হাম রোগ, হাম রোগ কেন হয়,কারণ, হাম রোগের লক্ষণ, হাম রোগের প্রতিকার ও চিকিৎসা সহ নানা বিষয অনেকে জানতে চান। তাই হাম রোগ নিয়ে একটা সার্বিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।
হাম রোগ কি এর কারন , লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা
হাম রোগ নিয়ে খুব একটা আতঙ্ক হওয়ার দরকার নেই। তবে এটা যেহেতু বাচ্চা বা শিশুদের মধ্যে বেশী হয তাই অনেকেই একটু বেশী ঘাবড়ে যায়। তাই আজকে হাম আতঙ্ক দূর করতেই হাম রোগ কি, কেন হাম রোগ হয়, এর কারণ, জটিলতা, ছোয়াচে কি না, চিকিৎসা কি তা নিয়ে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছি।
হাম রোগ ও হাম রোগের জীবাণুর নাম
হাম একটা ভাইরাসজনিত অত্যন্ত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। হাম ভাইরাসের নাম মিজল্স ভাইরাস; হামকে মিজল্স বলে। আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে এই রোগের বিভিন্ন নাম আছে যেমনঃ ফ্যারা, লুতি, নুনতি ইত্যাদি ।
হাম রোগের ইংরেজি কী/ হাম রোগ in English
·
হাম এর ইংরেজি হল Measles। এটি একটি নাউন বা বিশেষ্য শব্দ।
হাম রোগে কারা আক্রান্ত হয়
সাধারণত শিশুরাই এ রোগের শিকার হয় বেশী। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা দেয়। আমাদের দেশে এবং
অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে হাম এবং হাম রোগের জটিলতা শিশু মৃত্যুর একটা বড় কারণ। একবার হাম হলে সাধারণত দ্বিতীয়বার এ রোগ হয় না।
হাম রোগ এর কারন/ হাম রোগ কী ছোঁয়াচে
হাম রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, সর্দি, কাশি ও কফ থেকে আরেকজনের মধ্যে রোগের জীবাণু বিস্তার লাভ করে। মূলত ভাইরাসের আক্রমন থেকেই হাম রোগ হয়ে থাকে।
এখন ভাইরাস যে কাওকে আক্রমন করতে পারে। তবে যারা অপুষ্টি ও নোংরা পরিবেশে বসবাস করে তাদেরই এই রোগ হতে পারে।
হাম রোগ কী ছোঁয়াচে
হ্যাঁ, হাম মারাত্মক ছোঁয়াচে ব্যাধির মধ্যে অন্যতম। হাম আক্রান্ত ব্যক্তির কাচে গেলে তাকে স্পর্শ করলে , তার ব্যবহৃত কোন কিছু ব্যবহার করলে,
যেমন- গামছা, বিছানা, চাদর, কাপড়, খাবার কোন জিনিস ইত্যাদি ব্যবহারে হাম অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই হাম আক্রান্ত রোগীর কাছে বিশেষ করে শিশুদের যেতে দেয়া উচিৎ নয়।
আরো পড়ুনঃ শিশুর ওজন কম হলে করণীয় কী ও কম ওজনের শিশু
হাম রোগের সুপ্তকাল
শরীরে এই রোগের জীবাণু প্রবেশ করার পরে ৯ থেকে ১২ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণগুলো দেখা দেয় । গড় সুপ্তকাল হলো ১০ দিন ।
হাম রোগের লক্ষণসমূহ
১. হঠাৎ খুব জ্বর হয়, চোখ-মুখ ছলছল করে, নাক দিয়ে সর্দি ঝরে, চোখ দিয়ে পানি পড়ে । এ অবস্থা ৩ দিন চলে ।
২. হামের রেশ বা দানা ওঠার এক থেকে দু’দিন আগে মুখের ভিতরে সাদা লবণদানার মত গোটা দেখা যায় ।
এর চারদিক লাল হয়ে থাকে। এ দানাকে কপলিক স্পট (Koplik’s spots) বলে। কপলিক স্পট এ রোগের নিশ্চিত লক্ষণ ।
৩. গাঢ় লাল রং-এর হাম রেশ বা দানা প্রথমে কানের পিছনে, কপাল ও মুখে দেখা দেয় । এ সময় কপলিক স্পট মিলিয়ে যায় ।
৪. কয়েক ঘন্টার মধ্যে সারা শরীরে এ রেশ বা দানা ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকগুলো রেশ তাড়াতাড়ি একত্র হয়ে যায়।
৫. ৩ থেকে ৬ দিনের মধ্যে এই রেশ বাদামী রং ধারণ করে এবং আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়। এই অবস্থায় সূক্ষ্ম খোসার মত চামড়ার উপরের অংশ খসে পড়ে ।
হাম রোগের জটিলতা
এ রোগ যদিও মারাত্মক নয় কিন্তু রোগের জটিলতাগুলো মারাত্মক ।
১. কানপাকা,
২. নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কো- নিউমোনিয়া,
৩. স্বরযন্ত্রের প্রদাহ (লরিনজাইটিস),
৪. ফেরেনজাইটিস,
৫. ডাইরিয়া,
৬. মস্তিস্কে প্রদাহ (এনকেফালাইটস),
৭. কর্নিয়ার ঘা,
৮. হার্টফেলিওর (স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালনে ব্যর্থতা)
এইরকম আরও নানা সমস্যাগুলো দেকা দিতে পারে।
এ রোগের চিকিৎসা
১. হাম রোগী বা সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদের জ্বর হলে তাকেও আলাদা রাখা উচিত।
২. জ্বর ভাল না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম দরকার।
৩. স্বাভাবিক খাবার একটু করে বার বার খাবে।
৪. জ্বর খুব বেশি হলে কাপড়-চোপড় সম্ভবমত খুলে শরীর আলগা করে দিতে হবে এবং সমস্ত শরীর মুছিয়ে দিতে হবে।
হাম রোগের প্রতিকার/ এ রোগের ক্ষেত্রে করণীয়
- ·
প্রতিটি শিশুকে হামের টিকা একবার দিলে সাধারণত এ রোগের আশংকা থাকে না । শিশুদের হাম রোগীর কাছ থেকে আলাদা রাখতে হবে ।
- 2. হামের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শিশু সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং পরিণতি বহুলাংশে মারাত্মক হতে পারে ।
- · অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর হাম হলে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব জনিত রোগ রাতকানা থেকে অন্ধত্ব বেশি হতে দেখা যায়। এভাবে আমাদের দেশের শিশুরা অন্ধ হয়ে অল্পদিনের মধ্যে অকালে প্রান হারাচ্ছে।
- · হামে আক্রান্ত হবার আগের মাসে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো না হলে, হামে আক্রান্ত শিশুকে তার মূল্যবান চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে ।
- ·
শিশু প্রাকৃতিকভাবে হামের প্রতিষেধক নিয়েই জন্মলাভ করে এবং এই রোগের বিরুদ্ধে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা ৮ মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকে ।
- ·
৯ মাস পূর্ণ হলে শিশুকে হামের টিকা এক ডোজ দিতে হবে।
- ·
একবার হামের টিকা যদি কেউ গ্রহণ করে তাহলে সাধারণত এ রোগের পুনরবার সম্ভাবনা থাকে না ।
এখানে আমরা হাম রোগ কি ,কেন হয়, এর কারণ , লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা নিয়ে একটা মুটামুটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনার উপকারে আসবে। হাম রোগ নিয়ে আরও বিস্তারিত লিখবো অন্য আর এক লিখায়।
Good post