JANA BUJHA

কে হতে পারে নারী ক্ষমতায়ন এর আদর্শ? পরীমণি নাকি সেঁজুতি?

 

পরীমণি নাকি সেঁজুতি! কে হতে পারে নারী ক্ষমতায়ন এর আদর্শ?

ফেইসবুকে ছবি শেয়ার করা যেন কারও কারও রুটিনে
পরিণত হয়েছে। আবার কেউ কেউ সারাদিন অন্যের ছবি দেখতে দেখতেই টাইম পার করে। আর কেউ কেউ
মন না চাইলেও ছবিতে রিএ্যাক্ট দিয়ে আসতে হয়। তা না হলে প্রিয় মানুষগুলো আবার মন খারাপ
করে। ফেইসবুক যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পার্ট হয়ে গেছে তা আর বলতে হয় না।


যাই হোক আজকে বাংলাদেশের বিশেষ দুজন নারীকে
নিয়ে কিছু কথা বলতে চাচ্ছি। একজন নারীকে চেনেন না এমন মানুষ হয়ত খুব একটা পাওয়া যাবে
না। তিনি হলেন মারাত্মক আলোচিত নায়িকা পরীমণি আর অন্য জন এর নাম বলছি আস্তে-ধীরে।

 

গত তিন দিন ধরে ফেইসবুকে জুড়ে পরী মণি আর
আর রাজ এর ছড়াছড়ি। ফেইসবুকে ঢুকলেই দেখি- পরী মণি স্টেটাস দিয়ে রাজকে মন থেকে বিদায়
দিয়েছে। রাজ আর পরীর ছাড়াছাড়ি। আবার তাদের ভুল বোঝা-বুঝির সমাপ্তি।

 

পরী ছাড়ছেন না রাজের হাত। ওরে আল্লাহ !! বহুবার
বহু জনের পোস্ট আর আবেগ দেখে খুব বিরক্ত হয়েই মিডিয়ার একটা নিউজ দেখলাম। তখন সত্যিই
অবাক হইছি- মানুষের কত সময়? !!! ফেইসবুক ও নিউজ মিডিয়ায় পরীর খবর নিয়ে মাতামাতি। পরী
এর আগে ৫ টি বিয়ে করেছে। বিয়ের আগেই সন্তান পেটে আরও কত কি।

 

আর এই দিকে মানুষের মাঝে রং-বেরঙ এর প্রতিক্রিয়া।
তাদের ফ্যানদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মন খারাপ এর স্টেটাস দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ হাসি-তামাশা
করছে। কেউ আবার পরী মণিকে সন্তানসহ বিয়ে করার প্রস্তাব দিচ্ছে।

 

 হাসাহাসি-ট্রল-দুঃখ
প্রকাশ- আর মিডিয়া গুলো খবর প্রচার করে করছে টাকা ইনকাম। এই একটা বিষয়কে আমরা কতজন
কতভাবে ব্যবহার করছি আর ফায়দা লুটছি। মজার ব্যাপার হলো কয়দিন পর দেখবেন পরীর জীবনে
অন্য আর একজন রাজ এসে উপস্থিত। আবার রাজ এর জীবনেও অন্য আর এক পরী। তাতে তাদের তেমন
কিছু যাবেও না আসবেও না।

 

এর কিছুদিন আগে সাকিব খান উপাখ্যান হয়ে গেল,
মিথিলা- তাহসান , তানিয়া এই রকম আরও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আছেন যাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে
আমরা কম মাতামাতি করি নাই। আর এই সব  বিষয় গুলো
নিয়ে আমাদের কত আলোচনা। কেউ বলে ভাল কেউ বলে খারাপ।

 

আরো পড়ুনঃ



যে যাই বলুক একবার নিজেকে প্রশ্ন করেছি? আমি
বা আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে মাতামাতি করছি তা আমাদের ব্যক্তি জীবনে কতটুকু ইতিবাচক প্রভাব
ফেলেছে?

 

আর যে বিষয় গুলো নিয়ে আমরা আমাদের সময় ব্যয়
করছি হাসি-ঠাট্টা বা আলোচনা/ সমালোচনা করে। তা কি কোন ভাল বিষয়? একজন এর সংসার ভেঙে
যাচ্ছে, একজন নিজের স্বামী-সন্তান রেখে অন্য আর একজনকে বিয়ে করে নিচ্ছে, একজন লুকিয়ে
বিয়ে করেছে তাও বউ এর কোন ঠিক ঠিকানা নেই।

 

কি অবাক বিষয় এই বিষয় গুলো নিয়ে আমরা যখন
আমাদের সময় নষ্ট করছি ঠিক সেই সময়ে চীনে গবেষণা চলছে সারাবিশ্বে কিভাবে ফ্রিতে ইন্টারনেট
দেয়া যায়। ইজরাইলের প্রতিটি যুবক কোন না কোন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে। আমেরিকায় নতুন
কোন সোশাল প্লাটফর্ম তৈরীর চেষ্টা করছে যেন আমাদের মত মানুষগুলো প্রডাক্টিভ চিন্তা
করার সময়ই না পায়।

কি অদ্ভূত আচরণ। অথচ আমরা পড়ে আছি আমাদের
নায়ক- নায়িকারা কে কার সাথে কি করছে।  

 

 

একই সময়ে যখন সবাই পরী মণিকে নিয়ে মাতামাতি
করছে ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের অন্য আর একজন নারী সারাবিশ্বের মধ্যে ১০ জন বিজ্ঞানীর
তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম অণুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। হ্যাঁ,
সেঁজুতি সাহা বিশ্বের প্রখ্যাত সাময়িকী ল্যানসেটের ১০ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে
নিয়েছেন।

 

সেঁজুতি চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (
সিএইচআর এফ ) এর বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বাংলাদেশের রোগীদের মধ্য থেকে পাওয়া
নমুনা হতে নতুন করোনা ভাইরাস এর পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস আবিষ্কার করেন। কানাডার টরেন্টো
থেকে তিনি পড়পশোনা শেষ করেন । তার আর এক পরিচয় তিনি বাংলাদেশের আরেক বিখ্যাত অণুজীববিজ্ঞানী
ড. সমীর সাহার মেয়ে।

 

এখন আবার আমার কথায় ফিরে আসি। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে
থাকা একজন ছোটভাই এই বিজ্ঞানীর সাফল্য নিয়ে স্টেটাস দিয়েছে। আর অন্তত ২০ জন দিয়েছে
পরী মণিকে নিয়ে। এই ব্যাপারটাই আমাকে ভাবিয়ে তুললো।

 

আমি সেই ছোট ভাইয়ের স্টেটাস দেখেই সাথে সাথেই
গুগুল করে সেঁজুতি সাহাকে নিয়ে জানার চেষ্টা করি। আর তখনই মনে হল যে যারা পরী মণিকে
নিয়ে স্টেটাস দিল ওরা যদি ১০ মিনিট করে টাইম দিয়ে প্রতিটি স্টেটাস দিয়ে থাকে তাহলে
তারা ২০০ মিনিট টাইম দিয়েছে।

 

কিন্তু এই ২০০ মিনিট এর বিনিময়ে দেশ কি পেল,
আমি কি পেলাম, যে স্টেটাস দিয়েছে সে কি পেল, আর পরী মণি বা রাজইবা কি পেল? হয়ত ২ দিন
পর পরী আর রাজ আবার সংসার  করবে অথবা ছাড়াছাড়ি
হবে। তাতে আমার তোমার কি এলো আর গেল।

 

কিন্তু সেঁজুতি সাহাকে নিয়ে স্টেটাসে সময়
গিয়েছে ধরী ১০ মিনিট। আর এই ১০ মিনিটে আমি সহ আমার মত অনেকে জেনেছে যে বাংলাদেশে বিশ্বমানের
বিজ্ঞানী আছে। সেঁজুতি সাহাকে দেখে হয়ত ভবিষ্যৎ এ আরও আমাদের নারীরা ভাল কিছু করবে।

 

নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে যে এত কথা বলি তা কিন্তু
সেঁজুতি সাহাকে প্রেরনা বা অনুসরণ করলে সম্ভব হতে পারে। আর যদি পরী মণির মত নায়িকা
হওয়ার বসনা নিয়ে নারীরা ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাহলে কিন্তু
বিষয়টা টেনশানের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

 

তাই আমরা যে বিষয় টি নিয়ে লিখছি তা অন্য আর
একজন এর কতটুকু কাজে লাগতে পারে। সামাজিক ভাবে এর প্রভাব কি হতে পারে তা কি ভাবা উচিৎ
নয়?

 

সেজুতি যে বিশ্বের ১০ জন বিজ্ঞানীর একজন তা
নিয়ে লিখছি না কেন?

তিনি সুন্দরী ও লাস্যময়ী নয় বলে? বা তিনি
পরীর মত মেধাবী নয় বলে?  না কি তাকে নিয়ে মজা
করার বিষয় নয় বলে? নাকি নারী হিসেবে যেভাবে শো- আপ করা যায় সেভাবে তিনি নিজেকে শো-আপ
করতে পারছেন না বলে? কোনটা ঠিক?

 

এই দুজনই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্য করার মত
নারী। একজন বাংলাদেশকে বিশ্বের ১০ এর মধ্যে অবস্থান গড়ে দিচ্ছেন। আর একজন নিজের স্বামীকে
ছেড়ে দিবে বলে মানুষের মাঝে আবেগ বিলি করে ঘুরছেন।

 

আর সাধারণ মানুষ কেউ মজা নিচ্ছে আর কেউ সিরিয়াস।
আর অন্য একদল মানুষ এই সেন্টিমেন্ট বুঝে ভাল খারাপ বিবেচনা না করে ইনকাম এর জন্য তালকে
তিল করে পাবলিশ করছে।

 

 ফেইসবুকে
বিভিন্ন গ্রুপ দেখি যেখানে নায়ক-নায়িকাদের সংগ্রাম এর জীবন নিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা
বলে তাদের জয়গান করা হয়। কিন্তু সেঁজুতি সাহা বা ম্যাগসাস পুরস্কার পাওয়া বাংলাদেশী
নারীদের নিয়েতো কোন প্যাইজ দেখি না। তাদের কৃতিত্ব নিয়ে কথা বলার মত এমন মানুষের কি
এতই অভাব? এই নারীদের কি কোন সংগ্রাম নেই জীবনে?

 

সেঁজুতি সাহার চেয়ে অনেক বেশী কষ্ট ও ত্যাগ
স্বীকার করে পরী মণি ঢালিউড এর নায়িকা হয়েছেন। তাই না?

 

আমরা কি নিয়ে আমাদের সময়কে ব্যয় করছি? অনলাইন
কি শুধু টাইম-পাসের জন্য হা-হা-হি-হির জায়গা? নিজেকে কি কখনও প্রশ্ন করেছি যে, ভাল
নাকি মন্দ বিষয় আমার আলোচনার বিষয়?

  

সেঁজুতি সাহা বিশ্বের ১০ জন বিজ্ঞানীর মাঝে
একজন আর পরী মণি ঢালিউড এর সবচেয়ে ঢেশিং নায়িকা। চাকরীর প্রশ্ন হতে পারে- এই দুজন বাংলাদেশী
নারীর মধ্যে কে বেশী মেধাবী? তাদের মধ্যে কে সফল নারী ব্যক্তিত্ব?

 

বিঃদ্র- যারা সেঁজুতি সাহাকে ভোট দিতে চাচ্ছেন
তারা নিচে কমেন্ট করে যান। আর যারা পরী মণিকে ভোট দিতে চাচ্ছেন দয়া করে আঙুল ঘষে চলে
যান।

 

Leave a Comment