একটি বাংলাদেশ, তুমি জাগ্রত জনতার সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার ।” শিল্পীর কন্ঠে বিশ্বের বিস্ময় হিসেবে যে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেটিকে বলেছেন, “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” ।
এই সোনার বাংলাকে সত্যিকারের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন সংগ্রাম করেছেন যে মানুষটি তিনি সর্ব কালের নেতা, স্বাধীন বাংলার স্থাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ।
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি যখন ভুগছে অস্থিত্ব সংকটে তখনি বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে আবির্ভুত হন বঙ্গবন্ধু । লাল-সবুজের পতাকার ইতিহাসে বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু নামটি অবিচ্ছেদ্য ।
বঙ্গবন্ধু অতীত জানতেন, বর্তমান বুঝতেন ও ভবিষ্যৎ পড়তে পারতেন । তার ইতিহাস বোধ বাঙালি জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছে । বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার পথ দেখিয়েছেন । বাঙালির চাওয়া, নিজেদের দাবি, আশা আকাঙ্খা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন । আর এই ভাবেই তিনি সমগ্র জাতির প্রিাণের নেতা হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ হয়ে আছেন।
স্বাধীনতার এত বছর পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে লড়ে যাচ্ছেন। যার হাত ধরে সোনার বাঙলা নতুন আলোর আভায় নিজেকে জালিয়ে তুলবে।
সোনার বাংলা গড়ার গোড়াপত্তন:
বঙ্গবন্ধু ছিলেন মনে প্রাণে বাঙালি। শৈশবেই বঙ্গবন্ধুর মানস চেতনায় বাঙালি জাতির শৃঙ্খল মুক্তির আকাঙ্খা এবং রাজনৈতিক চেতনার বীজ প্রোথিত হয়েছিল। গুরু সদয় দত্তের ব্রতচারী আন্দোলন কিশোর মুজিবের মানব চেতনায় রোপন করেছিলেন বাঙালিয়ান বীজ।
১৯৩৯ সালে গোপালগঞ্জ মিশনারী স্কুলে ৮ম শ্রেণীতে ভর্তির পর তিনি এ আন্দোলনে যুক্ত হন । ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করতে ১৯৩১ সালে গুরু সদয় দত্ত ব্রতচারী আন্দোলনের সূচনা করেন । ব্রতচারী আন্দোলনের স্বদেশপ্রেম ও বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনা হৃদয়ে লালন করেই শেখ মুজিব সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
আরো পড়ুনঃ
সোনার বাংলায় স্বপ্ন পুরুষ :
১৯৪৭ সালে দেশভাগ হওয়ার পর থেকেই বঙ্গ বন্ধু স্বপ্ন দেখিছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার । তরুণ শেখ মুজিব ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন বাঙালী জাতীর প্রধান মুক্তিদাতা। নতুন রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করেন।
১৯৪৯ সালে নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন । ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৫৮-এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন ও ১৯৬৬ এর ৬ দফা ভিত্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা।
বঙ্গ- বন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ জয় পায়। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে শুরু করে শারীরিক নির্যাতন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য জাতীকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু ।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালি নিধনে নামে আর সেই রাতেই গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু । গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তিনি । তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাঙালী । ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাঙালির বহু আকাঙ্কিত বিজয় । আমরা পাই আমাদের স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য :
বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্য -মুক্ত, সুস্থ, সবল, জ্ঞান, চেতনা সমৃদ্ধ, কোনরকম ভেদ-বৈষম্যহীন, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক, চেতনায় উদ্ধুদ্ধ দেশপ্রেমিক মানুষের উন্নত, সমৃদ্ধ এক আধুনিক বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর আধুনিক বাংলাদেশ নির্মানের দর্শনকে সজ্ঞায়িত করা যায় এইভাবে -সব মানুষের জন্য পাঁচ ধরণের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবে এর মধ্যে থাকবে রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক সুযোগ, সামাজিক সুবিধাদি, স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা, এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সুরক্ষার স্বাধীনতা ।
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা (ভিশন ২০৪১) :
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিল নতুন দেশ পুনঃগঠনের নীলনকশা, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,
‘বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে। খেয়ে পরে, সুখে থাকবে, এটাই ছিল আমার সাধনা । এবং আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, নেতা হিসেবে নয়, আপনার ভাই হিসেবে বলছি, যদি দেশ- বাসী খাবার না পায় তাহলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে
যাবে। পূর্ণতা পারে না ।
স্বাধীন বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক চরিত্রের পাশাপাশি, আদর্শিক ভিত্তিটিও নির্দেশিত হয়েছিল এমনভাবে, “বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ।
স্বপ্নের বাংলাদেশ নির্মাণে বঙ্গবন্ধু :
১৯৭২ সালের গোড়ায় যে দেশটি স্বীকৃতি ও বান্ধবহীন ছিল, সেদেশটি দুই বছরের মধ্যে ১৯৭৪ এর সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি মর্যাদাপূর্ণ আসন করে নিতে সক্ষম হয়েছিল ।
বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যত দ্রুত সম্ভব অগ্রগতির পথে নিয়ে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন । সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্য নিয়ে মংলা বন্দরের মাইন অপসারন করে বন্দরকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যকে সচল করে তুলেছিল খুব কম সময়ের মধ্যে । দেশের ৫৮০ টি শিল্প কারখানা সহ পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত সব সম্পদ জাতীয়করন, হাজার হাজার শ্রমিক, কর্মচারীদের কর্মসংস্থান মাদ্রাসা বোর্ডের পুনর্গঠন সহ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রান্স স্থাপন করা হয়েছিল।
দেশের কৃষক শ্রেণি ও কৃষি ব্যবস্থার ভাগ্য পরিবর্তন ও আমূল সংস্কারের জন্য স্বাধীনতা লাভের পরপরই ৩৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করা হয়েছিল। কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে এমনকি নামমাত্র মূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরনের ব্যবস্থাগ্রহণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু আধুনিক বিজ্ঞান ও কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেন । আজকের বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের যে অভিযাত্রা তার সূচনা করেছিলের “আমাদের মহান স্থপতি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ।
স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা:
স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকদূর এগিয়েছে । অর্থনীতির সার্বিক “অবস্থা স্থিতিশীলতার পর এখন শুরু হয় মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন। এখন আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে টেকসই উন্নয়নের
দিকে ।
ফলে অর্থনৈতিক সূচকের পাশাপাশি সামাজিক সূচকেও পরিবর্তন আসছে । শিল্প, ব্যবসা- বাণিজ্য, ব্যাংক, বিমা, বিভিন্ন সেবা খাত যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে যোগপযোগী ধ্যান-ধারনা। বাংলাদেশের অর্থনীতির মৌলিক রুপান্তর আজ গোটা বিশ্বে চমক
সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য যোগ্য নেতৃত্ব দানকারী অসাধারণ এক নেতৃী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতিত্বের কথা বারবার আলোচিত হচ্ছে।
ভিশন ২০৪১
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিশন ২০৪১ উদ্বোধন করেন। এই দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০৪১ সালের জুন মাস পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়।
এটি অনুমোদন করে NEC। এই পরিকল্পনা ভিশন ২০৪১ অনুমোদন হয় ২০ শে ফেব্রুয়ারি ২০২০। এর উদ্দেশ্য- দারিদ্র্য দূরীকরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলানো। ভিশন ২০৪১ এর কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। যা নিম্নরূপ-
·
১. ৮০% মানুষ শহরে বাস করবে।
২ ২. মাথাপিছু আয় হবে ১২৫০০ ডলার।
· ৩. জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাবে ৯.৯ শতাংশ।
· ৪. দারিদ্র্য হার হবে ৩ শতাংশ।
· ৫. অতি দারিদ্র্য ০.৬৮ শতাংশ।
· ৬. গড় আয়ু হবে ৮০ বছর।
এই ভিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই আমরা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ দেখতে পারছি। যেখানে উল্লেখযোগ্যভাবে বলা যায় পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মত প্রোজেক্টের বাস্তবায়ন।
বঙ্গবন্ধু শুধু দেশের একজন বড় মাপের নেতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই ছিলেন না। তিনি ছিলেন বাঙ্গালী মহাকাব্যের মহানায়ক। ব্রিটিশি শাসন থেকে বের হয়ে আসার জন্য তিনি সর্বদা বাঙ্গালীর পাশে ছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল প্রগতি অভিমুখে।
তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের আপনজন। ছিলেন জনগণেরও নেতা। মানুষের ওপর ওজনতার ওপর তার এহেন অপার ভালবাসা নৈকট্যই তার ক্রমবির্বতনের প্রগতিমুখী হওয়াটাকেঅবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন কার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আর নয় স্বপ্ন, এখন বাস্তব।