JANA BUJHA

রিক্সাওয়ালা শেখালো কিভাবে ইংরেজিতে কথা বলা যায়/ Best 2024

অফিস থেকে বের হলাম চা খাব বলে। দুপুরের খাবারটা শেষ করার পর প্রায় প্রতিদিনই আমার ঘুম পেয়ে যায়। তাই নিচে নেমে হায়দার মামার দোকানের এককাপ চা না খেলে ঘুমটা আর ছাড়েই না। নিচে নামতেই অবাক হয়ে গেলাম। মনোযোগ কেড়ে নিল দু একটি শব্দে। ইংরেজিতে কথা বলা শোনা যায় নাও গো হোয়্যার?

 

এবার ঘাড় ঘুরিয়ে বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখি একজন সাদা চামড়ার মানুষের সাথে এক রিক্সাওয়ালা কথা বলছে।

 

ইংরেজ সাহেব বললেন, ইউ আর সো ফ্র্যান্ডলি। প্রতিউত্তরে রিক্সাওয়ালা বললো– ইউ ও। আর হাসি না থামাতে পেরে হেসেই দিলাম কিছুটা। ইউ ও। মানে তুমিও । বাহ, এই কথাটা ইংরেজ লোকটি ঠিকই বুঝলো।

 

 

তখন আমি একটু থমকে গেলাম। কেন জানি মাথায় আসলো আরে রিক্সাওয়ালাতো ইংরেজিতে কথা বলে যাচ্ছে। আমি হলে কি করতাম? বাক্য কোন টেন্সে হবে? বাক্যের গঠন ঠিক আছে কিনা? গ্রামার এর কোন ভুল আছে কিনা? আরে এই সব ভাবতে ভাবতে তো আর কথায় বলা হতো না। (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

 

অনুভূতির গল্প: (রিক্সাওয়ালা-শেখালো-কিভাবে-ইংরেজি-বলা-যায়)

 

আমাদের অফিসে কয়দিন আগে চীন থেকে স্যার এর দুজন চায়নিজ বন্ধু এসেছিল। কি অবাক কান্ড, আমার টিমে ৫ জন বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেঅথচ এদের মধ্যে কেউ চায়নিজদের সাথে কথা বলতে পারলো না। এরা সবাই গ্র্যাজুয়েশন করা, ভাল ভাল রেজাল্ট।  তারপরও একজন ফরেনারকে কিভাবে সময় দিতে হবে তা জানে না। আমি রাহাতকে বললাম সারা দিন এত বকবক করিস আর এখন চুপ মেরে রইলি কেন।

 

ভাই কি বল যদি ইংরেজি বলতে ভুল ভাল বলি তাহলে মান ইজ্জ্তই যাবে। আরে বোকা না ছেলে পেলে- উনারা নিজে থেকে হায় হ্যালো করছে আর তোরা একটু কথা বলতে পারছিস না?

 

সুমন বললো ভাই আপনিইতো কথা বলেছেন। আমাদের না বললেতো খুব একটা প্রবলেম না। আর তাছাড়া কি বলবো তাওতো মাথায় আসে না। একটু ধমকের সুরেই বললাম- গিয়ে বল যে আঙ্কেল আপনার কি মেয়ে আছে? আমার কাছে বিয়ে দিবেন? উনারা কি ভাববেন বল তোরা। আমরা এতগুলো মানুষ কিন্তু কেউ তাদের সাথে কথাই বলছে না। কেমন হয়ে গেল ব্যাপারটা।

  

 

সুমন আবার বললো ভাই ঠিকই বলছেন, কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি কি নিয়ে কথা বলবো তা আমার মাথায় আসছে না। ওকে, নতুন কোন মানুষের সাথে পরিচয় এরপর কি কি বলা যেতে পারে তার কিছু বিষয় তোদের সাথে শেয়ার করছি। (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

প্রথমেই, নাম জিজ্ঞেস করবি। নাম যেমনই হোক বলবি চমৎকার নাম। যদি একটু বেশী পাম দিতে হয় তাহলে বলবি আপনার নামটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে । আপনি কি আপনার নামের অর্থটি আমাকে বলতে পারেন?

 

এরপর তার ঠিকানা। ঠিকানা বলার সাথে সাথে চিন্তা করে দেখবি ঐ ঠিকানার সাথে তোর কোন স্মৃতি আছে কি না? ধর তুইতো কখনও চীন যাস নি। তাহলে সে যখন চীন এর একটি জায়গার কথা বলবে তখন তার কাছে জানতে চাইবি এটি রাজধানী থেকে কতটুকু দূরে? (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

 

আর যদি সেই শহর নিয়ে তোর কোন জানা শোনা থাকে তাহলে সাথে সাথে শেয়ার করবি। মনে কর উনারা উহান থেকে এসেছে তাহলে তুইতো জানিসই কোভিড এর সময় উহান এর কি অবস্থা ছিল। এখন বলবি স্যার আপনার শহরে প্রথম কোভিড ধরা পড়ে। তাই না? আপনারা কি ভেবেছিলেন এইভাবে মানুষ মারা যাবে? আর আতঙ্ক কখন ছড়াতে শুরু করলো?

 

কিন্তু ভুলেও কোন নেগেটিভ কিছু বলবি না। যেমন, তুই্ যদি বলিস যে স্যার আপনাদের শহর থেকেই সারা পৃথিবীতে কোভিট ছড়িয়েছিল। তার মানে কোভিড এর ক্ষতির জন্যতো আপনাদেরই দায়ী করা যায়। তাই না স্যার? কোভিড নিয়ে সত্যটা সবাই জানে কিন্তু যখন তুই তাকে নেগেটিভ কোন বিষয় নিয়ে কথা বলবি তখন সে তার অজান্তেই তোকে মন তেকে দূরে ঠেলে সরিয়ে দিবে।

 

মনে রাখিস কারো দুর্বল জায়গা নিয়ে কথা বলা কেউ পছন্দ করে না। সেটা যতই সত্য হোক না কেন, সবসময় সবজায়গায় সত্য বলতে হয় না। (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

কথা বলাকে আমরা ৩ টি ভাগে ভাগ করতে পারি: ইংরেজিতে কথা বলা 

১. সত্য কথা।

২. মিথ্যা কথা।  

৩. সত্য বা মিথ্যাকে গোপন রাখা বা উহ্য রাখা।

 

তাই দেখবি মাঝে মাঝে কোন কোন পরিস্থিতি আসে যখন সত্য বললে একজন বেজাড় হবে আর মিথ্যা বললে অন্য জন বেজাড় হবে। সে সময় পাশ কাটিয়ে সত্য বা মিথ্যা কোনটাই প্রকাশ না করে যদি দুজন এর ঝগড়া বা দ্বন্দ্ব থামানো যায় তাহলেতো কথা উহ্য রাখাই ভাল। তাই আজকে থেকে এই তরীকায় কথা বলার ট্রাই করবি। (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

আরো পড়ুনঃ

 

 

আচ্ছা এরপর সে যে এই দেশে বেড়াতে এসেছে তার কেমন লাগছে ? কোথায় কোথায় ঘুরতে গিয়েছে বা কোথায় কোথায় যাবে?কি কি খাবার খাচ্ছে? এই দেশের খাবার কিছু খেয়েছে কি না? কোন খাবার পছন্দ ঝাল না মিষ্টি? এরপর উনার যে এলাকা তার সাথে এখানের পরিবেশ এর কোন মিল ও অমিল আছে কিনা? এই দেশের বিশেষ বিশেষ ভাল জায়গা তুলে ধরা। তারা যেহেতু ব্যবসার কাজে এসেছে তাই ব্যবসা সম্পর্কিত কথা বলা।

 

 

একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যার সাথে তুই ভাল সম্পর্ক করতে চাচ্ছিস প্রথমেইতার পছন্দ গুলো নিয়ে জানতে হবে। কোন বিষয়ে তার আগ্রহ তা বুঝে কথা বললে এমনেতেই ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়ে যাবে। সেই ব্যক্তি নিজে থেকেই তোর সাথে সময় দিতে চাইবে। (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

 

ইংরেজিতে কথা বলার টেকনিক:

 

 

একজন ব্যক্তির পেশা কি তা জানতে হবে প্রথমে। সাধারণত যার যে পেশা সেই পেশা নিয়েই তার বেশী আগ্রহ থাকে। এর কারণ সেই ব্যক্তি সারাদিন এই পেশা নিয়েই চিন্তা করে এবং এই পেশা বা কাজ নিয়েই তার জানাবোঝা। আর মানুষ সেই বিষয় নিয়েই আগ্রহ প্রকাশ করে যা সে জানে বা যাতে সে এক্সপার্ট।

 

তাছাড়া যে কোন মানুষ পেশার বাইরে রাজনীতি, মুভি, খেলা-ধুলা, গান কালচার ইত্যাদি বিষয়ে আগ্রহ থাকে। এই বিষয় গুলোর যে কোন একটা বিষয় নিয়ে কথা বললে বা তাকে জিজ্ঞেস করলে সে নিজে থেকেই কথা বলতে থাকবে তাহলে আর তোকে কথা বলতে হবে না। (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

 

আরও একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে কারও সাথে প্রথম দেখা হলে যতদূর সম্ভব কথা কম বলে শোনার চেষ্টা করবি। তাহলে যে কারও সাথে সহজেই অনেকক্ষন কথা বলা যাবে। আর তার সাথে সম্পর্কও ভাল হবে। সে নিজে থেকেই তোকে খুঁজবে। প্রাওরিটি বা মূল্যায়নতো সবাই পছন্দ করে। তাই কোন চিন্তা নেই। মাথায় এই কয়টা বিষয় নিয়ে কারও সাথে কথা বলতে শুরু করলে অন্তত একঘন্টা কথা বলতে পারবি।

 

রাহাত বলে চল ভাই। আমি ওদের নিয়ে আমি আমাদের অফিসের কনফারেন্স রুমে গেলাম। সবাইকেই একে একে পরিচয় করিয়ে দিলাম। সবাই খুব প্রিপারেশন নিয়ে গেলেও ওরা কেউই তেমন কোন কথা বলতে পারলো না। দশ-পনের মিনিটপর ফিরে এলাম। (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

রিক্সাওয়ালা-শেখালো-কিভাবে-ইংরেজি-বলা-যায়

 

 

মজার ব্যাপার যখন আমার টিমকে বুঝাচ্ছিলাম সবাই সব বুঝলো কিন্তু যখন প্র্যাকটিকেললি মাঠে গেল তখন সবাই একযোগে ফেইল মারলো। তখন আসলেই বুঝলাম নিজে নিজে সব বুঝে ফেলা আর প্রয়োগ করা বা কাজ করা এক কথা নয়। ব্যবহারিক সবসময় কঠিনই হয়। যে কারনে বার বার চর্চা করে নিজেকে উপযুক্ত করতে হয়।

 

যাক সেসব কথা, এরপর দেখলাম ইংরেজ লোকটি ১০০ টাকার একটি নোট বের করে দিল। তখন রিক্সাওয়ালা বলে- নো নো স্যার। গিভ অনলি ৪০ টাকা। (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

ফোরটি টাকা লিগাল। ইংরেজ লোকটি বললো- টেইক ইট। নো প্রবলেম। হোয়াট এবাউট ইউর ফ্যামেলি?

 

ওরে আল্লাহ- এইবার রিক্সাওয়ালা বলতে শুরু করলো ওয়াইফ, মাদার, টু বেবি। নাইস ফ্যামেলি। নাইস টু মিট ইউ। তারপর ১০০ টাকা দিয়েই ইংরেজ লোকটি আমাদের অফিসের বিপরীতে যে অফিস আছে সেখানে ঢুকলো। (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

আমি রিক্সাচালক মামাকে ডাকলাম। এই মামা এই দিকে আস। নাম কি তোমার? মামা আমার নাম আলমগীর। কই থাক মামা?থাকি ভাটারা । গ্রামের বাড়ি কই? বাড়ি পটুয়াখালী। কেন মামা কিছু ভুল করছি? (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

আরে না। পড়াশোনা কতদূর করছ? একটা মলিন তাকানো দিয়ে আলমগীর বললো মামা পড়াশোনাটা তেমন করি নাই। ক্লাস সিক্স শেষ করে মাত্র সেভেনে উঠবো তখনই বাবা মারা গেলেন। এরপর থেকে কাজ করেই খাই।

 

দেখলাম তুমি ভালই ইংরেজি বলতেছ। ইংরেজি শিখেছ কোথায়? আলমগীর হা-হা-হা করে হেসে দিয়ে বলে। মামা আমি ইংরেজি শিখবো কার কাছে? কি বলেন? তাহলে দেখলাম যে উনার সাথে কথা বলতেছ। (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

শুনেন মামা এইটাতো একদম সহজ। কেমনে? আরে আমি খালি শুনছি আসল শব্দডা কি? ধরেন, উনী জিজ্ঞেস করছে মনে হয় ফ্যামেলির কথা। আমার কথা হইছে উনী জানতে চাইবো আমার পরিবারে কে কে আছে এটাই স্বাবাবিক। কারণ যখন আমাদের দেশের কারও সাথে কথা কই তখনতো তারা আমারে এটাই জিগায়।

 

পরিবারে কে কে আছে। তাই উনী ইংরেজ দেইখা কি হইছে। উনীও তো এইটাই জিগাবে। আর আমি ফ্যামেলি অর্থ যে পরিবার তা তো জানিই। আর বলছে এবাউট, এবাইট মানে কোন কিছু সম্পর্কে সেটাও মনে আছে। তাই অনুমানের উপরই বলে দিছি।

 

মামা আমি কি ভুল বলছিলাম? ছোট বেলা ছাত্র হিসাবে ভালই ছিলাম। আচ্ছা মামা ভাড়ার ইংরেজি কি? রেন্ট বা ফেয়ার হচ্ছে ভাড়া। ও তাহলে লিগাল রিক্সা রেন্ট ফোরটি টাকা অনলি হবে সঠিক ইংরেজি। তাই না মামা? আমি আলমগীর এর মুখে খুশির ছাপ দেখে বললাম হ্যা একদম ঠিক। মামা আমার ছেলে মেয়ের জন্য দোয়া করবেন। আমিতো পড়তেই পাড়লাম না দেখি ওদের
যদি পড়াশোনা করায়া মানুষ করতে পারি তাইলেই হইবে। (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

 

রিক্সাচালিয়ে আলমগীর চলে গেল আমি কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম। তারপর চায়ের দোকানে বসলাম। আমি ভাবতে শুরু করলাম একটা সমান্য সিক্স পাশ করা ছেলে যে কিনা রিক্সাচালায় সে ইংরেজ একজন লোকের সাথে কথা বলতে পারে। কমিউনিকেশন করে সে তার প্রয়োজন বুঝাতে পারে। ভুল বা শুদ্ধ তা চিন্তা না করে সে চিন্তা করে কিভাবে উনাকে বুঝাতে পারি।

 

 

আর আমরা অনেকেই পড়াশোনা শেষ করেছি। অথচ বোম মারলেও মনে হয় মুখ দিয়ে একটা ইংরেজি বের হতে চায় না। একজন নতুন মানুষের সাথে মিশতে জানি না। বিদেশী কোন লোক দেখলে মনে হয় দৌড়ে পালায়।

 

এই বুঝি গ্রামার ভুল করলাম, সেনটেন্স তৈরী হলো না, উচ্চারন ঠিক নেই, কনফিডেন্স পাই না, ভয় লাগে আরও কত সমস্যা। অথচ একজন রিক্সাওয়ালা অনুমানের উপর কনফিডেন্টলি কি সুন্দর ইংরেজি বলে গেল। (ইংরেজিতে কথা বলা)

 

আমার অফিসের প্রত্যেকটি ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর এর চেয়ে অনেক বেশী পড়াশোনা করেছে। অথচ কনফিডেন্স আর আত্মসম্মান এর ভয়ে নিজের পরিচয়টা পর্যন্ত ভাল করে দিতে পারে নাই। চা শেষ করে অফিসে ফিরে আসলাম আর নিজেকেই প্রশ্ন করলাম। তাহলে আমাদের কি রিক্সাওয়ালা আলমগীর এর কাছ থেকে শিখার আছে কিছু? (ইংরেজিতে কথা বলা)

Leave a Comment