মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার উপায় জানার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন স্বাস্থ্য কি?
w.h.o. এর মতে ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিনের সমন্বয়ে হলো স্বাস্থ্য।
আমরা বলতে পারি একজন মানুষের স্বাস্থ্য হলো রোগমুক্ত সুস্থ শরীর। সেইসঙ্গে ভয়, হতাশা, বিষন্নতা ও মানসিক চাপমুক্ত মন। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি স্বাস্থ্যের অন্যতম উপাদান হলো মনের সুস্থতা বা মানসিক স্বাস্থ্য। মানুষের চিন্তা, আবেগ ও আচরণ এই তিন মিলেই হলো মানসিক স্বাস্থ্য।
কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখা যায়
আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা শারীরিক অসুস্থতাকে যতটুকু গুরুত্ব দেই কিন্তু মানসিক অসুস্থতাকে
তেমন গুরুত্ব দেইনা।
একজন মানুষের শারীরিক সুস্থতা তখনই আসবে যখন সে মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে। এই দুয়ের সমানতালে সমন্বয় এর মাধ্যমেই আসে সুস্থতা।
মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার উপায়
আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখার জন্য যা যা করতে হবে তা হলঃ
১ ইতিবাচক চিন্তাঃ
ইতিবাচক চিন্তা হলো এমন একটি মানসিক মনোভাব ধারণ করা, যার জন্য আমরা প্রতিটা কাজের ভালো সন্তোষজনক ফলাফল আশা করি।
অন্যভাবে বলা যায়, যে কোন বৈরী পরিস্থিতিতে আশাহত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিবেশকে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসার চেষ্টা করা।
গবেষণায় দেখা গেছে আশাবাদীদের গড় আয়ু দুঃখবাদী দের চেয়ে অনেক বেশি।
অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে আশাবাদ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর যারা অযথা নেতিবাচক চিন্তা
করে তারা সহজেই উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক বিষন্নতার মতো জটিল সমস্যায় ভোগে। এছাড়াও হৃদরোগ সংবহনতন্ত্রের জটিলতা, টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা রোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখে ইতিবাচক চিন্তা।
আরো পড়ুনঃ আকাশের দিকে তাকিয়ে যা যা প্রশ্ন তোমর মনে আসে তা লিখে রাখ এখানে
২ ব্যায়াম ঃ
ব্যায়াম করলে এন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ হয়। তাছাড়া সেরেটনিন ও সেরোটোনিন হরমোনও নিঃসরণ হয় যা মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ করে তোলে। তাই প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট হাঁটা জরুরি।
তাছাড়া রাতে দীর্ঘ ঘুমের পর ব্যায়াম শরীর ও মনকে চাঙ্গা রাখে। প্রাথমিক অবস্থায় ৫ মিনিট আগামীকাল ১০ মিনিট করে করে ব্যায়াম এর সময় বৃদ্ধি করুন।
আমরা এক সপ্তাহে ১০৮০ মিনিট সময় পাই। সেখান থেকে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়ামের জন্য রাখতে হবে। গবেষকদের
মতে সপ্তাহে ১৫০ থেকে ৩০০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত ( মাঝারি ব্যায়ামের ক্ষেত্রে) । যদি ভারী ব্যায়াম করা হয় তবে ৭৫ মিনিট থেকে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত প্রতি সপ্তাহে।
তাই আমাদের একদিন অন্তর অন্তর হলেও ১৫০ মিনিট সাপ্তাহিক ব্যায়ামের রুটিন পূরণ করা উচিত।
মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার গুরুত্বপূর্ণ অংশ
৩. পারিবারিক সম্পর্ক উন্নয়নঃ
পরিবার হলো একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রশান্তির একটি স্থান। মানুষ সারা দিন যেখানেই সময় কাটাক না
কেন পরিবারেই শেষ প্রশান্তি খুঁজে পায়। পরিবারের সম্পর্ক উন্নয়ন এর ফলে মানসিক চাপ
কমে। তাই পুষে রাখা কষ্টগুলো পরিবারের সাথে শেয়ার করুন ফলে মানসিক প্রশান্তি পাবেন। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে বিশ্ব পরিবার দিবস ঘোষণা করা হয়। এর পরই জাতিসংঘ ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষ ঘোষণা করেছিল।
এর প্রধান লক্ষ্য ছিল পারিবারিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করন এবং এর প্রতিকার। ১৯৯৬ সাল থেকেই ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তাই পরিবার যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝানোর জন্যই জাতিসংঘ একটা দিবস ঘোষণা করেছিল। মোট কথা ভাল থাকতে চাইলে মোবাইলে সময় না দিয়ে পরিবারকে সময় দিতে হবে।
৪. মনের সাদৃশ্য আছে এমন মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করুন
আপনি যা যা পছন্দ করেন এমন কাউকে খুঁজুন যার সাথে আপনার মনের সাথে মন মেলে। তার সাথে সময় কাটান নিজের সবকিছু শেয়ার করুন। এতে মানসিক শক্তি পাবেন। কিন্তু যদি এমন কেউ আপনার পছন্দের হয় যিনি আপনার জন্য ভাল না তার সঙ্গ পরিহার করুন।
৫. শখের কাজগুলো করুন
প্রত্যেক মানুষের একটা শখ থাকে। সেই সব শখ গুলোকে মূল্য দিন। যারা শখের কাজগুলো করে তারা অন্যদের থেকে
কম ডিপ্রেশনে ভোগে। শখের কাজগুলোর মধ্যে হতে পারে বইপড়া, সিনেমা দেখা, বাগান করা, গান শোনা ইত্যাদি।

৬. সক্রিয় থাকুন
বলা হয় অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বসতি। তাই অলস হয়ে বসে না থেকে কাজে মনোযোগী হন। কাজকে গুরুত্ব দেন সে যে কোনো কাজই হোক না কেন। সবসময় সক্রিয় থাকুন। সক্রিয় চিন্তাধারার মানুষগুলো সহজে নেতিবাচক চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তাই সবসময় সক্রিয় থাকুন।
৭ পর্যাপ্ত ঘুম
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে জেগে উঠুন। পর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন। সকালের
সূর্যালোক উপভোগ করুন। শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোকে সচল রাখে ঘুম। সঠিক মাত্রায় ঘুম না হলে ব্লাড প্রেসার, সুগার বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও ঘুমের কারনে চোখের দৃষ্টি উজ্জ্বল হয়। স্বল্প ঘুমে দেখা দেয় মাথাব্যথা এবংসেই থেকে চোখের নানান জটিলতা সৃষ্টি হয়। আয়ু বৃদ্ধিতে রুটিন অনুযায়ী ঘুম অত্যন্ত কার্যকর।
পরিশেষে বলা যায় ইতিবাচক চিন্তা মানুষের স্বাস্থ্য এবং মনকে সতেজ রাখে। তাই নেতিবাচক চিন্তা পরিহার করুন। পরিবার পরিজনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করুন। সেই সাথে নিজের চাওয়া-পাওয়ার উপর নিয়ন্ত্রন এনে নিজেকে ভাল কাজে ব্যস্ত রাখুন। তাহলেই মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকবে সেই সাথে ভাল থাকবে আপনার শরীর।
ভালো লাগলো।