JANA BUJHA

মস্তিষ্কের ক্ষমতা নিয়ে বিস্ময়কর সব তথ্য

 মস্তিষ্কের ক্ষমতা নিয়ে বিস্ময়কর সব তথ্য জানার মাধ্যমে আমরা আমাদের ক্ষমতা নিয়ে জানবো। মানুষ তার মস্তিষ্ক পুরোটা ব্যবহার করতে পারলে না জানি কত কী করতে পারতো!

 

মস্তিষ্কের ক্ষমতা নিয়ে বিস্ময়কর সব তথ্য

আপনার মোবাইলের মেমোরি
কত?
  হয়তো ২/১৬/৩২ অথবা ১২৮ gb বা তারও বেশী। আর আপনার কম্পিউটার এর ধারণক্ষমতা?
হয়তো ২০০০ গিগাবাইট বা ১ টেরাবাইট বা তার চেয়েও বেশি।
 


প্রশ্ন
আসতে পারে কেন আপনাকে আপনার মোবাইল ও কম্পিউটারের মেমোরি নিয়ে প্রশ্ন করছি।
উদ্দেশ্যতো একটা আছেই তবে এর আগে জেনে নেয়া যাক মেমোরির ধারণক্ষমতা কিভাবে হিসাব
করতে হয়। 


আমরা কি জানি ১ গিগাবাইট  সমান কতো? অনেকেই জানতে
পারেন আবার কেউ কেউ নাও জানতে পারেন। তবে সমস্যা নেই চলুন আর একবার দেখে নেয়া যাক
কিভাবে মেমোরির ধারণক্ষমতার হিসাব করা হয়।


৮ বিট=১ বাইট
১০২৪ বাইট = ১ কিলোবাইট
১০২৪ কিলোবাইট
  = ১ মেগাবাইট


১০২৪ মেগাবাইট = ১ গিগাবাইট
১০২৪ গিগাবাইট = ১ টেরাবাইট।

কম্পিউটারের মেমোরিতে লিমিটেড জায়গা থাকে। যা শেষ হলেই কম্পিউটার আপনাকে গুড
বাই/টাটা জনাবে। কিন্তু এরপর আমরা কি করি?


 হয়তো হার্ডডিক্স  বা অন্য কোন উপায়ে, যেমন পেনড্রাইভ, এক্সটারনাল ডিস্ক ইত্যাদি ব্যবহার
করি৷ এই যুগে আমরা কম্পিউটারের কাজ ( ধারণক্ষমতা, দ্রুত, বিনা বাধায় কাজ, অনেক ডাটা
সংরক্ষণ,নির্র্ভুল ইত্যাদি) দেখে অবাক বনে যাই।

 


মস্তিষ্কের ক্ষমতা 

মানুষ  যে কম্পিউটার আবিষ্কার করলো সেই মানুষের ধারণক্ষমতা বা কাজ নিয়ে কি
কখনও ভাবা হয়েছে? যে ব্রেইনকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার তৈরী হয়েছে, সেই ব্রেইন এর ক্ষমতা
তাহলে কেমন?

আচ্ছা বলুনতো, আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে আমাদের মস্তিষ্কের মেমোরি কত বা এর
ধারন ক্ষমতা কতটুকু? বিজ্ঞানীরা আজো মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বা ধারণ ক্ষমতা
নির্ণয় করতে সক্ষম হননি।  তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন যদি
৩০ লাখ ঘণ্টা বা ৩৪২ বছর একনাগাড়ে মস্তিষ্কের মেমোরি কার্ডের মধ্যে সারাক্ষণ ভিডিও
ধারণ করা হয় তাহলেও মস্তিষ্কের স্পেইস পূরণ হবে না।

মস্তিষ্কের মেমরীস্পেস নিয়ে গবেষণা তথ্যে north-western বিশ্ববিদ্যালয়ের
সাইকোলজির অধ্যাপক ডক্টর পল লেবার উল্লেখ করেছেন মানুষের মস্তিষ্কে রয়েছে এক
বিলিয়ন নিউরন।

প্রতিটি নিউরনে একে অপরের সঙ্গে গড়ে তুলেছে ১০০০ সংযোগ,  যার গানিতিক  সংখ্যা হবে এক ট্রিলিওনেরও বেশি।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন যদি প্রতিটি নিউরন একটি করে মেমোরি ধারণ করে তা হলেও কারো
জীবদ্দশায় কখনো মেমরীস্পেস  শেষ হবে না। এক একটা নিউরন অসংখ্য মেমোরি র্ধারণ করতে সক্ষম।

অধ্যাপক পল উল্লেখ করেন ব্রেইন যদি কোন সর্বাধুনিক ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার এর মত মেমোরি
ধারণ করে আর সেই মেমোরি যদি কোন টিভিতে অবিরাম সম্প্রচার করা হয় তাহলে তিন শতাধিক
বছর লাগবে তা প্রচার করতে। বিজ্ঞানীরা বলছেন ব্রেনের  ধারণক্ষমতা কমপক্ষে ২.৫ পেটাবাইট অথবা এক মিলিয়ন গিগাবাইট  বা ১০ লাখ গিগাবাইট।

মানুষের মস্তিষ্ক প্রতি সেকেন্ডে ১০১৫ টি হিসাব কষতে পারে। যা পৃথিবীর সবথেকে
শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার এর পক্ষেও সম্ভব নয়।


অন্যদিকে মানুষের মস্তিষ্ক জেগে থাকা অবস্থায় ২৫ ওয়াট শক্তি উৎপন্ন করতে পারে যা
একটি বাল্ব জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট।

আপনি জেনে অবাক হবেন যে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ৭০০০০ বিষয়ে চিন্তা
করতে পারেন। আমাদের মস্তিষ্কের বাম অংশ আমাদের দেহের  ডান পাশকে নিয়ন্ত্রণ করে আর ডান অংশ দেহের  বাম পাশকে নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিষ্কের বাইরের অংশ ধূসর রঙের হওয়ায়
এর নাম
  গ্রে ম্যাটার এবং ভিতরের অংশ সাদা তাই তাকে বলা হয় হোয়াইট  ম্যাটার।

 

মস্তিষ্কের গঠন

মস্তিষ্ক হল কেন্দ্রীয়
স্নায়ুতন্ত্রের একটি অপরিহার্য অংশ।
  এটি  করোটির অভ্যন্তরে অবস্থিত
এবং দেহের প্রধান নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের মস্তিষ্কের আয়তন ১৫০০  ঘন সেন্টিমিটার। এর গড় ওজন ১.৩৬ কেজি এবং এতে প্রায় 10 বিলিয়ন নিউরন
থাকে। মস্তিষ্ক মেনিনজেস নামক পদার্থ দ্বারা আবৃত।

 

মানুষের মস্তিষ্কে
প্রধানত তিনটি অংশ থাকে
১ গুরু মস্তিষ্ক
২ মধ্য মস্তিষ্ক
  লঘু মস্তিষ্ক


১ গুরু মস্তিষ্ক


মস্তিষ্কের প্রধান অংশ হলো গুরু মস্তিষ্ক।


এটি
  ডান ও বাম খন্ডে বিভক্ত। এই কারণে ডান খন্ডকে ডান  সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার ও বাম খন্ডকে বাম সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার বলে।
মানব মস্তিষ্কের সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার অধিকতর উন্নত ও সুগঠিত।
গুরু মস্তিষ্ক সাধারণত দৃষ্টি, ঘ্রাণ, শ্রবণ ও চিন্তা-চেতনার ক্রিয়া ইত্যাদি কে নিয়ন্ত্রণ
করে। এই
  গুরু মস্তিষ্কের আবার তিনটি
ভাগ যথাঃ

 

 ১. সেরিব্রাম
২. থ্যালামাস
৩ .হাইপোথ্যালামাস।

এরা রাগ, লজ্জা, গরম, শীত, নিদ্রা ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

১সেরিব্রামঃ সেরিব্রাম হল ইচ্ছাশক্তি, বাকশক্তি, উদ্ভাবনী শক্তি, সৃজনশীলতা ইত্যাদির
নিয়ন্ত্রক। এটি সর্বপ্রকার ঐচ্ছিক পেশির কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। সব রকম ভালো কাজ
নিয়ন্ত্রণ করে এই সেরিব্রাম।

২ থ্যালামাসঃ থ্যালামাস চাপ, স্পর্শ, যন্ত্রণা, ব্যক্তিত্ব এবং ঘুমন্ত মানুষকে
জাগিয়ে তোলা ইত্যাদি  কাজগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।

৩ হাইপোথ্যালামাসঃ  হাইপোথ্যালামাস বায়োলজিক্যাল
ক্লক হিসেবে কাজ করে। এটি পিটুইটারির সাথে যুক্ত থাকে। পিটুইটারি কে বলে
গ্রন্থিরাজ। এটি আমাদের আবেগ- উদ্বেগ,
  ক্ষুধা, পিপাসা,  ভালোলাগা ইত্যাদি
নিয়ন্ত্রণ করে।

এটি স্বয়ংক্রিয় স্নায়ু কোষের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। মনে রাখতে হবে এটি কিন্তু
আমাদের ঘুমকেও  নিয়ন্ত্রণ করে। যেহেতু
হাইপোথ্যালামাস বায়োলজিক্যাল ক্লক হিসেবে কাজ করে তাই এটি দেহের তাপকেও
নিয়ন্ত্রণ করে।

আরো পড়ুনঃ

  1.  বিশ্বের সর্বাপেক্ষা মারাত্মক এবং বিপদজ্জনক প্রাণী কোনটি?
  2. মোবাইল ফোন মানব জাতির জন্য কতটুকু ক্ষতিকর ?
  3.  কেন কোমল পানীয় পান করা উচিৎ নয়?



 

দেহের বেশিরভাগ
ক্রিয়া-কলাপ এর নিয়ন্ত্রক এই মস্তিষ্ক। শরীরের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রাপ্ত
তথ্য গুলো প্রক্রিয়ার মাধ্যম মস্তিষ্ক।
  শারীরিক ও মানসিক সর্বপ্রকার ক্রিয়া মস্তিষ্কের মাধ্যমে
নিয়ন্ত্রিত হয়।


আমাদের মস্তিষ্ক ঠিক কতটা বড়ঃ



আমাদের বয়স, লিঙ্গ এবং দেহের গঠন এর উপর নির্ভর করে মস্তিষ্কের আকার। গবেষণায়
দেখা যায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মস্তিষ্ক গড়ে প্রায় ১৩৩৬ গ্রাম
  ও একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর মস্তিষ্ক ১১৯৮ গ্রাম।


পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর মধ্যে সর্বাধিক নিউরন মানব মস্তিষ্কে উপস্থিত। সাধারণত
আমাদের মস্তিষ্কে প্রায় ১০০বিলিয়ন নিউরন উৎস রয়েছে কিন্তু আধুনিক গবেষণায় বলা
হয় এর সংখ্যা ৮৬ বিলিয়ন।


আমাদের মস্তিষ্ক চালানোর জন্য কতটা শক্তি প্রয়োজনঃ




আমাদের অঙ্গের তুলনায় মানব মস্তিষ্ক খুব বেশি বড় না হলেও এর কার্য পরিচালনার
জন্য দেহের প্রায় ২৫% শক্তি ব্যয় হয়।



কতটা ব্যবহার হয় আমাদের মস্তিষ্ক ঃ


সাধারনত আমরা জানি যে মানুষ তার মস্তিষ্কের ক্ষমতার ১০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারে।
কিন্তু বাকি ৯০ শতাংশ কিভাবে ব্যবহার করা যায় বা করতে হবে তা নিয়ে গবেষনা চলছে।


নিউরোলজিস্ট কৃশ সাথিয়ান বলেছেন, আমরা যদি কোন কাজে নিযুক্ত থাকি তখন কিছু নিউরন
মস্তিষ্কের অন্য কাজে লিপ্ত থাকে।

উদাহরণস্বরূপ কখনো কখনো দেখা যায় আমরা কোন কিছু সমাধানের কথা ভাবছি,কিন্তু সমাধান
পাচ্ছি না। তার কিছুক্ষণ পর বা ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ এর সমাধান পেয়ে গেছি। এর কারণ
মস্তিষ্ক অবিচ্ছিন্নভাবে সচল থাকে। আমরা ঘুমিয়ে গেলেও মস্তিষ্ক ঘুমায় না।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যাদের বাম মস্তিষ্ক বেশি সচল তারা গাণিতিক ও
বিশ্লেষণাত্মক হয়। আর যাদের  ডান মস্তিষ্ক
বেশি সচল তারা হয় সৃজনশীল। আবার পরবর্তি গবেষণায় দেখা গেছে এরা উভয়েই
মস্তিষ্কের গোলার্ধ কে সমান পরিমাণে ব্যবহার করে থাকে।

পরিশেষে বলতে চাই মস্তিষ্কের ব্যবহারই মস্তিষ্ককে ক্ষুরধার করে তোলে। বলা যায় যদি
কোন জমি ফেলে রাখা হয় তাতে আগাছা জন্মায়, তাই চাষের মাধ্যমে তার উর্বরতা বৃদ্ধি
করতে হবে। ঠিক তেমনি কম্পিউটার যেমন ব্যবহার করলে সচল থাকে, ব্যবহার না করলে অচল।
একইভাবে মস্তিষ্ক কর্মের মাধ্যমে সচল ও তিক্ষ্ন হয় । তাই আমাদের মস্তিষ্ক ও নিজের
ভালোর জন্য চিন্তাগত জায়গা থেকে সব সময় ইতিবাচক হতে হবে। যার ফলে মস্তিষ্ক
ইতিবাচক  কাজের প্রতি আমাদের ধাবিত
করবে । আর মানুষ হিসেবে পাব আমরা সফলতা।

 

তাহলে আজ এই পযর্ন্তই
তবে মস্তিষ্ক নিয়ে আমাদের জনাবোঝা ডট কম এর নেক্সট লিখা প্রকাশিত হবে। আর তা হলো-
“কিভাবে মস্তিষ্ককে ভাল ও এ্যাক্টিভ রাখতে পারি”।

 

 

 

 

0 thoughts on “মস্তিষ্কের ক্ষমতা নিয়ে বিস্ময়কর সব তথ্য”

Leave a Comment