কি গরম!! আর সহ্য হয় না। যা দোকান থেকে একটা ঠান্ডা নিয়ে আয়। এমনটা হয় না কি আপনার সাথে? এই চিত্র আমাদের দেশ নয় সমগ্র
পৃথিবী জুড়েই কোমল পানি গরমে আরাম দিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আমাদের মাঝে অনেকেরই এই প্রচণ্ড
গরমে একটু তৃষ্ণা মেটাতে প্রয়োজন হয় ঝাঁজ ওঠা কোমল পানীয়ের। এছাড়াও উৎসব, মেহমান
আপ্যায়ন, পার্টি, আড্ডা, পিকনিক, সবখানেই এই পানীয় পান করা যেন অপরিহার্র্য হয়ে উঠেছে।
কিন্তু আমরা কি জানি এই কোমল পানীয় আমাদের
স্বাস্থ্যের উপর কিরুপ প্রভাব ফেলে? সত্যিকার অবস্থাটি প্রকাশই আমাদের আজকের লেখনীর
অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক কোমল পানীয় খাওয়া উচিৎ কি উচিৎ নয়?
কোমল পানীয়ঃ
কোমল পানীয় হচ্ছে এক প্রকার তরল পানীয় বিশেষ। যা পানির সাথে ফসফরিক এসিড,
সাইট্রিক এসিড, ক্যাফেইন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড,ক্যাডমিয়াম,সীসা, স্যাকারিন ইত্যাদি
দিয়ে তৈরী করা হয়। কোকাকোলা, পেপসি, আরসি কোলা,
ইউরা কোলা, প্রাইড, আপার নেট, ফিজ আপ,সান ক্রেস্ট, মজো, স্পিড, ফ্রুটি, মিরিন্ডা, জনপ্রিয়
কয়েকটি কোমল পানীয় ।
বর্তমানে কোমলপানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দিন দিন তাদের জনপ্রিয়তা
প্রমাণ করছে। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পেপসিকো, কোকাকোলা,দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের এজি
গ্রুপ, এম বেভ,প্রতিষ্ঠানগুলো এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে ।এছাড়াও আরো অনেক প্রতিষ্ঠান
রয়েছে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে।
সতেরো শতকে পশ্চিমা বিশ্বে কোমলপানীয় এর প্রথম বাজারজাতকরণ লক্ষ্য করা
যায়। তখন পানি এবং লেবুর শরবতে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, চিনি, মধু এর সংমিশ্রণে কোমল
পানীয় তৈরি করা হতো। কিন্তু বর্তমানকালে কোমল পানীয়তে এসেছে উপাদানগত পরিবর্তন। ফসফরিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, ক্যাফেইন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড,ক্যাডমিয়াম,সীসা,
কীটনাশক, সোডিয়াম বাই কার্বনেট, গ্লু,সুগন্ধি রং,প্রিজারভেটিভ, স্যাকারিন,সরবিটল,
ম্যান্টিল, এবং কখনও ম্যালিক এসিড ও টারটারিক এসিডের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আর
এইসব কৃত্রিম উপাদান মানুষের নানাভাবে ক্ষতি করছে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কেমন এবং
কিভাবে ক্ষতি করছে কোমল পানীয়।
কোমল পানীয় এর ক্ষতিকর
দিকঃ
১ .কোমল পানীয়তে রয়েছে ক্যাফেইন। যা দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা জনিত রোগের প্রধান
কারণ। কৃত্রিম চিনি ক্যান্সার-ডায়বেটিস ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া কোমল পানীয় পানের ফলে
হাড়ের ক্ষয়, দাঁতের ক্ষয়, অকাল বার্ধক্য, বদহজম, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি হয়ে থাকে।
বৃটেনের এক জরিপে দেখা গেছে নিয়মিত যারা কোমল
পানীয় পান করেন তাদের শতকরা ২০% দাঁতের রোগেও ভোগেন।
২. শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগন প্রমাণ করেছেন, কোমল পানীয়তে যে সোডিয়াম
বেনজায়েট থাকে তা মানুষের ডিএনএ কে ক্ষতিগ্রস্ত
করে এবং সেই সাথে মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাসেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে
অতিরিক্ত চা কফির মতোই কোমলপানীয় গর্ভধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কোমল পানীয়তে থাকা
কার্বন মনোক্সাইড শরীরের বিভিন্ন কোষে প্রবেশ করে প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। আর এই
কারণে গর্ভবতী নারীর সন্তান বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে।
৩. কৃত্রিম কোমলপানীয় যাতে বরফে রূপান্তরিত না হয় সেজন্য ইথিলিন গ্লাইকোল
ব্যবহার করা হয়। এটি শরীরে নানা ধরনের বিরূপ
প্রভাব ফেলে। তার একটি হচ্ছে কিডনিতে পাথর হওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় বলা
হয়, শারীরিক কঠোর পরিশ্রমের পর কোমল পানীয় খেলে ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম এর অভাব ঘটতে
পারে।
৪.কোমল পানীয় এর মূল উপাদান ৯৯% ডিসটিলড ওয়াটার।পরীক্ষায় দেখা গেছে,৫০০
গ্রাম এর কৌটাগুলোতে কার্বন- ১৭০ক্যালরি, সোডা-১৫ চা চামচ ও চিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
যা ছোট শিশুদের জন্য খুবই মারাত্মক। ফসফরিক
এসিডের ফসফরাস মানুষের পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে বদহজম,
গ্যাস এবং পাকস্থলীর স্ফিতির সৃষ্টি করতে পারে।
৫.ক্যারামেল এর রং আনার জন্য কোমল পানীয়ে পলিইথিলিন গ্লারাইকোল নামে যে
রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয় তা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।কোমল পানীয়তে ব্যবহৃত
স্যাকারিন, ইউরিনারি ব্লাডার ক্যান্সার অর্থাৎ মূত্রাশয়ের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
৬.কোমল পানীয় পান করার ফলে শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হয়। শুরু হয় টনসিলাইটস, ফেরিংজাইটিস, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়ার
মতো শ্বাসজনিত রোগ। খাদ্য হজমে কৃত্রিম পানীয় এর ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয় কিন্তু
এ কোমল পানীয় পান করার ফলে সাময়িক স্বস্তি মিললেও তা প্রকৃতপক্ষে পাকস্থলীর ভারসাম্য
নষ্ট করে।
মানব শরীর সাধারণত ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস
তাপমাত্রায় খাবার হজম করে থাকে অথচ কোমল পানীয় গ্রহণ করার সময়ে তাপমাত্রা থাকে
3 থেকে 4 ডিগ্রি সেলসিয়াস।
৭.প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডক্টর লেনিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউন কে বলেন
পশ্চিমা দেশগুলোতে মুটিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ এই কোমল পানীয়। আর এই অতিরিক্ত ওজন
মানব দেহের সব রোগের অন্যতম উৎস।
যেকোনো পানীয় ততক্ষণ পর্যন্ত খাওয়া জায়েজ যতক্ষণ পর্যন্ত তাতে কোন হারাম
উপাদান পাওয়া না যায়।
বিভিন্ন সংবাদ সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, বিভিন্ন প্রকার কোমল
পানীয়ে অ্যালকোহল মিশ্রিত থাকে, এছাড়া কোমল পানীয়ের মূল উপাদানে শুকরের চর্বি থাকে বলে অনেকে মনে করে থাকেন। সর্বোপরি
সন্দেহজনক বস্তু থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হালাল হারাম স্পষ্ট। এর মধ্যে
একটি সন্দেহযুক্ত জিনিস রয়েছে যা হারাম।(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা /২৭৬২)
কোমল পানীয় পান করার ফলে আমরা আমাদের শরীরে বিষ প্রয়োগ করছি। কার্বন ডাই
অক্সাইড পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা আমরা সবাই জানি।
সুতরাং এই ক্ষতিকর কার্বন ডাই
অক্সাইড যুক্ত পানীয় যখন আমাদের শরীরের বিভিন্ন কোষে পৌঁছায় তখন তার শরীরে ক্ষতিকর
প্রভাব ফেলবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারি যে, কোমল
পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
কোমল পানীয়ের দাম তুলনামূলক
একটু বেশি। এর পেছনে আমরা টাকা, কড়ি খরচ না করে যদি সেই টাকা দিয়ে ডাবের পানি, টাটকা
ফলের জুস, কিনে খায় তাহলে তা উপকারে আসবে।
তার সাথে ডাব বিক্রেতা ও ফল বিক্রেতা ও লাভবান হবেন। খাবার–পানে ভিন্ন স্বাদ আনতে
আমরা গ্রিন টি, লেবুর শরবত খেতে পারি।
তাই নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য একটি অভ্যাসই যথেষ্ট। সেই একটি অভ্যাস গড়তে
চলুন আজকে এবং এখন থেকেই কোমল পানীয় ত্যাগ করি। আর এতে করে আমি, আমরা যেমন ভাল থাকবো
তেমনই ভাল থাকবে আমাদের পৃথিবী।
আহারে, কিন্তু কোল্ড ড্রিংসতো আমার সেই পছন্দ। বিশেষ করে কোকাকোলা
ভাই আপনার পোস্ট দেখে হৃদয়ে নাড়া দিয়ে ওঠলো।। এখন থেকে কি আমি কোমল পানীয় খাব না?🥺