![]() |
ভাল ইট এর দেয়াল |
খুব সখ করে
বাসা করেছেন কিন্তু বাসার দেয়াল কয়েক বছরের মাঝেই স্যাতস্যাতে হয়ে গেছে? কত টাকা-পয়সা
খরচ করে যে বাসা তৈরী করেছেন শুধু মাত্র ভাল ইট ব্যবহার না করার জন্য বাসার অবস্থা
দফারফা। তাই কিভাবে ভাল ইট চেনা যাবে তা নিয়ে আজ আলোচনা হবে। যেন বাসা তৈরী করতে সামান্য
একটু ভুল এর জন্য না পস্তাতে হয়।
মানুষের মৌলিক
চাহিদার মধ্যে অন্যতম একটি হলো বাসস্থান। আর এই বাসস্থান যদি মনের মত না হয় তাহলে অনেক
অর্থ থাকলেও এটি কোন কাজেই আসবে না। কেননা আপানি কিছুদিন পর পর নিশ্চয় বাসা তৈরী করবেন
না। তাই সময় থাকতে জেনে নেয়া ভাল কিভবে ভাল ইট বাছাই করবো বাসার জন্য।
তিল তিল করে
জমানো অর্থ ব্যয় করে তৈরি করা হয় সুন্দর ঘর বাড়ি। সেই স্বপ্নের বাড়ি তৈরির প্রধান
কাঁচামাল হল ইট। ইটকে বলা যেতে পারে ঘর তৈরীর মৌলিক উপাদান। তাই বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে
হবে যেন আপনার স্বপ্নের বাড়ি তৈরীর ক্ষেত্রে যে ইট ব্যবহার করা হচ্ছে তা যেন মানসম্মত
হয়।
ভাল ইট কিভাবে চিনবো
আমরা অনেকেই
জানি না ভাল ইট কোনটা এবং এর বৈশিষ্ট্য কি। বাজারে অন্য সব পণ্যের মতো ইটের ও ভালো
মন্দ দুটিদিক রয়েছে। আপনি হয়তো আপনার বাড়ি তৈরির জন্য ভালো কোন বিশেষজ্ঞের সহায়তা
নিবেন। আর তার জন্য আপনাকে মোটা অংকের টাকাও হয়ত গুনতে হবে। আর তা না হলে খুঁজতে হবে
অন্য কাওকে। কিন্তু আপনি নিজেই যদি ইট বা অন্যন্য সামগ্রী কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ
তা চিনেন তাহলেতো আর এই প্যারা নিতে হচ্ছে না।
আর আপনাকে যেন ঝামালে পোহাতে না হয় সেই জন্য আমরাই আপনাকে সহায়তা
করব। কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আপনিও বুঝতে পারবেন ভালো ইট কোনটা।
প্রাচীনকাল
থেকেই মানুষ বিভিন্ন দেশে রোদে শুকানো ইট ও আগুনে পোড়ানো ইট ব্যবহার করে আসছে। যদিও
ইট পাথরের মত দীর্ঘস্থায়ী নয় তথাপি এর সহজলভ্যতা, স্বল্প খরচ, অল্প ওজনের জন্য এটি সারা পৃথিবী জুড়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
ভাল ইট নয়
১. একটি ইট নিয়ে তাতে নখের আঁচড় কাটলে যদি আচর পড়ে
তবে এটি ভালো ইট নয়।
২. দুটি ইট
টি আকৃতির মত করে মাটি থেকে ২ মিটার উঁচুতে রেখে ফেলে দিলে যদি ভেঙে যায় তবে তা ভাল
ইট নয়।
৩. ইটকে যদি পানিতে ডোবানো হয় এবং তা যদি বুদবুদ আকারে
বেশ পরিমাণ পানির শোষণ করে।
এবং পানি যদি ঘোলাটে হয় তবে তা ভালো ইট নয়।
আরো পড়ুনঃ
ভাল ইট এর বৈশিষ্ট্য
১. একটি ইট দিয়ে অন্য আরেকটি ইটে আঘাত করলে যদি ধাতব বস্তুর মত
আওয়াজ হয় তবে তা ভাল ইট।
২. ইটের কোন গুলো সূক্ষ্ম এবং ধার যদি মসৃণ হয় তবে
তা ভালো ইট।
৩. একটি ইট ভাঙার পর এর ভাঙা টুকরোগুলোর কালার যদি একই রকম হয় তাহলে
তা ভাল ইট।
৪. ইট এর পৃষ্ঠ
যদি মসৃণ ও সমতল হয় তবে তা ভালো ইট।
৪. ইটের আদর্শ মাপ হল (৯.৫×৪.৫× ২.৭৫) হলে তা ভাল ইট।
৫. আদর্শ ইটের
ওজন ৩.৫ কেজির বেশি হবে না।
৬. ভাল ইট পানিতে দিলে ভেজালে তার আকার বা আয়তন এর পরিবর্তন হয় না।
৭. ইটের গায়ে ডাস্ট বা ধূলার মত অসংখ্য ইটের কণা থাকবে না।
৮. বাঁকা-তেরা ইটকে ভাল ইট বলা যায় না।
৯. দেখলে স্বচ্ছ মনে হবে।
১০. দেয়ালে গাথুনি দেয়ার সময় সহজেই সিমেন্ট ও বালুর মিশ্রণ এর সাথে
মিশে যাবে।
![]() |
ইটের দেয়াল |
ইট সাধারনত পাঁচ প্রকার হয়ে থাকে যথাঃ
১. প্রথম শ্রেণীর ইট
২.দ্বিতীয় শ্রেণীর ইট।
৩.তৃতীয় শ্রেণীর ইট।
৪. ঝামা ইট
৫. পিকেড ইট।
প্রথম শ্রেণীর ইট চেনার উপায়
১. প্রথম শ্রেণীর ইট আকারে সমানুপাত ভার্শন হয়ে থাকে।
২. বাংলাদেশে উৎপন্ন ইটের পরিমাপ ২৪০ মিলিমিটার, ১১২
মিলিমিটার, ৭০ মিলিমিটার হয়ে থাকে।
৩. এই শ্রেণীর ইটগুলো ভালোভাবে পুড়ানো থাকে।
৪. হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে ধাতব বস্তুর মত ঠনঠন আওয়াজ
হয়।।
৫ নখের আঁচড়ে কোন দাগ পড়ে না।
৬ ইটের পৃষ্ঠ মসৃণ ও সমতল হয়।
৭. এই ইট পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর ওজনের ১৫% পরিমাণ পানি শোষণ করবে।
৮. ইংরেজী T আকৃতির মত করে দুটি ইটকে ১.৫
বা ১.৭ মিটার উঁচু হতে স্বাভাবিক শক্ত মাটিতে ফেলে দিলে তা ভাঙবে না।
৯. এর কালার উজ্জ্বল হয়।
দ্বিতীয় শ্রেণীর
ইট চেনার উপায়
১ . এটিও প্রায় প্রথম শ্রেণীর ইটের মতোই তবে একটু
বেশি পুরানো থাকে।
২. দ্বিতীয় শ্রেণীর ইট সহজে ভেঙে যায় এবং এর রং হালকা
থাকে।।
৩ এর আকার আকৃতি অসমান হতে পারে।
৪. ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর ওজনের সর্বোচ্চ
২৫% পানির শোষন করে।
তৃতীয় শ্রেণীর
ইট চেনার উপায়
১. এই ধরনের ইট অনেক কম পুরানো থাকে।
২. সহজে ভেঙে যায় এবং হালকা রঙের হয়ে থাকে।
৩. এর আকার আকৃতি খুবই অসমান হয়ে থাকে।
৪. ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এই ঈদ তার ওজনের
২৫ % এর বেশি পানি শোষণ করে থাকে।
ঝামা ইট চেনার উপায়
১. অধিক পোড়ানোর ফলে ইট ফাঁপা হয়ে থাকে।
২. এর আকার আকৃতি বিকৃত থাকে।
৩. নির্মাণ কাজে এটি অযোগ্য হয়ে থাকে।
৪. এটি সাধারণত খোয়া তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হয়।
৫. এর কালার কালো হয়ে যায় অধিক পোড়ার জন্য।
পিকেড ইট চেনার
উপায়
১. কম পুরানো ইটতে সাধারণত পিকেড ইট বলে।
২. এগুলো অর্ধেক পুরানো হয়।
৩. হলদে টাইপ এবং এর রঙের তারতম্য হয়ে থাকে।
৪. এসব ইটে শক্তি কম হয় ফলে এগুলো খোয়া তৈরিতে ব্যবহার
করা হয়।
পড়তে পারেনঃ
ইটের আকৃতি
বা সাইজ
বাংলাদেশে পি ডব্লিউ ডি সিডিউল অনুযায়ী ইটের সাইজ
সাধারণত ৯.৫ ইঞ্চি ×৪.৫ ইঞ্চি×২.৭৫ ইঞ্চি।
মসলা সহ ইটের সাইজ ১০×৫×৩ ইঞ্চি হয়ে থাকে।
ইটের কাঁদার
উপাদান গুলো কি কি
সিলিকা ৫৫%। অ্যালুমিনা ৩০% , আয়রন অক্সাইড ৮% , ম্যাগনেসিয়াম
৫%, লাইন ১ %, জৈব পদার্থ ১%।
ইট সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ
বিবেচ্য বিষয়
১. ইটের ওজন ৩.৭৫ কেজির বেশি হবে না।
২. একটি ইটের সাথে আরেকটি ইটের জোড়া দেয়ার পদ্ধতিকে
বল বলে।
৩. ইট ভেজানোর কারণ হলো যেন ইট গুলি মসলা থেকে পানি
শোষণ না করে।
৪. অর্ধেক প্রস্থ বিশিষ্ট পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ইটকে কুইন ক্লোজার বলে।
৫ সর্বোচ্চ ২১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ইট পোড়ানো
হয়।
৬. প্রতি ১০০ সেফটি জায়গায় সলিং করতে ইট লাগবে ৩০০
টি।
৭. প্রতি ১০০ সি এফ টি ইটে ১০”গাঁথুনিতে ইট লাগে
১১৫০ টি।
৮. একটি ১১ সিএফটি খোয়া তৈরি হয়।
৯ এক ঘন মিটার ইটের ওজন ১১১০ কেজি।
১০. ১ মিটার খোয়ার ওজন ১২০০ কেজি।
১১. ব্যবহারের পূর্বে ইটকে মিনিমাম ১২ ঘন্টা
পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। ভালো হচ্ছে ২৪ ঘন্টা ডুবিয়ে রাখা।
আর এইভাবেই আমরা ভাল ইট চিনতে পারবো। তাই বাড়ি বানানোর আগে একটু
নিজে জানাবোঝা করে নিলে হয়ত মারাত্মক ক্ষতির হাত তেকে বেঁচে যেতে পারেন। বাড়িতো আর
একদিন এর জন্য তৈরী করবেন না। তাই একটু সাবধানতা যদি আপনার অমূল্য সম্পদকে নিরাপদ করতে
পারে তাহলে ক্ষতি কি একটু পড়াশোনা করার। আমরা নিজের কাজ সবসময় অন্যের উপর নির্ভর করে
থািক। মিস্ত্রি যা বলে তাই করি। কিন্তু একটু নিজের জানা থাকলে কেউ হয়ত আর ঠকাতে পারবে
না। আর যেকোন কিছুর জন্য অন্যের উপরও নির্ভর করতে হবে না। তাই ভালবাসাটি তৈরী হোক আপনার
ভালোবাসায়। এই প্রত্যাশাই আজ এই পর্যন্ত।
আর হ্যাঁ, কেমন লাগলো আমাদের লিখাটি কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের
যদি একটুও উপকারে আসে আমাদের লিখাগুলো তাহলেই আমাদের কষ্ট সার্থক হবে।
ইটেরও এত প্রকার আছে আগে জানতাম না। ধন্যবাদ আপনাকে।।।