হলুদ গাঁদা ফুল, রাঙা পলাশ ফুল,
এনে দে, এনে দে, নইলে
বাঁধবো না, বাঁধবো না, চুল….
এই গানের সাথে পরিচিত নই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল । এই গাঁদা ফুল
দিয়ে শুধু চুল বাঁধা নয় আপনি
চাইলে এই ফুল চাষাবাদের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলও হতে পারেন । বর্তমানে বিজ্ঞান এর নতুন নতুন কৌশলের ছোঁয়ায় গাঁদা
ফুল এখন শীতকাল ছাড়াও বর্ষাকালেও চাষ করা হচ্ছে । তবে বর্ষাকালের তুলনায় শীতকালে
এর চাহিদা বেশি । কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে শীত আসে। শীত
আসার সঙ্গে সঙ্গে শহর জুড়ে বাসন্তী বা হলুদ রঙের গাঁদা ফুলের আমেজ লক্ষ্য করা
যায়। আজকাল গ্রামগুলোতেও এই আমেজের কমতি নেই ।
বিয়ে, জন্মদিন, পূজা,নানা রকম উৎসবে এই ফুলের দেখা মিলে। বাণিজ্যিকভাবে এখন কৃষকরাও আগ্রহের সহিত
গাঁদা ফুলের চাষাবাদ করছে। গাঁদা ফুলের
চাষ পদ্ধতি এবং বাণিজ্যিকভাবে গাঁদা ফুলকে চাষাবাদ করে কিভাবে সাবলম্বী হওয়া যায়
তা নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল।
গাঁদা ফুলের উৎপত্তিস্থল সুদূর দক্ষিণ
আফ্রিকায়। কালক্রমে তারপর এটি ভারতবর্ষেও
ছড়িয়ে যায় । আর সৌন্দর্য আর সহজলভ্যতার
জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ফুলের পরিচিতি বেড়েই চলছে দিনের
পর দিন । বর্তমানে আমাদের দেশেও এই ফুলের চাহিদা ব্যাপক।
ভারতবর্ষের মেদিনীপুর, নদিয়া ,উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর প্রভৃতি জেলায় বাণিজ্যিকভাবে এই গাঁদা ফুল
প্রচুর চাষ করা হয় । শুধু ভারতই নয় আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গাঁদা ফুল চাষ
করা হয় । যশোরের গদখালী, জিকরগাছা ,চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, গাজীপুর জেলার সদর উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী ও পটিয়া ঢাকা জেলার সাভার
এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গাঁদা ফুলের চাষাবাদ হচ্ছে।
আমরা গাঁদা ফুল চাষ করার
বিষয়বস্তুগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিয়েছি। যেমন -জমি তৈরি ,চারা উৎপাদন, চারা রোপণ, ফুল উৎপাদন, পরিচর্যা, ফুল সংগ্রহ। নিচে এইগুলো আলোচনা করা হলো।
জমি তৈরি :
ফুল চাষের জন্য জমি তৈরি একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।আমাদেরকে প্রথমে জমি চাষ এবং আগাছা মুক্ত করে প্রতি হেক্টরে
৫০ টন জৈব সার ১৫০ কেজি টিএসপি এবং ১৫০ কেজি এমপি মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তবে ফরাসি জাতের গাধার
ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার কম ব্যবহার করা উচিত । তা না হলে ফলন ভালো হবে না।
চারা উৎপাদন :
বীজ এবং কাটিং এই দুই পদ্ধতিতে চারা
উৎপাদন করা যায়।
বীজের মাধ্যমে :
এই মাধ্যমে চারা উৎপাদনের জন্য মাটি
ঝুরঝুরে করে নিতে হবে ।তবে খেয়াল রাখতে হবে বীজ তলায় যেন পানি না জমে। চারাগুলো ১.৫ থেকে ২ ইঞ্চি লম্বা হলে
উপরের আগা কেটে দিতে হবে । চারাগুলোর বয়স এক মাস
হলে তখন তা মূল মাটিতে রোপন করার জন্য প্রস্তুত।
আরো পড়ুনঃ
কাটিং এর মাধ্যমে :
ফুল দেওয়া শেষ হলে সুস্থ সবল গাছ নির্বাচন করে চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি
লম্বা করে ডাল কেটে নিতে হবে । ছায়াযুক্ত স্থানে বালি ও মাটির মিশ্রণে ডালটিকে
রোপন করতে হবে। এবং নিয়মিত সেচ দিতে হবে । এতে কাটিং-এ তাড়াতাড়ি শিকড় গজাবে।
চারা রোপন :
বীজের মাধ্যমে বা কাটিং পদ্ধতিতে
চারা উৎপাদনের পর ,চারার বয়স যখন
মাঝখানেক হয় তখন ৩৬ ইঞ্চি দূরত্বে সারি করে এবং সারিতে চারা গাছের দূরত্ব হবে ১৮
ইঞ্চি ।চারাগুলো লাগানোর আগে পাত্রে পানি নিয়ে দুই চা চামচ ডায়াথেন এম ৪৫ ঔষধ
মিশিয়ে চারা গুলো ওই পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে, ৫ থেকে ৬ মিনিট পর তুলে লাগালে চারার মৃত্যু আর অনেক কম হবে।
পরিচর্যা :
গাঁদা ফুল গাছের গোড়ায় যেন পানি না
জমে সেই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে ।মাটি শুকানোর আগেই সেচ দিতে হবে। চারা যখন বড়
হবে তখন গাছের গোড়ায় মাটি দিতে হবে। আগাছা জন্মালে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার
করতে হবে। বেশ কিছু রোগ গাঁদা ফুল গাছকে আক্রমণ করে।
যেমন- ঘুরা পচা ,কলার রোড,ঢলে পড়া, পাতার দাগ, পাতা ঝরসা, ফুল পঁচা,মুজাইক ইত্যাদি।
এসব রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জাব পোকা আক্রমণ করলে দুই মিলি
বেলাথিয়ন এক লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । গাছ বড় হলে খুঁটির সাথে
বেধে দিলে গাছ সোজা থাকে। জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে ফলন ভালো হবে।
ফুল সংগ্রহ:
চারা লাগানোর ৫০ থেকে ৫৫ দিনের মাথায় ফুল তোলা শুরু হয়
।ফুল কাঁচি, ব্লেড দিয়ে বোঁটা সহ কেটে সংগ্রহ
করতে হবে । এতে ফুল বেশিক্ষণ তাজা থাকবে । ফুল তোলার জন্য ভোর বা বিকালে ঠান্ডা
আবহাওয়া উপযোগী ।গরে একটি গাছ থেকে জাত ভেদে ১৫ থেকে ৪০ টি ফুল ধরে।
বাণিজ্যিক সফলতা:
গাঁদা ফুল শুধু টব, বারান্দা বা ছাদে নয়, এখন বাণিজ্যিকভাবেও গাঁদা ফুলকে কাজে লাগানো যায় । চাষ করার পর সেই ফুল কৃষক
স্থানীয় কোন পাইকারের কাছে বিক্রি করে। সেই পাইকার আবার ফুলের দোকানে ফুলগুলোকে
বিক্রি করে।
তারপর দোকান থেকে আমরা বিভিন্ন কাজে
ফুল গুলো কিনে থাকি । কিন্তু এতে করে কৃষক বন্ধুটি অনেক সময় তার ফুলের
ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না । কিন্তু বর্তমান যুগ মোবাইল ফোনের যুগ । মোবাইলে
যোগাযোগের মাধ্যমে কৃষক তার পণ্যটি সরাসরি
বিক্রেতার কাছে বিক্রি করতে পারবে।
আপনি এখন একটি ফেইসবুক প্যাইজ এর মাধ্যমে ঘরে বসে
ব্যবসা করতে পারেন। হয়ত প্রথমেই ভাল ইনকাম করা সম্ভব না। কিন্তু কিছু দিন লেগে থাকলে
সফলতা আসবেই।
তাছাড়া আপনার এলাকার আশে- পাশে কসমেটিক এর যেসব দোকান
আছে তাদের সাথে কথা বলে রাখতে পারেন। প্রয়োজনে একটা বিজনেস কার্ড/ ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার
করতে পারেন।
আর একটা কাজ করতে পারেন খুব সহজে সঠিক ব্যবসায়ী খুঁজে
পাওয়ার জন্য। ইউটিউবে সার্চ দিলে দেখেবেন অনেক ফূল এর ব্যবসায়ী পেয়ে যাচ্ছেন। সাধারণত
ঢাকার শাহবাগে ফুল এর ব্যবসায়ীর অভার নেই। ইন্টারনেটে একটু ঘাটাঘাটি করলে সহজেই পেয়ে
যাবেন তাদের নাম্বার ।
তাই ব্যবসা করতে চাইলে নানা উপায় রয়েছে। আর খুব সহজেই
সেইসব উপায় এর মাধ্যমে ব্যবসা করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ
স্বাবলম্বী হওয়া:
গাঁদা ফুল চাষ করার মাধ্যমে কৃষক তার
ভাগ্য পরিবর্তন করছে । নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ
করছে। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখছে।
বেকারত্ব হ্রাস:
ফুল চাষ
একটি শখের বিষয়। অনেকে চাকরি খোঁজে না পেয়ে হন্য হয়ে ঘুরে। অবশেষে অতিথি পাখির
মত বেলা শেষে বাড়ি ফিরে। তাদের কাছে ফুল চাষ হতে পারে একটি নতুন সম্ভাবনা। আবার
অনেক যুবক সৌখিনতার বসে গাঁদা ফুল চাষ করছে। চাইলে আপনিও করতে
পারেন। এতে আমাদের যুব সমাজ থাকবে প্রাণবন্ত, তেমনি বেকারত্ব পাবে হ্রাস ।
চাহিদা মিটানো: আমাদের বারো মাসে তের পার্বণ। অর্থাৎ বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান লেগেই
থাকে সারা বছর ।এসব অনুষ্ঠানে গাঁদা ফুলের প্রচলন এখন ব্যাপক লক্ষ্য করা যায় । গাঁদা
ফুল চাষ করার ফলে ফুলের চাহিদা অনেকটাই মিটানো সম্ভব। তাই সৌখিনতাকে পেশা করে নিজে হয়ে উঠুন স্বাবলম্বী এবং একই সাথে প্রকাশ পাক আপনার
রুচিবোধ।
অনেক কিছু জানলাম