স্কার্ভি রোগ কেন হয়, কারন কি, প্রতিকার কি , কি করলে এই রোগ ভাল হবে? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই থাকতে পারে। আজকের লিখায় স্কার্ভি সম্পের্কে একটা ধারণা পেয়ে যাবেন।
স্কার্ভি মূলত ভিটামিন-সি এর অভাব জনিত সমস্যা। আমাদের শরীরের বহুবিধ কাজের জন্য প্রতিদিন ভিটামিন-সি খাওয়া অত্যাবশ্যক। এই ভিটামিনের অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। স্কার্ভি রোগ খুব একটা চোখে পড়ে না।
কিন্তু এই রোগ দেখা দেয়ার আগেই অনেক অসুবিধা দেখা দেয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই অভাবকে সুপ্ত অভাবজনিত সমস্যা বা প্রান্তিক অভাবজনিত সমস্যা বলে ।
স্কার্ভি কেন হয় এর কারণসমূহ
১. ভিটামিন-সি খাবারের সাথে কম গ্রহণ করার জন্য হতে পারে ।
২. গর্ভবতী, স্তন্যদাত্রী মা এবং ধূমপায়ীদের চাহিদা বেড়ে যেয়ে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
৩. পেটের অসুখের জন্য অন্ত্র থেকে শরীর যদি ঠিকমত পুষ্টি গ্রহণ করতে না পারে ।
8. অপুষ্টি সমস্যা, লিভারের রোগ, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস রোগ, ক্যানসার ও মদ্যপায়ীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি
দেখা যায় ।
৫. দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকলে বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হোষ্টেলে অবস্থানকারীদের মধ্যে এ সমস্যা দেখা দেয় ।
৬. দীর্ঘদিন অসুখে ভুগলে কিংবা অরুচিতে ভুগে ভিটামিন-সি কম গ্রহণ করার ফলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
৭. বিভিন্ন অসুখে টক ফলমূল বর্জনের ফলশ্রুতিতে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
স্কার্ভি রোগের লক্ষণসমুহ
প্রান্তিক অভাব বা সুপ্ত অভাবজনিত সমস্যার লক্ষণসমূহ যদিও সুনির্দিষ্ট নয়, তবুও নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা যায় ঃ
১. ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয় ।
২. শরীর দুর্বল লাগে এবং শরীরে ক্লান্তি দেখা দেয় ৷
৩. কাজ করার ক্ষমতা কমে যায় ।
8. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়।
৫. ঘা শুকাতে দেরী হয় ।
৬. ভিটামিন-সি এর অভাবে অন্ত্র থেকে শরীর আয়রন কম গ্রহণ করে এবং রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে ।
৭. মাড়ি ফুলে যেতে পারে ।
আরো পড়ুনঃ ফোড়া শক্ত হলে করণীয়?
স্কার্ভি রোগের প্রতিকার ও চিকিৎসা
স্কার্ভি রোগের চিকিৎসা হিসেবে ডাক্তার প্রতিদিন ১০ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি খেতে বলেন। আর বেশীর ভাগ রোগীই দুই বা তার কম সময়ের মধ্যেই ভাল হয়ে যায়।
আর প্রতিকার এই একটাই যদি স্কার্ভি ধরা পড়ে তাহলে ভিটামিন সি খেতে হবে। সাধারণত আমাদের দেশে সি-ভিট পাওয়া যায়। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানী বিভিন্ন নামে ভিটামিন সি বিক্রি করে থাকেন। আমরা কম বেশী সবাই তা চিনি এবং খেয়েছিও। ভিটামিন সি গ্রহণই একমাত্র প্রতিকার এর উপায়।
ভিটামিন-সি এর উৎস
প্রধানত টক ফলমূল ভিটামিন-সি এর প্রধান উৎস। টক নয় এমন ফলমূল, শাক ও তরকারিতেও ভিটামিন-সি পাওয়া যায়।
নীচে বিভিন্ন খাবারের ১০০ গ্রামে ভিটামিন-সি এর পরিমাণ দেয়া হলোঃ
খাবারের নাম |
প্রতি ১০০ গ্রাম
|
আমলকি |
৪৬৩ মিলিগ্রাম |
পেয়ারা |
২১০ মিলিগ্রাম |
জাম্বুরা |
১০৫ মিলিগ্রাম |
লেবু |
৯২ মিলিগ্রাম |
আপেল |
৮৪ মিলিগ্রাম |
পেঁপে |
৫৭ মিলিগ্রাম |
কমলালেবু |
৪০ মিলিগ্রাম |
জলপাই
|
৩৯ মিলিগ্রাম
|
টমেটো
|
৩১ মিলিগ্রাম
|
আঙুর
|
২৯ মিলিগ্রাম
|
কাঁচামরিচ |
১২৫ মিলিগ্রাম |
সাজনা শাক |
২২০ মিলিগ্রাম |
শালগম পাতা |
১৮০ মিলিগ্রাম |
ধনে পাতা |
১৩৫ মিলিগ্রাম |
উচ্ছে |
৯৬ মিলিগ্রাম |
করলা |
৬৮ মিলিগ্রাম |
ফুলকপি |
৯১ মিলিগ্রাম |
বাঁধাকপি |
৪২ মিলিগ্রাম |
সরিষা শাক |
৪৯ মিলিগ্রাম |
হেলেঞ্চা |
৭৮ মিলিগ্রাম |
মূলা শাক |
১৪৮ মিলিগ্রাম |
পালংশাক |
৯৭ মিলিগ্রাম |
মূলা |
৩৪ মিলিগ্রাম |
চিচিংগা |
২৫ মিলিগ্রাম |
স্কার্ভি দূর করার জন্য যেসব খাবার খাওয়া উচিৎ এবং যেসব খাবারে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে তার একটা তালিকা
তুলে ধরা হল। এই সব খাবার গ্রহণ করে সুস্থ থাকবে সকলে এবং থাকবে স্কার্ভিমুক্ত।