সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এর ক্ষমতায় আরোহন:
বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের তৃতীয় স্ত্রীর সংসারের বড় ছেলে। ২০১৫ সালে সালমান বাদশাহ হওয়ার পর থেকেই তার ছেলে মোহাম্মদ ধীরে ধীরে নিজেকে নিয়ে আসেন ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে।
বাবার ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করেই তিনি এগিয়েছেন মসনদের দিকে। বার্ধক্য আর অসুস্থতার কারণে রাজকাজে সালমানের অক্ষমতাও বাড়তি সুযোগ তৈরি করে বিন সালমানের জন্য।
তৎকালীন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে তাকে ক্রাউন প্রিন্স করেন বাদশাহ সালমান।
সমালোচকরা বলেন পিতাকে ম্যানেজ করে বিন সালমান এই পদে বসেছেন। এ ঘটনা নিয়ে রাজপরিবারে কিছুটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছিল। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি পালাবদল আসে সৌদি রাজবংশে।
সাম্প্রতিক অতীতে সাবেক বাদশাহ আবদুল আজিজের বংশধরদের মধ্যেই পর্যায়ক্রমে ও ভাগাভাগি করে রাজকাজ পরিচালিত হতো। (সৌদি যুবরাজ এর বিলাসী জীবন)
তারই ধারাবাহিকতায় সালমান বিন আবদুল আজিজের উত্তরাধিকারী বা ক্রাউন প্রিন্স মনোনীত হয়েছিলেন তার ভাতিজা ও আবদুল আজিজের নাতি মোহাম্মদ বিন নায়েফ।
কিন্তু তাকে অপসারণ করে উত্তরাধিকারীর পদে বাদশার ছেলেকে বসানোর মধ্য দিয়ে শাসনক্ষমতা এখন পুরোপুরি মোহাম্মদ বিন সালমানের চলে আসে।
সৌদি যুবরাজ হিসেবে তার বিলাসী জীবন:
তিনি সৌদি রাজদরবারের প্রধান এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। একই সাথে উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি বিপুল অর্থের মালিক। বিশ্বের অর্থশালী ব্যক্তিরা যেরকম বিলাসী জীবন যাপন করেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স তাদের মধ্যে অন্যতম।
৩৭ বছর বয়সী ক্রাউন প্রিন্স সৌদি রাজ পরিবারের বিস্তৃত সম্পদের বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রন করেন। যার পরিমান হতে পারে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। (সৌদি যুবরাজ এর বিলাসী জীবন)
মুহাম্মদ বিন সালমান একজন উপভোগ্য জীবনধারার অধিকারী। মুহাম্মদ সালমান রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং সেলিব্রিটিদের সাথে বৈঠক করে সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেছেন।
২০১৬ সালের জুন মাসে তিনি সিলিকন ভ্যালিতে ভ্রমণ করেন এবং ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ সহ মার্কিন হাই-টেক শিল্পের প্রধান ব্যক্তিদের সাথে দেখা করেন।
আরো পড়ুনঃ
প্রিন্স বিন সালমান সৌদি এরামকোর শেয়ার বিক্রি করে সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের পুঁজি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৩৭ বছর বয়সী সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইতিমধ্যে অর্থ, প্রতিরক্ষা, তেল এবং স্বরাষ্ট্রসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এমবিএস ২০১৭ সালে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন। এর আগে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
(সৌদি যুবরাজ এর বিলাসী জীবন)
২০১৫ সালে এক অজ্ঞাত ক্রেতা ২৩ কোটি ডলার খরচ করে একটি শ্যাটো বা আবাসিক বাড়ি কিনে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় এই ক্রেতার নাম গোপন করা হয়েছিলো। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের পশ্চিমে ওই বাড়িটির অবস্থান।
তখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া বাড়ি ছিলো এটি। বছর দুয়েক পর খবরে প্রচার হয়েছে যে ৩৪ বছর বয়সী সৌদি রাজপুত্র মোহাম্মদ বিন সালমান কিনে নিয়েছিলেন ওই
বাড়ি।
ফ্রান্স সফরে গিয়ে ৫০ হাজার বর্গফুটের শ্যাটো লুইস এক্সআইভি পছন্দ করেন। বাড়িটিতে তিনটি শয়নকক্ষ, একটি ইনডোর ও আউটডোর পুল, একটি লাইব্রেরি ও অ্যাকুরিয়ামে দিয়ে সাজানো রয়েছে ।
এই বাড়ি দেখার পর যুব রাজের এত ভালো লেগে যায় যে তিনি কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। টাকার অংক পরিমানে অনেক বেশি মনে হলেও তার ভালো লাগার মুল্য আরো বেশি ছিলো।
এ জন্য নিশ্চিত ভাবে তিনি কিনে ফেলেন বাড়িটি। ভালোবাসার জিনিসের জন্য অর্থ খরচ করতে তার কোনো কার্পণ্য নেই। (সৌদি যুবরাজ এর বিলাসী জীবন)
![সৌদি-যুবরাজ-এর-বিলাসী-জীবন](https://janabujha.com/wp-content/uploads/2022/11/সৌদি-যুবরাজ-এর-বিলাসী-জীবন-300x170.jpg)
সৌদি যুবরাজের ব্যক্তিগত চলাচলের জন্য প্রাইভেট বিমান আছে। রয়েছে প্রমোদতরী। বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী বা ইয়টের একটির নাম সেরিন।
রাশিয়ার ধনকুবের হিসাবে পরিচিত ইউরি শেলফারের কাছ থেকে সৌদি রাজপুত্র ২০১৫ সালে এই সুপার ইয়ট কেনেন ৩৮ কোটি ডলার খরচ করে। ইতালের শিপইয়ার্ডে এই ব্যয়বহুল ইয়টটি বানানো হয়।
এক সময় বিখ্যাত ধনকুবের বিল গেটস এই ইয়টটি লিজ নিয়েছিলেন। এই ইয়ট যার দৈর্ঘ্য হবে ৪৩৯ ফুট ৪ ইঞ্চি। আর কড়িকাঠের প্রস্থ হবে ৬০ ফুট।
কিছুদিন আগে ইয়টের খোলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। মিশরের শারম আল শেখে যাওয়ার উদ্দেশ্য লোহিতসাগর দিয়ে চলাচল করার সময় জলমগ্ন চড়ায় ভাসমান পাথরে আঘাত লেগে এই ক্ষতি হয়েছে।
শুধু ইয়ট নয় বিন সালমানের বিখ্যাত সব পেইনিটং কেনার প্রতি ঝোক আছে। শিল্পকর্ম পছন্দ করেন মোহাম্মদ বিন সালমান। কিন্তু একটি শিল্পকর্ম নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।
২০১৭ সালে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির একটি বিরল শিল্পকর্ম ৩৪ কোটি ডলার খরচ করে কিনে নেন সৌদি যুবরাজ।
এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রীত কোনো শিল্পকর্ম হচ্ছে দা ভিঞ্চির এই সালভাতোর মুন্ডি। অবশ্য নিলাম প্রতিষ্টান ক্রিস্টি এই খবর প্রত্যাখন করে। বর্তমানে আবুধাবির ল্যুভর জাদুঘরে ওই শিল্পকর্মটি রয়েছে।
সম্প্রতি বৃটিশ ট্যাবলয়েড সান খবর দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছেন। এ জন্য যুবরাজ ৩০০ কোটি ডলার দর হাকা হয়েছে। যা হবে এই ক্লাবের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দর।
অসাধারণ ইয়ট, ফরাসি বাড়ি ও বিরল শিল্পকর্ম কিনতে লাখো ডলার খরচ করতে পারেন যে রাজপুত্র তার বন্ধুত্বও রয়েছে উচ্চপর্যায়ে।
হোয়াইট হাউসে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। ট্রাম্প তাকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেছেন। ট্রাম্পের জামাই জ্যারেড কুশনারও তার বন্ধু।
ব্যক্তিগত বিলাসী জীবন যাপনের পাশাপাশি সৌদি আরবকে বদলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন ক্রাউন প্রিন্স। যা পশ্চিমা বিশ্বে তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। সৌদি আরবকে কিভাবে বদলে দেয়া যায় সে অনুযায়ী কাজ করছেন ক্রাউন প্রিন্স।
তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে সৌদি আরবকে একটি পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
দুবাইয়ের মতো করে তিনি গড়ে তুলতে চান জেদ্দাকে। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ইতোমধ্যে দেশটির আভ্যন্তরিন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনছেন।
বিদেশি পর্যটক টানতে লোহিত সাগরের সৈকতে আর্ন্তজাতিক মানের অনেকগুলো বিলাসবহুল রিসোর্ট তৈরি করতে যাচ্ছে সৌদি আরব।
রেড সি প্রজেক্ট’ নামে এই পরিকল্পনার মুল লক্ষ হলো তেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে পর্যটন থেকে আয় বাড়ানো।
পর্যটনের উন্নয়নে বৃহৎ এই প্রকল্পের অধীনে ২০২২ সালের মধ্যে সৌদি আরবের শহর আমলাজ ও আল-জাওয়াহের মধ্যবর্তী লোহিত সাগরের উপকূলঘেঁষে প্রায় ৫০টি দ্বীপে রিসোর্ট তৈরি করা হবে।
সেখানে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য উপভোগ, কোরাল রিফে ড্রাইভিং ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শনের সুযোগ থাকবে।
পড়ুনঃ
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান পশ্চিমা জন মানসে একজন সংস্কারকামী নেতা হিসাবে নিজেকে হাজির করার চেষ্টা করছেন। তার বিলাসী জীবন পশ্চিমা গনমাধ্যমে নানা সময়ে আলোচনার বিষয়ে পরিনত হয়েছে।
সৌদি আরবের প্রিন্স হয়ে তিনি যে জীবন ব্যবস্থা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তা কি ইসলাম সমর্থন করে? ইসলামের শিক্ষা ছিল অনাড়ম্বর আর সংযমের।
কিন্তু প্রিন্স সালমান যেভাবে তার পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন তাতে হয়ত সৌদি আরব আরও উন্নতি হতে পারে। কিন্তু ইসলামের শিক্ষা থেকে নতুন প্রজন্ম হয়ত অনেকাংশে ছিটকে পড়বে। আপনার কি মনে হয়? এই বিলাসবহুল জীবনযাপন কি ঠিক না কি বেঠিক?
Outstanding ❤️🔥