সময় গণনায় কার্যকারী উপাদান হলো ঘড়ি। তবে এই ঘড়িতে সময় গণনায় আমরা সাড়ে একটা বা সাড়ে দুইটা না বলে দেড়টা বা আড়াইটা বলে থাকি। সহজাত ভাবেই আমরা ছোটবেলা থেকে এটি এভাবে বলার কারণেই শিখে থাকি। তবে এই প্রক্রিয়ায় গণনার পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। আজ সেইটিই আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
দেড়টা বা আড়াইটা বলার কারণ কি?
হতো।
তাই ১৬৬৫ সালে পেন্ডুলাম চালিত প্রথম কার্যকরী ঘড়ি আবিষ্কৃত হয়। নেদারল্যান্ডের বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইজেন্স এই ঘড়ি আবিষ্কার করেন। যা আজ থেকে প্রায় ১৩০০ বছর আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল।
বিশালাকৃতির সেই ঘড়ি রুপ বদলিয়ে সহজলভ্য ও সহজব্যবহারের উপযোগী করে হাতের কব্জিতে নিয়ে আসতে সময় লেগেছে ৮০০ বছর।। সময়ের জন্ম ঠিক কবে?
এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো অনেকের জানা নেই। কিন্তু চিরন্তন সত্য হলো মানুষ সময়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে সে এগিয়ে নিয়েছে তার সভ্যতা ও তার ইতিহাস।
যাক সেসব কথা , আচ্ছা ঘড়ির কাঁটা ঠিক যখন ১.৩০ কিংবা ২.৩০ টার ঘরে পৌঁছায় তখন কেন আমরা দেড়টা বা আড়াইটা বলি ? কেন সাড়ে ব্যবহার করি না? এমন হওয়ার কারণ কি?
৩.৩০ এর পর থেকে সর্বক্ষেত্রে সাড়ে বলি কিন্তু কেনো? ছোটবেলা থেকে এই প্রশ্ন একাধিকবার মাথায় এসেছে। কিন্তু এর সঠিক উত্তর পাইনি তাই এর রহস্য উন্মোচন করার প্রয়াস পাচ্ছি।
সাড়ে শব্দচর্চা:
সময়ের ক্ষেত্রেই যে আড়াই ব্যবহার হয় তা নয়, টাকাপয়সা গণনা এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহার লক্ষ্য করা হয় আড়াই শব্দটিকে।
যেমন দেড়শ টাকা, আড়াইশো টাকা,আড়াই কিলোমিটার, আড়াই মিটার ইত্যাদি ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু চিন্তা করলে দেখা যায় এর ব্যবহার ভারতীয়রাই করে থাকে।
ভারতের দেড়, আড়াই ও ত্রৈমাসিক গণনা পদ্ধতি চালু রয়েছে। ভগ্নাংশের হিসাব বর্ণনায় এই শব্দগুলো ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। প্রাচীন ভারতে এইভাবে হিসাব করা হতো যার প্রচলন এখনও রয়ে গেছে ভারতসহ আমাদের দেশেও।
আরো পড়ুন:
ভগ্নাংশ কি?
একটি পূর্ণ সংখ্যার একটি অংশ হচ্ছে ভগ্নাংশ। দুটি পূর্ণ সংখ্যার যোগফল হল ভগ্নাংশ। ৩ কে ২ দিয়ে ভাগ করলে হয় ১.৫ অর্থাৎ 1 এর অর্ধেক। তাই এখানে অর্ধেক অংশকে দেড় বলে। তবে ভারতের মতো বিভিন্ন দেশে ভগ্নাংশ লেখার নিয়ম ভিন্ন ভিন্ন।
নামতার প্রচলন ও গণনা:
পোড়ানো তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, যে ভারত ও বাংলায় একসময় এক-চতুর্থাংশ, পৌনে দুই ও আড়াই এর নামাতা পর্যন্ত শেখানো হতো।
ঈদের আড়াই এখনো জ্যোতিষ শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। ভারতে ওজন ও সময় ভগ্নাংশে পরিমাপ করা হতো। প্রাচীন ভারতে গণিতের ভগ্নাংশ ব্যবহার করা হত তা এখনো চলমান।
কেন দেড় আড়াই এর প্রচলন হলো?
ঐতিহাসিক ও ভাষাবিদরা মনে করেন ভারতের সবচেয়ে বেশি প্রচলন ছিল একের অর্ধেক ও দুই এর অর্ধেক এর ব্যবহার। তাই তখনকার মানুষ ১.৩০ ও ২.৩০ টার পরিবর্তে দেড় ও আড়াই শব্দের সৃষ্টি করেছিল।
মূলত শব্দ দ্রুত উচ্চারণের জন্য এর ব্যবহার শুরু হয়। কিছু কিছু শব্দ উচ্চারণে অনেক কঠিন ও দাঁত ভাঙ্গা হয় তদ্রুপ দেড় ও আড়াই এর ক্ষেত্রেও হয়েছে।
সার্দ্ধদ্বয় মানে স অর্দ্ধদ্বয়, অর্থাৎ ২ এর সাথে আরও আধা। এই শব্দটা প্রচন্ড দাঁতভাঙ্গা এবং উচ্চারণে অত্যন্ত দুর্বোধ্য। তাই দাঁতের সাথে শব্দটাও ভেঙ্গে গিয়ে রূপ পরিবর্তন করে নিয়েছে।
সার্দ্ধদ্বয়>সাধধয়> আধধয়> আড়ায় বা আঢ়ায় >আড়াই হয়তোবা এভাবে পরিবর্তিত হতে হতে এই আড়াই রূপ পেয়েছে।
দের শব্দটি হিন্দি ঢেড় থেকে এসে থাকতে পারে। এটি ধারণা করেন অনেকে। হয়তো বারবার পরিবর্তিত হতে হতে এই রূপ পেয়েছে।
Moza pelam