খুব কষ্ট নিয়ে অথবা খুব কৌতুহল নিয়েই ধবল বা শ্বেতী রোগ কেন হয় তা জানতে চাচ্ছেন। ধবল রোগ কী, শ্বেতী রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা, প্রতিকার ইত্যাদি নিয়ে এখন আলোচনা করবো।
আমাদের পরিবার বা আশেপাশে এমন অনেকেই রয়েছেন যারা শ্বেতী রোগে আক্রান্ত। এই রোগটি তেমন শারীরিক যন্ত্রনা না দিলেও মানুষের কথা এবং গ্রহনযোগ্যতার জন্য রোগটি একটা বিরাট সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। একজন ধবল রোগীকে সমাজে বেশ আড় চোখেই দেখা হয়।
তাই সমস্ত কিছু বিবেচনা করে আজকে জানাবোঝা পরিবারের এই লিখার মাধ্যমে আপনি শ্বেতী রোগের কারণ , লক্ষণ, কেন শ্বেতী রোগ হয়, এর হোমিও, এ্যলোপ্যাথি, প্রাকৃতিক চিকিৎসা, ভবিষ্যৎ গবেষণা, করণীয়, বর্জনীয়সহ নানা বিষয় জানতে পারবেন। আশা করি এই একটি লিখার মাধ্যমে আপনি ধবল রোগ কেন হয় তা তো জানবেনই সেই সাথে সম্যক একটা ধারণাও পাবেন।
শ্বেতী রোগ কেন হয় বিস্তারিত
শ্বেতী রোগ কেন হয় তা নিয়ে গবেষক ও বিজ্ঞানীদের গবেষণা চলছে দীর্ঘ দিন থেকেই। সেই গবেষণার ফলশ্রুতিতেই ধবল রোগ এর নানা কারণ উঠে এসেছে যা পর্যায়ক্রমিকভাবে এখন আলোচনা করবো। যে সব কারণ উল্লেখযোগ্য তার মধ্যে অন্যতম হল জিনগত কারণ বা বংশানুক্রমিক কারণ।
জিনগত বা বংশানুক্রমিকভাবে শ্বেতী রোগ হয়
শ্বেতী রোগীদের অধিকাংশরই এই রোগ হয় জিনগত কারণে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে শতকরা ৩০ ভাগ রোগীর এই রোগ এর কারণ হলো জিনগত বা বংশগত। সাধারণত রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন মানুষদের যদি এই রোগ
থেকে থাকে তাহলে তার পরবর্তী প্রজেন্মর মধ্যে এই রোগ হয়ে থাকে।
এমন অসংখ্য রোগী আমরা দেখতে পাবো যার বাবা, মা ,দাদা,দাদী বা পরিবারের অন্য কারও পূর্বেই এই রোগ ছিল
যে কারণে তার এখন হয়েছে।
এমনকি এই রোগ দুই্ বা তিন জেনারেশন পরেও কারও মধ্যে হতে পারে। অর্থাৎ যদি আপনার দাদার বাবা এই রোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে আপনারও এই রোগ হতে পারে। হয়ত আপনার বাবা বা দাদার এই রোগ হয় নি কিন্তু আপনার হয়েছে। তাই এই রোগের অন্যতম কারণ হলো বংশগত কারণ ।
অটোইমিউনো সিস্টেম এর সমস্যা বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সমস্যা
অটোইমিউনো রোগএর কারণে শ্বেতী রোগ হয়ে থাকে। আপনি কী জানেন যে অটোইমিউনো সিস্টেমটা কী?
আমরা সকলেই জানি আমাদের শরীরে স্বংয়ক্রিয়ভাবেই ক্ষতিকারক বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, বা এমন কিছু যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর তা শরীরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। আর এই বিষয়টাকেই আমার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউনো সিস্টেম বলে থাকি।
কিন্তু অনেকের ইমিউনোসিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করে না। সে তার নিজের টিস্যুগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। যেখানে দেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়া বা ভাইরাসকে ধ্বংস করার কথা তা না করে সে নিজেই নিজের টিস্যুকে ধ্বংস করে। আর যে কারণে আমারা নানা রোগে ভুগে থাকি।
যেমন, কিছু সাধারণ অটোইমিউন রোগের মধ্যে রয়েছে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, লুপাস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, টাইপ ১ ডায়াবেটিস এবং সিলিয়াক ডিজিজ, শ্বেতী বা ত্বকের অন্যান্য সমস্যা। আর এইসব রোগের উপসর্গ হিসেবে জয়েন্টে ব্যাথা, প্রদাহ, ক্লান্তি, হজমে সমস্যা ইত্যাদি।
তবে কেন অটোইমিউনো রোগ হয়ে থাকে তার কোন যথাযথ কারণ এখনও পাওয়া যায় নি। অনেকের ধারণা জেনেটিক, কেউ মনে করেন ঔষধ এর রিএ্যাকশন আবার কেউ কেউ বলেন রাসায়নিক এর প্রভাব। তবে শ্বেতী রোগের পেছনে যে অটোইমিউনো রোগ দায়ী তা অনেকাংশেই বলা যায়। তাই অলসতা দূর করে দ্রুত ডাক্তার এর পরামর্শ নেয়া উচিৎ।
অটোইমিউনো সিস্টেম এর মেলানোসাইটের উপর প্রভাব (শ্বেতী রোগ)
শ্বেতীরোগ একটি অটোইমিউন রোগ হিসাবে বিবেচিত হয়। যেখানে ইমিউন সিস্টেম ভুলকরে মেলানোসাইটকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে। আর মেলানোসাইটএইভাবে অটোইমিউন এর প্রভাবে তার কার্যকারিতা হারায় বা তালগোল পাকিয়ে ফেলে। তাই মেলানোসাইট সঠিকভাবে মেলানিন তৈরী করতে পারে না।
মেলানিন এর মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে শ্বেতী রোগ হয়
আমাদের শরীরের নানা অংশ ( চুল, ত্বক, চোখ, চামড়া ইত্যাদি) যে কাল হয় তার কারণ হলো মেলানিন নামক একপ্রকার রঞ্জক। আর এটি মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে উৎপন্ন হয়। মানুষের শরীরে মেলানিন এর পরিমান নির্ভর করে জাতি, এরিয়া, পরিবেশ ইত্যাদির উপর।
যার শরীরে মেলানিন এর মাত্রা যত বেশী সে তত কাল হয়ে থাকে। আর মেলানিন এর মাত্রা যার কম হয় সে তত ফর্সা হয়ে থাকে। যখন মেলানিন এর মাত্রা স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেক কমে যায় তখনই মূলত ধবল বা শ্বেত হয়ে যায়।
সাধারণত পুরো শরীরে মেলানিন এর একটা সমতা থাকে। কিন্তু শ্বেতী রোগীদের ক্ষেত্রে সেই মাত্রা স্বাভাবিক থাকে না। দেখা যায় যে হয়ত হাতে মেলানিন এর মাত্রা একরকম কিন্তু গালে এর মাত্রা অনেক কম। আর তখন গালই শ্বেত বা ধবল হয়ে যায়। আর তখনই আমরা বলি যে তার গালে শ্বেত রোগ হয়েছে।
পরিবেশগত কারণ
শ্বেতীরোগ বা ধবল হতে পারে পরিবেশগত নানা কারণে। তবে সবার ক্ষেত্রে যে সমানভাবে একই কারণে সব কাজ করবে তা কিন্তু না। একেক জনের একেক কারনে বা পরিবেশের একেক উপাদান বা প্রভাবের কারণে শ্বেতী রোগ হতে পারে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হলোঃ
· ত্বকে আঘাত, কেটে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়া থেকে অটোইমিউন এর শুরু হতে পারে। আর অটোইমিউন এর কারনে মেলানোসাইট এর কার্যকারিতা বন্ধ হতে পারে। যার ফলে ধবল রোগ হতে পারে। তাই ত্বকে আঘাত, পুড়ে যাওয়া বা কেটে যাওয়া থেকে সাবধান। তবে এই কারণে খুব কমই ধবল রোগ হয়ে থাকে।
·
কিছু শিল্প- রাসায়নিক বা বিষাক্ত পদার্থ লিউকোডার্মার জন্য দায়ী হতে পারে। তাই শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে এইসব ক্ষতিকারক রাসায়নিক থেকে দূরে থাকতে হবে।
·
অতিরিক্ত রোদে পোড়া বা সানবার্ন এর কারনে শ্বেতী রোগ হতে পারে। আসলে যারা ধবল রোগে আক্রান্ত তারা যদি রোদে যায় তাহলে এই রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। তাই শ্বেতী রোগীদের ধবল রোগ থেকে মুক্তি পেতে হেলে অতিরিক্ত রোদে পোড়া যাবে না।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হল প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন প্রজাতির (ROS) উত্পাদন এবং শরীরের ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্যহীনতার দ্বারা চিহ্নিত একটি অবস্থা। গবেষকরা বলেন যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস লিউকোডার্মার বিকাশে ভূমিকা পালন করতে পারে।
ROS-এর বর্ধিত মাত্রা মেলানোসাইটের উৎপাদনে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। যার ফলে মেলানোসাইটের উৎপাদনে অস্বাভাবিকভাবে তারতম্য দেখা দেয়।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে পরিবেশগত দূষণকারীর সংস্পর্শে আসা, কিছু ওষুধ, ধূমপান, বাজে খাদ্য-অভ্যাস (জাঙ্কফুড) এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা।
নিউরাল ফ্যাক্টর
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্নায়বিক নানা সমস্যা বা রোগ এর কারনে শ্বেতরোগ হতে পারে। বিশেষ করে নানা স্নায়বিক ব্যাধি, স্নায়ুর নিঃশেষ বা ধ্বংস লিউকোডার্মার সমস্যায় প্রভাব ফেলে।
ত্বকের নানা স্নায়ুগুলো সরাসরি মেলানিন এর উৎপাদন এবং বিতরণ নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ত্বকের স্নায়ুগুলোর মধ্যে যখন ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় তখন মেলানিন এর বিতরণ ও উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই শ্বেতরোগ হওয়ার পেছনে নিউরাল ফ্যাক্টর কোন না কোনভাবে দায়ী থাকে।
আমাদের আরো কিছু আর্টিকেল পড়ুন
হরমোনাল পরিবর্তন
মানুষের শরীরে নানা হরমোন পরিবর্তনের কারণেও লিউকোডার্মা হয়ে থাকে। এখন হরমোন পরিবর্তন নানা কারনে হতে পারে। বিশেষ করে বিভিন্ন রোগ এর কারনে হয়ে থাকে। যেমন, থাইরয়েড এর সমস্যার জন্য মানুষের হরমোনের পরিবর্তন দেখা যায়।
আর এই পরিবর্তন মেলানোসাইট এর উপর প্রভাব ফেলে মেলানিন এর তারতম্য করে দিতে পারে। আবার গর্ভবস্থায় কিছু মহিলাদের হরমোন এর উঠানামার ফলে কারও কারও শ্বেতী রোগ হতে পারে। আবার শ্বেতী রোগে আক্রান্ত মহিলার শ্বেতীরোগ বেড়ে যেতে পারে।
ভাইরাল ইনফেকশন
কিছু ভাইরাস এর আক্রমন এর কারনেও ধবল রোগ হতে পারে। যেমন, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV), হারপিস সিমপ্লেক্স, হেপাটাইটিস সি ইত্যাদির ইনফেকশনের কারনে অটোইউম প্রতিক্রিয়া কারও কারও মাঝে দেখা দিতে পারে। আর এসব ভাইরাস মেলানোসাইটকে ধ্বংস করে এবং পরবর্তীতে ত্বকের ক্ষয় সৃষ্টি করে।
মানসিক চাপ
এমন কোন রোগ নেই যে মানসিক চাপ তার উপর প্রভাব ফেলে না। তার মধ্যে ধবল রোগের উপরও প্রভাব ফেলে। তবে
সরাসরি মানসিক চাপের কারনে শ্বেতীরোগ হয় না কিন্তু যাদের শ্বেতীরোগ আছে তাদের রোগ বহুগুনে বেড়ে যেতে পারে।
স্ট্রেস-ইমিউনো সিস্টেম মানুষের সমস্ত স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। যে কারনে মানসিক চাপ বেড়ে গেলে কারও কারও মেলানিন উৎপন্ন হতে সমস্যা তৈরী হতে পারে। আর যাদের শ্বেতীরোগ রয়েছে তাদের মধ্যে সমস্যা আরও বেড়ে বা প্রকট হতেত পারে।
পুষ্টির অভাব
বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে যে, কিছু পুষ্টির অভাবেও শ্বেতীরোগ হতে পারে। ভিাটামিন, খনিজ, এ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাব যেমন, ভিটামিন ডি, ভিাটামিন বি ১২, জিঙ্ক ইত্যাদির অভাবে শ্বেতীরোগ হতে পারে।
এই পুষ্টিগুলি মেলানোসাইটের সঠিক কার্যকারিতা এবং সামগ্রিক ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখা উচিৎ যে, শুধুমাত্র এই পুষ্টিগুন এর অভাব এককভাবে দায়ী নয় শ্বেত রোগের পেছনে। এরসাথে অন্যান্য কারনও কাজ করে।
ত্বকের টিস্যু কাজ না করা
আমাদের ত্বকে নানা টিস্যু রয়েছে। এইসব টিস্যু নানা কাজ করে থাকে। কোনটি স্পর্শ বা আঘাত এর খবর ব্রেইনে পৌঁছে দিতে কাজ করে আবার কোনটি ঘাম নিঃসরনে কাজ করে। এইসব টিস্যু বিভিন্ন বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে থাকে। আর যখন এই টিস্যু কাজে ব্যাঘাত ঘটলেও শ্বেত রোগ হতে পারে।
শ্বেতী রোগ হতে পারে ঔষধ এবং চিকিত্সা এর কারণে
কিছু ঔষধ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে লিউকোডার্মা বা শ্বেতরোগ হতে পারে। অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ যেমন কর্টিকোস্টেরয়েড এবং ইমিউনোসপ্রেসেন্টস।
এছাড়া কখনও কখনও ক্যান্সারের চিকিত্সায় কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপি দেয়ার ফলেও ডিপিগমেন্টেশন হতে পারে। কোন মেডিসিন যদি আপনার উপর শ্বেতরোগের প্রভাব ফেলছে বলে মনে হয় তাহলে অবশ্যই আবার আপনার ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করে ঔষধ সেবন করুন।
আমরা এতক্ষণ শ্বেতীরোগ কেন হয় জানলাম। এখন যে জিনিসগুলো নিয়ে আলোচনা না করলেই নয় তা হল শ্বেতী রোগ কী, লক্ষণ কী, কারণ কী, শ্বেতী রোগের শ্রেণীবিভাগ ইত্যাদি।
শ্বেতী রোগ কী
শ্বেতী মানে সাদা। মানুষের শরীরে চামড়া কখনও কখনও দুধেরমত সাদা হয়ে যায়। আর তখন একে শ্বেতী রোগ বলে। যা মানুষের শরীরে আলাদা করে বোঝা যায়। শরীরের স্বাভাবিক রঙ বা বর্ণ থেকে আলাদা হয়ে সাদা একপ্রকার এর দাগ/প্রলেপ/রেশ পড়ে। আর এটাই শ্বেতী রোগ।
সাধারণত আমাদের শরীরে রঙ বা বর্ণ নিয়ন্ত্রনকারী যে মেলানিন হরমোন রয়েছে তা যখন উৎপন্ন হতে পারে না বা মারা যায় তখনই শরীরে সেইসব জায়গা সাদা হয়ে যায়। আর এটাই হল শ্বেতী রোগ। আসলে ভাল করে সংজ্ঞা দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। কেননা আমাদের আশেপাশে এমন লোকের সংখ্যার অভাব নেই।
শ্বেতী রোগ meaning in English
শ্বেতী রোগ এর English- Noun- Leucoderma and White Leprosy or vitiligo.
লিউকোডার্মার আরও কিছু সমার্থক শব্দ বা Synonym দেয়া হল
- · White patch Disease.
- · Hypopigmention.
- · Milk spot.
- · Depigmention.
- · Piebald Skin.
- · Achromia
- · Leukomelanosis.
- · Depigmented Macules.
- · Poliosis.
- · Leukoderma
- · White Discoloration.
English এ কিছু লিউকোডার্মার সিনোনেইম জানার পর এখন চলুন জেনে নেই কয়েকটি এন্টোনেইম ।
- · Moles
- · Birthmarks
- · Freckles
- · Melasma
- · Nevus
- · Lentigines.
- · Hyperpigmentation.
শ্বেতী রোগ এর শ্রেণীবিভাগ
আয়ুর্বেদ এর চিকিৎসা অনুসারে শ্বেতীরোগকে ৩ শ্রেণীতে ভাগ কারা হয়েছ।
১. ভাটাজা লিউকোডার্মা
- · এটি ত্বকের নিঃসরণকারী ক্ষত তৈরী করে।
- · সাধারণত এই প্রকারের শ্বেত রুক্ষ পৃষ্ঠের হয়ে থাকে।
- · বেশ শুষ্ক প্রকৃতির হয়ে থাকে।
- · বর্ণে কিছুটা লালাচে হয়ে থাকে। সাদা হলেও কিছুটা লাল ভাব থাকে।
২. পিত্তজ্ লিউডার্মা এর প্রকৃতি
- · এই প্রকারের লিউকোডার্মা তামাটে বর্ণের হয়ে থাকে।
- · জ্বলন্ত সংবেদন
- · চুলের যে ফলিকল ক্ষতি হয় তার জন্য এই প্রকারের শ্বেতরোগ দায়ী থাকে।
৩. কাফজা লিউকোডার্মা
- · এই প্রকার ধবল হলে চুলকানি হবে। যেখানে যেখানে শ্বেত থাকবে সেখানেই চুলকাবে। আর যদি রোদ লাগে তাহলেতো আরও বেশী করে চুলকাবে।
- · এর বর্ণ পুরোপুরি সাদা হয়ে থাকে। লালচে, তামাটে বর্ণ না হয়ে একেবারে স্বচ্ছ সাদা হয়ে থাকে। এর দাগ গুলো বেশ ভারী ও ঘন হয়ে থাকে।
শ্বেতী রোগ এর কারণ
শ্বেতী রোগ এর মূল কারন হলো ত্বকের রঙ নিয়ন্ত্রকারী মেলানোসাইট কোষে যে মেলানিন নামক একপ্রকার রন্জ্ঞক পদার্থ থাকে তা সঠিকভাবে তৈরী হতে পারে না। মেলানিন এর তারতম্য এর জন্যই শ্বেতী রোগ হয়ে থাকে।
পুরো শরীরে যেখানে যেখানে মেলানিন এর পরিমাণ কম থাকে সেখানে শ্বেতী হতে দেখা যায়। মূলত কারণ হচ্ছে মেলানিন এর পরিমান কমে যাওয়া। আার এই মেলানিন নানা কারণে কমতে পারে যা আমরা উপরে আলোচনা করেছি।
আরো পড়ুনঃ
শ্বেতী রোগ এর লক্ষণ
আমাদের মাঝে অনেকেই মনে করেন যে শরীরে সাদা দাগ দেখা গেলেই শ্বেতী রোগ হয়েছে। কিন্তু এই ধারণা ভুল। কেননা এমন আরও ৫/৬ টি রোগ রয়েছে যেগুলো দেখা দিলেও শরীরের বিভিন্ন অংশ সাদা হতে দেখা যায়।
যেমন, ছুলি বা শরীরে নানা অংশে খুশকী ইত্যাদি। অনেকে মনে করেন খুশকী শুধু আমাদের মাথায় হয় কিন্তু না এই ধারণা ঠিক নয়। আমাদের শরীরে অন্যান্য জায়গায়ও খুশকী হতে পারে। এখন আসি তাহলে কীভাবে বুঝতে পারবো যে শ্বেতী রোগ হয়েছে।
- · শ্বেতী রোগ দুধের মত ধবধবে সাদা হবে।
- · গায়ের বিভিন্ন জায়গা যেমন, মুখ, গাল, চোখ, গলা,বুক, কান, নাক হাত, চুল, যৌনাঙ্গ ইত্যাদিতে হতে পারে।
- · দেখে মনেই হবে চামড়ার ভেতর থেকে সাদা হওয়া শুরু করেছে।
- · প্রাথমিক অবস্থায় শরীরের একটি জায়গা থেকে শুরু হবে পরে আস্তে আস্তে শরীরে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যাবে।
- · অল্প বয়সেই মাথার চুল, ভ্রু,চেখের পাপড়ি ইত্যাদি জায়গা সাদা হতে শুরু করতে পারে।
- · সাদা অংশ আস্তে আস্তে ছড়িয়ে যাওয়া।
- · নারী-পুরুষ এমন কী শিশু বাচ্চারও এই রোগ হতে পারে। তবে আমাদের দেশে মেয়েদের এই রোগ বেশী হতে দেখা যায়।
মোটামুটি এসব লক্ষণই বলে দেবে যে এটি শ্বেতী রোগ কি না। তবে সবচেয়ে ভাল হয় নিকটস্ত কোন ডাক্তারকে দেখালে
এবং সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু করলে।
বিশ্বে কত মানুষ শ্বেতী রোগ এই রোগে আক্রান্ত
বর্তমান বিশ্বে প্রায় দশ কোটির বেশী মানুষ শ্বেতী রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ রোগী জেনেটিকেললি তারা এই রোগটি পেয়েছেন। আর বাকী যে ৭০ শতাংশ রোগী তারা অন্যান্য নানা কারণে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
সবচেয়ে বেশী এই রোগে আক্রান্ত রোগী আফ্রিকাতে এবং ভারতে বেশী। এছাড়া কম বেশী সব দেশেই শ্বেতীরোগী পাওয়া যায়।
শ্বেতীরোগ দিবস কবে?
২৫ জুন তারিখকে বিশ্ব শ্বেতীরোগ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সালের আমেরিকার ভি. আর ফাউন্ডেশান নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রথম এই দিবস পালন করে।
মজার ব্যাপার হলো প্রখ্যাত শিল্পী মাইকেল জ্যাকসান এই রোগে ১৯৮৬ সাল থেকে আক্রান্ত ছিলেন। তাই তার মৃত্যুবার্ষিকীকে স্মরণ ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই দিনটিকে শ্বেতীরোগ দিবস হিসেবে বাছাই করা হয়।
কোন বয়সের মানুষের শ্বেতী রোগ হয়ে থাকে?
সাধারণত নারী-পুরুষ ,শিশু সহ যে কারও হতে পারে। এই রোগ যেকোন বয়সে হতে পারে। তবে দেখা যায় যে, ২০ বছর বয়স এর পর থেকে এই রোগ বেশী হয়। আবার কারও কারও শেষ বয়সে এসে দেখা দেয় শ্বেতী রোগ।
শ্বেতী রোগ কী ছোঁয়াচে?
না শ্বেতী রোগ ছোঁয়াচে নয়। তবে অনেকেই এক ছোঁয়াচে মনে করেন। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান একে ছোয়াচে রোগ হিসাবে আখ্যা দেয় নি। সেই সাথে অনেকেই মনে করেন যে কোন মহিলার যদি এই রোগ থাকে তাহলে কী তার বাচ্চা হতে কোন সমস্যা হবে কী না?
এর স্পষ্ট উত্তর- বাচ্চা হওয়ার সাথে শ্বেতী রোগ এর কোন সম্পর্ক নেই। আবার মায়ের শ্বেতী রোগ আছে বলে যে সন্তানেরও হবে এই রোগ তারও কোন ভিত্তি নেই।
শ্বেতীরোগ কেন হয়, শ্বেতী রোগ এর কারণ, লক্ষণ, কার হবে কার হবে না, বয়সভেদে শ্বেতী রোগ ইত্যাদি নানা বিষয় এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি এখন শ্বেতী রোগ
সম্পর্কিত বিষয়গুলো পরিষ্কার। এরপর শ্বেতীরোগ এর প্রতিকার, শ্বেতীরোগের চিকিৎসা, শ্বেতীরোগের অন্যান্য বিষয় এখানে আলোচনা করা হবে পরের আর্টিকেলের মাধ্যমে। তাই নিজেকে জেনেবুঝে সুস্থ থাকতে জানাবোঝা পরিবারের সাথেই থাকুন।
sheti rog nie onk kicu janlam.ja akdom notun…amr jonno