আমরা কমবেশি সবাই জানি, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এর মাধ্যমে একজন ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের শর্করা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।যদি ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সবজি আর্টিকেলটি অনুসরণ করে আপনি জীবনযাপন করেন সেক্ষেত্রে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা অনেক সহজ হবে।
যে কোন সবজি কী ডায়বেটিস রোগী খেতে পারে? উত্তর হবে না। আপনাকে অবশ্যই খেতে হবে উচ্চ ফাইবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত সবজি।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সবজি বিস্তারিত
ফেললেন তো ঝামেলায়!! এখন কোথায় খুঁজে পাব বেশি ফাইবার আর কম (GI) যুক্ত সবজি ? আমি এমনিতেই গরিব মানুষ।
আরে ভাই চিন্তা নাই আপনার হাতের কাছের সবজি গুলো খেলেই হবে। চলেন ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সবজি সম্পর্কে ডিটেইলস জেনে নেই।
তবে অবশ্যই মাথায় রাখবেন শুধু সবজি খেলেই কিন্তু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে না তার পাশাপাশি আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, সঠিক ওষুধ খেতে হবে, সুষম খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং জীবনধারার পরিবর্তন করতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ে যেকোনো ধরনের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আমাদের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজে। ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় ফল ।এই আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন আপনার অনেক কাজে আসবে।
কেন সবজি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
ভাই আপনি তো জানেনই ডায়বেটিস রোগীর সবথেকে বড় সমস্যা, হঠাৎ করে রক্তের শর্করা বেড়ে যাওয়া আর ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা কমে যাওয়া।
সবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা শর্করা শোষণকে ধীর করে দেয় এবং ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। তবে অবশ্যই কম যুক্ত (GI) সবজি হতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সবজি: ১৪টি
১.করলা (Bitter gourd)
করলার নাম শুনেই চোখ কপালে উঠলো?! ভাই একটু কষ্ট করে তো খেতেই হবে কারণ করলাতে আছে ক্যারান্টিন এবং পলিপেপ্টাইড-পি যা প্রাকৃতিক ইনসুলিনের মত কাজ করে। করলা রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে ও সাহায্য করে।
২. পালং শাক (Spinach)
পালং শাক শীতকালীন সবজি হলেও এখন মোটামুটি প্রায় সময়ই পাওয়া যায়। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও পুষ্টি উপাদান। ফাইবা সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় এটি রক্তের শর্করার মাত্রা ধীরে বাড়ায়। আপনি যদি প্রতিদিন
পরিমান মত পালং শাক খেতে পারেন তাহলে আপনার হজম শক্তি বাড়বে ,আবার ইনসুলিনের কার্যকারিতা ও বাড়বে। পালং শাক পছন্দ করে না এমন বাঙালি মনে হয় নেই। কি বলেন?!!
৩. কুমড়া ( Pumpkin)
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কুমড়া এবং এর বীজ একটি ফরজ খাবার। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। শুধু তাই নয় কুমড়ার বীজে আছে অনেক প্রোটিন এবং উপকারী চর্বি যার রক্তের শর্করা মাত্রা কমায়।
তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন কুমড়ার মজার মজার রেসিপি।
সবজির বর্ণনা শুনতে শুনতে আপনার কি হঠাৎ করে ফল খেতে ইচ্ছে করছে ? তাহলে আমাদের ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল নামক পেজ থেকে জেনে নিতে পারেন কোন ফল গুলো আপনার খাবার উপযোগী ।
৪. ঢেঁড়স (Okra)
শীতের সকালে ঢেঁড়স ভর্তা জাস্ট অসাধারণ। ভাই জানেন ঢেঁড়সের শ্লেষ্মা যুক্ত অংশ রক্তের শর্করা শোষণ কি ধীর করে দেয়। ঢেঁড়সে আছে পলিস্যাকারাইড ও ফ্ল্যাভোনয়েড, যার ফলে আপনি যদি নিয়মিত ঢেঁড়স খান তাহলে আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৫. টমেটো (Tomato)
ডায়াবেটিস যখন হয়েছে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সালাদ তো রাখতেই হবে। টমেটোর সালাদ বেশ মজার। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন ও ভিটামিন সি যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেত সাহায্য করে সাথে সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আবার হার্টের জন্যও ভালো।
*গোপন কথা :সামান্য চিকেন, একটু চিনা বাদাম, বা কাজুবাদাম, শসা এবং টমেটো দিয়ে সালাদ তৈরি করে খেয়ে দেখতে পারেন দারুন মজা।
৬. শশা (Cucumber)
শসা আপনার শরীরের জলীয় উপাদান ধরে রাখতে সাহায্য করবে এবং শর্করার মাত্রা ঠিক রাখার পাশাপাশি শরীরকে সতেজ রাখবে। তাহলে আর দেরি কেন আজ থেকেই শসা খাওয়া শুরু করুন, যৌবন ধরে রাখুন।
৭. বাঁধাকপি (Cabbage)
শীতকাল মানেই বাঁধাকপিময় জীবন। কিন্তু বর্তমানে প্রায় সব সময়ই বাঁধাকপি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সবজিটি প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় আপনার হজমের সাহায্য করবে, শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিও ঘটাবে।
৮. ব্রোকলি (Broccoli)
ব্রোকলি বিদেশি সবজি হলেও বর্তমানে আমাদের দেশে এর বেশ নাম ডাক আছে। আপনি কি জানেন সালফোরাফেন নামক উপাদান ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের শর্করার মাত্রা কমায়?!
আর ব্রোকলিতে আছে প্রচুর পরিমাণে সালফোরাফেন। আপনি যদি নিয়মিত ব্রোকলি খান তাহলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
৯. লাউ (Bottle Gourd)
“সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী”। লাউ খেয়ে বৈরাগী হবেন কিনা জানিনা, তবে ডায়াবেটিসটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। লাউ রক্তের শর্করা কমায়, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
১০. মুলা (Radish)
মুলার নাম শুনলে অনেকে নাক সিটকায়, আবার অনেকেরই প্রিয় একটি সবজি। মূলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং ভিটামিন সি, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপ ও কমায়।
১১. কাঁচা পেঁপে (Raw papaya)
উচ্চ ফাইবার এবং কম (GI) যুক্ত হওয়ায় কাঁচা পেঁপে শর্করা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে, পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
১২. ক্যাপসিকাম Bell peppers
ক্যাপসিকামে আছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও ফাইবার যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
১৩. মেথি শাক (Fenugreek leaves)
মেথি শাকের ফাইবার এবং প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য করে।
১৪. রসুন (Garlic)
রসুন ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে এছাড়াও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক ।
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত এবং ফাইবার সমৃদ্ধ সকল সবজি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বেশ কাজের।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সবজি এর মধ্যে কোন কোন গুলো খেতে হবে তা তো জানলেন। কি কি খাবার আপনার জন্য হারাম তা জানতে চাইলে আমাদের ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা নামক পেইজটি ভিজিট করতে পারেন।
সবজির নাম তো জানলাম। কিন্তু কখন, কিভাবে, কতটুকু খাব ?
লাখ টাকার প্রশ্ন করেছেন ভাই!! তাহলে চলেন উত্তর জেনে নেই।
আরো পড়ুন:
- ডায়বেটিস চিরতরে নিরাময়: সম্ভাবনা ও বাস্তবতা
- চোখের নিচে কালো দাগ কোন রোগের লক্ষণ
নিয়মিত খাদ্য তালিকায় ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সবজি
ডায়াবেটিসের সাথে যখন কোলাকুলি করেই ফেলেছেন ,তখন আর কি করা প্রতিদিন ২-৩ কাপ সবজি তো খেতেই হবে। ডায়াবেটিস রোগীর ঘনঘন ক্ষুধা পায়, সবজিতে বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকায় সবজি খেলে ক্ষুধা কম লাগে।
এই সমস্ত সবজি কিভাবে আপনার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করবেন তার একটা ধারণা দেই চলেন:
**সকালের নাস্তা: শসা, টমেটো, ঢেঁড়স দিয়ে সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন।
**দুপুরের খাবার: পালং শাকের তরকারি বা ব্রোকলি দিয়ে তৈরি স্যুপ বা তরকারি। আমাদের বাঙালি মায়েদের কাছে পালং শাকে রেসিপির কিন্তু শেষ নেই ।ডাল ,চচ্চটি, তরকারি, ঝোল সবকিছুতেই পালং শাক বেশ মজা। কি জিভে জল চলে এসেছে?
*বিকেলের স্নাক্স: এক বাটি টমেটো বা টমেটোর জুস বা কুমড়ার বীজ। তবে আমার মতেই টমেটো জুস এর থেকে টমেটো চিবিয়ে খাওয়াই ভালো।
*রাতের খাবার: বাঁধাকপি, মুলা, লাউ ইত্যাদি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি দিয়ে তৈরি তরকারি। রাতে এক বাটি লাউ ডাল খেয়ে দেখবেন পেট ও ভরবে মন ও ভরবে।
টিপস: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু সহজ উপায়
১.কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত খাবার: আপনি কি ডায়াবেটিস রোগী? তাহলে অবশ্যই আপনাকে কম (GI) যুক্ত খাবার গুলো খেতে হবে। কারণ কম (GI) যুক্ত খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
২. প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম: ব্যায়াম করার ফলে শরীরের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা ফরজ।
৩.ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ধীরে ধীরে হজম হয় ফলে রক্তের শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি রোধ করে। যার ডায়াবেটিস আছে সেই বুঝে ভাই ঘনঘন খিদা কারে কয়!! আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলছি ফাইবার যুক্ত খাবারগুলো খান, দেখবেন ক্ষুধা অনেকটাই কমে আসবে।
চলেন আপনার জন্য সবজির একটি খাদ্য তালিকার টেবিল তৈরি করি।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সবজি: টেবিল
খাবারের সময় | খাদ্যের নাম | পরিমাণ |
সকালের নাস্তা | শসা ও টমেটোর সালাদ | ১ কাপ |
দুপুরের খাবার | পালং শাকের তরকারি | ১ কাপ |
রাতের খাবার | ব্রকলি বা বাঁধাকপি বা লাউ এর তরকারি | ১ কাপ |
শেষ কথা
কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো না। আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সবজি খেয়েই ভাবেন সব ওকে তাহলে সমস্যা। আপনি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত এবং উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ হাতের নাগালের সবজিগুলো বেছে নিন এবং পরিমাণ অনুযায়ী গ্রহণ করুন।
ডায়াবেটিসের মতো পাগলা ঘোড়াকে হাতের মুঠায় রাখতে চাইলে ৩টি কাজ আপনাকে করতেই হবে । কাজ৩ টি হলো: নিয়মিত ব্যায়াম , স্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ঔষধ নিয়মিত গ্রহণ।
আপনার উপযোগী সঠিক সবজি নিয়মিত খাবারের মাধ্যমে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখুন, সুস্থ থাকুন সুন্দর জীবন যাপন করুন।
ডায়াবেটিস সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য আপনি নিশ্চিন্তে আমাদের ওয়েবসাইট এর অন্যান্য পেজগুলো ঘুরে আসতে পারেন।