শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য শরীরচর্চা কতটুক জরুরি তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কখন এবং কতক্ষণ ব্যায়াম করা উচিৎ Best time to Exercise তাই আজকের লিখার মাধ্যমে জানব। আপনি যদি মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে শরীরচর্চা/ব্যায়াম করতে হবে।
কখন এবং কতক্ষণ ব্যায়াম করা উচিৎ বিস্তারিত
শরীরচর্চা কেবল শরীরকে ফিট রাখবে বিষয়টি এমন নয় সেই সাথে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং মানসিক অবসাদ দূর করে আপনাকে রাখবে সুস্থ। তাই যোগব্যায়াম, নৃত্য, সাঁতার, জগিং, সাইকেলিং, হাটা, জিমে যাওয়া এসব বিভিন্ন শরীরচর্চা আপনি বেছে নিতে পারেন আপনার সুস্থতার জন্য।
মূলকথা একটাই নিয়মিত ব্যায়াম করার কোনো বিকল্প নাই। তবে আপনি কখন এবং কতটুকু ব্যায়াম করবেন তা অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে। তাই এখন আলোচনা করা যাক কখন এবং কতক্ষণ ব্যায়াম করা উচিৎ?
ব্যায়ামে কি কি উপকার হয়ঃ কখন এবং কতক্ষণ ব্যায়াম করা উচিৎ
১. শরীর ভালো/ ফিট থাকে।
২. ব্যায়াম করার সময় শরীর থেকে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণ হয় যা মন মেজাজ ভালো রাখে।
৩. ব্যায়াম করলে মেটাবলিজম বাড়ে।
৪. হৃদযন্ত্র ভালো থাকে ।
৫. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৬. শরীরের রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি কমে।
৭. পেশী শক্তিশালী করতেতো ব্যায়ামের কোন বিকল্পই নেই।
প্রতিদিন কখন ব্যায়াম করা উচিৎঃ কখন এবং কতক্ষণ ব্যায়াম করা উচিৎ
কেউ বলে সকালে কেউ বলে বিকেলে কেউ বলে আবার রাতে। আবার কেউ কেউ বলবে যখন সময় পাওয়া যাবে তখনই ব্যায়াম করে নিন। আসলে কখন ব্যায়াম করা উচিত তা নির্ভর করে আপনি কখন তরতাজা থাকেন।
আর কখন আপনি সময় বের করতে পারবেন। কেননা শরীরচর্চা করলে যেহেতু শরীর ঘামে সেহেতু একটা মিষ্টি গোসল তো দিতেই হয়। তাই আগে দেখুন কখন আপনি ফ্রি থাকবেন এবং তরতাজা থাকবেন। আমাদের প্রত্যেকের শরীর ও মন আলাদা আলাদা ধরনের। কেউ সকালে খুব প্রাণবন্ত থাকে, কেউ আবার রাতে।
Read More… ক্যাস্টার ওয়েল এর ক্ষতিকারক দিকসমূহ
তাই আপনি দিনের বিভিন্ন সময় ব্যায়াম করে দেখে নিতে পারেন কোন সময়টি আপনার জন্য উপযুক্ত। তারপর নিজের একটি রুটিন তৈরি করুন এবং সেই অনুযায়ী একটা ভালো অভ্যাস তৈরি করুন শরীরচর্চার জন্য। তবে সকালে ব্যায়াম সেরে নেয়াই উত্তম।
কেননা ব্যায়াম যেহেতু মানুষের শরীর, মন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পুরোপুরি ফিট থাকার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় তাই ব্যায়াম করাটা আপনার অভ্যাসে পরিণত করে নেয়াই ভালো। এটিকে আপনার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে অপরিহার্য করে তুলুন।
আপনি যেমন প্রতিদিন খাওয়া-দাওয়া ছাড়া থাকতে পারেন না, তেমনি যদি শরীরচর্চাকে জীবনের অংশ করতে পারেন তবে আপনার সুস্থতা নিয়ে অনেকাংশেই দুশচিন্তা ছেড়ে দিতে হবে। যদি সকালে ব্যায়াম সেরে নিতে পারেন তবে সারাদিন ফুরফুরা থাকতে পারবেন।
আর সেইসাথে আবশ্যক একটা কাজ সম্পন্ন করার জন্য আর কোন চিন্তা থাকবে না। দুপুরে আমাদের শরীর এমনিতেই কাজ করতে চায় না। এর মধ্যে ব্যায়াম করলে ক্লান্তি ভাব বেড়ে যেতে পারে। আর এই সময়টাতে ছাত্র, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবীসহ সকল পেশার মানুষ কর্ম ক্ষেত্রে বা নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে।
তাই এই সময় ব্যায়াম না করে বিকেল বা সন্ধ্যার সময় ব্যায়াম করা যেতে পারে। বিকেলে বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করে একটা ভালো গোসল দিলে রাতে ফ্রেশ একটা ঘুম হয়ে যাবে। কাজের ব্যস্ততা, শরীরের মুড, ফ্রি টাইম বের করা ইত্যাদি বিবেচনা করে আপনি নিজেই আপনার উপযুক্ত সময় টা খুঁজে বের করুন। তবে সকাল কিংবা বিকেল/সন্ধ্যায় ব্যায়াম করাই উত্তম।
কতক্ষণ ব্যায়াম করা উচিৎঃকখন এবং কতক্ষণ ব্যায়াম করা উচিৎ
আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের শরীরের গঠন ভিন্ন ভিন্ন। তাই আমাদের ব্যায়াম করার সময় আমাদের শরীরের গঠনের
দিকে লক্ষ্য রেখেই কতটুকু ব্যায়াম করব তা নির্ধারণ করা উচিত। যদি কেউ আজকে ব্যায়াম করা শুরু করে এবং সে যদি আজকেই দীর্ঘ সময় টানা ব্যায়াম করে, তবে পরের দিন অসুস্থ হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
তাই আপনি ব্যায়ামের অভ্যাস করার জন্য ধীরে ধীরে শুরু করুন। আজকে ৫ মিনিট আগামীকালকে ৭ মিনিট এবং পরবর্তীতে এভাবে আস্তে আস্তে ২০ মিনিট ২৫ মিনিট ৩০ মিনিট করে সময় বৃদ্ধি করুন। আমরা সপ্তাহে সাতদিন ১০৮০ মিনিট সময় পাই সেখান থেকে আমাদের উচিত অন্তত
১৫০ মিনিট সময় ব্যায়ামের জন্য বের করা। গবেষকরা বলেছেন, প্রতি সপ্তাহে ১৫০ থেকে ৩০০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম করার উচিৎ। মাঝারি ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা, সাইকেলিং, সাঁতার কাটা, এরোবিক্স ইত্যাদি। যদি আপনি ভারী ব্যায়াম করেন তবে সেক্ষেত্রে ৭৫ থেকে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত।
ভারী ব্যায়াম হচ্ছে দ্রুত হাঁটা জিমে গিয়ে বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে ব্যায়াম করা। তাই অন্তত একদিন অন্তর অন্তর হলেও এক সপ্তাহে আমাদের উচিত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা।
আরো পড়ুনঃ কেন মানুষ প্রেম করে?
অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে যা হয়
অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। আমরা অনেকেই মনে করি জিমে গিয়ে ঘাম ঝরিয়ে বা টানা জগিং করে ব্যায়াম করলেই হয়ত ফিট থাকা যাবে। কিন্তু এই ধারণাটি একদম ঠিক নয়। তাই অনেকেই আছেন যাদের অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলে ঘাড়ে বা শরীরের পেশিতে ব্যথা হয়, আবার
অনেকের পেশী ছিঁড়ে যেতে পারে। তাই আপনি কতটুকু ব্যায়াম করবেন তা আপনার শরীরকে জিজ্ঞেস করে শরীরের উপযোগী পরিমাণ ব্যায়াম করুন। অতিরিক্ত ব্যায়াম অবশ্যই ক্ষতির কারণ। কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো অতিরিক্ত ব্যায়াম
করার ফলে হতে পারে যেমন
- · অস্থিরতা
- · ডিহাইড্রেশন
- · ক্ষুধা কমে যাওয়া
- · মেজাজ খিটখিটে হওয়া
- · হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া
- · তীব্র ক্লান্তি
- · ঘুম কম হওয়া
- · হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
- · আবার অনেকের ক্ষুধা বাড়ে এবং সে ক্ষেত্রে বেশি খাওয়া হয়ে যায়
- · এমনকি অনেক সময় হরমোনের ভারসাম্যহীনতাও দেখা দিতে পারে।
তাই পরিমিত পরিমাণ ব্যায়াম করুন যা আপনার শরীরের জন্য ভালো এবং যতটুকু আপনার শরীরের জন্য উপযুক্ত। তাই
আপনি নিজেই নির্বাচন করুন আপনি কখন এবং কতটুকু পরিমান ব্যায়াম করে নিজেকে সুস্থ ও সুন্দর রাখবেন।