পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসে কেন? সাধারণত এই বিষয়টি আমরা কখনো ভাবি না। স্বাভাবিক ভাবেই নেই। তবে পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসার একটি সাইনটেফিক ব্যাখ্যা রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেই।
পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসে কেন:
এই প্রশ্নটা প্রথম মাথায় আসে যখন আমার ভাইয়া বিয়ে করেছিল। ভাইয়ার বিয়ের সপ্তাহ খানীকের মাথায় ঘটেছিল সেই মজার ঘটনা। আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম।
মনে মনে ভাবলাম বাসায় গিয়েই নতুন ভাবীর সাথে একটা জমপেশ দাবা খেলা হবে । আমি আমার এলাকায় দাবায় বরাবরই চ্যাম্পিয়ান কিন্তু ভাবীর সাথে চারবার দাবা খেললাম তিন বারই হারলাম। তাই এখন বড় চ্যালেন্জ্ ভাবীকে হাড়াতে হবে।
মনে মনে কিছু পরিকল্পনাও করছিলাম কিভাবে খেললে জয়ী হওয়া যাবে। যেই না বাসায় ঢুকলাম দেখি
ভাবী চোখ মুছতে মুছকে রান্না ঘর থেকে বের হলো। আমার বুঝতে আর বাকী নাই কি হয়েছে রান্না ঘরে।
(পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসে কেন)
আমার মা যে কড়া মেজাজের, হয়ত ১৯ থেকে ২০ হয়েছে আর ভাবীর বংশকে দাড়িপাল্লায় তুলিয়ে ছেড়েছে।
কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ভাবীর কাছে যাই।
(পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসে কেন)
ভাবী আমাদের টিউবয়েলের পানিতে চোখ, মুখ ধোয়ার চেষ্টা করছে। আমি গিয়ে টিউবয়েলে চাপ দিলাম, ভাবী মুখ ধুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো থেঙ্কইউ ব্রো। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে ভাবী? উত্তরে আসলো কই কি হয়েছে?
দেখলাম মা আর আমার বোন খুব হাসাহাসি করছে রান্না ঘরে। মনে মনে ভাবলাম ভাবীর মত এমন কুল মেজাজের মানুষের সাথেও মায়ের এমন রাগ করতে হয়? মাকে জিজ্ঞেস করলাম মা কি হয়েছে?
(পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসে কেন)
ভাবী কান্না করছে কেন? মা বললো তর ভাবীকে গিয়েই জিজ্ঞেস কর। এই বলে হাসতে লাগলো আর বললো মেয়েদের কাজ শিখতে হয়, না হলে সংসার চলে না।
বোন বললো ভাবী পেয়াজ কাটতে গিয়ে কান্নাকাটি শুরু করেছে।
আমি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে ভাবীর রুমে গেলাম- ভাবী কি হইছে তোমার? মা কি কিছু বলছে? ধমোক দিছে কোন কারণে? ভাবীও হেসে দিল আর বললো অনেক বকা দিছে। এখন চল একটা দাবা ম্যাচ হয়ে যাক। নাকি হাড়বা দেখে খেলবাই না?
আমি রেগে গেলাম মনে মনে, ভাবীকে মা কেন বকা দিল? ভাবী আমার অবস্থা দেখে বললো এই বোকা ছেলে
আমি নতুন বউ মা বকবে কেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম তাহলে কান্না করছিলে কেন?
(পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসে কেন)
ভাবী এইবার হা-হা-হা করে অট্ট হাসী দিয়ে বলে আরে আমি পেয়াজ কাটছিলাম। মা বললো পেয়াজ কাটতে,
তাই চোখ দিয়ে পানি চলে আসছিল। ভাবী বুজতে পারলো আমি বিশ্বাস করছি না। আমি আবার বললাম ভাবী সত্যি করে বল কি হয়েছে? মা কি নিয়ে বকা দিলো?
ভাবী এইবার হাসতে হাসতে আমাকে নিয়ে রান্না ঘরে গেল। গিয়ে মাকে বলছে মা সৈকত আমাকে জিজ্ঞেস
করছে আপনি কেন আমাকে বকা দিযেছেন? আর আমি কেন কান্না করছি?
এই কথা শুনে মা, ভাবী, বোন তারা সবাই আমাকে নিয়ে হাসতে শুরু করলো। আমার ছোট বোন বলে ভাইয়া
তুইতো ছিলি না , মা ভাবীকে মাইরও দিছে। মা বলে ঐ মজা করেও মিথ্যা বলতে নেই। মজা করে মিথ্যা বললেও তা মিথ্যাই হয়।
তারপর আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম আরে কি হইছে বলবাতো আমাকে? মা বললো আরে কি হবে তুই গিয়ে হাত-পা ধুয়ে পড়তে বস গিয়ে, সন্ধ্যা হয়ে গেল।
(পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসে কেন)
আমি কিছুই বুঝতেছি না। ভাবী তখন বললো , আরে পেয়াজ কাটছিলাম তাই কান্না করে দিছি। তুমি যাও পড়া শেষ করলে রাতে আর একটা দাবা ম্যাচ হবে। দেখবো আজকে কে জিতে?
মা বলে সারা দিন দাবা খেলা নিয়ে বাহাদুড়ি করিস আর বউমার সাথেই পারিস না। বড় বড় কথা খালী।
ভাবী বলে মা ও ভালই খেলে। মা বলে তাহলে খালী হাড়ে কেন।
ওরে দাবা খেলাটা শিখায়া দিও। তখন এইরকম স্বাভাবিক অবস্থা দেখে বুঝতে পারলাম যে আসলেই তাহলে ভাবী পেয়াজ কেটেই কান্না করছে। অন্য কিছু হলে তো একটু হলেও রাগ অভিমান চলতো।
(পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসে কেন)
আমি সরাসরি আমার রুমে গিয়ে একটা বই হাতে নিলাম। যে বইতে প্রাকৃতিক নানা বিষয়ের গুনাগুন,
উপাদান ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেয়া আছে। কিন্তু অনেকক্ষণ খোঁজার পরও পেঁয়াজ নিয়ে কিছু পেলাম না।
ভাবী কিছুক্ষণ পর চা নিয়ে আমার রুমে ঢুকলো। চা-গরম, চা- গরম বলে আসতেই দেখে আমি বই নিয়ে
ঘাটাঘাটি করছি। আর এই দেখে ভাবী বলে পেঁয়াজ কাটলে কেন চোখ দিয়ে পানি পড়ে তা আমি তোমাকে বলছি। বই লাগবে না।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কেমনে বুঝলে আমি এইটাই খুঁজছি? ভাবী বলে আরে আমিতো মানুষের মন
পড়তে পারি। তাই বুঝে ফেলি। তুমি যে জেরিন নামের একজন কে পছন্দ কর তাও কি বলবো তোমাকে?
ও আল্লাহ- ভাবী এই ব্যাপার কেমনে জানে। হায় হায়!!! ভাবী এইসব মিথ্যা কথা। কে বলছে তোমাকে এইসব? বল কে বলছে? ভাবী কেমনে জানলো নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করতে থাকলাম। তখন উনী বলে শোন আগে পেঁয়াজ কাটলে কেন চোখে পানি আসে তা শোন।
(পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসে কেন)
হ্যা, বল বল ভাবী এইটাই খুঁজছিলাম ? কিন্তু তুমি কিভাবে বুঝলে আমি এটা খুঁজছিলাম? আচ্ছা আগে
বল।
শোন, পেঁয়াজের মধ্যে অসংখ্য কোষ থাকে। কেউ যখন পেঁয়াজ কাটে তখন সেই কোষ গুলো থেকে কিছু রাসায়নিক পদার্র্থ বের হয়ে আসে। তখন সালফেনিক এসিড তৈরী হয়।
আর এই সালফেনিক এসিড তৈরী হয় অ্যামিনো অ্যাসিড ও সালফোক্সাইড এর সমন্বয়ে। এই সালফেনিক এসিড আবার কোষে থাকা বিভিন্ন এনজাইম গুলোর সাথে ভালবাসা ও মাইরপিট ( বিক্রিয়া) করে।
ভাবী তোমার কথা শুনে না হেসে পারলাম না। মাইরপিট ও ভালবাসা একে বলে বিক্রিয়া। আমার রসায়ন এর স্যার এর সাথে বিষয়টা শেয়ার করবো। স্যার খুব মজা পাবে।
আচ্ছা বল পড়ে কি হয়? আর এই ভালবাসায় ( বিক্রিয়া) তাহারা তৈরী করে সালফারের একটি উদ্বায়ী যৌগ যার নাম প্রোপেনিয়াল এক্স- অক্সাইড। আর তারপর সেই যৌগ বাতাসে ভেসে ভেসে আমার চোখে এসে পড়েছিল । বুঝলেন মশাই? তারপর তারপর?
(পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসে কেন)
পরে চোখের জলীয় অংশের সাথে মিশে আবারও বিক্রিয়া শুরু করে এবং তৈরী করে সালফিউরিক এসিড। আর চোখ সেই এসিডকে বের করে দিতেই পানি বের করে। আর এসিডের জন্যই জ্বালাপোড়া শুরু করে চোখে।
এখন বুঝলা কেন কান্না করছিলাম তখন?
ভাবী তুমিতো একদম পাক্কা শিক্ষক। হ্যা, এখন পড়তে বস। পরে দাবা খেলতে বসবো।
আচ্ছা ভাবী সত্যি করে বলবা , তোমাকে জেরিনের ব্যাপারে কে বলছে? ভাবী হেসে বললো- আমাকে মান্দু ভুতে বলে গেছে। যাও এখন পড়, অন্য সময় বলবো। আচ্ছা ঠিক আছে ম্যাডাম পড়তে বসলাম ,পড়ে বলতে হবে কিন্তু।
(পেঁয়াজ কাটলে চোখে পানি আসে কেন)
আমিও আমার স্যারের সাথে শেয়ার করব।