পোলিও রোগ এর লক্ষণ , কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার নিয়ে আমাদের সচেতন না হলে পরিবারের যে কোন শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে।
পোলিও রোগের লক্ষণসমূহ
১. শুরুতেই জ্বর,
২. মাথা ব্যথা
৩. সারা শরীর ব্যথা হয় ।
৪. দুর্বলতা, গলা ব্যথা,
৫. বমিবমি ভাব,
৬. পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে অনেক ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ এরই মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে ।
৭. ঘাড় ও পিঠ শক্ত হয়ে আসে এবং শরীরের মাংসপেশীতে ব্যথা হয় ।
৮.. শরীরের যে কোন অংশই অসাড় (প্যারালাইসিস) হয়ে যেতে পারে। কিন্তু চর্মে স্পর্শ অনুভব করা যায়। সাধারণত নিম্নাঙ্গ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
৯. কোন কোন ক্ষেত্রে প্যারালাইসিস নাও হতে পারে, তবে অবসন্নতা থাকতে পারে।
১০. শ্বাসকার্যে নিয়োজিত মাংসপেশী আক্রান্ত হলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। একবার পক্ষাঘাত হলে কিছু না কিছু দুর্বলতা ঐ অংশে থেকেই যায়৷
পোলিও রোগ কী ছোঁয়াচে
মূলত পোলিও ভাইরাসের আক্রমণে এই রোগ হয়। এই রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশের ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণসমূহ দেখা দেয় । এটা অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। আমাদের দেশে এবং অনুন্নত দেশে পলিওমাইলাইটিস রোগের প্রকোপ যথেষ্ট বেশি। শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সচেতন হয়ে শিশুর সঠিক যত্ন নিতে হবে।
পোলিও রোগ কিভাবে ছড়ায়
1. রোগীর হাঁচি,
2. কাশি,
3. সর্দি,
4. খাবার পানি,
5. বাসন-কোসন
6. মলমূত্রের মাধ্যমে এ রোগ ছাড়ায় ।
পোলিও রোগের চিকিৎসা
১. পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে- যতদিন জ্বর ও ব্যথা থাকে, ততদিন পর্যন্ত ৷
২. এ ধরনের ব্যথার উপশমের জন্যে প্যারাসিটামল বা এ্যাসপিরিন খেতে হবে।
৩. প্রাথমিক পর্যায়ে হাত-পা অবশ হলে গরম সেঁক দিতে হবে।
৪. কোন ইনজেকশন এর সময়ে দেয়া যাবে না ।
৫. ব্যথা ভাল হবার পরে ফিজিওথেরাপী নিতে হবে, এটা সাধারণত ২-৩ সপ্তাহ পরে দেয়া হয় । কেউ কেউ আকুপাংচারেরও উপদেশ দিয়ে থাকে ।
আরো পড়ুনঃ
পোলিও রোগের প্রতিকার বা প্রতিরোধ
১. দেড় মাস বয়স থেকে শিশুকে গড়ে একমাস (৪-৬ সপ্তাহ) পরপর ৩ ডোজ পলিও টিকা মুখে খাওয়ানো হয় ।
২. যে অঞ্চলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি, সেই সকল অঞ্চলে শিশু জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে অতিরিক্ত ১ ডোজ পলিও দিতে হবে।
৩. মুখে খাওয়ানোর পলিও ডিপিটি টিকা দেয়ার সময় দেয়া হয়। পলিও ইনজেকশন দিয়েও এই রোগ প্রতিরোধ করা যায় ।
৪. এছাড়া, বর্তমানে ১ মাসের ব্যবধানে প্রতি বৎসর ২ বার, বিনামূল্যে ০-৫ বৎসরের সবশিশুকে পলিও টিকা খাওয়ানোর মাধ্যমে সারাদেশ থেকে পলি ও রোগ সম্পূর্ণ নির্মূলের জন্য জাতীয় টিকা দিবস (NID) পালন করা হচ্ছে।
আমাদের দেশের মানুষ পোলিও নিয়ে এখন ভালই সচেতন। ২০১৪ সালের পর থেকে আমাদের দেশে পোলিও রোগীর সংখ্যা তেমন পাওয়া যায় নি। তাই বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশকে পোলিও মুক্ত দেশ হিসাবে ঘোষণা করেছে। তাছাড়া
আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষদের সচেতন করে আসছেন বহুদিন ধরে। শুধু আমাদের দেশ নয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মায়ানারকেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পোলিও মুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
আমাদের দেশে ১৯৭৯ সাল থেকে পোলিও কর্মসূচী পালন করা শুরু হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো ১৯৭৯ সালে আমেরিকা পোলিও মুক্ত দেশ হিসাবে ঘোষনা করেছে নিজেদের। তবে হঠাৎ করেই ২০২২
সালের আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে পোলিও দেখা দেয়। যে কারনে সেখানকার গভর্নর সাথে সাথে জরুরি অবস্থা জারি করে এবং সাথারণ মানুষদের সচেতনের লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ হাতে নেয়।
পোলিও রোগের টিকা আবিষ্কার এরপরন একটা মারাত্মক ঘটনা ঘটে যায়। যে কারণে তখন আমেরিকার বহু শিশু পঙ্গু হয়ে যায় আর কিছু শিশু মারাও যায়। আসলে তখন আমেরিকার টিকা প্রস্তুত করছিল কাটার ল্যাবরেটরি। তারা ভ্যাকসিন এর মধ্যে ভাইরাস জীবিত রেখেই শিশুদের টিকা প্রদান করে দিয়েছিল। আর এই ভুলের খেশারত দিতে হয়েছিল বহু শিশুদের। ১৯৫৫ সালে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পর থেকে আমেরিকার সরকার আরও সতর্ক হয়ে যায় এবং এরপর থেকে জুড়ালো পদক্ষেপ নিয়ে পোলিও মুক্ত আমেরিকা গড়ে।
সবশেষ কথা হলো এখন তেমন পোলিও রোগী না থাকলেও আমাদের সতর্কথাকতে হবে। পোলিও রোগী নাই ভেবে যদি আমরা আমাদের শিশুদের টিকা না দেই বা অবহেলা করি তাহলে কিন্তু আমাদের শিশুদেরই পস্তাতে হবে।
পোলিও সম্পর্কে আরও বিস্তারিত লিখা আসবে। আজ এই পর্যন্তই। আশা করি পোলিওর লক্ষণ, কারণ, কিভাবে ছড়ায়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন।
pt84o6