সুতা কৃমি লক্ষণ,দূর করার উপায় ঔষধ ইত্যাদি বিষয় জানার আগে প্রাথমিক কিছু কথা বলা প্রয়োজন। এরপর আমরা অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে যাব। পৃথিবীর সবদেশে এই কৃমির দেখা মেলে। শিশুদের মধ্যে এই কৃমি বেশি দেখা যায়। তবে বড়দেরও কম হয় না।
দেখলে মনে হয় সুতার অংশ। এরা বৃহদান্ত্রে বাস করে এবং সাধারণত রাতের বেলায় পায়খানার রাস্তার চারপাশে এসে অসংখ্য ডিম পাড়ে এবং চুলকায় ।
কয়েক ঘন্টার মধ্যে ডিম পূর্ণতা লাভ করে এবং কয়েক মাস পর্যন্ত জীবন্ত থাকতে পারে। চুলকানোর সময় ডিম নখের মধ্যে লেগে থাকে এবং খাওয়ার সময় পেটে যায়।
খাবার-দাবার, ফলমূল, কাঁচা শাক-সব্জি ও পানির সাথেও পেটে যায়। কৃমির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে এবং মলদ্বার দিয়ে উপরের দিকে যেয়েও কৃমি হতে পারে। এ ছাড়া বাতাসের মাধ্যমেও এ কৃমির ডিম শরীরে প্রবেশ করতে পারে । এভাবে এর জীবনচক্র চলে।
সুতা কৃমি লক্ষণ দূর করার উপায়
পায়খানার রাস্তায় চুলকায়। এই চুলকানি রাতের বেলায় বেশি হয়। এটাই প্রধান লক্ষণ ।
পেট ব্যথা, বমিবমি ভাব, পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে ।
বেশি চুলকানোর ফলে পায়খানার রাস্তা ফুলে যেতে পারে এবং এই চুলকানির জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
বাড়িতে একজনের হলে অন্যান্য সদস্যদের মাঝে খুব সহজে সংক্রামিত হতে পারে ।
কৃমির কারণে শরীরের বিভিন্ন উপসর্গ বা জটিলতা:
বিভিন্ন ধরনের কৃমি বিভিন্ন অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন:
- কেঁচো কৃমি: এই কৃমি সংক্রমণের ফলে পেট ব্যথা, বদহজম, বমি বমি ভাব হয় অনেকগুলি কেঁচো কৃমি একসাথে জড়াজড়ি করে শ্বাসনালী এবং অন্ত্রনালী অবরোধ করে মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
মধ্যে মধ্যে এরা সফরে বের হয়ে পাকস্থলী, গলনালী, নাক-মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসতে পারে বা অন্য অনেক স্থানে গিয়ে নানা উৎপাত করতে পারে।
READ MORE>>>>> কৃমির ওষুধ কোনটা ভাল ?
অ্যাপেণ্ডিক্স এবং পিত্তনালীতে ঢুকে এরা যথাক্রমে অ্যাপেণ্ডিসাইটিস এবং জণ্ডিস সৃষ্টি করতে পারে। এদের তৈরী এক প্রকার রস রক্তের সাথে গিয়ে চুলকানি, আমবাত ও কৃমি বিকার সৃষ্টি করতে পারে। বাচ্চা কৃমিরা ফুসফুস দিয়ে যাবার সময় হাঁপানি ও নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- সূতা কৃমি: রাতে এই কৃমিরা মলদ্বারে এসে সুড়সুড়ি দেয়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির মলদ্বারে চুলকানি, অস্বস্তি ও অনিদ্রা হতে পারে। এ ছাড়া এরা পেটে ব্যথা, রাতে বিছানায় প্রস্রাব, অ্যাপেণ্ডিসাইটিস ও মেয়েদের বেলায় সাদা স্রাবের কারণ হতে পারে ।
- চাবুক কৃমি: এই কৃমি অত্যধিক সংখ্যায় থাকলে পেট ব্যথা ও রক্ত আমাশয় হতে পারে । কোন কোন ক্ষেত্রে এরা অ্যাপেণ্ডিসাইটিস সৃষ্টি করতে পারে।
- বক্র কৃমি: এক-একটা বক্রকৃমি একেিদন প্রায় ১ সি. সি. পরিমাণ রক্ত চুষে নিতে পারে। একজনের পেটে প্রায়ই কয়েকশত বা কয়েক হাজার কৃমি থাকে, সে রকম অবস্থায় এই কৃমি ভীষণ রক্তশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া বাচ্চা কৃমিরা পায়ের যেখানে ঢুকে, সেখানে চুলকানি ও ঘা সৃষ্টি করতে পারে। কোন কোন সময় কৃমি অল্পদিন স্থায়ী হাঁপানিও সৃষ্টি করতে পারে।
- পাতা কৃমি: অত্যধিক সংখ্যায় থাকলে এরা পেটে পেপটিক আলসারের মত ব্যথা উদ্রেক করতে পারে ।
- ফিতা কৃমি: গো-ফিতা কৃমি সাধারণত খবু একটা ক্ষতি করে না। তবে যখন তখন মলদ্বার দিয়ে এই কৃমির শরীরের কিছু অংশ বের হয়ে আশ্রয়দাতাকে লজ্জাষ্কর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এরা ক্ষুদামন্দা ও পেট ব্যথার কারণ হতে পারে।
- বেঁটে ফিতা কৃমি: এ কৃমি ক্ষুধামন্দা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানার কারণ হতে পারে। এ ছাড়া এদের উপস্থিতির জন্যে মাথাধরা, মাথাঘোরা, এমনকি খিঁচুনিও দেখা দিতে পারে।
- স্টংগিলইডিস স্টারকোরালিস: বক্র কৃমির মত এরা পায়ে চুলকানি ও ঘা করতে পারে। এ ছাড়া এরা হাঁপানি, নিউমোনিয়া, পেটে পেপটিক আলসার-এর মত ব্যথা ও ঘন ঘন পাতলা পায়খানার কারণ হতে পারে।
- ফাইলেরিয়া: এ রোগে কাঁপুনি দিয়ে ঘন ঘন জ্বর, পা বা হাত ফোলা, কুচকি বা বগলের গ্রন্থি ফোলা, অণ্ডকোষ ব্যথা বা ফোলা, এমনকি দুধের মত সাদা প্রস্রাবও হতে পারে। বহুদিন ধরে এ রোগ চলতে থাকলে পা ফুলে ভীষণ মোটা হয়ে গোদের সৃষ্টি করতে পারে।
- হাইড্রাটিড কৃমি: এ রোগের কৃমি যকৃত, ফুসফুস, মস্তিষ্ক ও শরীরের অন্যান্য স্থানে বড় হতে পারে। তরল পদার্থে ভরা ছোট ছোট বলের আকারে এরা ধীরে ধীরে বড় হয়ে ফুটবলের পরিমাণ ধারণ করতে পারে। এদের হাইড্রাটিড সিষ্ট বলা হয়।
- এরা যকৃত ও বুকে ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। কফের সাথে রক্ত এমনকি এসব সিষ্টের টুকরোও বের হতে পারে। এই সিষ্ট ফেটে গিয়ে এর ভেতরের তরল পদার্থ রক্তের সাথে মিশে গেলে হঠাৎ করে রক্ত চাপ কম এবং নাড়ীর গতি দ্রুত হয়ে রোগীর হাত-পা ঠাণ্ডা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে ।
সুতা কৃমি দূর করার ঔষধ
মেবেনডাজল ট্যাবলেট বা সিরাপ : ১টা ট্যাবলেট বা ১ চামচ ঔষধ একবার খেতে হবে এবং দু’সপ্তাহ পরে আবারও দ্বিতীয়বার খেতে হবে।সুসুসুতা কৃমিতা কৃমিতা কৃমি
অথবা পাইরেনটেল পামেট (Combantrin অথবা মেলফিন) ১ টা ট্যাবলেট ২৫০ মিলিগ্রাম।সুতা কৃমি
১ চা চামচ-৫০ মিলিগ্রাম ।সুতা কৃমি
১০ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি ওজনের জন্য একবার খেতে হবে।
ঔষধ খাবার সাথে সাথে পরনের কাপড়, বিছানার চাদর ধুয়ে ফেলা এবং রোদে শুকানো দরকার ।
নখ কেটে ছোট রাখতে হবে এবং বড় করা যাবে না। পরিষ্কার হাতে খাদ্য গ্রহণ বা খাদ্য পরিবেশণ করতে হবে।
সুতা কৃমি প্রতিরোধের উপায়ঃ
প্রত্যেক বাড়িতে পায়খানা তৈরি করতে হবে। সরকার কর্তৃক স্বল্পমূল্যে সরবরাহকৃত ওয়াটারসীল পায়খানা কৃমি প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।সুতা কৃমি
বাড়ির আঙ্গিনা, ফলগাছের নিচে, শাক-সবজির বাগানে বা যেখানে সেখানে পায়খানা করা যাবে না ।
টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করতে হবে। শহরে ট্যাপের পানি পান করা উত্তম ।
নখ বড় রাখা যাবে না । কাপড় ও বিছানা পরিষ্কার রাখতে হবে ।
শহরে সুষ্ঠ পয়ঃপ্রণালী থাকতে হবে ।
কৃমি দেখা দিবার সাথে সাথে এর চিকিৎসা করতে হবে। সুতা কৃমি
সুতা কৃমি হলে বাড়ির সকল সদস্যের একসাথে চিকিৎসা দেয়া উচিত।সুতা কৃমি
সুতা কৃমির বেলায় পায়খানার রাস্তা চুলকানো বন্ধ করতে হবে।