আপনি কি জানেন ২০২৪ সালে এসে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা কততে দাঁড়িয়েছে? ১৩.১ মিলিয়ন। এই বিশাল জনসংখ্যার জন্য নিয়ে লিখছি ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ২০২৪ । একটু অবাক হলেন !! ভাই বেঁচে থাকলে অবাক তো হবেন ২০৪৫ সালে গেলে ।
গবেষকগণ ভবিষ্যৎবাণী করেছেন ২২.২ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২০৪৫ সালে। আর এর জন্য দায়ী উল্টাপাল্টা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা নামের একটি আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে আপনি চাইলে দেখে নিতে পারেন। চলুন শুরু করা যাক।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ২০২৪
ধরুন আপনি খাবার খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে রক্ত পরীক্ষা করে দেখলেন আপনার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ১১.১ mmol/L এর বেশি। অর্থাৎ আপনি একজন ডায়াবেটিস রোগী। ভাবলেন সমস্যা নেই, ওষুধ খাব ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনব। কিন্তু ডায়াবেটিস শুধুমাত্র ওষুধে আপনার কথা শোনার পাত্র না। সাথে আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম এবং পরিমাণ মতো সঠিক সময়ে সঠিক খাবার খেতে হবে।
মহা মুশকিল! কি খাব আর, আর কতটুকুই বা খাব?
নো টেনশন, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ২০২৪ এই আর্টিকেলেই পেয়ে যাবেন ২০২৪ সালের ডায়াবেটিসের ধরন ও চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী আপনার পছন্দের খাদ্য তালিকা।
ডায়াবেটিস কি?
রক্তে ইনসুলিন কম তৈরি হলে বা সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে ,রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ সৃষ্টি হয়। নাম তার ডায়াবেটিস। টাইপ ১ এবং টাইপ ২ নামের দুই ধরনের ডায়াবেটিস আমাদের জীবন শেষ করে দিচ্ছে, তার সাথে আবার যুক্ত হয়েছে গর্ভকালীন ডায়বেটিস।
ভাই আপনার যদি ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাহলে কিডনির সমস্যা, চোখের সমস্যা, হার্টের সমস্যা ,এমনকি স্নায়ুর ও ক্ষতি হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য আজ থেকেই খাদ্যাভাসের দিকে নজর দিন।
চাইলে আমাদের একটা লিখা পড়তে পারেন…” জাঙ্কফুড কী আসলেই ক্ষতিকর? “
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যের গুরুত্ব
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনটি কাজ করতে হবে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ,ব্যায়াম ও ওষুধ। ভাই খাদ্যের দিকে একটু নজর দেন দেখবেন আপনার ডায়াবেটিস অর্ধেক সেরে গেছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যের গুরুত্ব:
- রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
- ওজন নিয়ন্ত্রণ
- ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি
- সঠিক স্বাস্থ্যকর খাবার ডায়াবেটিস রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা তৈরিতে অবশ্যই ৪টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে:
- চিনি জাতীয় খাবারকে না বলা এবং লবণ ,কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যতটুকু না খেলেই নয় ততটুকু রাখা।
- খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্যময় খাবার রাখা ।
- দুই বেলা খাবারের মাঝে অবশ্যই ছোট খাটো নাস্তার সময় রাখা।
- খাদ্য তালিকায় কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI)যুক্ত খাবার রাখতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খাদ্য তালিকা ২০২৪ বিশদ আলোচনা
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার মানেই বোরিং খাবার?!! আরে না! চলেন ডায়বিটিস রোগীর উপযোগী কতগুলো মজার মজার খাবারের নাম আপনাকে বলি।
১. শস্য এবং আঁশযুক্ত খাবার:
ডায়াবেটিস হওয়ার পর থেকে কিছুক্ষণ পর পর ক্ষুধা লাগে? শস্য ও আঁশযুক্ত খাবার খান। এগুলো সহজে হজম হয় না ,ফলে অনেক সময় পেটটা ভরা থাকবে আবার ক্ষুধাও কম লাগে।
বোনাস হিসাবে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
*কি কি খাবেন?
- লাল চালের ভাত
- লাল আটা এবং জোয়ার রুটি
- ওটস, বার্লি ,চিয়া সিডস
- শস্যদানা জাতীয় খাবার যেমন বিভিন্ন ধরনের ডাল।
*কতটুকু খাবেন?
আপনি দিনে অনায়াসে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম আঁশ বা ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে পারেন।
- দুপুরে সাদা চালের পরিবর্তে এক কাপ লাল চালের ভাত সাথে প্রচুর পরিমাণে সবজি, ডাল ,কিছুটা প্রোটিন খান।
- সকালে এবং রাত্রে বাজারের কেনা ব্রেডের পরিবর্তে লাল আটার ২টি রুটি খেতে পারেন।
[গোপন টিপস: লাউ দিয়ে ডাল রান্না করে খেতে পারেন লাউ এবং ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে ফলে আপনার অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকবে। ]
২.ফল:
রসালো আম ,পাকা কলা দেখলেই খেতে ইচ্ছা করে ?!কিন্তু না ভাই নাতি পুতির মুখ দেখতে চাইলে এগুলো বাদ দিতে হবে। তবে এমন কিছু সুস্বাদু ফল আছে যেগুলো ডায়াবেটিস রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
*কোন ফলগুলো খাবেন?
- আপেল
- বেরি জাতীয় ফল যেমন: স্ট্রবেরি ,ব্ল্যাকবেরি ,ব্লুবেরি
- পেয়ারা
- নাশপাতি
- সাইট্রাস জাতীয় ফল যেমন কমলা , মাল্টা ,লেবু
- নাশপাতি
*কতটুকু খাবেন?
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একজন ডায়াবেটিসের রোগী দিনে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ফল খেতে পারে।
ধরেন সকালে এবং দুপুরের খাবারের মাঝে আপনার ছোটখাটো ক্ষুধা লেগেছে, তখন আপনি একটি আপেলের কিছুটা অংশ খেলেন। আবার দুপুর এবং রাত্রের খাবারের মাঝে যখন ক্ষুধা লাগবে তখন বাকি অংশটুকু খেতে পারবে।
ডায়াবেটিস রোগী কি কি ফল খাবে ?কোন গুলো বাদ দিবে ,কতটুকু খাবে এ সম্বন্ধে ডিটেলস জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ২০২৪ ফল নামক আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
৩.প্রোটিন:
প্রোটিন খুদা কমায় এবং রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় প্রোটিন রাখা ফরজ। মুরুব্বী উঁহু উঁহু… ফরজ শুনে আবার অতিরিক্ত গরু, খাসি খাওয়া শুরু করেন না কিন্তু!
*কি কি খাবেন?
- ডিম, মুরগি, মাছ
- টক দই, টফু
- ডাল জাতীয় খাবার
- বাদাম
*কতটুকু খাবেন?
ডায়াবেটিস রোগীর শরীরের ওজন অনুযায়ী প্রতি কেজিতে ০.৮-১ গ্রাম প্রোটিন নির্ধারণ করা হয়।
যেমন ধরুন আপনার শরীরের ওজন ৬০ কেজি তাহলে আপনি প্রতিদিন ৪৮ থেকে ৬০ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারবেন।
৪. শাকসবজি:
ভাই শাকসবজিতে কোন না নাই। শাকসবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন যা আপনার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
*কি কি খাবেন?
- বাঁধাকপি ,ব্রকলি, ফুলকপি
- মেথি শাক ,পালং শাক, পুঁই শাক,শাল গম
- শশা ,টমেটো
- করলা ,লাউ, ঝিঙ্গা ,বেগুন, কুমড়ো সহ আপনার পছন্দমত সবজি
*কতটুকু খাবেন?
আপনি প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপ সবজি চোখ বন্ধ করে খেয়ে ফেলতে পারবেন।
খাদ্য তালিকায় আপনি ভাত বা রুটির পরিমাণ কমিয়ে সবজির পরিমাণটা বাড়িয়ে ফেলুন। এক কাপ ভাতের সাথে এক কাপ সবজি রাখুন তার সাথে এক কাপ শসার টমেটো দিয়ে সালাদ।
[গোপন টিপস: শসা, টমেটো , ভাজা চিনা বাদাম অথবা কাজুবাদাম, সামান্য মরিচ ও পেঁয়াজ এবং এক চিমটি লবণ, টক দই( আপনি চাইলে একটু চিকেন অথবা সিদ্ধ ডিম দিতে পারেন)দিয়ে মেখে নিন। ভাইরে ভাই কি স্বাদ ,ভাত রুটির কথা ভুলেই যাবেন ১০০% গ্যারান্টি]
৫. স্বাস্থ্যকর চর্বি:
সাধারণত স্বাস্থ্যকর চর্বি থেকে একজন ডায়াবেটিস রোগী ২০-৩৫% ক্যালরি পেতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণ মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা ফরজ। চর্বির নাম শুনে আবার গরু, খাসির চর্বি ভাবেন নাই তো?!! হা হা… আরে না আমি স্বাস্থ্যকর চর্বি বলেছি। আপনি কি জানেন কোন কোন চর্বি আপনি খেতে পারবেন ?
*কি কি খাবেন?
- অ্যাভোকাডো
- সামুদ্রিক মাছ যেমন টুনা , স্যামন
- অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, বাদাম তেল
- সূর্যমুখী বীজ, বাদাম, আখরোট
কতটুকু খাবেন?
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দিনে ৪০ থেকে ৭০ গ্রাম স্বাস্থ্যকর চর্বি খেতে পারেন।
অনেক তো খাওয়া-দাওয়া হলো চলুন এবার জেনে নেই ডায়াবেটিসের আশীর্বাদে কোন কোন খাবারগুলো দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে হবে।
এড়িয়ে চলতে হবে যেসব খাবার
১. পরিশোধিত চিনি এবং মিষ্টান্ন:
চিনি এবং মিষ্টান্ন থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। চিনি খাবেন তো রক্তে গ্লুকোজ বাড়তে থাকবে, ইনসুলিনের বারোটা বাজবে। কখনো খুব যদি মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতে ইচ্ছে হয় আপেল, পেয়ারা, বাদাম এগুলো খান।
২.সাদা চাল এবং সাদা ময়দার তৈরি খাবার:
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সাদা চাল এবং সাদা ময়দার তৈরি যে কোন জিনিসই হারাম। কারণ এগুলো খুব তাড়াতাড়ি শর্করায় রূপান্তরিত হয়। কি বলেন না খেয়ে থাকবো?!!
কি যে বলেন ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় ঘনঘন খাবার রাখতে হয়। আর আমি সেখানে আপনাকে না খাইয়ে রাখব! সাদা চাল ও ময়দার পরিবর্তে আপনি লাল চাল অথবা লাল আটা ব্যবহার করবেন।
৩.ফাস্টফুড এবং প্রসেসড খাবার:
ফাস্টফুড এবং প্রসেসড খাবারের সাথে নো কম্প্রোমাইজ। এর আশেপাশে দিয়েও যাবেন না। এইসব খাবার গুলোতে অতিমাত্রায় চিনি, লবণ এবং খারাপ চর্বি থাকে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই খারাপ।
খাদ্য তালিকা তৈরির টিপস
১. ছোট ও নিয়মিত খাবার:
সকালে নাস্তা করলেন না দুপুরে এসে অনেকগুলো খাবার একবারে খেয়ে ফেললেন, এটা কিন্তু একদম করা যাবে না। খাদ্য তালিকা তৈরীর সময় অবশ্যই খাবারের সময় এবং পুষ্টিকর খাবার গুলো মাথায় রাখতে হবে।
২.খাবার পরিকল্পনা:
সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে কোন দিন কোন বেলা কি খাবার খাবেন তার একটি তালিকা তৈরি করুন। যেমন ধরুন শনিবারে ফল হিসাবে আপেল খেলে রবিবারে পেয়ারা খান। দুপুর বেলা সোমবারে ভাতের সাথে এক টুকরা মাছ খেলে মঙ্গলবারে এক টুকরা চিকেন খান।
৩. ব্যায়াম:
ডায়াবেটিসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে চাইলে সঠিক ও পরিমিত খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামটা করতে হবে। প্রতিদিন সকালে এবং রাতে কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কখন ও কতক্ষণ ব্যায়াম করতে হবে তা জানুন ক্লিক করে।
৪. পর্যাপ্ত পানি পান:
পানি দেহের বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। একজন ডায়াবেটিস রোগীর দিনে ২-৩ লিটার পানি পান করা ফরজ। খাদ্য তালিকায় ডিটক্স ওয়াটার রাখা যেতে পারে।
এত দিনের খাদ্যাভ্যাস একদিনে পাল্টানো সম্ভব না। তবে একটু একটু করে তো পরিবর্তন আনা যেতেই পারে! কি বলেন ?!ডায়াবেটিস নীরব ঘাতক। চুপি চুপি আপনার শরীরে বাসা বাঁধবে, তারপরে আবার আপনারই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে কিডনি , হার্ট , চোখ সহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বারোটা বাজাবে।
সাল ২০২৪, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ওষুধ তো আছে কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্মূলের ওষুধ কিন্তু পাওয়া যায়নি। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ চেকআপ ,ঔষধ গ্রহণ ,নিয়মিত ব্যায়াম ও সব থেকে জরুরী সঠিক ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা।
আপনাকে বলছি !হ্যাঁ আপনাকেই বলছি! সুন্দর এই পৃথিবীতে আরও কিছু বছর সুস্থভাবে বাঁচতে চাইলে আজই উপরের টিপস গুলো ফলো করে স্বাস্থ্যকর খাবারই পরিপূর্ণ একটি খাদ্য তালিকা তৈরি করুন এবং একটু একটু করে জীবনে পরিবর্তন আনুন।
ডায়াবেটিস সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের প্রশ্নের উত্তর পাবেন আমাদের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন আর্টিকেলে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার সমাধান পেতে লিংকে ক্লিক করুন।