আমরা অনেকেই বহু টাকা খরচ করে নিজেদের প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র কিনে থাকি। অথচ নিজের একটু ইচ্ছা
শক্তি আর সৃজনশীলতা দিয়েই কিন্তু সেইসব জিনিসপত্র ঘরেই তৈরি করে ফেলতে পারি খুব সহজে। তেমনি একটি
প্রয়োজনীয় জিনিস হলো গয়নার বাক্স। তাই আপনি ব্যবসা করে উপার্জন অথবা নিজের প্রয়োজনে কম খরচেই ঝটপট তৈরি করতে পারেন গয়নার বাক্স।
গয়নার বাক্স |
সেই গয়নার বাক্স আবার বিক্রি যোগ্য হিসেবে তৈরী করে ব্যবসাও করা যেতে পারে। এতে করে উভয় দিকে লাভবান হওয়া যাবে। যেমন নিজেই নিজের তৈরি জিনিস ব্যবহার করার মাধ্যমে পাবেন আত্মতৃপ্তি আর অন্যদিকে ব্যবসা করে জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারবেন। চলুন দেখি কত সহজে আর কম খরচে সহজেই তৈরি করতে পারি গয়নার বাক্স।
কাগজ দিয়ে গয়নার বাক্স তৈরীর উপায়| উপকরণ
যে যে উপকরণ প্রয়োজন
- টেলিভিশন, ফ্রিজ বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক্স জিনিস কেনার পর যে শক্ত কাগজের মোড়কটি/ কাভার থাকে সেটি
- বিভিন্ন কালারেরবাঁশপাতা কাগজ। যে কয়টা কালার এর কাগজ আপনি ব্যবহার করতে চান।
- আঠা/ গাম।
- স্টেপলার পিন।
- সুই, সুতা। (যদি প্রয়োজন হয়)
- চাকু বা কেচি।
কাগজ দিয়ে গয়নার বাক্স তৈরীর উপায়| খরচ
- এই গয়নার বাক্স তৈরীর জন্য যে মূল উপকরণ লাগে আপনাকে কিনতে হবে না। প্রায় প্রত্যেকের বাসায়ই টেলিভিশন
বা ফ্রিজ বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রের ফেলে দেয়া মোড়ক/ কাভার পাওয়া যায়। সেই ফেলে দেয়া মোড়ক ব্যবহার করে তৈরি করবেন গয়নার বাক্স। - গাম- ১৫ থেকে 20 টাকা।
- রঙিন বাঁশপাতা
- কাগজ একটা ৫ টাকা করে। যদি আপনি তিনটি ব্যবহার করেন তাহলে ১৫ টাকা আর চারটি ব্যবহার করলে ২০ টাকা। বিভিন্ন কালার অনুযায়ী সেটা আপনার পছন্দের উপর নির্ভর করে। খুব বেশি হলে ৫০ টাকা।
- জড়ি
- পুতি
- খুব বেশি হলে ৫০ টাকা।
- কেচি । যা প্রায় প্রত্যেকের বাসায় রয়েছে
হাতে যদি ৭০ টাকা থাকে তাহলেই তৈরি করতে পারবেন ১ টি কাগজের গয়নার বাক্স।
কাগজ দিয়ে গয়নার বাক্স তৈরীর উপায়| প্রস্তুত প্রণালী
প্রথমে শক্ত কাগজ/মোড়ক( টেলিভিশন/ফ্রিজ) থেকে পরিমিত পরিমাণ কাটতে হবে। নিচের অংশ/পাটাতন/তল আগে কাটতে হবে।
১০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্ ৭.৫ ইঞ্চি প্রস্থে কাগজটা কাটা যেতে পারে। তারপর চারপাশের বেষ্টনী/দেয়াল দেয়ার কাগজটি ৪ ইঞ্চি করে কাটা যেতে পারে বা নিজের ইচ্ছা বা পছন্দ অনুযায়ী। চার ইঞ্চির মধ্যে হাফ ইঞ্চি পরিমাণ ভাঁজ করে ভাঙতে হবে।
চাপ দিয়ে ভালো করে ভাঙতে হবে কাগজটি যেন এটি অন্য কাগজের সাথে জোড়া লাগানো যায়। এরপর নিচের তলটির চেয়ে হাফ ইঞ্চি বড় করে বাক্স এর উপরের ঢাকনাটি কাটতে হবে। অতিরিক্ত হাফ ইঞ্চি ভাঁজ করে বেষ্টনী দেয়া এক পাশের দেয়ালের সাথে পিনাপ করে নিতে হবে অথবা গাম দিয়ে জুড়ে দিতে হবে। তবে গাম শুকানোর মতো যথেষ্ট
সময় আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। এরপর বাঁশপাতা কাগজগুলো চারপাশের দেয়াল এর সাথে আঠা দিয়ে লাগিয়ে নিতে হবে। আর সুন্দর ডিজাইনের জন্য উপরের ঢাকনার মধ্যে রঙিন কাগজগুলো লাগাতে হবে। রঙিন একটা কাগজ
উপরে ঢাকনায় দৈর্ঘ্য-প্রস্থের সমান কেটে নিতে হবে এরপর হাতে পেঁচিয়ে পাইপের মত করে নিতে হবে এবং তারপর আঠা দিয়ে ঢাকনার ওপর লাগিয়ে দিতে হবে। এইভাবে কতগুলো কাগজের পাইপ বসানো লাগে তা আন্দাজ করে নিতে
হবে। তবে ঢাকনার উপরের কিছু জায়গা ফাঁকা রাখলে তাতে ভালো করে ডিজাইন করা যাতে পারে। ইচ্ছে হলে গ্লিটার দিয়ে নিজের নাম লেখা যেতে পারে বা লেখা যেতে পারে গয়নার বাক্স। আর জড়ি ও পুতি লাগিয়ে ডিজাইন করলেও বাক্সটি হবে দেখার মত।
আরো পড়তে পারেন-কেন মানুষ প্রেম করে?
কিভাবে ব্যবসা করা যেতে পারেঃকাগজ দিয়ে গয়নার বাক্স
অনলাইনের এই যুগে পুরো দুনিয়াটা এখন হাতের মুঠোয়। যে মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়ে এই লিখাটি পড়ছেন ঠিক
সেটি ব্যবহার করে অতি সহজেই আপনি আপনার গয়নার বাক্স বিক্রি করতে পারবেন ক্রেতার কাছে।
-
ফেইসবুক পেইজ
ক্রাফট, হস্তশিল্প বা ঘরে তৈরি জিনিসপত্র ইত্যাদির নিশ বা বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে একটি ফেইসবুক পেইজ খুলে নিতে পারেন। পেইজের এমন একটি নাম দিন যেটি বলতে ও শুনতে সহজ ও প্রাঞ্জল মনে হয়। সেই সাথে নাম শুনেই যেন
বোঝা যায়, যে এই পেইজের উদ্দেশ্য কি এবং এই পেইজ কি নিয়ে কাজ করে। পেইজ এর মধ্যে গয়নার বাক্স তৈরীর ভিডিও, ছবি পোস্ট করে ক্রেতার কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন খুব সহজেই। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই জানিয়ে দিন আপনি এই
পণ্যটি বিক্রি করতে চান। কেউ আগ্রহী হলে আপনার সাথে যেন যোগাযোগ করে। তারপর ক্রেতার সাথে ফোনে কিংবা ফেসবুকে যোগাযোগ করার পর খুব সহজেই কুরিয়ার করে পণ্যটি পাঠিয়ে দিতে পারেন ক্রেতার ঠিকানায়। আর পেমেন্ট পাওয়ার জন্য বিকাশ, রকেট, নগদ সহ আরো নানা উপায় রয়েছে যা প্রায় সকলেরই জানা।
-
ইউটিউব চ্যানেল
ইউটিউব এ ভিডিও আপলোড করতে পারেন। এটি বিক্রির জন্য কিভাবে তৈরি করেছেন, কি কি লাগবে, কার কার প্রয়োজন, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তৈরি করুন ভিডিও। তারপর যাদের কেনার আগ্রহ আছে তারাই আপনার সাথে যোগাযোগ করবে আর যোগাযোগ করলে কিভাবে পণ্যটি আপনি তার কাছে পৌঁছে দিবেন, দাম কত, এই বিষয়গুলো নির্ধারণ করে ফেলুন।
- দারাজ অনলাইন শপ
দারাজ অনলাইন শপ খুলেও করতে পারেন এই ব্যবসা। এর ফলে আপনার পণ্যটি দারাজই পৌঁছে দেবে ক্রেতার কাছে।
কিভাবে দারাজ শপ খুলতে পারেন তার বিস্তারিত পাবেন ইউটিউব এ সার্চ দিলেই। যদি আপনি এমন জায়গায় থাকেন যেখানে দারাজের হাব নেই, তাহলেতো আর এই পদ্ধতি আপনার ব্যবসার জন্য নয়।
-
লোকাল বাজার
আপনি যেখানে থাকেন তার আশে পাশেই কসমেটিকের দোকানে বিক্রি করতে পারেন গয়নার বাক্স। কসমেটিকের ব্যবসায়ীকে কনভিন্স করুন এই বলে যে, এই পণ্যটি আপনার দোকানে সাজিয়ে রাখব। যদি বিক্রি হয় তখন দুজনে কথা বলে দরদাম ঠিক করে আপনি আপনার প্রাপ্য বুঝে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই নিজের পরিশ্রমের পারিশ্রমিকটা পেতে
ছাড় দিবেন না।
- আত্মীয়-স্বজন বা পাড়া-প্রতিবেশী
আমাদের আশেপাশে সৌখিন নারীদের অভাব নেই। যদি আপনি সুন্দর নিখুঁত ভাবে বক্সটি তৈরি করতে পারেন, তাহলে ঘর সাজানোর জন্য হোক কিংবা নিজের অলংকার রাখার জন্য যে কোনো সৌখীন নারী লুফে নিবে আপনার পণ্যটি। তাই আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী কে জানান দিন ও দেখান যে আপনি এত সুন্দর বক্স তৈরি করতে পারেন।
আরো পড়ুন- কত টাকা হলে সুখী হওয়া যায়?
- অনলাইনে খুঁজুন ব্যবসায়ী
যারা বহুদিন ধরে ক্রাফটের ব্যবসা করে আসছে তাদের সাথে সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক, ইমো , ইমেইল, মোবাইল
ও গুগুল) বা গুগুলে সার্চের মাধ্যমে যোগাযোগ করুন। আর তাদের সাথে আপনার যে পন্যটি আছে তা সম্পর্কে বলুন।
প্রয়োজন হলে ভিডিও, ছবি পাঠিয়ে তাদের কনভিন্স করার চেষ্টা করুন। বললেই হয়তো সবাই রাজি হবেন না আপনার পণ্য কেনার জন্য। তাই অনেকেই নক করুন কেউ না কেউ সাড়া দেবে। তখন ব্যবসা শুরু করুন ব্যবসায়ীদের সাথে। তাদেরকে আপনি পণ্য দিয়ে দিলে তারাই কাস্টমারের কাছে বিক্রি করবে আপনার পণ্য।
কত দাম হবে ও কত মুনাফা পেতে পারেনঃকাগজ দিয়ে গয়নার বাক্স
ধরুন আপনার প্রতিটি বক্স তৈরি করতে ৫০ টাকা খরচ হবে। যদিও আরো কম বেশি হতে পারে। সুন্দর করে তৈরি করলে অনায়াসে একশ থেকে দেড়শ টাকা বিক্রি করতে পারবেন আপনার বক্সটি। অবস্থানভেদে বা কাস্টমার ভেদে
আরো কম বেশী হতে পারে। ৫০ টাকা প্রতি বক্সের খরচ, আর সময় লাগবে এক ঘন্টা। প্রতিদিন যদি ৫ ঘন্টা কাজ করেন তাহলে ৫টি বক্স তৈরী করতে পারবেন। এক দিনে পাঁচটি বক্স তৈরি করতে খরচ প্রায় ২৫০ টাকা আর বিক্রি
করবেন একশ টাকা।
বিক্রি ৫০০ টাকা আর খরচ ২৫০ টাকা। তাহলে লাভ (৫০০-২৫০=২৫০) ২৫০ টাকা।
যদি মাসে ২৫ দিন কাজ করা যায় তবে (২৫০*২৫) =৬২৫০
টাকা লাভ পাবেন মাসে। যখন ব্যবসা বুঝে যাবেন তখন এর পরিধিও বাড়বে এবং আস্তে আস্তে মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। যদি মুনাফা বৃদ্ধি পায় তখন আপনি আরও লোক খাটিয়েও আপনার ব্যবসা বৃদ্ধি করতে পারেন।
সব শেষ কথা হল, যে কোন কাজ প্রথমে কঠিন হলেও লেগে থাকলে সময়ের সাথে সাথে সেটা সহজ হয়ে যায়। সেই সাথে যদি সৎ ভাবে ব্যবসায় লেগে থাকেন তবে মুনাফা নিশ্চিত। ক্ষুদ্র থেকেই বৃহৎ ব্যবসা তৈরী হতে পারে। তাই লেগে থাকলেই সফলতা আসবে। অল্প অল্প করেই জীবনের সফলতার গল্প গুলো শুরু হয়।তাই হতাশ হবেন না রিজিকের ফয়সালা করেন আল্লাহ।
পোস্ট টা খুব ভালো লাগল।
নিউ আইডিয়া