পাপ পুণ্য সিনেমাটি ২০২২ সালের ২০ মে বাংলাদেশের ২০ টি প্রেক্ষাগৃহসহ দেশের
বাহিরের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত চতুর্থ চলচ্চিত্র/
সিনেমা এটি। চলুন জেনা নেয়া যাক কেমন ছিল পাপ পুণ্য সিনেমাটি।
পরিচালক– গিয়াস উদ্দিন সেলিম
প্রযোজনা কোম্পানি– ইমপ্রেস টেলিফিল্ম
পরিবেশক– ইমপ্রেস টেলিফিল্ম
কুশীলব
খোরশেদ চরিত্রে চঞ্চল
চৌধুরী
আলামিন চরিত্রে সিয়াম
আহমেদ
পারুল চরিত্রে আফসানা
মিমি
সাথী চরিত্রে শাহনাজ
সুমি
সাব-ইন্সপেক্টর চরিত্রে
ফজলুর রহমান বাবু
এম পি- মামুন-উর-রশিদ
ফারজানা চুমকি
মনির খান শিমুল
গাউসুল আলম শাওন
গান
গান একঃ “চোখ গেল পাখি” গানটির গীতিকার বিজয় সরকার এবং কণ্ঠশিল্পী বগা তালেব।
গান দুইঃ “তোর সাথে নামলামরে পথে” গানটির গীতিকার ইশতিয়াক আহমেদ এবং কণ্ঠ
দিয়েছেন ইমন চৌধুরী ও আতিয়া আনিসা।
কাহিনী সংক্ষেপ
এ চলচ্চিত্রের অন্যতম চরিত্র খোরশেদ এলাকার চেয়ারম্যান
(চঞ্চল চৌধুরী)। সে সত্যিকার অর্থেই জনগণের সেবা করতে চায়। সেই এলাকার এমপি মামুনুর
রশিদ। তার ডান হাত হচ্ছে খোরশেদ আর অন্যদিকে গাউসুল আলম শাওন হচ্ছে এমপির বামহাত। শাওনের
এক আত্মীয় মনির খান শিমুল গ্রামের এক মেয়েকে ধর্ষণ করলে খোরশেদ সেই ধর্ষকের শাস্তি
দিতে চায়। শাওনের অনুগত পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ফজলুর রহমান বাবু সে ধর্ষককে বাঁচাতে চায়। খোরশেদের কারণে পুলিশ তাকে
গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়। এরপর শাওনের লোকেরা খোরশেদকে হত্যা করতে আসে। তখন খোরশেদের
ভাতিজা আল-আমিন( সিয়াম) পিস্তল বের করে গুলি ছুড়লে শাওনের লোকেরা পালিয়ে যায়।
আবার অন্যদিকে
বাউল রতন এর জমি দখল করতে চায় শাওন। খোরশেদ রতনের পক্ষ হয়ে কাজ করে। এতে করে দেখা
যায় যে শাওনের সাথে খোরশেদের ক্রমেই শত্রুতা বাড়তে থাকে এমনকি এমপি নিজেও এই দ্বন্দ
মেটাতে ব্যর্থ হয়।
অন্যদিকে খোরশেদের
সাথে থাকা তার ভাইস্তা আলামিন খোরশেদের মেয়ে সাথীকে (শাহনাজ সুমি) ভালোবাসে। খোরশেদের
বাসায় কাজ করত আলামিনের মা পারুল (আফসানা মিমি)। তাদের এই প্রেম টের পেয়ে যায় পারুল।
তিনি তাই আল-আমিনকে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে খোরশেদের স্ত্রীকে অনুরোধ করেন। খোরশেদ তাতে
রাজি হয়না। আলামিন ও সাথীর প্রেম আরো গভীর হলে আলামিনের মা খোরশেদের স্ত্রীকে তা জানায়।
খোরশেদের স্ত্রী খোরশেদকে জানালে তার চিন্তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসে এবং সে আল-আমিনকে
বিদেশ পাঠানোর জন্য ট্রেনে করে ঢাকা নিয়ে আসতে থাকে। আর ট্রেনে করে ফেরার পথে খোরশেদ,
রতন হত্যা মামলায় জড়িয়ে যায়। তারপর খোরশেদ জেলে চলে যায়। একদিন আলামিনের মা খোরশেদের
সাথে দেখা করতে জেলে যায়। এইদিকে আল-আমিন মারা যায়। পারুল আল-আমিন এর মৃত্যুর খবর
খোরশেদকে জানিয়ে বলে যে, আলামিন খোরশেদেরই ছেলে। খোরশেদ এক ঘোরে পড়ে যায়। সে চিন্তা
ভাবনা করতে থাকে কি থেকে কি হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারে না। একসময় জেলখানায় খোরশেদের
স্ত্রী ও তার কন্যা দেখা করতে আসে। কিন্তু খোরশেদ তার স্ত্রী কন্যার সাথে দেখা করে
না। পড়ে সে আলামিনের মায়ের সাথে দেখা করতে চায়। বিচারে খোরশেদ এর ফাঁসি হয় কেননা
জানা যায় যে বিদেশে পাঠানোর আগে খোরশেদই আলামিন কে হত্যা করেছিল। আর এভাবেই সিনেমার
গল্পটি অনুশোচনা আর অন্তরদহন এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
কিছু কথা
এই সিনেমাটিতে গ্রামবাংলার
অতিপরিচিত সুন্দর দৃশ্য এবং গ্রাম বাংলার ভিলেইজ পলেটিক্সকে কেন্দ্র করে তৈরী করা হয়েছে।
যারা স্লো ধাচের চলচ্চিত্র পছন্দ করেন তাদের হয়তো অনেকেরই খুব ভালো লাগবে সিনেমাটি।
এই সিনেমার ঘটনা অনেকেরই আবরি হৃদয় ছুয়ে যেতে পারে। তবে এই সিনেমাটি গিয়াস উদ্দিন
সেলিম এর পরিচালিত মনপুরা সিনেমার মত এত মন ছুঁয়ে যেতে পারে নি। এর পেছনে অবশ্য কিছু
কারণ রয়েছে। প্রথমেই বলতে হয় এর গানগুলোর কথা। আমার মত অনেকেরই হয়ত খুব বেশি মন ছুঁয়ে
যায় নি এর গানগুলো। যেমন ছুঁয়েছিল মনপুরার গানগুলো। আর বাঙালি সিনেমাপ্রেমীরাতো গানের
জন্য পাগল। তাই গান সিনেমার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেখানে এই সিনেমাতে হয়তো আরও
ভালো গান হতে পারতো।
বাংলাদেশের
প্রখ্যাত ও নামকরা সব অভিনেতারা এই সিনেমায় অভিনয় করেছে। যে কারনেই দর্শকের মনে এমনিতেও
একটা আগ্রহ জেগেছিল সিনেমাটি মুক্তির আগে থেকেই। এখানে অনেকেরই প্রিয় সব তারকারা অভিনয়
করেছে। অভিনয়ের দিক থেকে হয়তো এই চলচ্চিত্র বা সিনেমাটি ভালো হয়েছে। তবুও কোথায়
যেন একটা গ্যাপ থেকে গেছে। কেন যেন এক বাক্যে
বলতে পারা যায় না – অফ অসাধারণ হয়েছে। অতুলনীয় হয়েছে। কোথায় একটা যেন গ্যাপ। এখানে
গল্পের যে টুইস্ট রাখা হয়েছে সেটি একরকম জানাশোনাই। যারা খুব ভালো দর্শক তারা হয়তো
প্রথমদিকেই অনেকটা আন্দাজ করতেই পারবেন কি হতে যাচ্ছে এবং কি হতে পারে। তাছাড়া গিয়াসউদ্দিন
সেলিমের চলচ্চিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উনার চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে চরিত্রের
একটা অনুশোচনাবোধ বা সবশেষে একটা বিচ্ছেদের মাধ্যমে চলচ্চিত্র শেষ হয়। যেমনটি আমরা
মনপুরাতে এবং পূর্বের ছবিগুলোতে লক্ষ্য করেছি। যে কারণে অধিকাংশ দর্শকই অনেকটা আন্দাজ
করতে পেরেছেন যে কি হতে যাচ্ছে বা কি হতে পারে। যে কারণে হয়তো অনেকটা আকর্ষণ কমে গেছে।
এই চলচ্চিত্রের আরেকটা উইক পয়েন্ট বলব যে, এর প্রচারণা খুব বেশী ছিল না বললেই চলে।
আর আমরা জানি প্রচারেই প্রসার। যত প্রচার হবে তত তার প্রসার হবে। সুতরাং এই প্রসারের
দিক থেকে হয়তো এই চলচ্চিত্রটি একটু পিছিয়ে রয়েছে। তারপরেও সব শ্রেণীর দর্শক হয়তো
সমানভাবে এই চলচ্চিত্রটি উপভোগ করবেন না। কিন্তু এর মধ্যে উপভোগ করার মত অনেক কিছুই
ছিল যা অনেকেই উপভোগ করেছেন। তার চেয়েও বড় ব্যাপার হলো পাপ কখনো বাপকেও ছাড়ে না। যা
এই সিনেমা থেকে শিখতে পারা যায়। যদি কেউ শুধু মজা নেয়ার জন্য সিনেমা দেখে তাহলে হয়ত
খুব ভাল সিনেমা এটি না। কিন্তু যদি কেউ সিনেমা দেখে নিজেকে মানুষ হিসেবে বিশ্লেষন করতে
চায় তাহলে নিশ্চত করেই বলা যায় যে এতে জীবন বদলানোর মত ম্যাসেজ আছে।
তাই সিনেমাটি নিয়ে যদি বলতে হয় তাহলে এক বাক্যে
হয়তো বাহ বা চমৎকার হয়েছে বলা না গেলেও খুব যে খারাপ হয়েছে এমনটিও কিন্তু না। তবে
বলা যায় যে, এটি একটি ভাল চলচ্চিত্র। যে কেউ
দেখে নিতে পারেন, হয়তো অন্য রকম একটা অনুভূতি পাওয়া যাবে চলচ্চিত্রটি/ সিনেমাটি দেখে।
দর্শক হিসেবে আমি আশা করবো হয়তো গিয়াসউদ্দিন সেলিম স্যার আরো অত্যন্ত চমৎকার গল্প
নিয়ে আবার নতুন করে, নতুন ভাবে, নতুন অনুভব
দর্শকের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে, নতুন কোন সিনেমা নিয়ে পুনরায় তিনি হাজির হবেন। সবশেষে
পাপ পুণ্যের টিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং ভাল
কাজের প্রত্যাশা রেখে আজ বিদায় নিচ্ছি। তবে হ্যা যারা এখনো সিনেমাটি দেখেননি তাদের
কে বলবো জটপট ইউটিউব থেকে হলেও সিনেমাটি দেখে নেন একেবারে নিরাশ হবেন না।
Temon valo lage ni cinemati.,aro valo hbe vebechilam