JANA BUJHA

ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময়: সম্ভাবনা এবং বাস্তবতা Best

ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় এর আগে আপনাকে জানতে হবে ডায়বেটিস আসলে কী? ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা দীর্ঘস্থায়ী, এই রোগ মানুষের রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) স্তর বৃদ্ধি করে। তাছাড়া আপনাকে তাও জানতে হবে কোন ধরনের ডায়বেটিস এর কি কি অবস্থা। কোন ডায়বেটিস আপনাকে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সাধারণত ২ ধরনের ডায়বেটিস পাওয়া যায় এবং  যা বিপদজনক।

 

 টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়বেটিস মানুষের শরীরের রক্তের মধ্যে থাকা শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে। আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা কখনও বাড়ে আবার কখনও কমে আর এটাই হচ্ছে ডায়বেটিস এর অন্যতম কারসাজি।

ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময়: সম্ভাবনা এবং বাস্তবতা

সত্যি কথা বলতে ডায়বেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ এবং এখনও পর্যন্ত এর কোনো স্থায়ী চিকিৎসা আবিষ্কার হয় নি। তবে এখন নানা গবেষনা চলছে হয়ত আমরা বিজ্ঞানের উত্তর উত্তর আবিষ্কার এর ফলে অচিরেই এর স্থায়ী সমাধান পেয়ে যাব। ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় সম্ভব কিনা তা নিয়ে আছে নানা মতবাদ ও মতভেদ।

 

কিছু কিছু পদ্ধতি, নিয়ম ও অভ্যাস মেনে চললে এই রোগ নিয়ন্ত্র করা সম্ভব আবার কেউ কেউ বলেন যে ডায়বেটিস চিরতরে নিরাময়ও করা সম্ভব। এই লিখায় ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় নিয়ে আলোচনা করবো।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ

ডায়াবেটিস দুই প্রকারের হতে পারে:
টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এই টাইপের ডায়বেটিস শরীরের ইমিউন সিস্টেম ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলিকে ধ্বংস করে, যার ফলে রোগীকে সারাজীবন ইনসুলিন নিতে হয়।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এই টাইপের ডায়বেটিস মূলত জীবনযাত্রা, ওজন, এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়, যেখানে শরীর ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না।

ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময়: কিন্তু কীভাবে হবে?

ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় পুরোপুরি সম্ভব না। তবে বেশ কিছু গবেষণা চলছে যা ফিউচারে ডায়বেটিস চিরতরে নির্মূল করতে পারে বলে আশা করা যায়। কি কি করলে ডায়বেটিন নিয়ন্ত্রনে থাকবে যেমন:

  • ওজন নিয়ন্ত্রণ
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
  • নিয়মিত ব্যায়াম
  • প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ

 

 ১. ওজন নিয়ন্ত্রণ
ওজন নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো কমানো এবং দীর্ঘমেয়াদে রোগটি থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর ওজন কমানোর জন্য আপনাকে খাবার নিয়ন্ত্রন করতে হবে সবার প্রথম।

 

ওজন নিয়ন্ত্রন এর জন্য আপনি ব্যায়াম করা, খাবার নিয়ন্ত্রন করা এবং ভোল হয় যদিদ একজন ডায়টেশিয়নের পরামর্শ অনুযায়ী চলেন। তাহলে ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় এর জন্য আপনার প্রথম কাজ হবে ওজন কমানো।

 

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:

 

ডায়বেটিন এর মূল বিষয় হলো ইনসুলিন ব্যাহত হওয়া আর এটি গটে থাকে রক্তে শর্করা বেড়ে গেলে। তাই কোনভাবেই রক্তে শর্করা বাড়ানো যাবে না। আর এই জন্য আপনাকে  প্রোটিনসমৃদ্ধ ও ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে হবে। শর্করা কম খাবার খেলে ইনসুলিন এর কার্যকারিতা বাড়ে।

নিয়মিত ব্যায়াম:

দৈনিক কমপক্ষে ৩০ মিনিটের শারীরিক ব্যায়াম টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে। তাই ডায়বেটিস হওয়ার আগ থেকেই নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাসটা করে ফেলেন। আর ডায়বেটিন হলে প্রতিদিন নিয়ম করে হাটতে হবে। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো এমনভাবে ব্যায়াম করতে হবে যেন শরীর ঘামে।

প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ

 

আমরা যত ঔষধ খাই তার অধিকাংশই কিন্তু প্রাকৃতিক নানা উপাদান থেকে তৈরী। যখন এলোপ্যাথি ছিল না তখনও কিন্তু ভেষজ ঔষধ ছিল খুব জনপ্রিয় এবং সেই ঔষধই ছিল রোগমুক্তির অন্যতম উপায়।

 

আর বর্তমানেও প্রাকৃতিক উপাদানের উপরেই আমাদের আস্থা। তাই ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় করতে কিছু উদ্ভিত ও ভেষজ কাজ করতে পারে।

করলা: করলা খেতে অনেকে পছন্দ করেন না। করলা তিতা কেউ কেউ আবার পছন্দ করেন। যারা করলা খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য শুভকামনা। আপনি ডায়বেটিস এর ঔষধ নিজের অজান্তেই খেয়ে যাচ্ছেন। করলা রক্তের শর্করা কমাতে এবং ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। ফলে ডায়বেটিসকে সে দূরে রাখে।

 

মেথি: আমি কিছুদিন মেথি পানি পান করা শুরু করেছিলাম। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কনটিনিউ করতে পারি নি। কিন্তু আপনি যদি পারেন তাহলে কিন্তু ডায়বেটিসমুক্ত থাকতে পারবেন। আপনি একটা গ্লাসে ২ চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখতে পারেন রাতের শুয়ার আগে। এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই মেথি পানি ও মেথি খেয়ে নিতে পারেন। এপা খাওয়া কিছুটা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। প্রশ্ন আসতে পারে আসলে মেথি খেলে কী হবে? মেথি ইনসুলিনের নিঃসরণ বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

 

দারুচিনি: যদিও বলা হয় চিনি কিন্তু লাগে ঝাল। চোখে পানি চলে আসবে এবং জিহ্বা জালাপোড়া শুরু করবে দারুচিনি খেলে। কিন্তু উপকারতো ১০০ তে ১০০। তাই নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করুন। আমি অবশ্য এমনিই খাই আপনিও ট্রাই করতে পারেন। দারুচিনির অনেক গুন রয়েছে তবে এরমধ্যে অন্যতম তা ডাযবেটিস নিয়ন্ত্রনে কাজ করবে। কি হয় দারুচিনি খেলে। দারুচিনি টাইপ ২ ডায়াবেটিসে বিশেষভাবে উপকারী।

আরো পড়ুন:   ডায়বেটিস প্রতিরোধে করণীয় ৫ উপায়

 

ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময়: কার্যকরি গবেষণা

এতক্ষণতো আলোচনা করলাম নরমাল বিষয় নিয়ে। এখন যে বিষয়টা বলবো তা কিছুটা হলেও আশার বাণী শোনাবে। ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় করবে এমন গবেষণা চলছে বহুদিন ধরে। তবে তার তেমন কোন ফল পাওয়া না গেলেও এইবার বিজ্ঞানীরা বলছেন যে জিন থেরাপি এবং স্টেম সেল থেরাপি দিয়ে ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় সম্ভব হবে।

কিছু কার্যকরি গবেষণা চলছে যা ডায়বেটিসকে চিরতরে নিরাময় করতে পারে।

  • জিন থেরাপি
  • স্টেম সেল রিসার্চ
  • বেরিয়াট্রিক সার্জারি
  • আর্টিফিশিয়াল প্যানক্রিয়াস

    জিন থেরাপি:

জিন থেরাপি মূলত ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলির পুনরুদ্ধার করবে এবং প্রতিস্থাপন করবে। তাহলে কী হবে? ধরুন আপনার ডায়বেটিস হয়েছে , আপনি যখন এই থেরাপি দিবেন তখন আপনার যে কোষগুলো ইনসুলিন তৈরী করতে পারছিলনা তা সক্রিয় হয়ে উঠব। যেসব কোষগুলো অকার্যকর ছিল তা কাজ করলে অবশ্যই ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রেনে থাকবে।

 

ডায়াবেটিস-চিরতরে-নিরাময়
                                                                                       ডায়াবেটিস-চিরতরে-নিরাময়

 

 তাই জিন থেরাপি হতে পারে ডায়বেটিস চিরতরে নির্মূলের অন্যতম উপায়। তবে এটা এখনও নানা পরীক্ষাধীন রয়েছে। মূলত এই কাজ করার ফলে যদি আপনার অন্য কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে কি হবে? তাইতো বিজ্ঞানী বা গবেষক যাই বলি না কেন তারা তা আরও গবেষণা করে দেখছেন।

 

স্টেম সেল রিসার্চ:

এই গবেষণার লক্ষ হলো নতুন ইনসুলিন উৎপাদনের কোষ তৈরী করা। মনে করেন যে আপনার শরীর থেকে ইনসুলিন উৎপাদনকারী নানা কোষ মারা গিয়েছে তখন যদি এমন হয় যে ইনসুলিন উৎপাদনকারী নতুন কোষ তৈরী হচ্ছে তাহলে টাইপ ১ বা টাইপ ২ যে ডায়বেটিসই হোক না কেন কোন লাভ নাই। কারণ এই ২ টাইপ ডায়বেটিস যা ধ্বংস করবে তার চেয়ে বেশী কোষ উৎপন্ন করবে। আর এইবাবে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রন করবে। যার ফলে আশা করা যায় যে ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে। 

 


বেরিয়াট্রিক সার্জারি

 

ওজন কমানোর মাধ্যমে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন সম্ভব যা নানা গবেষণায় দেখা গেছে। বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে ওজন কমানো অস্ত্রোপাচার ( বেরিয়াট্রিক সার্জারি) বেশ কার্যকর বলে প্রমাণিত। এই পদ্ধতিতে শরীরের হরমোন এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা অনেকাংশেই পুনরুদ্ধার হয়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

 

আরো পড়ুন: ক্যন্সার এর লক্ষণ: জরায়ু, ব্লাড, কোলন সহ অন্যান্য

 

আর্টিফিশিয়াল প্যানক্রিয়াস:

 

এই পদ্ধতি ইনসুলিন সিস্টেমকে নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রন করবে। গবেষনার কোন পদ্ধতি আপনার কোষ তৈরী করবে আবার কোন পদ্ধতি আপনার কোষগুলোকে নিয়ন্ত্রন করবে। আর আর্টিফশিয়াল প্যানক্রিয়াস আপনার রক্তে শর্করার স্তর স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে। যখন অটোমেটিকভাবে এই কাজ আপনার শরীরে হবে তখন গ্লুকোজের ব্যালেন্স থাকবে এবং ডায়বেটিসও নিয়ন্ত্রনে থাকবে।

 

আমরা এখানে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা কললাম যা আপনার ডায়বেটিসকে নিয়ন্ত্রনে রাখবে। আর এমন কিছু গবেষনার কথা বললাম যা আশার আলো দেখায় যে আমরা ডায়বেটিসমুক্ত জীবনযাপন করবো। তবে একটা প্রশ্ন মনে মনে ঠিকই থেকে যায়।

 ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় সম্ভব?

 

সত্য হলো এখনো পর্যন্ত ডায়বেটিস চিরতরে নিরাময় সম্ভব নয়। নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হচ্ছে কিন্তু নিরাময় হচ্ছে না চিরতরে।

 

তবে গবেষকরা নানা পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন হয়ত একদিন ঠিকই ডায়বেটিস চিরতরে নিরাময়ের উপায় বের করে ফেলবেন। তবে যেসব পরীক্ষা বা গবেষণার কথা বললাম তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে। তাই আশা করাই যেতে পারে আমরা একদিন ডায়বেটিসমুক্ত জীবনযাপন করবো।

 

তাই ডায়াবেটিস স্থায়ীভাবে নিরাময় করা না গেলেও, এটি নিয়ন্ত্রণে রাখাসম্ভব। স্বাস্থ্যকর ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, এবং প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে ডায়াবেটিসের প্রভাব বহুলাংশে কমানো যাবে বলে  আশা করা যায়। তবে চিরতরে সমাধানের বা নিরাময়ের গবেষণাতো চলছেই, আশা করি এরও একটা ফলাফল পেয়ে যাব ইনশাল্লাহ।

Leave a Comment