রান্না
একটা শিল্প। তারমানে যিনি রান্না করেন তিনি শিল্পী। হ্যাঁ, রাধুনি হচ্ছে রন্ধন শিল্পের
প্রধান শিল্পী। সেই সূত্র মতে যিনি রান্না করেন তিনিই কি শিল্পী?
কেউ বলবেন
হ্যাঁ আবার কেউ বলবেন না। কিন্তু এই বিষয়ে মতামত পেশ করা আমাদের লিখার আসল উদ্দেশ্য
নয়। উদ্দেশ্য হলো রন্ধন শিল্পীদের অভিযোগকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রমাণ করা।
তাহলে
অভিযোগটা কি? আমরা প্রায় প্রত্যেকেই শুনি- যারা রান্না করেন তারা খেতে পারেন না। আর
প্রায় প্রতিটি বাসায়ই আমাদের মা, বোনরা রান্নার পর বলেন, খেতে ইচ্ছে করে না। রান্না
শেষ করে তেমন খেতেও পারি না।
মনই চায়
না খেতে। এমনকি যারা প্রফেশনাল রাধুনী রয়েছেন তারাও একই অভিযোগ করে থাকেন। রাধুনীরা
কেন খেতে পারেন না? কেন রান্না শেষ করে তাদের খেতে মন চায় না? এই প্রশ্নেরই উত্তর দিতে
যাচ্ছি।
যখন আমি
এই প্রশ্নটি পড়ছিলাম তখন ভেবেছিলাম না জানি কি এমন কারণ লুকিয়ে আছে এর পেছনে। কিন্তু
কারণটি অতি সাধারণই মনে হয়েছে আমার।
যদিও
কারণটি সাধারণ তবুও কিন্তু বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণার মাধ্যমে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে
পেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের
বিজ্ঞানীরা ৫১ জন ভোজন রসিক মানুষের উপর এক গবেষণা চালান। সেখানে দেখা যায় যারা খাবার
নিয়ে খুব চিন্তা করে তারা কম খেতে পেরেছেন।
আর যারা
চিন্তা ভাবনা ছাড়ায় খেতে বসেছেন তারা বেশি খেয়েছেন।
একদল
কে হুট করেই খেতে বাসিয়ে দেয়া হয়। আর তারা তুলনামূলক বেশি খেয়ে নেন।
অন্য
আর একদল কে আগে খাবার এর বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হয় এবং তারা অপেক্ষা করতে থাকে। এতে দেখা
যায় তারা হূট করে খেতে বসে যাওয়া দলের চেয়ে তারা তুলনামূলক কম খেয়েছেন।
আর এতেই
প্রমাণ হয় যারা খাবার নিয়ে ভাবেন তারা কম খেতে পারেন। আর ঠিক এই কারণেই রাধুনীরা বেশি
খেতে পারে না বা কম খায়।
যিনি
রান্না করেন তিনি অনেকক্ষণ সময় ধরে রান্না
করেন। তারা রান্নার উপকরণ গুলো ধোঁয়া, প্রক্রিয়াজাত করা, চুলায় রান্না বসানো ইত্যাদি
নানা কাজ করে থাকেন। আর এই কাজ করতে তাদের
অনেকটা সময় রান্না নিয়ে ভাবতে হয়।
রান্না
মজা হবে কিনা, তেল ঠিক হলো কিনা, লবণ ঠিক হলো কিনা, মিষ্টি ঠিক আছে কিনা ইত্যাদি নানা
চিন্তা মাথায় ঘুরপাক করে। যদি এই চিন্তা মাথায়
নাও আসে আনমনে হলেও রান্নাকে উপলক্ষ্য করে অনেকটা সময় রন্ধন শিল্পীরা খাবার নিয়েই চিন্তা
করে। আর যদি এমন হয় যে মেহমান আসে তাহলেতো কথায় নেই। খাবার নিয়েই সকল চিন্তা।
মজার
ব্যাপার হলো এই চিন্তার কারণেই রন্ধন শিল্পীরা খেতে পারেন না বা খেতে ইচ্ছা করে না।
আর এটা আমার কথা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানীর কথা।
গবেষকরা
প্রথমে গবেষণা শুরু করেন কিভাবে একজন মানুষ ওজন কমাতে পারে। তখন তারা কল্পনায় খাওয়ার
কথা বলেন। কেউ যদি কল্পনায় কোন কিছু খেতে থাকেন এতে করে দেখা যায় তার খাওয়ার প্রতি
আগ্রহ কমে যায়। এমনকি সে অল্প খেলেই পেট ভরে গেছে বলে মনে করে। তাই ওজন কমাতে বিজ্ঞানীরা
মনে মনে বা কল্পনায় খাওয়ার পরামর্শ দেন।
গবেষক
মেলন বলেন- কল্পনায় বা মনে মনে খাওয়ার অভ্যাস করলে ওজন কমানো অনেকটাই সম্ভব হবে এবং
আশানুরুপ ফলও পাওয়া যাবে। কিন্তু এখানে অভ্যাস এর কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। অনেকেই একদিন
বা দুইদিন কোন কাজ করে ফলাফল আশা করেন , কিন্তু তাদের এই আশা করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই
নয়। তাই ওজন কমাতে কল্পনায় খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
- নারী অধিকার কিভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে
- আমি রাইটার তা কিভাবে বুঝবো?
- যৌনজীবন কেমন ছিল আমাদের পূর্ব পুরুষদের?
- কেন মানুষ প্রেম করে?
ঠিক এই
গবেষণার সময়ই তারা আবিষ্কার করেন, যখন কেউ মনে মনে বা কল্পনায় খেতে থাকে তখন সে খাবার
নিয়ে ভাবতে থাকে । তার মাথায় খা্বার এর চিন্তার জন্যই সে খাবারের প্রতি কিছুটা আগ্রহ
হারিয়ে ফেলে।
আমরা
যখন চিন্তা করি খুব খাব তখন কিন্তু অল্প খেলেই পেট ভরে যায় বলে অনুভব করি। আবার আমরা
যখন বিয়ে বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাই তখনও কিন্তু অধিকাংশ মানুষ খুব একটা খেতে পারি না।
বিয়ে
বাড়িতে অনেক ভাল ভাল খাবার থাকার পরও খুব একটা খাওয়া যায় না। কিন্তু প্রতিদিন আমরা
বাসায় যে খাবার খাই তখন কিন্তু বিয়ে বাড়ির চেয়ে তুলনামূলক বেশীই খেয়ে থাকি। আর এর পেছনে
কারণ হচ্ছে খাবার নিয়ে আমাদের চিন্তা।
তাই রাধুনীরা
খাবার নিয়ে চিন্তার দরুন খেতে পারে না। এমনকি সাধারণ মানুষও যদি খাবার নিয়ে চিন্তা
করে তাহলেও সে কম খেতে পারবে। তাই নো চিন্তা শুধু খাওয়া আর খাওয়া।
আর সেই
সাথে আমরা এটাও জানলাম যে কল্পনায় খাওয়ার অভ্যাস করলে আমাদের ওজন কমানো সম্ভব। কল্পনায়
খাওয়া মানে হচ্ছে খাবার নিয়ে চিন্তায় থাকা। তাই যারা রাধুনী আছেন তারা নিজে যদি ভাল
এবং বেশী খেতে চান তাহলে মনঃসংযোগ কম রেখে রান্না করুন। আর যদি সবার কথা ভাবেন তাহলে
শতভাগ মনোযোগ দিয়ে রান্নাটাই করুন।