈধতা
দেয়ার দুদুল্যমান অবস্থায় আছে। যার প্রভাব হয়ত একদিন বাংলাদেশেও পড়তে পারে।




কিছুস প্রশ্ন প্রায়ই মাথায় ঘুরপাক করে। আচ্ছা বলুনতো গাড়ির বিজ্ঞাপনে
অর্ধনগ্ন নারী কোন প্রয়োজনে? পন্যের সাথে নারীও কী পন্য? তাকে কোন রূপে উপস্থাপন
করা হচ্ছে?

এটা কি তার অধিকার নাকি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের হীন
মানসিকতার ফসল। তাকে কি উপভোগের পন্য বানানো হচ্ছে ?

আমাদের সমাজ ব্যবস্থা আমরা এমন ভাবেই তৈরি করে
ফেলেছি যেখানে নারী দেহ প্রদর্শনী একটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। যা যৌনতাকে প্রভাবিত
করছে।

 

বিশ্বের সবচেয়ে
ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকায় প্রতি মিনিটে দুইটি নারী ধর্ষিত হচ্ছে । ইংল্যান্ডে প্রতি
১০০ জন নারীর মধ্যে চারজন নারী বিয়ে ছাড়া যৌন সম্পর্ক স্থাপন করছে। প্রতি
তিনজনের মধ্যে একজন বিয়ের পূর্বে সতীত্ব হারাচ্ছে।

আমেরিকার হাই স্কুল এর শতকরা ৪০ জন ছাত্রী স্কুল ছাড়ার পূর্বে সতীত্ব হারায়।

তাছাড়া পাশ্চাত্য বিশ্বে সমকামীদের স্বাধীনতার জন্য প্রকাশ্যে রাজপথে মিছিল মিটিং
হচ্ছে।
নারী দেহকে বাণিজ্যিক রূপ দেয়ার কোনো প্রচেষ্টায় আর বাকি নেই বর্তমান সমাজে।

 

 

অবৈধ সম্পর্ক এখন একটি
ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।  আমেরিকায় ৭৫ লাখ
নারী- পুরুষ বিবাহ বহির্ভূত লিভটুগেদারে আসক্ত। সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে যাচ্ছে দিনকে
দিন।

এবার দৃষ্টি ফেরানো যাক আমাদের দেশের চিত্রে। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন
আহমেদ বলেছিলেন নারী-পুরুষ কখনো বন্ধু হতে পারেনা।

ঠিক তাই সত্যকে আড়াল করা যায় না। বন্ধুত্বের আড়ালে চলে যৌনতা। শুধুমাত্র সঙ্গম
এর মাধ্যমে যৌনতা প্রকাশ পায় না।

চোখের যৌনতা ,মনের যৌনতা ,মানসিক যৌনতা যা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে করছে কলুষিত। এর
ফলে অবাধে শুরু হচ্ছে লিভ টুগেদার।

 

বিবাহ বহির্ভূত যৌন
সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে বেশি বয়সে
  বিবাহ। এখনকার সমাজে মেয়েরা শিক্ষার অজুহাতে বিয়ের ব্যাপারে
উদাসীন কিন্তু সময় বয়ে যায় এবং যৌনতারও একটা নির্ধারিত বয়স থাকে
যা
এটি নির্ভর করে ভৌগলিক আবহাওয়ার উপর। উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের ছেলে মেয়েদের দ্রুত যৌবনপ্রাপ্ত
হয়।

আমাদের দেশের আবহাওয়া কিছুটা উষ্ণ আবহাওয়া হওয়ার
ফলে ৯ থেকে ১৬ বছরেই আমরা যৌবন প্রাপ্ত হই।

 

এরপর শিক্ষা জীবন শেষ করতেই ২০ থেকে ২৫ বছর সময় চলে
যায়। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে আরও ৪/৫ বছর। তাহলে ৯ থেকে শুরু হওয়া যৌবন বৈধ উপায়ে কখন
তার পূর্
ণতা
পাবে? আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা ৩০ শে এসেও বিয়ের মত ভাল কাজের সাহসই করতে পারে না।
তাই বাধ্য হয়েই আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভিন্ন পথ বেছে নেয় যা ঘৃণ্য।


যৌবন কিন্তু সময়ের বেড়াজালে আবদ্ধ। তাই সঠিক সময়ে
সঠিক পদক্ষেপ যৌবন বা যৌনতার বিষয়কে বিবেচনা করে বিবাহের বয়স নির্ধারণ করা উচিত।
এর ফলে কমবে ধর্ষণ, কমবে যৌন রোগ, কমবে লিভ টুগেদার। অবাধ মেলামেশা বন্ধ করা হলে অনেক
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম হতো না।

 

 

আমাদের পূর্বপুরুষরা হয়ত বিভিন্নভাবে বৈধ- অবৈধ উপায়ে যৌন
সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল কিন্তু আমরা এখন আধুনিকতার শিখরে অবস্থান করছি। জ্ঞান-বিজ্ঞান
এর উন্নতিতে আমরা এখন জেনেছি কোনটা আমাদের ভাল আর কোনটা আমাদের জন্য খারাপ। মেডিকেল
সাইন্স্য আমাদের বলে দিচ্ছে যে কোন কোন বিষয় গুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তারপরও কি আমরা খারাপ যৌনচার থেকে মুক্ত হতে পারছি? পতিতালয়, লিভটুগেদার, সমকামিতা,
হস্তমৈথুন কোনটা নেই আমাদের মাঝে?  





 

Leave a Comment