JANA BUJHA

বার বার রেগে যাই কেন? করণীয় কী?

বার বার রেগে যাই কেন? করণীয় কী?

রাগ বা ক্রোধ হচ্ছে একটি স্বাভাবিক তীব্র মানসিক অবস্থা ,যা অনুভূতিতে আঘাতের
ফলে  বহিঃপ্রকাশ ঘটে । রাগ প্রকাশিত হয় নিজের
বোকামির জন্য নিজেকে শাস্তি দেওয়া বা অন্যের ভুল বা  ত্রুটির জন্য অন্যকে শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে। এই
প্রকাশভঙ্গির মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতরও হতে পারে।

 

  রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। রাগ
উঠলে এমন নীতিবাক্য মাথায় থাকে না কারোরই । প্রতি এক মিনিটের রাগের জন্য আপনার ৬০
সেকেন্ড সময়ের শান্তিও নষ্ট হচ্ছে। তাই বলে কি রাগ চেপে রাখা স্বাস্থ্যকর? নাকি রয়েছে
এর বিকল্প কোন উপায়? কেনই বা মানুষের রাগ হয়? আর রাগ হলে সেটি নিয়ন্ত্রণের উপায়
কি? রাগের ফলে কি মারাত্মক কোন দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে? চলুন জেনে আসি এসব প্রশ্নের উত্তর।

 

  আপনার কি রাগ অনুভূত হয় না? সব
মানুষেরই কম বেশি রাগ অনুভূত হয়। কিন্তু এতে বিচলিত হবার কিছু নেই। রাগ হচ্ছে  মানুষের মানসিক অবস্থা বা আবেগ। রাগ সংকেত দেয় আমাদের
চারপাশে যা হচ্ছে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় আমাদের জন্য। রাগ আরো  জানান দেয়, আমাদের সাথে অন্যায় করা হচ্ছে বা আমাদের
কোন একটি চাহিদা পূরণ হয়নি। তাই রাগের অনুভূতি অনুভব করার পর অনুতাপ করার কিছু নেই।
কিন্তু আমাদের খুব সতর্কতার সাথে রাগের অনুভূতিকে প্রকাশ করতে হবে।

 

 রাগের মাত্রা

 গবেষণা বলছে, একজন মানুষ সপ্তাহে
তিন চারবার রেগে যায় । কিন্তু এই ঘটনা যদি দিনে তিন চারবার হয়, তাহলে সচেতন হওয়া
প্রয়োজন। অন্য একটি গবেষণা বলছে, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার একটিভিটি ডিজঅর্ডার বা
অতি চঞ্চলতা বা অফসেটিভ কম্পাইলসিভ ডিজঅর্ডারের বা একই কাজের পুনরাবৃত্তি বা উচ্চ রক্তচাপের
আশঙ্কা থাকে অতিরিক্ত রাগের ফলে। রাগ প্রকাশ করা যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ,ঠিক তেমনি
অতিরিক্ত রাগ শরীর ও মনের ক্ষতি করতে পারে।

 

 রাগের বহিঃপ্রকাশ

 রাগেরই প্রকাশভঙ্গি একেক মানুষের
কাছে একেক রকম হতে পারে। কেউ উচ্চস্বরে কথা বলেন, কেউ থালা বাটি ছুড়ে ফেলেন ,আবার
কেউ শারীরিক আঘাত করেন, কেউ আছেন রাগ করেন ঠিকই কিন্তু তার কোন প্রকাশ তিনি করেন না।
এই যে একেকজনের রাগ একেক রকম এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে,  রাগনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। তবে বলা হয়ে থাকে রাগের
সময় নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা খুব কম মানুষেরই আছে।

 

 রাগের উৎস

 আমাদের মনে যত আবেগ অনুভূতি আছে
অর্থাৎ হাসি ,কান্না, রাগ, হতাশা ,দুঃখ ইত্যাদি সব নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাড্রিনালিন ও
অর অ্যাড্রিনালিন এ দুটি নিউরো হরমোনের উঠানামা। মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অঞ্চল লিম্বিক
সিস্টেম। রাগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ হচ্ছে এই লিম্বিক হাইপোথেলামাস পিটুইটারি অক্সিসেৱ
বৃদ্ধি।

 

 রাগ করার ফলে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়

  রাগ করার ফলে আমাদের অনেক ধরনের
সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাড্রিনালিন হরমোন এর মাত্রা বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ,
বুকে ব্যথা, স্রোক, এসিডিটি, মাইগ্রেনের সমস্যার সহ নানা শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হয়।

 

  হঠাৎ করে রেগে যাওয়ার ফলে আমাদের
মস্তিষ্কের রক্তনালী গুলো কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। কারণ তখন মস্তিষ্কে প্রচুর
চাপ সৃষ্টি হয়। রাগ করার প্রকাশভঙ্গি যদি সঠিক না হয় তবে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি
ঘটে।

 

 হৃদ স্পন্দন, স্থূলতা, হৃদরোগ ইত্যাদি
রাগের ফলস্বরূপ হতে পারে। এছাড়া গবেষণা বলছে, মানুষের চিন্তাশক্তি লোপায় অতিরিক্ত
রাগের ফলে। দীর্ঘদিন রাগ থাকলে বিষন্নতা , ট্রেস ,হতাশা ইত্যাদি হতে পারে।


আরো পড়ুনঃ


 

 রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়

  রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায় গুলো জানা
খুবই জরুরি। তাই  চলুন জেনে আসি এবার রাগ নিয়ন্ত্রণের
উপায়।

 

  রাগ করলে আমাদের মাঝে হিতাহিত
জ্ঞান থাকে না । তখন আমরা অনেক সময় খারাপ আচরণ করি। কিন্তু আমরা যে বিষয়টি নিয়ে
রাগ করেছি সে বিষয়টি যদি তাকে বুঝিয়ে বলি তাহলে আমাদের রাগ করার প্রকাশভঙ্গি যেমন
প্রশংসনীয় হবে তেমনি এই রাগ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না।

 


 ধর্মচর্চা

  আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন , সে
ধর্মকে যদি মনে লালন করি তাহলে মনের শান্তি অনেকটাই বেড়ে যাবে । আর সেটি আমাদের রাগকে
অনেকাংশে শিথিল করবে। কোন ধর্মই কিন্তু রাগকে সমর্থন করে না। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণে ধর্ম
একটা বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে।

 


 ব্যায়াম করা

  ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে আমরা যদি
প্রকৃতির কাছাকাছি যায় তাহলে সেটি আমাদের মনে প্রশান্তির যোগাবে এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ
করতে সাহায্য করবে। গবেষণায় প্রমাণিত, কোন ব্যক্তি যদি নিয়মিত সকালে এক মিনিটে ১২০
কদম হাটে এবং সেই হাটা ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অব্যাহত রাখে তাহলে সেটি রাগকে অনুকূলে রাখে।


 
লিখে ফেলা বা ছবিতে
রূপ দেওয়া

  কোন একটা বিষয় নিয়ে রাগ করলে
সে বিষয়টি নিয়ে রাগ না দেখিয়ে ঘটনাটি গুছিয়ে ডায়েরিতে লিখে ফেলতে পারেন । রাগ
করেছি সেই মানুষটির একটি ছবি খাতায় একে সেটি ইচ্ছেমত কাটাকাটি করা । যেন রাগ প্রকাশ
পেয়ে যায়। কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে রাগ দীর্ঘদিন জমে থাকলে এই রাগ আরো মারাত্মক আকার
ধারণ করবে।

 


 নিজেকে সময় দেওয়া

  রাগ উঠলে সেই জায়গা থেকে নিজেকে
সরিয়ে নেওয়া অর্থাৎ অন্য রুমে চলে আসা। তখন আপনি কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে পারেন
। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনুভব করতে পারেন।

 


 শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম

 একজন ব্যক্তি রেগে গেলে তার মধ্যে
কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হয় । যেমন তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, তার শরীরেৱ পেশিগুলো শক্ত
হয়ে যায়, এমনটা হলে যা করতে হবে তাহলো  শ্বাস-প্রশ্বাসের
ব্যায়াম করতে হবে।

এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনতে গুনতে শ্বাসটা ধরে রাখতে হবে। তারপর এক থেকে
পাঁচ গুনতে গুনতে শ্বাসটা মুখ দিয়ে ছাড়তে হবে। এভাবে  পরপর তিনবার করুন এছাড়াও উল্টো দিক থেকে এক থেকে
১০০ পর্যন্ত গুনে আসতে পারেন।

Leave a Comment