সেই মানব সৃষ্টির পর থেকেই নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষ পরবর্তী প্রজন্মের জন্ম দিয়ে আসছে। বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে বৈধ উপায়ে মানুষ আসলে নিজের অস্তিত্বের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। আর সেই অস্তিত্বকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে মানুষের সংগ্রামের অন্ত নেই।
দিকনির্দশনা দিয়ে, সঠিক আর বেঠিক কাজের ভেদাভেদকে শিখিয়ে দিয়ে মানুষ তার প্রজন্মকে তৈরি করে। যেন সে আগামীর জন্য হয় মঙ্গলের বার্তাবাহক। আর সঠিক পথে নিজের প্রজন্মকে পারিচালনা করতে পারা প্রতিটি নর-নারীর অন্যতম দায়িত্ব।
আর সেই অকৃত্রিম দায়িত্ব পালনে তৎপর আমাদের মা-বাবা এবং আমরাও তৎপর হব আমাদের সন্তানদের প্রতি।
সন্তান মানুষ করতে অভিভাবক এর ভূমিকা
কিন্তু জানা-অজানা নানা কারনে অভিবাবক/ বাবা-মারা তাদের বাচ্চাকে গাইড করতে ব্যর্থ হয়।
কিন্তু একজন মানুষ যেমন আচরণ করে বা সে যে জীবনবোধ লালন করে তার অধিকাংশই তার
পরিবার থেকে পাওয়া। ছোট বেলা থেকে একটি শিশু তার পরিবারে যা যা দেখে তাই সে
শিখে। আর বিশেষ করে মা-বাবা তাকে যেমন শিখায় তেমনটাই সে শিখে।
আর এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের জানাবোঝা পরিবারের বিভিন্ন রাইটাররা নিয়মিত লিখে যাবে।
যেহেতু ধারাবাহিক ভাবে আমরা এই বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করবো, তাই সেই ধারাবাহিকতার
ক্রমানুসারে আজকে আলোচনা হবে শিশু মানুষ করতে অভিভাবক এর ভূমিকা।
একদিন এক বাংলাদেশী জাপানের রাস্তায় হাটছিলেন। তিনি চলার পথে রাস্তার এক জায়গায় হঠাৎ
ভিড় দেখতে পেলেন। বাঙালী হিসেবে স্বভাবগতভাবেই কৌতূহলী হয়ে তিনি সেই মানুষের
জমায়েত এর মধ্যে প্রবেশ করলেন।
তিনি সেখানে গিয়ে রীতিমত অবাক হয়ে দেখলেন যে, একটি ছেলের প্রশংসা করছে সবাই। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ,কি ঘটনা? তখন একজন বলল অপেক্ষা করুন বলছি। যখন এই আনন্দঘন আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো,অপর লোকটি বলল এই ছেলেটি পরীক্ষায় ফেল করেছে। তিনি শুনে অবাক হয়ে গেলেন পরীক্ষায় ফেল করেছে তা শুনে সবাই প্রশংসা করছে? এর কারণ কি?
তখন তিনি জানতে পারলেন জাপানের কালচারে আছে যে, কেউ যদি কোন খারাপ কিছুর সম্মুখীন হয় তখন তাকে তার আত্মীয়, প্রতিবেশীরা সবাই মিলে তার অতীতের ভালো দিকগুলো বা তার ভাল গুণগুলি স্মরণ করিয়ে দেয়। সবাই তাকে তখন সাহস যোগায়,যেন সে আরও দীপ্তীময় হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
জাপানিরা গবেষণা করে দেখেছেন এর ফলে পরবর্তীতে সেই ব্যক্তি অবিশ্বাস্য সফলতা বয়ে আনে।
অন্য আর একটি ঘটনা শেয়ার করি এর পর আমরা আমাদের মূল আলোচনায় ফিরে যাব। আচ্ছা
এডিসনের কথা মনে আছে?
যিনি বৈদ্যুতিক বাতি তৈরীর মাধ্যমে পৃথিবীকে শতকোটি মাইল এগিয়ে নিয়েছিলেন। তার শিক্ষক তার মাকে কি চিঠি দিয়েছিল? আর মা এডিসনকে কি বলেছিল? আমরা হয়ত কমবেশী সবাই সেই ঘটনা জানি,তারপরও একটু মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।
টমাস আলভা এডিসন এর শিক্ষক তার মাকে চিঠিতে জানায় আপনার বাচ্চা একটা অপদার্থ তাকে
দিয়ে লেখাপড়া হবে না। আমরা তাকে স্কুলে রাখবো না। তার জন্য অন্য ছাত্ররাও মেধাশূন্য হয়ে যেতে পারে। তাই এডিসনকে স্কুল অবাঞ্চিত ঘোষণা করছে।
মা এই চিঠিটি পড়ে অনেক কাঁদলেন কিন্তু এডিসনকে বললেন না। তিনি বললেন তোমার মত
মেধাবী ছাত্রকে পড়াশোনা করানোর মতো যোগ্যতা এ স্কুলের কারও নেই। তাই তোমার শিক্ষক
তোমাকে অন্য কোনো ভাল স্কুলে ভর্তি করার জন্য বলেছেন।
এরপর এডিসন নিজেকে চিনতে পেরেছিলেন এবং নিজের প্রতিভা মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এডিসন তার মায়ের মৃত্যুর পর আলমারিতে রাখা এই চিঠিটি খুঁজে পেয়েছিলেন।
যে কারনে তিনি অনেক কান্নাকাটি করেছিলেন এবং নিজে নিজেকে বললেন, মা তোমার সেই অনুপ্রেরণা আমাকে আজ সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। এই দুটি ঘটনা আমাদেরকে কি কিছু শিখায়? অভিভাবক এর সামান্য একটা কথা বা একটা ঘটনা সন্তানের জীবনে কতবেশী প্রভাব ফেলে তার উদাহরণ এই ঘটনা দুটি।
শিক্ষার প্রতি আগ্রহঃ
শিশুকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। একজন শিশু স্কুলে যাওয়ার আগে তার পরিবার থেকে শিখে। মা-বাবা যদি শিক্ষার গুরুত্ব না বোঝায় তাহলে কেউ তাকে শিক্ষাগ্রহনের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারবে না। তাই আমাদের প্রথম উচিৎ হলো শিক্ষার প্রতি সন্তানের আগ্রহ জন্মনো।
২০১৮ সালে একবার আমি বই মেলায় বই এর স্টলে কাজ করছিলাম। ফুটফুটে একটা বাচ্চা আমাকে বললো আঙ্কেল আপনার কাছে টম এন্ড জেরির গল্পের বই আছে।
আমি বললাম না তো মা, আমার কাছে তো এমন বই নেই। বাচ্চাটা এতই সুন্দর যে কেউ দেখলেই আদর করতে চাইবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম মা তুমি কিসে পড়?
পাশে থেকে মেয়েটার বাবা বলছে আম্মু তুমি বল না কেন তুমি ভিকারুননেসায় পড়। বল বল,
আঙ্কেলকে বল। মেয়েটা বাবার কথার কোন উত্তর না দিয়ে বললো – আঙ্কেল আপনার কাছে ডরিমন এর কোন বই আছে?
আমি বললাম আমার কাছেতো ডরিমন এরও বই নেই। বাচ্চাটিকে বললাম তুমি শিশুদের জন্য যে বই এর দোকানগুলো আছে সেখানে যাও। ও তার বাবাকে বলছে বাবা চল।
তখন বাবাটি আমার স্টলে থাকা শিশুদের একটি গল্পের বই বের করলো- বললো রিদিয়া তুমি এই বইটা নাও। এটা ভাল গল্পের বই।
রিদিয়া কোনভাবেই এটা নিবে না। সে কার্টুন এর ছবিযুক্ত বই নিবে। বাবাটি ধমক দিয়ে বললো আমি
বলছি তোমাকে এটা নিতে নাও এটা। মেয়েটির মুখটা কাল হয়ে গেল। তখন আমার ক্যাশ
কাউন্টারে থাকা
একটি চকলেট দিয়ে বললাম শোন রিদিয়া তুমিতো বড় হচ্ছো। তাহলে তুমি এখন গল্পের বই পড়। কার্টুনতো বাচ্চারা পড়বে। একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো ঠিক আছে আঙ্কেল। বাবা-মেয়ে বই নিয়ে চলে গেল।
এখানে দুটি বিষয় নিয়ে বলতে চাই, প্রথমত মেয়ের আগ্রহতো কার্টুন এর বই । কিন্তিু বাবাটি ভাবছে যে আমি তাকে একটা ভাল গল্পের বই কিনে দিচ্ছি তাকে তো আমি ভাল জিনিসটাই কিনে দিচ্ছি। এটা বাবার চিন্তা।
আর মেয়েটি ভাবছে বাবা আমার ভাললাগার মূল্যায়ন করছে না। সমস্যাটা এখানেই, আমরা যারা অভিবাবক তারা ভাবি আমিতো আমার সন্তানকে সবচেয়ে ভালটাই দিচ্ছি। কিন্তু আমরা সন্তানের আগ্রহটা বুঝতে চাই না।
আর যদি বোঝাতেও যাই তাও সেটা ধমকের সুরে। একটু মূল্যায়ন কিন্তু ছোট্ট শিশুটিও আশা করে। একটি ছোট বাচ্চাও বোঝে কে তাকে মূল্যায়ন করে আর কে তাকে অবজ্ঞা করছে।
বাবাটি বার বার বলানোর চেষ্টা করাচ্ছিল যেন মেয়েটি বলে সে ভিকারুননেসা স্কুলে পড়ে। আচ্ছা
যারা শহরের ভাল স্কুলে পড়ে না, তারা কি জীবনে ভাল কিছু করে না? আবার আপনার বা আমার
সন্তান যদি খুব ভাল কোন প্রতিষ্ঠানে পড়েও তাতে কি এমন আছে বাহাদুরি করার।
রিদিয়া কিন্তু আমার সাথে তার স্কুলের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিল। কারণ সে বুঝতে পারছিল যে এটি
বলা বোধ হয় ঠিক হবে না । কারণ তার বাবাতো বলেই দিয়েছে যে সে ভিকারুননেসায় পড়ে তাহলে সে আবার কেন বলবে।
এই যে অহমিকা এটাই আমাদের অসংখ্য বাবা-মা দের চাওয়া। আশে পাশে আমাদের অধিকাংশ বাবা- মায়েদের অন্যতম ভাল লাগা হলো আমার সন্তান এই রকম ভাল ছাত্র, এই স্কুলে চান্স
পেয়েছে।
আমার মেয়ে গণিতে ১০০ তেকে ১০০ পেয়েছে। ইংরেজিতে পেয়েছে ৯৫ বাংলায় ৯৮। তারপর আবার বলবে ইংরেজিতে খারাপ করেছে। এই বিষয়গুলো দেখে কি মনে হয়?
এই বাবা-মা গুলো সন্তানদের পড়াশোনার প্রতি খুব সচেতন? আসলে তা মোটেই না। তারা সন্তানের ব্যাপারে বলার মধ্য দিয়ে নিজেদের জাহির করে। আমার সন্তান এই আমার সন্তান সেই। এইসব বলে নিজেদের আত্মতৃপ্ত করে।
আবার বাসায় এসেই মাইর । তুই ইংরেজিতে ৯৫ পাইলি কেন? তর বন্ধু হাসিব ইতো পেয়েছে ১০০।
তোকে কি আমি কম খাওয়ায় নাকি কম পড়ায়? কি মনে হচ্ছে ছেলেকে ক্লাস ওয়ানে ১০০ থেকে
১০০ পাওয়ানোর সাথে সাথে ডাক্তার হিসেবে তৈরী করে ফেলবেন?
বাবা যেমন রিদিয়াকে ভিকারুননেসাতে পড়ে বলে কিছুটা বাহাদুরি করে বলানোর চেষ্টা করছিল। বড়
দুঃখ লাগে এই মেয়েটাও একদিন অহংকারটা খুব ভাল করে রপ্ত করে নিবে। কেননা বাবা যেমন টা শিখাচ্ছে তেমনটা শিখাইতো স্বাভাবিক।
আমরা আমাদের সন্তানদের আগ্রহ নিয়ে তৎপর নই। আমরা অভিভাবকরা যেটাকে ভাল মনে করি সেটাই সন্তানের জন্য একমাত্র ভাল, কিন্তু আমরা এটা চিন্তা করি না যে আমার ছেলে বা মেয়েরওতো কোন ভাল লাগা খারাপ লাগা তাকতে পারে। তাই আমাদের মেধাবী সন্তানও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ পায় না।
অনেক মায়েদের অভিযোগ – আমার ছেলে বা মেয়ে পড়তে চায় না। কিন্তু অভিভাবক হিসেবে আপনি ভাল স্কুলে আপনার সন্তানকে পড়াচ্ছেন, একের পড় এক টিউটর দিচ্ছেন । কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন আপনার সন্তানের আগ্রহটা কিসের প্রতি? পড়ার প্রতি তার আগ্রহটা বাড়ানোর
চেষ্টা করেছেন?
আপনি অভিভাবক হিসেবে জীবনের হয়ত ৩৫ বছর কাটিয়েছেন। আপনি ভাল করে জানেন যে পড়াশোনা না করলে কি হতে পারে।
কিন্তু আপনার শিশিুটিকি আপনার মতই জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে? আপনি কি কখনও আপনার সন্তানকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে পড়াশোনা না করলে কি হয়?
অভিভাবক হিসেবে আপনি আপনার সন্তানকে ভাল স্কুলে পড়াচ্ছেন, একের পর এক টিউটর দিচ্ছেন। কিন্তু তা না করে যদি পড়াশোনর প্রয়োজনীয়তাটা সন্তানকে বোঝাতে সক্ষম হতেন তাহলে হয়ত বস্তির একটা স্কুলে পড়লেও আপনার সন্তান পড়াশোনায় ভাল করতো।
তাই আপনার সন্তানকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যান, যারা জীবনে সফল হয়েছেন তাদের সাথে
আপনার সন্তানকে দেখা করান। এটা বোঝান যে তুমিও তার মত এমন সফল হতে পারবে যদি পড়াশোনা কর।
দেখবেন একবার যদি পড়ার প্রতি আগ্রহ পেয়ে যায় তখন আর আপনাকে স্কুল আর টিউটর নিয়ে প্রতিযোগীতায় নামতে হবে না।
যখন আপনার শিশুটি পড়ার প্রতি আগ্রহ পাবে তখন সে নিজে থেকেই পড়বে আর তখন সে নিজেই ভাল মানুষ হয়ে উঠবে। তাই ভাল সন্তান গড়তে প্রথমেই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ান।
আরো পড়ুনঃ
কেমন শৈশব পাচ্ছে এখনকার শিশুরাঃ অভিভাবক এর ভূমিকা
গত কয়েক দশক আগেও শৈশব ছিল প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাসে ভরা। ছিল পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, ছিল
চিত্ত বিনোদনের সুযোগ যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কিন্তু এখন সেই শৈশব চার দেয়ালে বন্দী।
মোবাইল, টিলিভিশন, কম্পিউটার এসবই এখন শিশুদের খেলার মূল উপজীব্য। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে যত সহজ করেছে তেমনি কোন কোন দিক থেকে করছে প্রতিবন্ধী।
২০১৭ সালের ২৬ শে অক্টোবর বিকেলে অনুষ্ঠিত বাংলা ট্রিবিউন “বৈঠকি” অনুষ্ঠানে আলোচক
বলেন শিশুরা বন্দিজীবনে বেড়ে উঠছে। আকাশ দেখার সুযোগ তারা পাচ্ছে না। সমাজ আমাদের
সন্তানদের এই ধরনের রূঢ় বাস্তবতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তারা বলেন চার দেয়ালের ভেতরেও তাদের শৈশবকে আনন্দঘন করা যেতে পারে যার জন্য অভিভাবকদেরই একমাত্র ভূমিকা হতে পারে।
এটিএন নিউজের মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় বৈঠকের আলোচ্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাশেদা খান অভিভাবক ও সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দ এবং বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল।
বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল বলেন – ঢাকায় সম্প্রতি একটি গবেষণায়
দেখা গেছে ৮৩% শিশু চায় তাদের এলাকায় একটি খেলার মাঠ হোক।
৭৩% পার্সেন্ট শিশু চায় এলাকায় সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে উঠুক ৭৬ শতাংশ শিশু চায় এলাকায় শিশু পার্ক এবং ৩ শতাংশ শিশু পাঠাগার ও ২ শতাংশ শিশু চিড়িয়াখানা চেয়েছে।
তারমানে শিশুরা বন্দীদশা থেকে মুক্তি চায়। মুক্ত আকাশে ডানা মেলার তীব্র বাসনা তাদের
অন্তরে। আমরা অভিবাবক হিসেবে কি পারছি আমাদের সন্তানদের মুক্ত আকাশ দিতে?
কয়জন অভিভাবক আছি আমরা আমাদের সন্তানদের খেলার মাঠে নিয়ে যাচ্ছি? তাই এখন অভিাভাবক হিসেবে আমাদের কিজ করা উচিৎ?
আমাদের দায়িত্ববোধ এর জায়গা থেকে তাদের মুক্ত করতে হবে। অভিভাবক হিসেবে আমরা
কতটুকু সহায়তা করতে পারছি আমাদের সন্তানদের এটাই এখন বিবেচ্য বিষয়।
নিজের স্বপ্ন ও সন্তানের স্বপ্নঃ
বর্তমান সমযের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে সন্তানদের জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে না পারা। অধিকাংশ অভিভাবকরা চায় আমার সন্তান আমি যা চাই সেটিই যেন করে। আমরা নিজেদের স্বপ্নকে আমাদের বাচ্চার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে আমরা তাদের স্বপ্নকে হত্যা করছি।
তৈরি করছি সন্তানের হতাশাগ্রস্ত ভবিষ্যতের। হয়ত অভিভাবক হিসেবে আপনি বা আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তা হতে পারি নি। তাই এখন আমার ছেলে বা মেয়েকে ডাক্তার বনাবো ।
আমি বা আপনি আমাদের নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করছি। তাহলে আমাদের সন্তানদের ব্যক্তিগত স্বপ্ন কোথায়? আবার অনেকেই আছেন পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা অন্য কারও সাথে বিরোধ থেকে সন্তানকে
এমন এক স্বপ্ন সেট করে দেয় যেন সে সেই দ্বন্দ্বপূর্ণ অবস্থা থেকে উদ্ধার হতে পারে। অভিভাবক হিসেবে আমরা আমাদের নিজেদের সুবিধা বা পছন্দের জন্য আমাদের সন্তানদের স্বপ্নকে নির্ধারন করে দিচ্ছি।
অভিভাবক হিসেবে আমাদের মনে রাখা দরকার- মানুষ সেটাই করে যা সে নিজের জন্য স্বপন দেখে। যদি অন্য কারও স্বপ্ন পূরণ করে দিতে হয় তাহলে অন্যের স্বপ্ন পূরণ হলেও নিজের স্বপ্ন পূরণ
হয় না। তাই আমাদের সন্তান এর স্বপ্নটা তাকেই দেখতে দেয়া উচিৎ। বাবা-মা হিসেবে আমরা তার স্বপ্নটা কতটুকু যৌক্তিক বা তার কতটা গ্রহণযোগ্যতা আছে তা নিয়ে মুক্তভাবে আলোচনা করা উচিৎ। চাপিয়ে দেয়া স্বপ্ন পূরন করে হয়ত সফল হওয়া যেতে পারে কিন্তু সত্যিকারের সুখী মানুষ হওয়া অসম্ভব।
পড়ুনঃ
সন্তানকে বোঝার চেষ্টা করাঃঅভিভাবক এর ভূমিকা
পৃথিবীর সকল মানুষ এক রকম নয়। কেউ রাগী, কেউ হাসিখুশী, কেউ আবার ইনট্রোভার্ট
আবার কেউ এক্সট্রোভার্ট। তাই অভিভাবক হিসেবে অভিভাবক হিসেবে আগে বোঝার চেষ্টা করতে
হবে আমার সন্তান কোন টাইপের।
সে কি কি পছন্দ করে , কি কি অপছন্দ করে তা বুঝতে হবে। কাওকে বকা দিয়ে কাজ হয় আবার কেউ বকা দিলে তেরে বসে। তাই আপনার সন্তানকে দিয়ে কোন কাজ করাতে চাইলে আগে বোঝার চেষ্টা করুন তাকে দিয়ে কিভাবে কাজ উদ্ধার করতে হবে।
এই একটা লিখায়তো আর সব বিষয় নিয়ে কথা বলা সম্ভব নয়। যেহেতু আমরা এই
বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাব তাই পরের লিখায় আরও নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ধন্যবাদ
খুব সুন্দরভাবে বিষয় গুলো তুলে ধরেছেন। আমি বুঝি না,এই লেখাগুলো মানুষ না পড়ে সাকিব খান আর অপু কবে বিয়ে করলো তা নিয়ে ব্যস্ত। এই লেখাগুলো পড়ার সময় নাই।কিন্তু ভুংভাং পড়ার সময় আছে। ধন্যবাদ আপনাকে