রসালো ফল আম, জাম, কাঠাল বা আপেল কমলার নাম শুনলেই খেতে ইচ্ছে করে? খাবেনইতো খাওয়ার জিনিস মজা করেইতো খাবেন কিন্তু এদিকে খালিপেটে আপনার রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ ৫.৬ থেকে ৬.৯ mmol/L এর মধ্যে!!
আপনি তো ভাই ডায়াবেটিসের নৌকায় পা দিতে চলেছেন অর্থাৎ প্রিডায়াবেটিস রোগী। কি বলেন?!!! তাহলে কি ফল আমার জন্য হারাম? আরে না, সাম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে কিছু ফল আছে যেগুলো রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে। বাঁচালেন ভাই!
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল
দাঁড়ান দাঁড়ান, আগে জেনে তো নিন ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় কোন কোন ফল গুলো রাখা উচিত এবং কখন ,কিভাবে খেতে হবে।
ডায়াবেটিস ও ফলের গুরুত্ব:
আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি সুস্বাদু রসালো ফল গুলোতে রয়েছে প্রাকৃতিক মিষ্টি , পুষ্টি উপাদান ও বাঙালির আবেগ। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আবেগী ফলগুলো বাদ দিয়ে খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) এবং বেশি পরিমাণে ফাইবার যুক্ত ফল। ভাই কষ্ট হলেও শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটুকু তো করতেই হবে।
কেন ডায়াবেটিস রোগীদের ফল খাওয়া উচিত?
১.ফাইবার: আপনি ডায়াবেটিস রোগী ?আবার আপনার ক্ষুধা ও লাগে ঘন ঘন? ফাইবার যুক্ত খাবার ধীরে ধীরে হজম হয়, তাই বেশি ক্ষুধা লাগে না। ফলে রক্তের শর্করা চট করে বেড়ে যায় না। বুঝলেন ভাই ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় ফাইবারযুক্ত ফল রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
২. ভিটামিন ও খনিজ: ফল যে শুধু স্বাদের জন্যই খাব তা কিন্তু না। আল্লাহ ফলে দিয়েছেন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ যেমন ভিটামিন সি, পটাসিয়াম। যা আমাদের সকলের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
৩. প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: আমাদের হাতের কাছে যেসব ফল থাকে যেমন লেবু ,কমলা ,আমলকি, ডালিম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এমন এক জিনিস, যা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষিত রাখে এবং রক্তে ইনসুলিনের কাজ করো ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
এইবার বুঝলেন তো ডায়াবেটিস রোগীদের ফল খাওয়া কেন দরকার? তাহলে চলেন এবার জেনে নেই ডায়াবেটিস রোগী কি কি ফল খেতে পারবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ৭টি স্বাস্থ্যকর ফল:ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল
একটু বিশ্বাস রাখেন, আপনি ডায়াবেটিসের রোগী বলে আপনার খাদ্য তালিকায় শুধু লেবু আর আমলকি রাখবো এতটা ও নিষ্ঠুর আমি নই!! যেসব ফলের নাম এখন বলব, শুনলে তো ফিদা হয়ে যাবেন। বলেন তাহলে ফিদা হই।
১.আপেল:
আপেলে আছে প্রচুর ভিটামিন, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। শুধু তাই নয় আপেল একটি লো (GI) যুক্ত ফল। তাই ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় আপেল রাখা ফরজ। আপেলে প্রাকৃতিক সুগার থাকলেও ফাইবার সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় এটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
২.নাশপাতি:
ভিটামিন কে, সি ,পটাশিয়াম, কি চান ?! সবই আছে নাশপাতিতে। শুধু তাই নয় ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় হজম হতে সময় লাগে, ক্ষুধাও কম লাগে, গ্লুকোজ ও নিয়ন্ত্রণে থাকে। বলে রাখা ভালো নাশপাতি লো (GI) যুক্ত ফল।
৩. বেরি জাতীয় ফল:
ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরির মতো স্টাইলিস্ট ফল গুলোতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি। শুধু নামে নয় কাজেও আছে । বেরি জাতীয় ফল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়।
৪. কমলা ও অন্যান্য সাইট্রিক ফল:
মন ও পেট ভরে খাবেন কিন্তু ডায়াবেটিস বাড়বে না, এমন কিছু ফল খুঁজছেন? আমি বলব কমলা খান। সাইট্রাস জাতীয় ফল যেমন কমলা, লেবু, মাল্টায় কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম আবার ফাইবারের পরিমাণ বেশি। সেই সাথে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি । ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে এই ফলগুলো বেশ কাজের ।
৫.পেয়ারা:
অনেক তো হলো বিদেশী স্টাইলিস্ট ফল। চলুন এবার আপনাকে একটা দেশি ফলের নাম বলি যেটা খেতেও মজা আবার ভিটামিন এ ,সি এবং ফাইবারে ভরা। কি সেই ফল? পেয়ারা। হ্যাঁ ভাই পেয়ারা। পেয়ারা খেয়ে দেখবেন অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকবে ফলে অন্য কোন খাবার খেতে ইচ্ছে করবে না। আর কম খেলে আপনার ওজন কমবে আবার গ্লুকোজ ও নিয়ন্ত্রনে আসবে।
৬.কিউই:
কিউই লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত ফল। ভিটামিন সি, ফাইবার ও পটাশিয়ামের কমতি নেই এই ফলে। লো (GI) যুক্ত হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় কিউই একটি আদর্শ ফল।
৭.আনারস:
মুক্তাগাছার মণ্ডা আপনার জন্য হারাম হলেও মধুপুরের আনারস কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উন্মুক্ত। আনারস ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন সি এর মত পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। লো (GI) এবং ফাইবার সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় এটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কোন ফল গুলো ডায়াবেটিস রোগীর এড়িয়ে চলা উচিত? ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল
ভাই কষ্টের কথা হলেও সত্য, ডায়াবেটিসের নৌকায় যখন পা দিয়েছেন তখন কিছু রসালো, মজার ফলতো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতেই হবে। সেই সাথে ডায়বেটিস রোগীর জন্য নিষিদ্ধ খাবার তালিকা আমাদের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে ভিজিট করে আসতে পারেন।
যেহেতু লিংকে ক্লিক করে আবার পড়তে এসেছেন তাই আপনাকে ধন্যবাদ। যাক এখন আবার শুরু করি ,এই সমস্ত মজার ফলগুলোতে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশি থাকে যা রক্তের শর্করা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় ।তাই এগুলো আপনার জন্য হারাম। হারাম ফলগুলো হল:
১.আম:
১০০ গ্রাম পাকা রসালো আমে শর্করা থাকে ১৭ গ্রাম আর ফাইবার ৪ গ্রাম। ভাই বুঝতেই পারছেন পাকা আম আপনার শরীরের শর্করার মাত্রা অনেকটা বাড়িয়ে দেবে ।তাই পাকা আম ডায়াবেটিস রোগীর এড়িয়ে চলায় উচিত।
২. পাকা কলা:
পাকা কলার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) প্রায় ৫১ এবং শর্করার পরিমাণটাও অনেক বেশি। কলা পুষ্টিকর ফল হলেও ডায়াবেটিস রোগীর জন্য হারাম।
৩. আঙ্গুর:
আঙ্গুর খেলেন তো সর্বনাশ ঘটালেন। আপনি জানেন আঙ্গুরের (GI) কত? প্রায় ৫৯। আবার প্রচুর পরিমাণের প্রাকৃতিক চিনির উৎস এ আঙ্গুর। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে আঙ্গুর কে খাদ্য তালিকা থেকে আজই বিদায় জানান।
আরো পড়ুন: ডায়বেটিস প্রতিরোধের উপায়: ৫ টি
কিভাবে ফল খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়?
ভাই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার থাকার পরেও ,আমি বলব ফল সতর্কতার সাথে পরিমাণ মতো খান। কারণ ফল সব সময় রক্তের শর্করাকে বাড়িয়ে দেয়। চলেন আপনাকে ফল খাওয়ার কিছু টিপস দেই যেটা ফলো
করলে ফলও খেতে পারবেন আবার ডায়াবেটিস ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল এই লিখার মধ্যে আমরা শুধু ফল কি কি খাবেন তাই বলছি না সাথে বোনাস টিপসও দিচ্ছি।
১.পরিমিত পরিমাণে খান:
একসাথে বেশি ফল না খেয়ে অল্প পরিমানে খান। যেমন ধরুন সকাল এগারোটায় আপনার ছোটখাটো ক্ষুধা লেগেছে। আপনি এখন অর্ধেক পেয়ারা খান, বাকি অর্ধেকটা বিকালে যখন আবার ছোটখাটো ক্ষুধা লাগবে তখন খাবেন।
২. গোটা ফল খান ফলের জুসকে না বলুন:
ডায়াবেটিস রোগী পরিমাণ মতো গোটা ফল খেতে পারলেও জুসকে না বলা উচিত। কারণ জুস আপনি এক চুমুকে খেয়ে ফেলবেন ,যার ফলে রক্তে সরাসরি চিনি মিশে যাবে এবং শর্করা দ্রুত বেড়ে যাবে । আস্ত ফলে থাকে ফাইবার। তাই আপনি যদি গোটা ফল চিবিয়ে খান তাহলে হজম হতে সময় লাগবে ফলে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৩. কম GI আছে এমন ফল বেছে নিন:
ভাই আপনি যদি ডায়াবেটিসের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) আছে এমন ফলগুলো বেছে নিতে হবে। উপরে সাতটি ফলের নাম আমি বলে দিয়েছি যেগুলো কম GI সমৃদ্ধ।
৪. কার্বোহাইড্রেটের হিসাব রাখুন:
একসাথে ১৫ গ্রাম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত ফল ডায়াবেটিস রোগীর জন্য নিরাপদ। ফলে যেহেতু প্রাকৃতিক চিনি থাকে, তাই কার্বোহাইড্রেটের হিসাব রাখাটা জরুরী। তা না হলে রক্তের শর্করার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। তাই অবশ্যই খেয়াল রাখবেন একসাথে যেন ১৫ গ্রামের বেশি কার্বোহাইড্রেট যুক্ত ফল আপনি না খেয়ে ফেলেন।
ভাই আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে আর ফল খাওয়া হারাম হয়ে গেল এমনটা কিন্তু না। পরিমাণ মতো ফাইবার সমৃদ্ধ কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত গোটা ফল খাওয়া আপনার জন্য উপকারী। এ ধরনের ফল আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। তাই খুব সাবধানের সাথে আপনার উপযুক্ত স্বাস্থ্যকর ফল গুলো বেছে নিন। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল এর ফলগুলোর লিস্ট নোট করেও রাখতে পারেন।
ডায়াবেটিস অনেকটা পাগলা ঘোড়ার মত ।হাতের মধ্যে না রাখতে পারলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে চোখের সমস্যা ,হার্টের সমস্যা , কিডনি ড্যামেজ সহ নানা ধরনের জটিল শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। ভাই জীবন তো একটাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম , পরিমিত খাদ্যাভ্যাস ও রক্তের গ্লুকোজ চেকআপ
এর মাধ্যমে ডায়াবেটিস কে কন্ট্রোলে রাখুন, সুস্থ থাকুন সুন্দর জীবন যাপন করুক। এখনও যেহেতু ডায়াবেটিস চিরতরে দূর করা সম্ভব নয় তাই নিয়ন্ত্রনই বাঁচার উপায়। তবে হ্যা এখন কিছু উন্নত গবেষণা হচ্ছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে তা পড়ে আসতে পারেন এই লিংকে...ডায়বেটিস চিরতরে নিরাময় সম্ভব ও বাস্তবতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার আরো অনেক কার্যকারী টিপস আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। আপনি চাইলে এখানে ক্লিক(ডায়বেটিস) করে জেনে নিতে পারেন।