রমজানের সুস্থ থাকতে কিছু করণীয় কি হতে পারে? রুটিন পরিবর্তনে অনেকের নান সমস্যা দেখা দিলেও কিছু নিয়ম বা কাজ মেনে চললে সুস্থ থাকা একেবারেই সহজ।
আমরা সকলেই কি কি করতে হবে তা কম বেশী জানলেও হয়ত অনেকেই তা নানা অযুহাতে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাই চলুন আজকে জেনে নেই এই রমজানে আমাদের সুস্থ থাকতে করণীয় কি হওয়া উচিৎ।
রমজানে প্রচুর ত্যাগ এবং আত্ম-শৃঙ্খলার প্রয়োজন হয় এবং এটি বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখিন করতে পারে নিজেকে। পানি ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে চলার ফলে ক্লান্তি, চাপ এবং ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাছাড়া অনেকে আবার একটানা দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকতে পারেন না। তাদের জন্যও কিছুটা শরীরে খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু কিছু কাজ নিয়মিত করে গেলে রোজা রেখে অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকা সত্ত্বেও আপনার ক্লান্তি ভাব কাজ করার কথা না। তাই একে একে সেই কাজ গুলো নিয়ে কথা বলি।
রমজানে সুস্থ থাকাতে করনীয়
রোজা রাখার কঠোর নিয়ত করুন
রমজানে সুস্থ থাকতে আপনাকে রোজা রাখার নিয়তটা মন থেকে এবং ভাল ভাবে করতে হবে। অনেকে বিষয়টাকে খুব হালকাভাবে দেখতে পারে। কিন্তু বিষয়টা মোটেই হালকা করে দেখার নয়। আপনি যখন চিন্তা করবেন আগামীকাল ঠিক ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠতে পারবেন। তখন আপনি দেখবেন সত্যি সত্যিই ভোর ৫টার আগে আপনার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে। আর এটা যে শুধু আমি বলছি তা না। আপনি নিজেও হয়ত এমন ঘটনার অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। তাই কথায় আছে নিয়তে বর্কত। নিজের সাথে নিজের কঠিন মনোনিবেশ করুন যে হ্যা যত খারাপ লাগাই লাগুক আমি রোজা রাখবো। তাহলে আপনার ৭০% সুস্থ থাকা নিশ্চিত। তাই পাকা নিয়ত করুন রোজা রাখার।
আপনার কর্মদিবস পুনর্গঠন বা কাজকে ভাগ করে নেয়া
রমজানে সুস্থ থাকতে আগে আপনার কাজকে ভাগ করে নিন। অনেকের প্রশ্ন আসতে পারে যে সুস্থ থাকতে আগেই কাজের কথা কেন আসছে। আসলে মানুষ হিসেবে আমাদের বাসা কিংবা অফিস, সামাজিক কিংবা পারিবারিক সকল জায়গায় কোন না কোন কাজ করতেই হয়।
রমজান হোক অথবা নিয়মিত দিন হোক যে কোন সময় আমাদের কাজের মধ্যে থাকতে হয়। তাই যখন কাজে কোন সমস্যা হয় তখন মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে না। আর যদি সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি না করা যায় তাহলে অতিরিক্ত কাজের প্রেশার আমাদের শরীরে উপর প্রভাব ফেলে। তাই রমজানে সুস্থ থাকতে প্রথমেই আপনার কর্মদিবস পুনর্গঠন/ সাজিয়ে নিন।
কোন কাজটা কখন করবেন তার একটি লিস্ট তৈরী করুন। সাধারণত রমজানে দিনের শেষের দিকে খুব শরীর দুর্বল লাগে তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো দিনের শুরুর দিকে করে ফেলুন। এতে করে দেখবেন নিজেকে অনেক হালকা অনুভব করবেন। কেননা আপনার যে কাজের চাপ ছিল তা এখন আর নেই । তাই শরীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে রমজানে রোজা রেখে প্রথমেই আপনার কর্মদিবস কে সাজিয়ে নিন।
রাতে ব্যায়াম করুন।
দিনের তাপমাত্রা বেশি হলে এবং আপনার শক্তি কমতে শুরু করলে বিকেলে ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন। যদিও অনেকে আপনাকে বিকেলে ব্যায়াম করারই পরামর্শ দিবে। তবে যদি ব্যায়াম করার মত পুরোপুরি শক্তি না পান তাহলে সন্ধ্যার পরে ব্যায়াম করুন। তখন আপনি ইফতারের খাবার থেকে শক্তি পাবেন এবং সঠিকভাবে রিহাইড্রেট হবেন।
আরো পড়ুনঃ
- রমজানের স্বাস্থ্যকর খাবার কেমন হওয়া উচিৎ
- কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখা যায়?
- হার্টকে ভাল রাখার প্রাকৃতিক উপায়গুলো কী কী?
- মোবাইল ফোন মানবজাতির জন্য কতটুকু ক্ষতিকর?
তবে উচ্চ তীব্রতার ওয়ার্কআউটগুলিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। যে সব ব্যায়াম খুব কষ্টদায়ক তা না করে হালকা ব্যায়াম করাই ভাল। যেমন হাঁটা। হাঁটা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি বজায় রাখার একটি দুর্দান্ত উপায়।
দিনে মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটা আপনার কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস বাড়াতে পারে, হাড় মজবুত করতে পারে, শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে পারে এবং পেশী শক্তি ও সহনশীলতা বাড়াতে পারে। তাই রমজানে ভাল থাকতে খুব বেশী ব্যায়াম না করলেও অন্তত ৩০ মিনিট হেটে নিতে পারেন।
নিয়মিত বিরতি নিন।
রোজা রাখার সময় আপনি ক্লান্ত এবং চাপ অনুভব করতে পারেন, তাই নিজের প্রতি সদয় হোন এবং সারা দিনে নির্দিষ্ট সময় পর পর নিজেকে বিরতি দিন। যে কাজই করেন না কেন ১০ মিনিট এর বিরতি নিয়ে আবার নতুন ভাবে কাজ শুরু করুন।
তবে অল্প কিছু সময় এর জন্য আপনি চাইলে বাহির থেকে হেটে আসতে পারেন। এতে করে প্রকৃতির নির্মল বাতাস আপনাকে আরও সতেজ করবে ও আপনার শরীর ও মনকে চাঙ্গা করবে।
আপনার সহকর্মীদের সাথে কথা বলুন
রোজা রেখে আপনার মেজাজ এবং উৎপাদনশীলতার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পরতে পারে। আপনার সহকর্মীদের সাথে কিছুটা সময় আড্ডা দিয়ে নিতে পারেন। এতে করে আপনার কিছুটা হলেও খারাপ লাগা দূর হবে।
খাবার এড়িয়ে যাবেন না
সময় যাই হোক না কেন, আপনি আপনার তিনবারের খাবার এড়িয়ে যাবেন না। বাদামী চাল এবং গমের রুটির মতো জটিল কার্বোহাইড্রেটগুলো খেতে ভুল করবেন না। এইগুলো আপনাকে আপনার শক্তির মাত্রা বা ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং দীর্ঘ সময় শক্তি ধরে রাখতে সহায়তা করবে।
অনেকে আছেন যে ইফতার করার পর আর সন্ধ্যার খাবার খেতে চান না। তারা অবশ্যই এই কাজটি করবেন না। আপনি ইফতারে ভাজা-পুরা খাওয়ার পর সন্ধ্যায় অল্প করে হলেও খেয়ে নিবেন। আর সেহেরিতো খাবেনই । তাই একসাথে অনেক না খেয়ে অল্প করে তিনবারই খান।
একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা বজায় রাখুন
ভিটামিন এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি সুষম খাদ্যতালিকা আপনার শরীর এবং মনকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করবে, আপনাকে আরও শক্তি দেবে এবং আপনাকে আরও ভাল ঘুমাতে সাহায্য করবে।
আপনার খাবারে প্রচুর পরিমাণে তাজা ফল, শাকসবজি এবং প্রোটিন রয়েছে তা নিশ্চিত করুন।আপনার ইফতারের খাবার হিসাবে সহজ কার্বোহাইড্রেট বেছে নিন যা দ্রুত ভেঙে ফেলা যায়। তাছাড়া ভাজাপুরা এড়িয়ে আপনি দই-চিড়া, খিচুড়ি খেতে পারেন। যা আপনার এসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করবে।
হাইড্রেটেড থাকুন
ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি কমাতে ইফতার এবং সেহরীর মধ্যে আপনার পানির পরিমাণ বাড়িয়ে ৩ লিটার করুন। তরমুজ, শসা, টমেটো, আখ, এবং ডাবের পানির মতো খাবারগুলি পানি সমৃদ্ধ হওয়ায় আপনার পানি শূণ্যতা দূর করে আপনাকে হাইড্রেটেড থাকতে সাহায্য করবে । তাই রমজানে এই ফলগুলো খেতে পারেন অনায়াসে।
পর্যাপ্ত ঘুমের ক্ষেত্রে অবহেলা করবেন না
ঘুমের ক্রমবর্ধমান অভাব আপনার মনোযোগ, একাগ্রতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে। আপনি যদি রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে না পারেন তবে দিনের বেলা বিশ্রামের জন্য সময় করুন।
বিকেলে মাত্র ২০-৩০ মিনিটের ঘুম আপনাকে পুনরুজ্জীবিত করবে, আপনার মেজাজকে ঠান্ডা রাখবে এবং দিনের বাকি অংশে আপনার কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে। তাই পর্যাপ্ত ঘুমের ক্ষেত্রে অবহেলা করা যাবে না। মূলত খাবার এবং ঘুম ঠিক থাকলে আপনি অনেকাংশেই সুস্থ ও ভাল থাকতে পারবেন।
Khub Valo laglo..