রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী না তা নিয়ে আমাদের নানা মানুষের মনেই প্রশ্ন আসে বারবার। কারণ রোজাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা পরিবর্তন হয়। তাই কি করা যাবে আর কি করা যাবে না তা নিয়ে আমরা কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকি। তাই আজকে এই বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো।
রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী?
রোজা রেখে চুল-নখ বা শরীরের অবাঞ্ছিত লোম কাটা যাবে কী না তা অনেকেরই প্রশ্ন। উত্তর- হ্যাঁ, রোজা রেখে চুল-নখ কাটা যাবে। যাতে রোজার বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হবে না বা রোজা ভাঙবে না।
রোজা রাখার সময় আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে আসে পরিবর্তন। তাই প্রতিদিনকার কাজগুলো কখন কোনটা কিভাবে করতে হবে তা নিয়ে অনেকের মাঝে নান প্রশ্ন কাজ করে।
(রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী)
যেমন, রোজা রেখে ব্রাশ করা যাবে কী না, রোজা রেখে স্ত্রী-সহবাস করা যাবে কী না, রোজা রেখে অতিরিক্ত ঘুমালে কী হবে, রোজা অবস্থায় বমি হলে কী রোজা ভেঙে যাবে,
রোজায় ইনহেলার নেয়া যাবে কী রক্ত বের হলে কী রোজা ভেঙে যাবে, রোজা রেখে কী ধূমপান করা যাবে কী না, রোজা রেখে ইনজেকশান বা ইনসুলিন নেয়া যাবে কী না,
রমজানে খাবার-দাবার কেমন হওয়া উচিৎ রোজা অবস্থায় কোন কোন ওষুধ খাওয়া যাবে আর কোন কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না ইত্যাদি নানা প্রশ্ন আমরা করে থাকি রোজার সময়।
আরো পড়ুন:
দৈনন্দিন কোন কাজগুলো করবো আর কোন কাজগুলো করবো না তা নিয়ে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেন। এমনই আরও দু একটি কাজ নিয়ে অনেকের মাঝে প্রশ্ন রয়েছে নখ কাটলে কী রোজা ভেঙে যাবে?
চুল কাটলে কী রোজা ভেঙে যাবে? লোম কাটলে কী রোজা ভেঙে যাবে? এই সব প্রশ্নেরই সমাধান দেয়ার চেষ্টা করবো আজকের এই লিখায়।
(রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী)
রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী না তার আগে জানবো রোজা ভঙ্গের কারণ:
রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কীনা তা নির্ভর করে রোজা ভঙ্গের কারণের মাঝে এইগুলো আছে কী না। রোজা ভঙ্গের যেসব কারণ রয়েছে তার মাঝে নখ-চুল কাটলে রোজা ভেঙ্গে যায় তেমন কোন প্রমাণ হাদিসে পাওয়া যায় নি।
তাই রোজা রেখে চুল- নখ কাটার বিষয়ে জানার আগে আমরা ভাল করে জানব কী কী কারণে আমাদের রোজা ভাঙতে পারে।
রোজা ভঙ্গের কারণগুলো নিচে দেয়া হল:
১. পানাহার করলে। খাদ্য ও পানীয় যে কোনটাই খেলে রোজা ভেঙে যাবে।
২. বিড়ি-সিগরেট-তামাক সেবন করা।
৩. যা সাধারণত খাওয়া হয় না যেমন- কাঠ, লোহা,কয়লা, মাটি, কঙ্কর,
কাগজ ইত্যাদি খাওয়া বা গিলে ফেললেও রোজা ভেঙে যাবে।
৪. নিজের থুতু যদি মুখের বাহিরে বের করা হয় এবং পুনরায় তা গিলে
ফেললেও রোজা ভেঙে যাবে।
৫. সহবাস ও হস্তমৈথুন করলেও রোজা ভেঙে যাবে।
আরো পড়ুন:
৬. মুখ থেকে রক্ত পড়লে তা যদি মুখের থুথুর চেয়ে বেশী হয় এবং সেই
রক্ত গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে।
৭. ইচ্ছাকৃত বমি করা বা বমি আসার পর তা গিলে ফেলা।
৮. সুবাহ সাদিকের পর কিছু খাওয়া।
৯. ভুলে ইফতারের আগে খেয়ে ফেলা।
১০. মহিলাদের হায়েজ বা মাসিক এর রক্ত বের হওয়া।
রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী
১১. শক্তিবর্ধক ইনজেকশান, গ্লকোজ ও সেলাইন ইত্যাদি ইনজেকশান
দিলে।
১২. বৃষ্টির পানি মুখে পড়লে তা গিলে ফেললে।
১৩. জিহ্বা থেকে দাঁতের ফাঁকা থেকে খাদ্যকণা বের করে এনে খেয়ে
ফেললে তবে তা ছোলা পরিমাণ হতে হবে।
১৪. রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় যদি কেউ ওযুর সময় নাকে বা মুখে
পানি দেয়ার সময় তা মুখের ভেতরে মানে খাদ্যনালীতে চলে যায় তাহলেও রোজা ভেঙে যাবে।
১৫. ভুল করে কিছু খেয়ে ফেললে তারপর যদি মনে করা হয় যে রোজা ভেঙে
গেছে এবং আবার কোন কিছু খেলে রোজা ভেঙে যাবে।
রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী
এর বাহিরে তেমন আর কোন কারণ নেই রোজা ভাঙার জন্য। তবে কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর কারণে রোজা মাকরুহ হবে এবং হালকা হয়ে যাবে। কিন্তু রোজা ভাঙবে না।
আরো পড়ুনঃ
রোজা রেখে নখ-চুল কাটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জানব কী কী কারণে রোজা মাকরুহ হবে:
রোজা ভাঙার পর আসে রোজা মাকরুহ হওয়ার ব্যাপার। যদি মাকরুহ হওয়ার কারণগুলোর মধ্যেও চুল-নখ-লোম কাটা নিয়ে কোন কথা না থাকে তাহলে নিশ্চিত করেই বলা যাবে যে রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে। নিচে রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণগুলো উল্লখ করা হলোঃ
১. ইচ্ছাকৃত ভাবে মুখে অনেকক্ষণ থুথু জমিয়ে রাখার পর তা খেয়ে
নিলে। রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে। রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী
২. ইফতারের পরও যদ এমন কোন কিছু খাওয়া হয় যা ইসলামে হারাম
তাহলেও রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে।
৩. কোন কিছু শুধু মুখে রাখা হলো কিন্তু খেলেন না। তাতেও রোজা
মাকরুহ হয়ে যাব।
রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী
৪. গড়গড়ার সময় নাক দিয়ে পানি টেনে নিলে এবং যদি কেউ তা গিলে
ফেলে তাহলেতো রোজাই ভেঙে যাবে। রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী
৫. রমজানে সারাদিন শরীর নাপাক রাখলেও রোজা ভেঙে যাবে।
৬. মুখে গুল রাখলে রোজা মাকরুহ হবে এবং তা গিলে ফেললে রোজা ভেঙে
যাবে।
৭. রোজা রেখে মিথ্যা বললে।
৮. যৌন-উদ্দীপনামূলক কিছু দেখলে, সারাদিন সিনেমা, গান, দেখলেও
রোজা মাকরুহ ও হালকা হয়ে যাবে।
৯. রান্নার সময় যদি কেউ তরকারীর মসলা ঠিক হয়েছে কি না তা যাচাই
করতে মুখে নেয় তাহলেও রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে।
১০. রোজা রেখে ঝগড়া-বিবাদ করলেও রোজা মাকরুহ হবে।
আমরা উপরে রোজা ভাঙার কারণ ও রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণসমূহও
জানলাম। কিন্তু কোথাও বলা হয় নি নখ-চুল- উচ্ছিষ্ট লোম কাটলে রোজা ভেঙে যাবে।
এমন কি রোজা ভাঙবে তো পড়ের কথা রোজা মাকরুহও হবে না যদি আপনি রোজা রেখে নখ কাটেন বা চুল কাটেন । অনেকে ভেবে থাকেন যে নাভীর নিচের লোম কাটলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে কিন্তুভাল করে ভেবে দেখেন রোজা ভঙের কারণগুলো।
রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী
আর আমরাতো পানাহার করছি না। শুধু নিজেকে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন করছি। তাই রোজা ভাঙার কোন কারণই নেই।
রোজা রেখে নখ কাটা:
আমরা নখ কাটি কেন? নিজেকে পরিষ্কার করার জন্য। কোন জীবাণু যেননখের সাথে আমাদের দেহে প্রবেশ করতে না পারে। আর যদি রমজানে নখ বড়ই হয়ে যায় এবং হয়ত নখ কাটার জন্য সময় পাচ্ছেন না। তাই যখন সুযোগ হবে কেটে নিবেন।
হয়ত ভাবছেন যে দিনেরবেলায় কাটলেই তো আমার রোজা ভেঙে যাবে। তারা নিশ্চিন্ত মনে নখ কেটে নেন। কারন রোজা ভাঙার কারণের মাঝে কোথাও নখ কাটার কথা বলা হয় নি।
রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী
সেহেতু নখ কাটতে কোন প্রবলেম নেই। এমনকি যদি নখ কাটতে গিয়ে হাতও কেটে যায় তবুও রোজা ভাঙবে না।
রোজা রেখে চুল কাটা:
সহজভাবে চিন্তা করলেই বোঝা যায় যে রোজা রেখে চুল কাটা যাবে। রোজা খাঙবে যদি কেউ পানাহার করে। চুল কাটা কী খাওয়া বা পানাহার এর সাথে সম্পর্কিত? না, মোটেই না। তাই দিনের বেলায় রোজা রেখে নিঃসন্দেহে চুল কাটতে পারেন।
রোজা শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার:
রোজা রাখা অবস্থায় কেউ যদি মনে করে যে সে নাভীর নিচের লোম বা বগলের নিচের লোম কাটবে তাহলে সে কাটতে পারে। কোন সমস্যা হবে না।
অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার এর মাধ্যমে আপনি পরিষ্কার থাকবেন তাই এতে সমস্যা কোথায়? আর খাওয়া বা পানাহার এর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। তাই রোম পরিষ্কারে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নয়।
রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটতে কোন সমস্যা নেই এবং এ কারণে রোজা ভাঙবে না। আর এই সিদ্ধান্তে আসতে মূলত দুটো বিষয় চিন্তা করলেই হয়।
এক হলো্ রোজা ভাঙার কারণগুলো জানা এবং এই প্রতিটি বিষয় রোজা ভাঙার কারণের মাঝে না থাকলে রোজা
ভাঙবে না।
রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে কী
২য় ব্যাপার হলো রোজা হালকা বা মাকরুহ হওয়ার কারণগুলোর বিশ্লেষণ করার পর দেখা গেল সেখানেও রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটলে কোন ভাবেই রোজা মাকরুহ হবে না। তাই সবশেষ আমাদের সিদ্ধান্ত হলো- রোজা রেখে নখ-চুল-লোম কাটা যাবে। তাতে কোন রোজা ভাঙবে না ও রোজার ক্ষতি হবে না।