এসিডিটি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় নিয়ে জানার জন্যই এইখানে এসেছেন। এই সময়ে ভেজাল, কীটনাশক দিয়ে উৎপাদিত খাবার, জাংক ফুড, খাবারে কৃত্রিম উপাদান (রঙ,পোড়া তেল, ফরমালিন ইত্যাদি) মেশানো খাবার এর সহজলভ্যতার যুগে গলা-বুক জ্বালাপোড়া দূর করা খুব একটা সহজ কাজ নয়।
এসিডিটি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
আর এইসব নানা কারণে আমাদের অসুস্থতা হচ্ছে খুব কমন সমস্যা। ছোট বা বড়, জটিল বা নরমাল এখন যেকোন অসুস্থতার পেছনে দায়ী হচ্ছে আমাদের প্রতিদিনকার খাবার। আর মানুষের বাধ্য হয়েই এইসব ভেজাল খাবারই গ্রহণ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে মানুষের নানা অসুস্থতার মাঝে খুব কমন একটা অসুস্থতা হচ্ছে এসিডিটির সমস্যা।
এখন প্রায় প্রতিটি মানুষেরই এসিডিটির সমস্যা হচ্ছে। আর এসিডিটির জন্য বুক জ্বলাপোড়া করা, খেতে না পারা, ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। তাই আজকে এই কমন একটা সমস্যা নিয়ে আলোচনার চেষ্টা চলবে। যেখানে আমরা জানব কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে বুক জ্বলাপোড়া সমস্যা দূর করা যায়।
এসিডিটি/ গ্যাসট্রিক/ অম্বল কি?
আমাদের পাচনতন্ত্রে হাইড্রোক্লোরিক এসিড বিদ্যমান। এটি আমাদের খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে। এটিকে আবার মিউরিয়েটিক এসিডও বলা হয় যার রাসায়নিক সংকেত HCL। HCL জলে দ্রবণীয় এবং সেই সাথে তীব্র কটু গন্ধ যুক্ত।
এটি অত্যন্ত ক্ষয় কারি খনিজ অম্ল। তাই যেহেতু ক্ষয়কারী অম্ল আমাদের পাকস্থলিতে রয়েছে তাই পাকস্থলি ছিদ্র হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় না কারণ আমাদের পাকস্থলী অত্যন্ত শক্তিশালী আস্তরণে আবৃত ।
তবে খাদ্যনালী এর তুলনায় অনেক বেশি নমনীয় । যা এই এসিডের ক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে পারে না । তাই যখন অতিরিক্ত খাবার আমরা খেয়ে ফেলি তখন সেই খাবার উপরের দিকে উঠে আসে আর খাদ্য নালী যেহেতু নমনীয় তাই তা জালাপোড়া করতে শুরু করে।
এছাড়াও পচা-বাসী, তৈলাক্ত খাবার আমাদের পরিপাকে সমস্যা ঘটায় যার ফলে বুক জালাপোড়া করে। একে আমরা এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক বলে থাকি যা ডাক্তারি ভাষায় জি ই আর ডি বা গ্যাস্ট্রো ইসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ ।
চিকিৎসকগণ মনে করেন কোন খাবারে যদি হেলিকোব্যাক্টর পিলোরি থাকে তাহলে সেসব খাবার গ্রহণের ফলে অ্যাসিডিটি হতে পারে । এসব খাবারের মধ্যে যেমন বেশি মসলাদার খাবার ফ্যাটজাতীয়, ভাজাপোড়া ইত্যাদি ।
প্রতিনিয়ত এসব খাবার গ্রহণের ফলে গ্যাস্ট্রিক আলসার, ঘা, এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া নিয়ম অনুসরণ করলে গ্যাস্ট্রিক থেকে সহজেই মুক্তি লাভ করা সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ
এসিডিটি/গ্যাস্ট্রিক/ আলসার এর কারণ
১. অনেকক্ষণ পেট খালি রাখা।
২. ভাজাপোড়া বেশি খাওয়া।
৩. ধূমপান।
৪. খাওয়ার অনিয়ম।
৫. অতিরিক্ত মদ্যপান।
৬. দুশ্চিন্তা।
৭. অনিদ্রা।
উপরে উল্লেখিত কারণগুলোর জন্য গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা দেখা দেয়। আবার অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে বেশি পরিমাণ এন্টিবায়োটিক সেবনের ফলে আমাদের হজমশক্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি আরও প্রকট আকার ধারণ করছে।
এন্টিবায়োটিকে ঔষধ আমাদের শরীরের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। কিন্তু এই অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের জন্য কোনটি উপকারী আর কোনটি অপকারী ব্যাকটেরিয়া তা চিহ্নিত করতে পারে না। ফলে সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে থাকে।
আর আমাদের খাদ্য হজমে সাহায্য করে যেসব ব্যাকটেরিয়া তাও ধ্বংস করে ফেলে, তাই হজম শক্তি ক্রমেই দুর্বল হতে থাকে।
এসিডিটির ফলে সৃষ্ট বুকজালাপোড়ার ঘরোয়া সমাধান
দেখা যায় আমাদের একটু গ্যাসের সমস্যা হলেই ফার্মেসিতে দৌড়াই এবং কোন একটা গ্যাসের ঔষধ নিয়ে এসে খেয়ে
ফেলি, এটা মোটেও ঠিক নয়। তাই দেখা যায় প্রথমে যে ওষুধ সেবন করি তা আর কিছুদিন পরে কাজ করে না।
আবার ঔষধের মাত্রা বৃদ্ধি করতে হয়। এভাবে আমরা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলছি। কিন্তু কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে আমরা এই সমস্যা থেকে খুব সহজেই পরিত্রান পেতে পারি।
পেঁপে খেয়ে এসিডিটি দূর করি
পেঁপে গ্যাসের সমস্যা দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই এই সমস্যার জন্য কাঁচা পেঁপে খাওয়া যেতে পারে। যা এসিডিটির জন্য খুব কাজে আসবে। তবে এটা একদিন খেলেই যে সমস্যা সমাধান তেমন নয় কিন্তু। বেশ কিছুদিন পেঁপে খেলে বুকজালা পোড়ার সমস্যা দূর হবে।
কলা খেলৈ হবে এসিডিটি দূর
কলাকে বলা হয় প্রাকৃতিক এন্টাসিড। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা হজমে সাহায্য করে। প্রতিদিন একটা কলা খেলে বুক জ্বলাপোড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
শুধু এই সমস্যা নয় অন্যন্যা নানা রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় কলা খেলে। তাই খাদ্য তালিকায় কলা রাখুন। তবে বাজারে যেসব কলা কৃত্তিম উপায়ে পা্কানো হয় যতদূর সম্ভব তা এড়িয়ে চলাই ভাল।
তুলসী পাতায় হবে অম্ল দূর
তুলসী পাতা পেটে শ্লেস্মার মত পদার্থ উৎপাদনে সহায়তা করে। এটি বায়ুনাশক হিসেবে কাজ করে। গ্যাস
হলে ৫ থেকে ৬ টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খান, এতে অ্যসিডিটি কমবে।
তবে টানা কিছুদিন নিয়ম করে খেতে হবে, তবেই দেখবেন আস্তে আস্তে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
মৌরি
খাবার পর কিছু মৌরি চিবিয়ে খান গ্যাসের সমস্যা হবে। বদহজম ও পেট ফাঁপা এর ক্ষেত্রেও মৌরি দারুণ কার্যকর।
রাতে এক গ্লাস পানিতে কয়েকটা মৌরি দানা ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে খালি পেটে পান করুন। আর
এভাবে টানা কিছুদিন খেলে দেখবেন বুক জ্বলাপোড়া আর করছে না।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে বুঝবেন আপনি ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী?
এলাচ
এলাচ হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । এটি অতিরিক্ত গ্যাস বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। তাছাড়া এলাচ এর জন্য সুন্দর একটা
গন্ধ তৈরিী হয় যা চমৎকার। এলাচ মুখের রুচিকেও বৃদ্ধি করে।
ঠান্ডা দুধ
ঠান্ডা দুধ খেলে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম এসিডিটি তৈরিতে বাধা দেয়।
আদা
বিট লবণের সাথে আদা কুচি খেলে অত্যন্ত ভালো ফল পাওয়া যায়।
পানি পান করা
এক গবেষণায় দেখা গেছে আমরা খাবার গ্রহণের সময় বা খাবার খাওয়ার পর সাথে সাথে পানি পান করি, যে কারনে বুকজালাপোড়া করে। তাই ডাক্তারের উপদেশ খাবার গ্রহণের বিশ মিনিট পূর্বে ও খাবার গ্রহনের পরের
বিশ মিনিটের মধ্যে পানি পান করা যাবে না।
আর খাবার গ্রহণের মাঝে তো পানি পান করাই যাবে না। খাবার খাওয়ার অন্তত বিশ মিনিট পর পানি পান করতে হবে। এইভাবে টানা দুইমাস পানি পানের অভ্যাস করলে অবশ্যই বুকজালা পোড়ার সমস্যা থাকবে না। আর এই পদ্ধতিটি
খুবই কার্র্যকরি।
আমি নিজে বুকজালাপোড়ার সমস্যাই ছিলাম। এই নিয়মে পানি পান করে এখন আল্লাহ রহমতে সুস্থ। তাই যাদের এই সমস্যা আছে তাদের কে আমি ব্যক্তিগতভাবে বলবো এই নিয়মে অন্তত কিছুদিন পানি পান করেই দেখুন। ইনশা্ল্লাহ সমাধান পাবেন।
জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন
রাতে খাওয়ার পর সাথে সাথেই ঘুমাতে যাওয়া উচিত নয়। অন্তত এক থেকে দুই ঘন্টা পর ঘুমাতে যাওয়া উচিত, সম্ভব হলে কিছু সময় হাঁটুন।
অধিক ভুরিভোজন থেকে বিরত থাকুন। অল্প অল্প করে সময় নিয়ে আহার করুন। প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করুন।
আর এইভাবেই নিয়ম করে চলতে পারলে অল্প কিছুদিনের মাঝেই বুক জ্বলাপোড়া সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশা করা যায়।
খাদ্যে ভেজাল সমস্যা যদি দূর করা যেতো তবে হয়তো আমাদের ঔষধ নির্ভরতা অনেক আংশে হ্রাস করা যেতো।
Bohu try korew hocce na…