JANA BUJHA

মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রাকৃতিক প্রতিকার

মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রাকৃতিক প্রতিকার

মাথা ব্যাথার কারণে কষ্ট পায়নি এমন মানুষ
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মাথা যার আছে ব্যাথা তার আছে। কথাটা পুরোপুরি সত্য না
হল্ওে কোন কোন ক্ষেত্রে সত্য। 


কেননা আমাদের যত সমস্যা তার জন্য আমাদের মাথা খাটাতে
হয়। আর যেকোন কাজ এর বেলাতো কথাই নেই। এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি যদি ব্যাথা করে তবে যেমন
কাজে মন বসবে না তেমনি কোন কিছু ভালও লাগবে না। তাই মাথা ব্যাথার মত কমন একটি সমস্যা
নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন – মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রাকৃতিক উপায়ে প্রতিকার।

 

যে সব কারণে মাথাব্যথা হয় তার মধ্যে টেনশন
বা দুশ্চিন্তা  অন্যতম। গবেষণায় দেখা গেছে ৭০
শতাংশ মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে দুশ্চিন্তা। 


আর এছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, বেশি
বেশি তেল ভাজাপোড়া খাওয়া, ধূমপান মদ্যপান, অতিরিক্ত শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রম,
ক্ষুধার্ত থাকা, মানসিক চাপ মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে বিবেচ্য হয়। 


এইসব কাজ গুলোর অধিকাংশই
মানুষ তার অভ্যাসের বশবর্তী হয়েই করে থাকে।
  এছাড়াও আরও
এক প্রাকার ভয়ানক মাথা ব্যথার জন্য দায়ী মাইগ্রেন।
তাই চলুন এখন জেনে নেয়া
যাক মাথাব্যাথার কারণ ও লক্ষণগুলো।




টেনশনের কারণে মাথাব্যথা




বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যথা মাংসপেশির সংকোচনের
কারণে হয়ে থাকে। এই মাথা ব্যথার লক্ষণ গুলো হলো




১.  সমস্ত মাথায় ব্যথা করে।



২. কেউ মাথা চেপে ধরে আছে এমন অনুভূত হয়।



৩. মাইগ্রেন জনিত মাথা ব্যাথার মত এত তীব্রতর হয় না।



৪. এ ধরনের মাথা ব্যথা কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন স্থায়ী
হতে পারে।




৫. দুশ্চিন্তা, পারিবারিক কলহ বা পেশাগত মানসিক চাপের
সঙ্গে এই ব্যথার সম্পর্ক রয়েছে।




মাইগ্রেন
এর ব্যাথা


মাইগ্রেনজনিত সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভোগেন নারীরা। গবেষণায়
দেখা গেছে ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়স থেকেই মাইগ্রেনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এটি স্থায়ী
হতে পারে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত।




চলুন  তাহলে জেনে
আসি মাইগ্রেনের মাথা ব্যথার লক্ষণ গুলো কি কি?




১. মাথার যেকোনো একটি পাশ থেকে ব্যথা শুরু হতে পারে।
এক পাশ থেকে অন্য পাশেও ব্যথা স্থানান্তর হতে পারে।




২. এই ব্যথা চার ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী
হতে পারে।


৩. মাথার দুইপাশ বা এক পাশের রগ টনটন করে ব্যথা করছে
বলে মনে হয়।




৪. মাথাব্যথা স্বল্প থেকে শুরু হলেও সময় ক্ষেপণের সাথে
সাথে
  ব্যথার  তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।




৫. আলো ও শব্দের কারণে ব্যথা তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।



৬. ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে  বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।


৭. অন্ধকারে শুয়ে থাকলে ব্যথার তীব্রতা কিছুটা কমে।




ক্লাস্টার মাথাব্যথা


সাধারণত দুচোখের চারপাশে এই ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা
স্বল্প থেকে শুরু হয়ে ক্রমে তীব্রতর হয়। মাথার যেকোনো একপাশ থেকে শুরু হয়ে চোখের
পেছনদিকে সরে যায়। 


একটি নির্দিষ্ট সময় এই ব্যথা অনুভূত হয় এবং দিনে কয়েকবার হতে
পারে। এর স্থায়িত্ব ৫ থেকে ১০ মিনিটও হতে পারে আবার ৩-৪ ঘন্টাও হতে পারে।


এ ব্যথার কারণে চোখ লাল হয়ে যায়। এছাড়া চোখ দিয়ে পানি
পড়ে, চোখের চারপাশ ফুলে যায়, নাক বন্ধ হতে পারে, চোখের দৃষ্টিতে সামান্য ব্যাঘাত
ঘটতে পারে। 


মাইগ্রেনের জন্য মাথা ব্যাথার মত তীব্র আলো, শব্দ ও গন্ধের কারণে মাথাব্যথা
বৃদ্ধি পেতে পারে।






সাইনোসাইটিস মাথা ব্যথা


নাকের দুপাশের হার ও কপালের হাড়ের ভেতর ছোট ছোট কিছু
ফাকা জায়গা থাকে। এগুলোকে সাইনাস বলে। এই ফাঁকা জায়গায় বাতাস থাকে।


আমাদের মাথার
ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য
  এটি মূলত
কাজ করে। এসব সাইনাসের আবরণে প্রদাহ হলে বাতাস ও সর্দি জমে থাকে।


এর ফলে তীব্র মাথাব্যথা
শুরু হয়। এটি মূলত সাইনোসাইটিস বা সাইনাস হেডেক নামে পরিচিত।


এই ব্যাথার সঙ্গে নাক বন্ধ হয়ে যায়, সর্দি, হাঁচি কাশি  হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।





আরো পড়ুনঃ


সেকেন্ডারি হেডেক






এটি মূলত ব্রেনের নানা প্রকার সমস্যা যেমন ব্রেন টিউমার,  ব্রেন ক্যান্সার, মস্তিষ্কের  রক্তনালীতে
সমস্যা
  ইত্যাদি কারণে হতে পারে।






ক্রনিক হেডেক


এই ব্যথা মাসের প্রতিদিনই চিন চিন করে অনুভূত হয়।এর প্রধান কারণ হচ্ছে দুশ্চিন্তা।

তাছাড়া ঘুমের রুটিন মেন্টেনেন্স না করলেও এই ব্যথা হতে
পারে।






হরমোনাল মাথাব্যথা।


এই ব্যথা সাধারনত মেয়েদের বেশি হয়ে থাকে।

মেয়েদের শরীরে হরমোনের তারতম্যর জন্য এই ব্যথা হয়ে
থাকে। সাধারণত মাসিকের সময় বা আগে পরে
  ইস্ট্রোজেন
হরমোন কমে যায় বলে এই ব্যথা অনুভূত হয়।



তাছাড়া গর্ভাবস্থায়  হরমোনের তারতম্যের কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। এর জন্য দুশ্চিন্তার
কোনো কারণ নেই।


ব্যাথার তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শের পেইন্ট কিলার
খেয়ে নিলেই আরাম পাওয়া যায়।





সেক্সচুয়াল হেডেক




স্বামী স্ত্রীর মিলনের সময় বা আগে পরে যে মাথা ব্যথা
অনুভূত হয় তাকে সেক্সুয়াল হেডেক বলে।


সাধারণত প্রচন্ড উত্তেজনার হলে  ব্রেনে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে এ ধরনের মাথাব্যথা দেখা দেয়।



এই ব্যথা তেমন তীব্রতর হয় না খুব সহজেই সেরে যায়।

এর কারণ হিসেবে বলা যায় উচ্চ রক্তচাপ।


এ ধরনের ব্যথা তীব্রত হলে  চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে উচ্চ
রক্তচাপের চিকিৎসা করা যেতে পারে।










সাইকোলজিক্যাল পেইন






কখনো কখনো দেখা যায় কোন কারণ ছাড়াই প্রচন্ড মাথা ব্যথা
করে।


মন খারাপ থাকলেও মাথা ব্যথা হয়। একে সাইকোলজিকাল পেইন
বলে।




অতিরিক্ত চা কফি পানের যেমন মাথা ব্যথা হয় তেমন অনেক
সময় চা কফি পান থেকে বিরত থাকলেও মাথা ব্যথা হয়।
   


সাইকিয়াট্রিক কাউন্সিলিং ব্যতীত কখনোই এই ব্যথা ভালো হয় না। প্রতিটি
মাথা ব্যথার ধরন যাই হোক কষ্ট কিন্তু একি।


তাই মাথাব্যাথার সঠিক কারণ বের করে এর চিকিৎসা করা জরুরী।
 

 

 

 

 

মাথাব্যথা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়



আদা



আদতে বিদ্দমান এন্টি ইনফ্লামেটরি নামে একটি উপাদান
  মাথাব্যথা কমাতে ভূমিকা রাখে।
মাথাব্যথা শুরুতেই এক কাপ করা লিকারের আদা চা
আপনাকে অনেকটা স্বস্তি এনে দিতে পারে।

আদাতে বিদ্যমান ইনটি ইনফরমেটরি উপাদান আপনার রক্ত
চলাচল কে বৃদ্ধি করে এবং মাথাব্যথায় দ্রুত আরাম দিয়ে।

লেবু

খুব দ্রুত মাথা ব্যথা সারিয়ে তুলতে লেবু অত্যন্ত
কার্যকরী। মাথাব্যথা শুরু হওয়ার সাথে সাথে গরম চলে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে খেতে
পারেন। এক কাম গরম চায়ের সাথে লেবু মিশিয়ে খেলে মাথা ব্যথা উপসম হয়।

লবঙ্গ



মৃদু আঁচে লবঙ্গ ভেজে একটি ,রুমালের মধ্যে পুটলি
বানিয়ে নিন। এবং এটি নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রান নিন। দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই
মাথাব্যথা সেরে গেছে।

পানি পান



মাথা ব্যথা হলে বেশি বেশি জলপান করুন। এর ফলে শরীরের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাবে।
সাথে সাথে মাথা ব্যথা ও কমে যাবে।

কাঠবাদাম

অনেক সময় দেখা যায় আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ও
মাথা ব্যথা হয়। যেমন প্রচন্ড গরম এবং প্রচন্ড ঠান্ডাতেও অনেকের মাথাব্যথা
  হয়।



তাছাড়া ধুলাবালির কারণে ও মাথা ব্যথা হয়।
বিভিন্ন প্রকার মানসিক চাপেও মাথা ব্যথা বৃদ্ধি পায়। এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে
কাঠবাদাম।

বাদামে বিদ্যমান সেলিসির নামক উপাদান মাথাব্যথা
দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

আপেল ও
লবণ।



 একটু
আপেলের সাথে সামান্য লবণ নিয়ে চিবুতে পারেন। এটি আপনাকে দ্রুত মাথাব্যথা থেকে
মুক্তি দিতে পারে।

মিষ্টিকুমড়ার
বিচি

মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ক্যালসিয়াম সালফেট।
এটি মাথা ব্যথা সারাতে
কার্যক্রম ভূমিকা পালন করে। মিষ্টি কুমড়ার বিচি ভেজে খেলে মাথাব্যথা সমস্যা থেকে
দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়।

 

আর এইভাবে মাথাব্যাথা যেমন আমাদের সমস্যা তেমনি একটু সচেতনতা আর ভাল কিছু
অভ্যাস গঠন করতে পারলেই আপনি মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন চিরতরে।

Leave a Comment