JANA BUJHA

বিভিন্ন দেশের থার্টি ফার্স্টনাইট উদযাপন কেমন হয়?

বিভিন্ন দেশের থার্টি ফার্স্টনাইট উদযাপন কেমন হয়?

শীতল হাওয়া
ও আগামীকে বরণের কোমল অনুভূতি নিয়ে নতুন বছরের আগমন। ২০২২ কে বিদায় জানিয়ে ২০২৩
এর আগমনকে উদযাপন করা হচ্ছে সারা বিশ্বে। নানা প্রকার জাঁকজমকপূর্ণ আতশবাজির মধ্য দিয়ে
উদযাপন করা হয় প্রথম দিন। 


বন্ধুবান্ধব কে উইশ করা, বেড়াতে যাওয়া, সবাই মিলে আনন্দ
করা, কেক কাটা  ইত্যাদি নানা আয়োজন করছেন। কিন্তু
আপনি জানেন কি? এই নিউ ইয়ার কিভাবে এলো? কবে থেকেই বা এটি উদযাপন করা হয়ে থাকে? তাহলে
চলুন জেনে নেই এর ইতিহাস। কিভাবে এই নিউ ইয়ার পালন করা শুরু হলো?





বলা হয়ে থাকে পৃথিবীব্যাপী পালন করা উৎসবের মাঝে সবচেয়ে
প্রাচীন উৎসব এই বর্ষবরণ উৎসব। জানা যায় প্রায় ৪ হাজার বছর আগে খ্রিস্টপূর্ব দুই
হাজার অব্দে মেসোপটেমিও সভ্যতায় প্রথম বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়।


প্রাচীন মেসোপটে নিয়ে
যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তাকে বলা হয় মেসোপটেমিয়া সভ্যতা। বর্তমান ইরাককে প্রাচীনকালে
বলা হতো মেসোপটেমিয়া। মেসোপটেমিয়াকে আবার চারটি ভাগে ভাগ করা হয়।

 ১. সুমেরীয় সভ্যতা         ২. ব্যাবিলনীয় সভ্যতা

৩. আসিরিয়
সভ্যতা
                 ৪.  ক্যালডীয় সভ্যতা।

এদের মধ্যে বর্ষবরণ উৎসব পালন করা শুরু হয় ব্যাবিলনীয়
সভ্যতায়। অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করা হতো। তারা কিন্তু
আমাদের মত জানুয়ারিতে এই অনুষ্ঠান পালন করত না। তারা করতো বসন্তের প্রথম দিনে।


এ সময়
নতুনের আগমন ঘটে এবং গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়। ফুলের
  কলিপ্রস্ফুটিত হয়। পাখিরা গানে গানে মেতে থাকে। আর নতুন করে জেগে
ওঠা কে তারা নতুন বছরের শুরু বলে চিহ্নিত করেছিলেন।
অবশ্য তারা যেহেতু চাঁদ দেখে বছর গণনা করত তাই উৎসবের শুরু
হতো চাঁদ দেখে।




 

রোমানদের নববর্ষ

ব্যাবিলনীয়
সভ্যতার পর জাঁকজমক করে নববর্ষ পালন করত রোমানরাও। তারা এরই মধ্যে ক্যালেন্ডার তৈরি
করে ফেলেছিল। চাঁদ দেখে ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করেছিল। তাদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ
ছিল অবহেলা মাস।


তবে প্রাথমিক অবস্থায় তাদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মাস ছিল মাত্র দশটি।
তখন ছিল না জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি। পরবর্তীতে সম্রাট নুমা পোল্ট্রিলাস জানুয়ারি
ও ফেব্রুয়ারি যুক্ত করে। কিন্তু এখানেই সমস্যার সমাধান হয়নি। কারণ রোমানদের ক্যালেন্ডারে
যে তারিখও ছিল না। চাঁদের বিভিন্ন অবস্থান দিয়ে রোমানরা বিভিন্ন সময়কে চিহ্নিত করত।

চাঁদ উঠার সময়কে বলা হতো ক্যালেন্ডস,পুরো চাঁদ কে
বলা হতো ইডেস, চাঁদের মাঝামাঝি অবস্থানকে বলা হতো নুনেস। পরে সম্রাট জুলিয়াস সিজার
এই ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন ঘটান।


তিনি ক্যালেন্ডাস, ইডেন ও নুনেসের ঝামেলা বাদ দিয়ে
বসিয়ে দেন তারিখ। ফলে বছরে মোট ৩৫৫ দিন হয়। আসলে তারা তো তখন চাঁদ দেখে এই বছর ব্যবস্থার
হিসাব করতো।


কিন্তু আমরা এখন সূর্য দেখে বছরের হিসাব করি। আর যে কারনে তাদের হিসাব
এর মাঝে দশ দিন কম থেকে গিয়েছিলো। আমরা জানি চাঁদের হিসাবে প্রতিমাসের দিন হয় সাড়ে
২৯ টি। এজন্যই আরবি হিজরির সালের মাসগুলো ২৯ দিন বা 30 দিনে হয়। 


এভাবে এ বছর গণনা
করায় চাষীরা
  পরলো সমস্যায়। কারণ তাদের
ফসল ফলানোর সময় এবং বাৎসরিক সময় অমিল দেখা দেয়।


এই সমস্যার
সমাধান করেন হোঞ্চাস হেডাস নামে এক রোমান। তিনি চিন্তা করে দেখলেন এত ঝামেলার দরকার
নেই আমরা চন্দ্র মাসের পরিবর্তে সূর্য মাস ধরে বছর গণনা করব।


 ব্যাস একটা সুন্দর সমাধানে
আসা গেল। এখন থেকে ৩৬৫ দিয়ে সূর্য বছর হিসেবে গণনা করা হবে।

কিন্তু তিনি সূর্য দেখে প্রথমে ৩৬৫ দিন নয় ৪৪৫ দিনের
ক্যালেন্ডার বানিয়েছিলেন।


এতে সমস্যা আরো গুরুতর হয়ে উঠে।  রুমের সম্রাজ্যে এই ক্যালেন্ডার নিয়ে কত রাজ্যের
ঝামেলা হয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

একেক সময় একেক জায়গায় একেক দিন নতুন বছরের
প্রথম দিন হিসেবে পালিত হতো। যীশু খ্রিস্টের জন্মের ৬০০ বছর আগে বর্ষবরণ হিসেবে পালন
করা হতো ২৬ শে মার্চ তারিখটি। কিন্তু এটি কেউ সম্পন্নভাবে মেনে চলছিল না।


 আগের মতই
মার্চের প্রথম তারিখেই বর্ষবরণ উৎসব পালন করতে থাকলো। তারপর জুলিয়াস সিজার যখন ৩৬৫
দিনে বছর ঘোষণা দেন। তখন তিনি বলেন মার্চে নয় বরং বর্ষবরন শুরু হবে জানুয়ারির ১ তারিখে।
আর সেই থেকে বর্ষবরণ উৎসব মার্চ মাস থেকে চলে এলো জানুয়ারিতে।
 

 

 

পশ্চিমা
বিশ্বে বিভিন্ন দেশে এই দিন সবাই ভোজন উৎসবে মেতে ওঠে। এটিকে সদ্য আগত বছরের
সৌভাগ্যকে বরণ করে নেয়ার রীতি হিসেবে দেখা হয়। 


কিছু কিছু সংস্কৃতির মানুষজন এই  দিনকে উন্নতি ও অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে মনে করে।
এজন্যই নতুন বছরের প্রথম দিনে কিউবা অস্ট্রিয়া, হাংগেরি, পর্তুগাল সহ আরো বেশ
কিছু দেশে নতুন বছরের প্রথম দিন শুকরের মাংস পরিবেশন করা হয়।

 

নেদারল্যান্ড,
মেক্সিকো ও গ্রিসে পরিবেশন করা হয় বিশেষভাবে বানানো
  রিং আকৃতির কেক। সুইডেন ও নরয়েতে পরিবেশন করা
হয় রাইস পুডিং। 


যার ভেতরে একটি কাঠ বাদাম গুঁজে দেওয়া হয়। তারা ধারণা করে থাকে
যে পুডিং খেতে গিয়ে যে ব্যক্তি বাদামটি খুঁজে পাবে তার নতুন বছর সবচেয়ে ভালো
কাটবে। এভাবেই নানা উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারাবিশ্বব্যাপী সবাই জাঁকজমক ও
চাকচিক্যের সাথে পালন করে নতুন বছরের প্রথম দিন।

লন্ডন এর
নতুন বছর

লন্ডনে হাজার হাজার মানুষ নদীর ধারে একত্রিত হয়
লন্ডনের চোখ তথা ফায়ার ওয়াক্স
  ঘড়ি দেখার জন্য। ওয়েলস এর
রাজধানী কার্ডিপ এ কেলেনিং নামক ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সেখানে
হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়।

গ্রীস এবং সাইপ্রাসে পরিবারের সদস্যরা সবাই তাদের
আত্মীয়-স্বজনদের সাথে একত্রিত হয় এবং মধ্যরাতে লাইট অফ করে দিয়ে ভ্যাসিলপিটা
   (কেক সাদৃশ্য)কেটে উদযাপন করে।
এটি মূলত এক ধরনের কেক, যাতে একটি কয়েন লোকানো
থাকে যে এই পয়েন্টটি পেয়ে থাকে তাকেই ওই বছরের সবচেয়ে ভাগ্যবান বলে মনে করা
হয়।

ফিলিপাইনের লোকজন আতশবাজি, বোমা ফাটিয়ে বিরাট
শব্দ সৃষ্টি করে। তারা মনে করে এই শব্দ সৃষ্টি করলে শয়তানের আত্মা ভয় পায় এবং
দূরে থাকে এবং নতুন বছরের জন্য তাদের দুর্ভাগ্য গুলোকে সরিয়ে নিয়ে যায়।

ফ্রান্সের মানুষেরা তাদের আবহাওয়াকে অনেক
মূল্যবান মনে করে নতুন বছরে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে। তারা মনে করে
বায়ু পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত তাহলে তাদের ফসল খুব ভালো হবে। 


আর পশ্চিম দিক থেকে
বায়ু প্রবাহিত হলে তাদের মার্ক ও পশুর ফলন অনেক বাম্পার হবে। আর দক্ষিণ দিক থেকে
প্রবাহিত হলে সারা বছর আবহাওয়া খুব ভালো যাবে। আর উত্তর দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত
হলে তারা মনে করে তাদের ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হবে।

ভিয়েতনাম
ভিয়েতনামে ভোর হওয়ার সময় প্রতি নববর্ষের সবাই
গুরুজনদের কাছে দীর্ঘায়ু কামনা করে আশীর্বাদ নেয়।

ব্রাজিল

ব্রাজিলের ভিউডি জেনিরো সমুদ্র সৈকতে নববর্ষের
সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানটি হয়। এর অন্যতম আকর্ষণ চোখ ধাঁধানো আতশবাজির প্রদর্শনী। 


এদের অধিকাংশ লোকের সাদা পোশাক পরিধান করে। সমুদ্রের সাতটি ডুব দিলে এবং সাতটি ফুল
ছুরি দিলে তারা মনে করে বছরটি খুব ভালো কাটবে। এ উৎসবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের
প্রায় দুই মিলিয়ন পর্যটক যোগ দেয়।





মেক্সিকো
মেক্সিকোতে বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে বারবার ঘন্টা
বাজানো হয়। এ সময় প্রতি ঘন্টার ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে একটি করে আঙ্গুর খাওয়া হয়।
তারা বিশ্বাস করে এ সময় যা কামনা করা হয় তাই পূরণ হয়।

আর্জেন্টিনায় নববর্ষের আগের দিন রাতে পরিবারের সব
সদস্য একসঙ্গে খাবার টেবিলে বসে আহার করে। তারপর বড়রা নাচের অনুষ্ঠানে চলে যায়।
ভোর পর্যন্ত চলে এ নাচের অনুষ্ঠান। নববর্ষের প্রথম দিন নদী ও পুকুরের সাঁতার কেটে
তারা অবসর উদযাপন করে।


কোরিয়া

কোরিয়াতে নববর্ষ শুরুর সময় কেউ ঘুমায় না। এ
সময় ঘুমালে নাকি চোখের ব্রো সাদা হয়ে যায়। রাত বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে টিভি
৩৩ বার ঘন্টা বাজানো হয়। কুরিয়ার ৩৩ বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এটি করা হয়।
কোরিয়াতে প্রায় সবাই সূর্যোদয় দেখে। সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়া অবস্থায় সবাই
একজন আরেকজনকে শুভেচ্ছা জানায়।

 

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ
ইংরেজি সভ্যতার সাথে নিজেদের মানানসই করে নিচ্ছে। যে কারনে ঢাকা শহরে নানা জায়গায়
আতশবাজিতে মাতোয়ারা থাকে ঐ দিন। বিভিন্ন হোটেলে চলে পার্টি, বাসায় বাসায় স্পেশাল
খাবার এর আয়োজন। কেউ কেউ আবার নতুন বছরে নতুন জামা-কাপড় পড়ে ঘুরে বেড়ায় । প্রিয়
মানুষটিকে কেউ কেউ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। আর এইভাবেই পালিত হয় বাংলাদেশের
ইংরেজি নববর্ষ ।

 

Leave a Comment