শহরের এক কোণে তিনতলা পুরনো
দালান | দিনভর মেশিনের আওয়াজ । আশেপাশের মানুষজন বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ দেখাতে চাইলেও
, কোম্পানীর মালিকের টাকার উত্তাপে সবারই বিরক্ত
মেজাজ পুড়ে ছাড়খাড়।
কোম্পানীর মালিক মোঃ জালাল
উদ্দিন শাহ বানসালি। তিনি নিজেকে মনে করেন আল্লাহর খেদমতের প্রকৃত বান্দা- দিলটা আকাশের
মত, মানুষটা মাটির মত, সাহসটা সমুদ্রের মতো, চাওয়াগুলো স্রোতের মতো, খেদমতে দাস দাসীর মত।
নিজের সম্পর্কে এমন ডায়ালগ ছাড়েন সকাল আর বিকাল।
বলাই হল না যে কারখানাটা দেশের নামকরা কেক
কম্পানি তবে এখানে কেক কাটার জন্য বিদেশ থেকে আমদানিকৃত মেশিন আনা হয়েছে যার আওয়াজ
বড়ই অদ্ভূত । বানসালীর মাথায় হঠাৎ একদিন এক বুদ্ধি চাপলো। উনি তখন পায়খানা রত অবস্থায়।
তখননি বুদ্ধিটি তার মাথায় এসেছে।
সে পেপারে একটি
বিজ্ঞাপন দিবে যে, তার কোম্পানির কেক এর সাথে
মূল্যবান জিক্রোনিয়াম মিশে গেছে । এটি ছোট
দানাদার এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ। যার দাম
তিন কোটি টাকা ।
সে বিদেশ থেকে নিয়ে এসেছিল, হীরকের চেয়েও মূল্যবান এটি। কেউ যদি
কেকের সাথে খেয়ে থাকে তবে তা হজম হবেনা। পায়খানার সাথে বের হবে আসবে। আর কেউ যদি
পায় তবে তাকে ৩০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। যা চিন্তা তাই কাজ। পর দিনই বিজ্ঞাপন দিয়ে দেওয়া হলো।
ইয়েস পরেরদিনই
কোম্পানিতে ফোন আসা শুরু করলো। নাম না জানা কত মানষ কল দিয়ে জানতে চায় কিভাবে ,কখন , পেলে কি করতে হবে ইত্যাদি। এসব নানা প্রশ্ন আসতে থাকলো বানসালীর কাছে।
এদিকে বানসালীর উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গেল কারণ তার মূল উদ্দেশ্য
ছিল তার কেক কোম্পানির মার্কেটিং। নতুন এক পদ্ধতিতে সে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন ভাবে তা করতে সক্ষম হয়েছে।
এদিকে তার কেকের দাম এবং কেকের জনপ্রিয়তা
বেড়েই চলেছে। অনেকেই আবার ৩০ লক্ষ টাকা পাওয়ার
ধান্দায় কেক খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বাহ, ব্যবসা তো একেবারে ফাটাফাটি’।
এক ভদ্রলোক বানসালিকে
ফোন দিয়ে, (দেখে শিক্ষিত মনে হয়) তার কোম্পানিতে
চলে আসলো। আপনি কি বানসালি সাহেব? জি বলুন।
আচ্ছা বলুন তো
আমি যদি জিক্রোনিয়াম খেয়ে ফেলি তবে তাকি পায়খানা করার সময় বের হয়ে যাবে? ও আচ্ছা
যেই কথা সেই কাজ, শালা পায়খানা ঘেটে খুজবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগছে। তিনি
এসে রাগারাগি করলো, কই কিছুই পেলাম না । আপনিতো শুধু শুধু আমাকে দিয়ে………
কি, কি ভাই…..
আপনাকে দিয়ে কি ভাই?
ওকে ওকে ঠিক আছে, না মানে ভুয়া একটা খবর দিলেন ভাই। বানসালি
চুপচাপ দাড়িয়ে আছে আর অবাক হচ্ছে যে, উনার মত শিক্ষিত একটা লোকও পায়খানা ঘাটত গিয়েছিল।
এটা কিভাবে সম্ভব!!!!!
বানসালীর ওখানে লোকের
পর লোক ,ফোনের পর ফোন, কেউ পরিচয় দিতে চায়,
আবার কেউ কেউ দিতে চায় না। একদিকে আত্মপরিচয়
সংকট আবার টাকার লোভও ছাড়তে পারে না। বড় অদ্ভুত অবস্থা । বানসালি নিজে বুঝতে পারলো যে
এটা তার একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এমন করাটা
ঠিক হয়নি তার।
কিন্তু বানসালি
একদিকে আবার সফল কারণ তার ব্যবসা এবং কোম্পানি জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে দ্বিগুন এর দ্বিগুণ
হয়ে গেছে। অন্যদিকে বানসালি এটাও বুঝতে পারল
যে সমাজে মানুষের টাকার কত প্রয়োজন। মানুষ টাকার জন্য পায়খানা ঘাটতেও পিছুপা হয় না। হায়রে টাকা তুইই কি জগতের সব?
পরদিন বানসালি
তার একজন শাগরেদকে রেডি করলো আর ওকে ঘোষনা দিতে বলল যে ঐ শাগরেদই জিক্রোনিয়াম পেয়েছে। পত্রিকায় তোর ছবি দিয়ে পুরস্কার ঘোষণা করবো। সেই
কথা মতই লোকটি রাজি হল। এর পরই ঘটল অন্য ঘটনা।
পুলিশ এসে হাজির
তদন্ত করতে। জিক্রোলনয়াম কোথায় এবং ওই লোক
পেয়ে কি করেছে? কোথায় রেখেছে? এইবার তাঁর অবস্থা খারাপ। এইদিকে আবার রাজনৈতিক কিছু ব্যক্তিত্ব বানসালীর সাথে
ফোনে যোগাযোগ করল। তারা আবার অন্যরকম কিছু দাবি করল। সবাই ভাগ বসাতে চায়।
বানসালি দেখল বাপরে
বাপ আমার ব্যবসা যেমন বেড়েছে তেমনি আমার কাছ থেকে আদায় করা লোকের সংখ্যাও বেড়ে গেছে।
বাধ্য হয়েই বানসালি সাহেব চাঁদা দিতে গেল তাদের।
খুব কাছের নেতারাও সুর পাল্টিয়ে টাকা আদায়ের ধান্দা। বানসালি অবাক হয়ে বলে আমি ভাবতাম
আমি হয়তো বড় বুদ্ধিমান এখন দেখি আমার চেয়েও বড় বুদ্ধিমান আছেরে। কোথায় এসে পড়লাম।
আর টাকার কত শক্তি আমি আমার ব্যবসার উন্নতির জন্য টাকা কামানোর ধান্দা করেছি আর ওরা
টাকা কামানোর ধান্দা করেছে আমার এই ফন্দি কে কেন্দ্র করে। টাকার জন্য মানুষ কত কিনা
করতে পারে। বিচিত্র এই দুনিয়ায় টাকার খেলায়
কি তবে চূড়ান্ত?
শিক্ষনীয় পোষ্ট
দারুন গল্প